Ajker Patrika

এআই নীতিমালা আসছে জুলাইয়ে, যা থাকছে

  • জুনে খসড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হতে পারে।
  • বর্তমানে এটির ওপর সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ১০: ০২
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। ছবি: ডেটের অ্যান্ড ওয়াইজেন
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। ছবি: ডেটের অ্যান্ড ওয়াইজেন

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের পর এবার জাতীয় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নীতিমালা আনতে যাচ্ছে সরকার। এ নীতিমালার খসড়া বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। আগামী জুলাই নাগাদ এই নীতিমালা জারি হতে পারে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এআই নীতিমালার খসড়ার কাজ শুরু হয়েছে বেশ আগেই। আমরা আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর এটা জুলাই নাগাদ অনবোর্ড (জারি) হয়ে যাবে। জুনে হয়তো উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হয়ে যাবে।’

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খসড়া নীতিমালা নিয়ে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। জুনে খসড়া নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হতে পারে। এরপর জুলাইয়ের মধ্যে নীতিমালার প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে গত এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এর খসড়া তৈরি করেছে ইউনেসকো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপির সমন্বয়ে এই খসড়া তৈরি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা, ২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪), দুটোই খসড়া আকারে রয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিসংক্রান্ত সুপারিশের মূল মূল্যবোধ ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক শাসনকাঠামোগত পরিবর্তনগুলো প্রতিফলিত করতে নীতিমালাটি হালনাগাদ করা গুরুত্বপূর্ণ; যাতে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

গত বুধবার (২১ মে) বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে আগের আইনের ৯টি ধারা বাদ দিয়ে কিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন বিতর্কিত ধারায় সাংবাদিকসহ বেশ কিছু মানুষকে হয়রানি, নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তখন আইনটি বাতিলের দাবি উঠেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ওই আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে মতামত চাওয়া হয়েছিল।

কী আছে নীতিমালায়

খসড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালার ৫.২.২ ধারায় ‘আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো’ অংশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্রসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা সংযোজনের লক্ষ্যে জাতীয় কৌশল হালনাগাদের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও নৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়।

মানবাধিকারের প্রসঙ্গে, খসড়া নীতিমালার ৩.৬ ধারা (‘মানব-কেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’)-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার পরিচালিত হবে আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার, মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং পছন্দকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ ও তত্ত্বাবধানের সুযোগ রাখা হবে।

খসড়া নীতিমালার ৫ নম্বর অধ্যায়, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ অংশে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ ও অর্থায়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়নি।

খসড়া নীতিমালার ৭ নম্বর অধ্যায় ‘নীতি পর্যালোচনা’-তে উল্লেখ করা হয়েছে যে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা প্রতি তিন বছর অন্তর নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের অংশগ্রহণ একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

খসড়া নীতিমালার ৪.৬ ধারাতে (‘অর্থ, বাণিজ্য ও অর্থনীতি’) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রভাব মূল্যায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৩.২ ধারায় (‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি’) নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, নীতিমালাটি ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়া ব্যাখ্যাযোগ্য হয়।

ইউনেসকোর ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা-২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪) দুটোই খসড়া আকারে রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাসনের জন্য নির্ধারিত বাধ্যতামূলক আইন বা ‘সফট ল’ ধরনের কোনো কাঠামো কার্যকর নেই। এ বিষয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়ার সময় অংশীজনেরা পরামর্শ দেন যে বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা সম্পর্কিত ইউনেসকোর সুপারিশগুলো ইসলামিক বিশ্ব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার মূল্যবোধের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা উচিত। বিশেষ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি; যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কভিত্তিক এআই সঙ্গী বা ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খেতে নাও পারে। সুতরাং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সফল গ্রহণযোগ্যতার জন্য তা দেশের নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত প্রেক্ষাপটে উপযোগী করে তোলা জরুরি।

‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এ আরও বলা হয়েছে, এআই প্রযুক্তি যখন ক্রমশ সরকারি সেবায় একীভূত হতে শুরু করবে, তখন ব্যবহারকারী, সেবা প্রদানকারী এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্পষ্ট ও ধারাবাহিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এআই নীতিমালা কেন গুরুত্বপূর্ণ

এআইয়ের অপব্যবহারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যাকিং, স্প্যাম ই-মেইলের মতো ঝুঁকি রয়েছে। এআই-প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে বিপ্লব ঘটালেও এর অপব্যবহারও বেড়েছে সমান তালে। এআইয়ের সাহায্যে ডিপফেক ভিডিও, ভুয়া ছবি, কনটেন্ট তৈরিসহ মানুষের সম্মানহানি, চাঁদাবাজি, সামাজিক হেনস্তাসহ ব্ল্যাকমেলিংয়ের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এআই প্রয়োগ নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে এআই আইন করেছে। কানাডায় এআই ও ডেটা অ্যাক্ট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে এআই প্রয়োগের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ এসেছিল। জাপান ও ইসরায়েলে এআই নীতিমালা রয়েছে। ভারতও এআই আইন নিয়ে কাজ শুরু করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০৩১ সাল পর্যন্ত এআই নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাত, মোবাইল ব্যাংকিং, মার্কেটিং খাতে এআইয়ের ব্যবহার বেশি। কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এআই এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করে। তবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও এআই প্রয়োগ নীতিমালা এবং আইন প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ২০১৯ সাল থেকে এআই কৌশল ও নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে। গত বছর তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই আইন প্রণয়ন হবে।

এআই নীতিমালার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। শিগগির এটা চূড়ান্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিকিৎসক নিয়োগ: ৪৮তম বিশেষ বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতে পারে কাল

জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট ও বিআইএম পেল নতুন মহাপরিচালক

প্রসিকিউটর নিয়োগে আইন উপদেষ্টা কেন স্বার্থের দ্বন্দ্ব বিবেচনায় নিলেন না: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

তালাক দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন সেই যুবক: পুলিশ

পুলিশ বাহিনীতে ৮ হাজার এএসআই নিয়োগের প্রস্তাব

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত