আজকের পত্রিকা ডেস্ক

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’

তাড়াহুড়ো করে তৈরি করা একটি দেয়াল ভেঙে গোপন কারাগারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। দেখা যায়, একটি দরজা নতুন করে ইট গেঁথে বন্ধ করা হয়েছে। পেছনে কিছু একটা আড়াল করার চেষ্টা যে ছিল তা স্পষ্ট। ভেতরে দেখা যায়, একটি সরু করিডর, যার ডান ও বাম পাশে অনেকগুলো ছোট কুঠুরি। কুঠুরিগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই এই গোপন কারাগারটি সম্ভবত কখনোই খুঁজে পাওয়া যেত না—সেখানে বন্দী থাকা মীর আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যদের স্মৃতি হয়তো অজানাই থেকে যেত! আহমেদ বিন কাসেম বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচক ছিলেন। এই বন্দীশালায় তাঁকে ৮ বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছিল।
কারাগারে থাকার সময় তাঁর চোখ প্রায় সব সময়ই বাঁধা থাকত। তাই তিনি বিভিন্ন দিক থেকে আসা শব্দের ভিত্তিতে তাঁর অবস্থান বোঝার চেষ্টা করতেন। তিনি উড়োজাহাজ উঠানামার শব্দ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারতেন। এই সূত্র ধরেই তদন্তকারীরা বিমানবন্দরের কাছে এক বন্দীশালায় পৌঁছান। মূল ভবনের পেছনে তাঁরা একটি ছোট, কঠোর পাহারায় ঘেরা জানালাবিহীন কংক্রিটের অবকাঠামো খুঁজে পান। সেখানেই বন্দীদের রাখা হতো।
এটি দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। তবে গত বছরের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তদন্তকারীরা কাসেমের মতো শত শত ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেন। এসব ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন বন্দীশালায় আটকে রাখা হয়েছিল। অভিযোগ, আরও অনেককে বেআইনিভাবে হত্যা করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ঢাকা বিমানবন্দরের কাছে ওই কারাগারসহ অন্যান্য গোপন কারাগার চালাতেন মূলত এলিট কাউন্টার–টেররিজম ইউনিট ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা। তাঁরা সরাসরি হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশনা পেতেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিটি গুমের ঘটনা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই অনুমোদন, অনুমতি বা নির্দেশের মাধ্যমে করিয়েছিলেন।’ তবে হাসিনার দলের লোকদের দাবি, তাঁদের অজান্তে এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এর কোনো দায় তাঁরা নেবেন না। সামরিক বাহিনী একাই কাজ করেছে বলে তাঁরা দাবি করেছেন। কিন্তু সামরিক বাহিনী এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আহমেদ বিন কাসেম এবং অন্যরা মুক্তি পেয়েছেন ৭ মাসের বেশি সময় হলো, তবে এখনো তাঁদের আতঙ্ক কাটেনি। তাঁদের যারা গোপন কারাগারে রেখেছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখনো নিরাপত্তা বাহিনীতে বহাল তবিয়তে কাজ করছেন এবং অনেকে এখনো মুক্ত।
আহমেদ বিন কাসেম জানান, এখন টুপি ও মাস্ক ছাড়া তিনি কখনই বাড়ির বাইরে যান না। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে সব সময় আমাকে সাবধানে থাকতে হয়।’ কিছুদিন আগে তিনি বিবিসির দলটিকে সেই জায়গাটি দেখাতে নিয়ে যান, যেখানে তাঁকে রাখা হয়েছিল। ভারী ধাতব দরজা ঠেলে, মাথা নিচু করে আরেকটি সরু দরজা পেরিয়ে তিনি ‘তাঁর’ ঘরে প্রবেশ করেন। এই কুঠুরিতেই আট বছর বন্দী ছিলেন তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘মনে হতো, যেন জীবন্ত কবর, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’ সেখানে কোনো জানালা ছিল না, প্রাকৃতিক আলো আসার কোনো পথ ছিল না। ভেতরে থাকলে দিন-রাতের পার্থক্য বোঝা যেত না। চল্লিশের কোঠায় থাকা আইনজীবী আহমেদ বিন কাসেম এর আগেও সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তবে এই প্রথম তিনি গণমাধ্যমকে সেই ছোট্ট কুঠুরির ভেতরটা বিস্তারিত দেখালেন, যেখানে তাঁকে বন্দী রাখা হয়েছিল।
টর্চের আলোয় দেখা যায়, ঘরটি এত ছোট যে—একজন গড় উচ্চতার মানুষের পক্ষেও সোজা হয়ে দাঁড়ানো কঠিন। ঘরটিতে স্যাঁতসেঁতে গন্ধ, দেয়ালের কিছু অংশ ভাঙা, ইট ও কংক্রিটের টুকরা মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করার জন্য এটি ছিল শেষ চেষ্টা।
প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও বিবিসির সঙ্গে ওই বন্দীশালা পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘এটি একটি বন্দিশালা। আমরা জানতে পেরেছি, সারা দেশে ৫০০,৬০০, ৭০০ টিরও বেশি কুঠুরি রয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, এটি ব্যাপক ও পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে।’
আহমেদ বিন কাসেম তাঁর সেলের হালকা নীল রঙের টাইলসের কথাও স্পষ্টভাবে মনে রেখেছেন। মেঝেতে ভাঙা টাইলসের টুকরোগুলো পড়ে ছিল। আর এর সাহায্যেই তদন্তকারীরা এই বিশেষ ঘরটি খুঁজে পান। নিচতলার সেলগুলোর তুলনায় এটি বেশ বড়, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুট। একপাশে একটি নিচু টয়লেট রয়েছে।
সেই কষ্টের স্মৃতিচারণ করতে করতে আহমেদ বিন কাসেম ঘরের চারপাশে হেঁটে হেঁটে দেখান এবং বন্দী জীবনে কীভাবে সময় কাটিয়েছেন তা তুলে ধরেন। গ্রীষ্মকালে সেখানে অসহ্য গরম লাগত। তিনি মেঝেতে কুঁকড়ে বসে দরজার নিচের দিকে মুখ রাখতেন কিছুটা বাতাস পাওয়ার আশায়। তিনি বলেন, ‘মনে হতো মৃত্যুর চেয়েও দুঃসহ।’
নিজের দুঃসহ স্মৃতি পুনরাবৃত্তি করানোর বিষয়টিকে অনেকের কাছে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। কিন্তু আহমেদ বিন কাসেম মনে করেন, বিশ্বের মানুষের দেখা উচিত, কী করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যারা এই ফ্যাসিবাদী শাসনকে সাহায্য ও সমর্থন করেছে, সেই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এখনো তাদের পদে বহাল আছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের (এখানকার) গল্প তুলে ধরা দরকার এবং যারা ফিরে আসেনি তাদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং যারা বেঁচে আছেন তাদের পুনর্বাসিত হতে সাহায্য করার জন্য আমাদের যা কিছু করার আছে তা করতে হবে।’
বিবিসির আগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তাঁকে ঢাকার প্রধান গোয়েন্দা সদর দপ্তরের ভেতরে ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত এক কুখ্যাত বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল। তবে তদন্তকারীরা এখন মনে করছেন, এ ধরনের আরও অনেক কেন্দ্র ছিল। আহমেদ বিন কাসেম বিবিসিকে জানান, প্রথম ১৬ দিন ছাড়া বাকি পুরো সময় তিনি র্যাবের হেফাজতেই ছিলেন। তদন্তকারীরা এখন সন্দেহ করছেন, প্রথম স্থানটি ছিল ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি শাখা।
তিনি বিশ্বাস করেন, তাঁর পারিবারিক রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই তাঁকে গুম করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে তিনি তাঁর বাবার পক্ষে আইনি লড়াই করছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর জ্যেষ্ঠ নেতা। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করা হয় এবং পরে ফাঁসি দেওয়া হয়।
আহমেদ বিন কাসেম ছাড়াও বিবিসি এমন বন্দীশালায় আটক থাকা আরও পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলেছে। তাঁরা জানান, তাঁদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরিয়ে অন্ধকার কংক্রিটের কুঠুরিতে রাখা হয়েছিল। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে তাঁদের কোনো সংযোগ ছিল না। অনেকের অভিযোগ, তাঁদের মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।
বিবিসি এই ভুক্তভোগীদের বক্তব্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে না পারলেও, প্রায় সবাই বলেছেন—তাঁরা আতঙ্কিত যে, একদিন রাস্তায় বা বাসে তাঁদের নিপীড়নকারীদের সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। ৩৫ বছর বয়সী আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, ‘এখন, যখনই আমি গাড়িতে উঠি বা বাড়িতে একা থাকি, তখন আমি যেখানে ছিলাম সেই কথা ভেবে ভয় লাগে। আমি ভাবি, আমি কীভাবে বেঁচে ছিলাম, আদৌ আমার বেঁচে থাকার কথা ছিল কিনা।’
রাসেল জানান, তাঁর নাক ভেঙে গিয়েছিল এবং হাতে এখনো ব্যথা আছে। তিনি বলেন, ‘তারা আমাকে হাতকড়া পরিয়ে অনেক মারধর করেছে।’ রাসেল জানান, গত জুলাইয়ে যখন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছিল, তখন রাজধানীর পুরান ঢাকার একটি মসজিদের বাইরে একদল লোক তাঁর কাছে আসে। তাঁরা নিজেদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য বলে পরিচয় দেয় এবং তাঁকে তাঁদের সঙ্গে যেতে বলে।
এরপর তৎক্ষণাৎ তাঁকে একটি ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, হাতকড়া পরানো হয়, মুখ ঢাকা হয় এবং চোখ বেঁধে দেওয়া হয়। ৪০ মিনিট পর তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে একটি ভবনে নিয়ে একটি কামরায় রাখা হয়। তিনি বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা পর একজন একজন করে লোকজন আসতে শুরু করে এবং প্রশ্ন করতে থাকে। আপনি কে? আপনি কী করেন?’ এরপর শুরু হয় মারধর।
রাসেল আরও বলেন, ‘ওই জায়গার ভেতরে থাকাটা ছিল ভীতিকর। আমার মনে হয়েছিল, আমি আর কখনোই বের হতে পারব না।’ রাসেল এখন তাঁর বোন ও বোনের স্বামীর সঙ্গে থাকেন। ঢাকার একটি ফ্ল্যাটে ডাইনিং চেয়ারে বসে তিনি তাঁর বন্দী জীবনের কয়েক সপ্তাহের বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন আবেগ চেপে রাখার চেষ্টা করছিলেন, যেন তাঁর নিকট অতীতের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই!
রাসেলও মনে করেন, তাঁর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণেই তাঁকে বন্দী করা হয়েছিল। তিনি হাসিনার দল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ছাত্রনেতা ছিলেন এবং তাঁর বাবা ছিলেন ওই দলের জ্যেষ্ঠ নেতা। বিদেশে থাকা তাঁর ভাই প্রায়শই হাসিনার সমালোচনা করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন।
রাসেল জানান, তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল তা জানার কোনো উপায় ছিল না। তবে এ বছরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে তিনটি বন্দিশালা পরিদর্শন করতে দেখার পর তিনি ধারণা করছেন, তাঁকে ঢাকার আগারগাঁও এলাকায় রাখা হয়েছিল।
এটি প্রায় প্রকাশ্যই ছিল যে, হাসিনা রাজনৈতিক ভিন্নমতের প্রতি সহনশীল ছিলেন না। সাবেক বন্দী, বিরোধী দল এবং তদন্তকারীদের মতে, তাঁর সমালোচনা করলে ‘গুম’ হয়ে যেতে হতো। তবে কত মানুষ গুম হয়েছেন তার মোট সংখ্যা কখনোই স্পষ্ট হবে না হয়তো।
একটি বাংলাদেশি এনজিও ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনা রেকর্ড করছে। তারা কমপক্ষে ৭০৯ জন ব্যক্তির গুম হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৫৫ জন এখনো নিখোঁজ। গত সেপ্টেম্বরে গুম তদন্ত কমিশন গঠনের পর থেকে তারা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৬৭৬ টিরও বেশি অভিযোগ পেয়েছে এবং আরও অনেকে এগিয়ে আসছেন নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে। তবে এটি মোট সংখ্যা নয়, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে ধারণা করা হয়।
আহমেদ বিন কাসেমের মতো ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার মাধ্যমেই প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বন্দিশালার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের, এমনকি শেখ হাসিনাকেও অভিযুক্ত করার জন্য মামলার নথিপত্র প্রস্তুত করতে পারছেন। বিভিন্ন স্থানে বন্দী থাকলেও ভুক্তভোগীদের বর্ণনাগুলো আশ্চর্যজনকভাবে একই রকম।
হাসিনার দল আওয়ামী লীগের মুখপাত্র সাবেক তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত এসব গুমের সঙ্গে তৎকালীন সরকারের কোনোভাবে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, যদি কাউকে জোরপূর্বক গুম করা হয়ে থাকে, তবে তা হাসিনা—যিনি বর্তমানে ভারতে রয়েছেন—বা তাঁর মন্ত্রিসভার কারও নির্দেশে করা হয়নি।
আরাফাত বলেন, ‘যদি এ ধরনের কোনো আটক ঘটনা ঘটে থাকে, তবে তা জটিল অভ্যন্তরীণ সামরিক গতিবিধির ফলাফল হতে পারে। আমার মনে হয় না, আওয়ামী লীগ বা সরকারের কাছে এসব লোকদের গোপনে আটক রাখার কোনো রাজনৈতিক সুবিধা আছে।’
সামরিক বাহিনীর প্রধান মুখপাত্রের সঙ্গেও এ নিয়ে কথা বলেছে বিবিসি। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের বিষয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ বিবিসিকে বলেন, ‘সেনাবাহিনী এ ধরনের কোনো বন্দিশালা পরিচালনার কথা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করছে।’
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম মনে করেন, এসব কারাগারে বন্দী থাকা ব্যক্তিরাই এসব গুমে আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার প্রমাণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যাদের আটক করা হয়েছিল তারা সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ছিলেন এবং তাঁরা শুধু তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাঁদের কথা বলেছিলেন, আর সেই কারণেই তাঁদের এখানে আনা হয়েছিল।’
এসব ঘটনায় এ পর্যন্ত ১২২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কাউকে বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এ কারণে ৭১ বছর বয়সী ইকবাল চৌধুরীর মতো ভুক্তভোগীরা মনে করেন, তাঁদের জীবন এখনো বিপন্ন। চৌধুরী বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চান। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়ার পর বহু বছর তিনি বাড়ি থেকে বের হননি, এমনকি বাজারেও যাননি। চৌধুরীকে যারা আটকে রেখেছিল, তারা তাঁকে মুখ না খোলার জন্য সতর্ক করেছিল।
ইকবাল চৌধুরী জানান, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘যদি তুমি কখনো বলো তোমাকে কোথায় রাখা হয়েছিল বা কী ঘটেছিল, এবং যদি তোমাকে আবার ধরা হয় তবে তোমাকে আর কেউ খুঁজে পাবে না। তুমি এই পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে!’
চৌধুরী বলেন, ভারত ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেখার কারণে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে এবং মারধর করে নির্যাতন করা হয়েছিল। এখন বৈদ্যুতিক শকের কারণে আমার একটি আঙুল মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। আমি পায়ের শক্তি হারিয়েছি, শারীরিক শক্তি হারিয়েছি।’ তিনি অন্যদের শারীরিক নির্যাতনের শব্দ, বয়স্ক পুরুষদের আর্তনাদ ও ব্যথায় কান্নার শব্দ মনে করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখনো ভয় পাচ্ছি।’
আয়নাঘরের আরেক ভুক্তভোগী ২৩ বছর বয়সী রহমতুল্লাহ। তিনিও আতঙ্কিত। তিনি বলেন, ‘তারা আমার জীবনের দেড় বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই সময় আর কখনোই ফিরে আসবে না। তারা আমাকে এমন এক জায়গায় ঘুমাতে বাধ্য করেছিল যেখানে কোনো মানুষের থাকা সম্ভব নয়।’
রহমতুল্লাহ জানান, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে র্যাব কর্মকর্তারা—যাদের মধ্যে কেউ ইউনিফর্ম পরা ছিলেন, কেউ সাদা পোশাকে—তাঁকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান। তিনি পাশের শহরে বাবুর্চির কাজ করতেন এবং একই সঙ্গে ইলেকট্রিশিয়ানের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন। বারবার জিজ্ঞাসাবাদের পর রহমতুল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতবিরোধী এবং ইসলাম সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে।
একটি কলম ও কাগজ ব্যবহার করে তিনি তাঁর সেলের নকশা আঁকেন, যার মধ্যে খোলা ড্রেনটিও রয়েছে, যা তিনি মলত্যাগের জন্য ব্যবহার করতেন।
রহমতুল্লাহ বলেন, ‘ঢাকার সেই জায়গার কথা ভাবলেও আমার খারাপ লাগে। সেখানে ঠিকমতো শোয়ার জায়গাও ছিল না, তাই আমাকে কুঁকড়ে শুতে হতো। শুয়ে পা মেলে দিতে পারতাম না।’
বিবিসি মাইকেল চাকমা ও মাসরুর আনোয়ার নামে আরও দুই সাবেক বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। অনেক ভুক্তভোগীর শরীরে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তারা সবাই সেই মানসিক যন্ত্রণার কথা বলেছেন, যা তাঁদের সার্বক্ষণিক তাড়িয়ে বেড়ায়।
দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এ ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করতে হবে এবং আমাদের ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার করতে হবে। তারা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে।’
নিজেকে যেখানে আটকে রাখা হয়েছিল সেই কংক্রিটের সেলের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে দাঁড়িয়ে আহমেদ বিন কাসেম বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিচার হওয়া উচিত, যাতে এই অধ্যায়টি শেষ হতে পারে। কিন্তু রহমতুল্লাহর জন্য বিষয়টি এত সহজ নয়। তিনি বলেন, ‘ভয় এখনো যায়নি। এই ভয় আমার মৃত্যুর আগে পর্যন্ত থাকবে।’

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।
ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ জমা দেবে। আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে, তা নিয়ে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে। সেখানে থাকবে বিশেষ আদেশ জারির পর সংবিধানসংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়িত না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তুত করা সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। এর অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব/সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধানসম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। এই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।
কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’; যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা রাখতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশন দেবে বলে সূত্র জানায়। বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধানসংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে বিলটি দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।
গণভোটের সময় এবং আদেশ জারির সিদ্ধান্ত দেবে সরকার
গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন।
ঐকমত্য কমিশন আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশ জমা দেবে। আগামী সংসদ সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো অনুমোদন না করলে কী হবে, তা নিয়ে কমিশন একটি বিকল্প প্রস্তাবও সুপারিশ করবে। সেখানে থাকবে বিশেষ আদেশ জারির পর সংবিধানসংক্রান্ত সব প্রস্তাব নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বিল তৈরি, পরে বিলের প্রশ্নে গণভোট এবং সংবিধান সংস্কার পরিষদের মেয়াদে বাস্তবায়িত না হলে বিলে থাকা বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাবে।
গতকাল সোমবার যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের জন্য কমিশনের প্রস্তুত করা সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। প্রস্তুত করা সুপারিশের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।
বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিশনের প্রধানকে সুপারিশগুলো আমরা অবহিত করেছি। এ ব্যাপারে তিনি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। মঙ্গলবার পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।’
কমিশন সূত্র জানায়, চূড়ান্ত সুপারিশ অনুযায়ী সনদ বাস্তবায়নে গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। এর অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যে সংবিধানসংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। বাস্তবায়নের পুরো প্রক্রিয়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে উল্লেখ থাকবে। আদেশ জারির পর এর কিছু অংশ তাৎক্ষণিক এবং কিছু কিছু বিষয় পরে কার্যকর হবে। আদেশের কোন ধারা কবে কার্যকর হবে, তা উল্লেখ থাকবে। জুলাই সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব আদেশের পরিশিষ্টে উল্লেখ থাকবে। তবে সেখানে কোনো দলের ভিন্নমতের বিষয় উল্লেখ থাকবে না। শুধু কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব/সিদ্ধান্তের উল্লেখ থাকবে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি করা হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এগুলোর মধ্যে ৪৭টি প্রস্তাব সংবিধানসম্পর্কিত। মূলত এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা আছে। এই প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো দলের ভিন্নমত আছে। এগুলোর মধ্যে ৭টি মৌলিক সংস্কার প্রস্তাবে ভিন্নমত আছে বিএনপির।
কমিশনের একাধিক সূত্র জানায়, সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) উল্লেখ থাকবে না। সনদের ওপরই গণভোট হবে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে ঐকমত্য কমিশন যেভাবে সংবিধান সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করেছে, সেভাবেই তা বাস্তবায়িত হবে। ‘গণভোট ও সংবিধান সংস্কার পরিষদে পাস হলে আগামী সংসদেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে আইনসভার উচ্চকক্ষ গঠন করার সুপারিশ করা হতে পারে’; যা আদেশে আলাদা করে উল্লেখ থাকতে পারে।
সংবিধান সংস্কার পরিষদকে সনদের সংবিধানসম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সমাধানে বাধ্যবাধকতা রাখতে বিকল্প আরেকটি প্রস্তাব কমিশন দেবে বলে সূত্র জানায়। বিকল্প সুপারিশে বলা হতে পারে, সংবিধানসংক্রান্ত সব সুপারিশ বিল আকারে আগামী চার মাসের মধ্যে সরকারকে তৈরি করতে বলা হবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে বিলটি দেওয়া হবে। সংবিধান সংস্কার পরিষদ আলোচনার মাধ্যমে বিলের শব্দ বা বাক্য পরিবর্তন করতে পারবে, তবে স্পিরিট বা মূলভাব পরিবর্তন করা যাবে না। তবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে বিষয়গুলোর সমাধান না হলে ২৭১তম দিনে বিলগুলো সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে গণভোটে প্রশ্ন হতে পারে—জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অনুমোদন করেন কি না এবং গণভোট বিলের প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন চান কি না।
গণভোটের সময় এবং আদেশ জারির সিদ্ধান্ত দেবে সরকার
গণভোটে জুলাই সনদের বৈধতা নেওয়ার প্রশ্নে দলগুলো একমত হলেও গণভোট কবে হবে, এর ভিত্তি কী হবে, ভিন্নমত থাকা প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসব ক্ষেত্রে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মধ্যে মতবিরোধ আছে। কমিশন সূত্র জানায়, গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে—এ বিষয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার মাধ্যমে জারি করার দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি। বিএনপি আদেশ জারির পক্ষে নয়। এই অবস্থায় আদেশটি রাষ্ট্রপতি নাকি প্রধান উপদেষ্টা জারি করবেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভারও সরকারের ওপর ছেড়ে দেবে কমিশন।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেবিভিন্ন মামলায় পরোয়ানা
আমানুর রহমান রনি, ঢাকা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়।
পলাতক এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্র বলছে, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি না হওয়ার কারণ জানা যায়নি। আবেদন পেলে ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে নোটিশ জারি করে। সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখনো তারা কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করেনি। হয়তো যাচাই-বাছাই করছে, এটা তাদের প্রক্রিয়া। তারা রেড নোটিশ জারি না করলেও বিচার থেমে থাকবে না। বিচার আসামির অনুপস্থিতিতেই হবে।
তিনি বলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রক্রিয়াও চালু রাখতে হবে। ইন্টারপোল এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাসহ পলাতক ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামি আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন। মহসিন মিয়াকে গত জুলাইয়ে দুবাই থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের বাংলাদেশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের ছবি ও নাম এখনো উঠানো হয়নি।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এখনো রেড নোটিশ জারি করেনি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম ও তাঁর তিন ভাই এবং কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের কয়েকটি আদালতের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদন করলেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে না। সংস্থাটি তাদের নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিবি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পায়। এত দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখে না। তিনি বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ইন্টারপোল জানে, বাংলাদেশকে তথ্যও দিয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে রেড নোটিশের বিষয়ে সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি।
ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চায় না। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দেশগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। তাই এসব আবেদন ইন্টারপোল খুব সতর্কভাবে দেখে। ইন্টারপোল কোনো আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় না, নীরবতা পালন করে। যেসব আবেদনে তারা রেড নোটিশ জারি করে, সেগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়।
এনসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারপোল দুই ভাবে আবেদন মূল্যায়ন করে, জরুরি ও সাধারণ। কোনো দেশ জরুরি আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় সংস্থাটি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ইন্টারপোলের ফ্রান্সের কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।
আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম শাহজাহান সাইফ বলেন, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে। তবে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগও নিতে হবে।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ৬ হাজার ৫১৭ জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৬০ জন।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের কাছে আবেদন করেছি। তারা রেড নোটিশ জারি করবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়।
পলাতক এই ২৪ জনের বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সূত্র বলছে, ওই ২৪ জনের বিরুদ্ধে এখনো ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি না হওয়ার কারণ জানা যায়নি। আবেদন পেলে ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে নোটিশ জারি করে। সাধারণত আবেদনের তিন সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ এর আগে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পেয়েছে।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এখনো তারা কিছু ক্ষেত্রে রেড নোটিশ জারি করেনি। হয়তো যাচাই-বাছাই করছে, এটা তাদের প্রক্রিয়া। তারা রেড নোটিশ জারি না করলেও বিচার থেমে থাকবে না। বিচার আসামির অনুপস্থিতিতেই হবে।
তিনি বলেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনতে সব প্রক্রিয়াও চালু রাখতে হবে। ইন্টারপোল এবং রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের কূটনৈতিক ধারাও অব্যাহত রাখতে হবে।
সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাসহ পলাতক ২৮ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ইন্টারপোলে আবেদন করেছে। এখন পর্যন্ত ইন্টারপোল তাঁদের মধ্যে মাত্র চারজনের নামে রেড নোটিশ জারি করেছে। তাঁরা হলেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার আসামি আরিফ সরকার, মহসিন মিয়া ও আওলাদ হোসেন। মহসিন মিয়াকে গত জুলাইয়ে দুবাই থেকে ইন্টারপোলের সহায়তায় দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তবে আবেদন করা হলেও ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেডের বাংলাদেশের তালিকায় বেনজীর আহমেদের ছবি ও নাম এখনো উঠানো হয়নি।
যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল এখনো রেড নোটিশ জারি করেনি তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী মো. সাইফুল আলম ও তাঁর তিন ভাই এবং কয়েকজন সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি), ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা।
চলতি বছরের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের কয়েকটি আদালতের নির্দেশে তাঁদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারির আবেদন করে পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আবেদন করলেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে না। সংস্থাটি তাদের নিয়মে আসামির সব নথি ও তথ্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়। এনসিবি সাধারণত আবেদন জমা দেওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে ইন্টারপোলের কাছ থেকে জবাব পায়। এত দীর্ঘ সময় ঝুলিয়ে রাখে না। তিনি বলেন, আসামিরা কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে ইন্টারপোল জানে, বাংলাদেশকে তথ্যও দিয়েছে। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তবে রেড নোটিশের বিষয়ে সংস্থাটি এখনো কিছু জানায়নি।
ইন্টারপোলের সঙ্গে কাজ করা পুলিশের সাবেক এক কর্মকর্তা বলেন, ইন্টারপোল রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার হতে চায় না। বিভিন্ন দেশে সরকার পরিবর্তনের পর সাবেকদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। দেশগুলো ইন্টারপোলের সহায়তা চায়। তাই এসব আবেদন ইন্টারপোল খুব সতর্কভাবে দেখে। ইন্টারপোল কোনো আবেদনের বিষয়ে ব্যবস্থা না নিলে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায় না, নীরবতা পালন করে। যেসব আবেদনে তারা রেড নোটিশ জারি করে, সেগুলো দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে জানিয়ে দেয়।
এনসিবির কর্মকর্তারা বলছেন, ইন্টারপোল দুই ভাবে আবেদন মূল্যায়ন করে, জরুরি ও সাধারণ। কোনো দেশ জরুরি আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় সংস্থাটি। আর কম গুরুত্বপূর্ণ হলে ইন্টারপোলের ফ্রান্সের কমিটি সেটি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় নেয়।
আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারকাজের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এ এম শাহজাহান সাইফ বলেন, আসামিদের অনুপস্থিতিতে বিচারপ্রক্রিয়া চলতে পারে। তবে তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে উদ্যোগও নিতে হবে।
ইন্টারপোলের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী মোট ৬ হাজার ৫১৭ জন ওয়ান্টেড ব্যক্তির বিরুদ্ধে রেড নোটিশ আছে, যার মধ্যে বাংলাদেশি ৬০ জন।
জানতে চাইলে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘ইন্টারপোল তাদের নিজস্ব আইনি কাঠামোর মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে। আমরা নিয়মের মধ্যে থেকে তাদের কাছে আবেদন করেছি। তারা রেড নোটিশ জারি করবে কি না, এটা তাদের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেপবিত্র হজ পালন
আয়নাল হোসেন, ঢাকা

দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কোন দেশের কতজন হজ করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ওআইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১ শতাংশ প্রতিবছর হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়ে আসছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিবন্ধিত অনেকে ২০২০ সাল থেকে হজে যেতে পারেননি। করোনা অতিমারির ধাক্কা ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। ২০২২ সালে হজে গিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৯০৯ জন। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ২০০ এবং আগামী বছরের (২০২৬ সালে) জন্য হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন ৭৩ হাজার ৪১৬ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি হজ প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ থেকে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে শুধু এক প্যাকেজে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা ছিল।
২০২৪ সালে করা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা, ২০২৫ সালে করা হয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭২০ থেকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য করা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
এদিকে প্রতিবছরই সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরপরই বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকেরাও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছেন। তাঁরা বরাবরই উড়োজাহাজের ভাড়া কমানোর পক্ষে বলে আসছেন। তবে বর্তমানে সৌদি আরব অংশে সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট খরচ বেড়েছে বলে তাঁরা জানান।
হজযাত্রী কোটা পূরণ হচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ করছেন। এতে গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা, তাঁদের হজ পালন হয়ে গেছে। এই কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও তাঁদের টাকা ফেরত নিয়েছেন। গত বছর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনজন বাসিন্দা হজ নিবন্ধন করার পরও হজে যাননি। পরে তাঁরা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ পালন করে আসেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাওয়া হলে বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক বাড়া, সৌদি আরবে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, ব্যবসায় মন্দা ও এক বছর ধরে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধের কারণে অনেকেই হজে যেতে পারছেন না। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ স্থিতিশীল হবে এবং বেশি মানুষ হজে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশে হজযাত্রী কোটা পূরণ কেন হচ্ছে না, জানতে চাওয়া হয় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে। তিনি তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দীকের মাধ্যমে জানান, সৌদি রোডম্যাপ অনুসারে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সূচি প্রায় দুই মাস এগিয়ে এসেছে। এর ফলে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন করতে পারেননি। ক্রমবর্ধমানহারে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন বছরে এ দেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ মুসলমান ওমরাহ পালন করে থাকেন। এবং কিছু ব্যাংকের তারল্যসংকটের কারণেও হজযাত্রী নিবন্ধন কমে থাকতে পারে।

দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
কোন দেশের কতজন হজ করতে পারবেন, তা নির্ধারণ করে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি)। ওআইসির তথ্য অনুযায়ী, দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ১ শতাংশ প্রতিবছর হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে আসছেন। সে অনুযায়ী ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের কোটা পেয়ে আসছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে নিবন্ধিত অনেকে ২০২০ সাল থেকে হজে যেতে পারেননি। করোনা অতিমারির ধাক্কা ২০২২ সাল পর্যন্ত ছিল। ২০২২ সালে হজে গিয়েছিলেন ৫৯ হাজার ৯০৯ জন। ২০২৩ সালে গিয়েছিলেন ১ লাখ ২২ হাজার ৮৮৪ জন, ২০২৪ সালে ৮৫ হাজার, ২০২৫ সালে ৮৭ হাজার ২০০ এবং আগামী বছরের (২০২৬ সালে) জন্য হজযাত্রী নিবন্ধন করেছেন ৭৩ হাজার ৪১৬ জন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৯ সালে সরকারি হজ প্যাকেজ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ৪ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয় ৪ লাখ ৬২ হাজার ১৫০ থেকে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। ২০২৩ সালে শুধু এক প্যাকেজে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা ছিল।
২০২৪ সালে করা হয় ৫ লাখ ৭৮ হাজার থেকে ৬ লাখ ৯৯ হাজার ৫৬৬ টাকা, ২০২৫ সালে করা হয় ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৭২০ থেকে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭০ টাকা এবং আগামী বছরের জন্য করা হয় ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ থেকে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা।
এদিকে প্রতিবছরই সরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরপরই বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকেরাও বেসরকারি হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে আসছেন। তাঁরা বরাবরই উড়োজাহাজের ভাড়া কমানোর পক্ষে বলে আসছেন। তবে বর্তমানে সৌদি আরব অংশে সব ধরনের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মোট খরচ বেড়েছে বলে তাঁরা জানান।
হজযাত্রী কোটা পূরণ হচ্ছে না কেন? জানতে চাইলে এজেন্সিগুলোর প্রতিনিধিরা বলছেন, অনেকেই ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ করছেন। এতে গ্রামগঞ্জের মানুষের ধারণা, তাঁদের হজ পালন হয়ে গেছে। এই কারণে অনেকে নিবন্ধন করার পরও তাঁদের টাকা ফেরত নিয়েছেন। গত বছর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার তিনজন বাসিন্দা হজ নিবন্ধন করার পরও হজে যাননি। পরে তাঁরা ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয়ে ওমরাহ পালন করে আসেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাওয়া হলে বেসরকারি হজ এজেন্সির মালিকদের সংগঠন হজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, উড়োজাহাজের ভাড়া অস্বাভাবিক বাড়া, সৌদি আরবে খরচ অনেক বেড়ে যাওয়া, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা, অনেক ব্যাংক গ্রাহকদের জমাকৃত টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, ব্যবসায় মন্দা ও এক বছর ধরে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধের কারণে অনেকেই হজে যেতে পারছেন না। ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ স্থিতিশীল হবে এবং বেশি মানুষ হজে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
দেশে হজযাত্রী কোটা পূরণ কেন হচ্ছে না, জানতে চাওয়া হয় ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের কাছে। তিনি তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দীকের মাধ্যমে জানান, সৌদি রোডম্যাপ অনুসারে হজযাত্রী নিবন্ধনের সময়সূচি প্রায় দুই মাস এগিয়ে এসেছে। এর ফলে পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অনেকে নিবন্ধন করতে পারেননি। ক্রমবর্ধমানহারে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশ থেকে ওমরাহযাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। এখন বছরে এ দেশ থেকে প্রায় ৪ লাখ মুসলমান ওমরাহ পালন করে থাকেন। এবং কিছু ব্যাংকের তারল্যসংকটের কারণেও হজযাত্রী নিবন্ধন কমে থাকতে পারে।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক
১২ ঘণ্টা আগেদুই দশক পর জেইসি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন দেশটির জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সর্বশেষ জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ দুই দশক পর আবার বৈঠক বসল, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতি এনেছে। বিশেষ করে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ উষ্ণ হতে শুরু করেছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে, এর পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাটসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চাই। ২০ বছর পর এই জেইসি বৈঠক হলো। একটি ইতিবাচক আলোচনার ধারা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে কোথায় সম্ভাবনা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আকাশ ও নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ আবার চালু, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, উচ্চশিক্ষা, ব্যাংকিং, পর্যটন, ক্রীড়া ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় দেশই বন্দর ও লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
একই বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে ‘হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
বৈঠক শেষে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী (দশম) জেইসি বৈঠক পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ থেকে পাট ও কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। দুই দেশের মধ্যে প্রায় দুই দশক পর অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম (জেইসি) বৈঠক। আজ সোমবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত এ বৈঠকে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদারে একাধিক সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন দেশটির জ্বালানি (পেট্রোলিয়াম বিভাগ) মন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক। বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
২০০৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সর্বশেষ জেইসি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দীর্ঘ দুই দশক পর আবার বৈঠক বসল, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন গতি এনেছে। বিশেষ করে গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ উষ্ণ হতে শুরু করেছে।
সভা শেষে সাংবাদিকদের পাকিস্তানের পেট্রোলিয়ামমন্ত্রী বলেন, ‘দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখনো ১ বিলিয়ন ডলারের নিচে, এর পরিমাণ বাড়ানো উচিত। আমরা বাংলাদেশ থেকে পাটসহ কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াতে চাই। ২০ বছর পর এই জেইসি বৈঠক হলো। একটি ইতিবাচক আলোচনার ধারা সৃষ্টি হয়েছে। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ সম্প্রসারণে কোথায় সম্ভাবনা আছে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হবে।’
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আকাশ ও নৌপথে সরাসরি যোগাযোগ আবার চালু, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। তিনি বৈঠকটিকে ‘অত্যন্ত সফল’ বলে উল্লেখ করেন।
বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, জ্বালানি, উচ্চশিক্ষা, ব্যাংকিং, পর্যটন, ক্রীড়া ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় দেশই বন্দর ও লজিস্টিক সুবিধা ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় হ্রাস ও আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
একই বৈঠকে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পাকিস্তান হালাল অথরিটির (পিএইচএ) মধ্যে ‘হালাল বাণিজ্য সহযোগিতা’ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাক্ষর করেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাকসুরা নূর এবং পাকিস্তানের পক্ষে ঢাকায় হাইকমিশনার ইমরান হায়দার।
বৈঠক শেষে উভয় দেশই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে। সিদ্ধান্ত হয়, পরবর্তী (দশম) জেইসি বৈঠক পারস্পরিক সুবিধাজনক সময়ে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হবে।

দীর্ঘ দিনের স্বৈরশাসনের পর বাংলাদেশ ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। গণতন্ত্রের দিকে দেশের অগ্রগতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হবে এসব অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচার করার সক্ষমতা। চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভব এবং তা হওয়া উচিত।
১৬ এপ্রিল ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ তিন ধাপে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এগুলো হলো আইনি ভিত্তি দিতে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার মাধ্য
৮ ঘণ্টা আগে
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পলাতক ২৪ জনের বিরুদ্ধে সাত মাসেও রেড নোটিশ জারি করেনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। বাংলাদেশ পুলিশের সূত্র বলেছে, তাঁদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইন্টারপোলের কাছে এ সহায়তা চাওয়া হয়
৮ ঘণ্টা আগে
দেশে ৬-৭ বছর ধরে হজযাত্রীর কোটা পূরণ হচ্ছে না। উড়োজাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি আরবে খরচ বেড়ে যাওয়া, রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিনিয়োগে ভাটাসহ নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
৯ ঘণ্টা আগে