Ajker Patrika

এআই নীতিমালা আসছে জুলাইয়ে, যা থাকছে

  • জুনে খসড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হতে পারে।
  • বর্তমানে এটির ওপর সরকারি-বেসরকারি বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে।
অর্চি হক, ঢাকা 
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ১০: ০২
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। ছবি: ডেটের অ্যান্ড ওয়াইজেন
এআই প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশ সুবিধা থাকলেও এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বাধা রয়েছে। ছবি: ডেটের অ্যান্ড ওয়াইজেন

সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের পর এবার জাতীয় এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) নীতিমালা আনতে যাচ্ছে সরকার। এ নীতিমালার খসড়া বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যালোচনার পর্যায়ে রয়েছে। আগামী জুলাই নাগাদ এই নীতিমালা জারি হতে পারে।

এ বিষয়ে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের এআই নীতিমালার খসড়ার কাজ শুরু হয়েছে বেশ আগেই। আমরা আশা করছি, উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদনের পর এটা জুলাই নাগাদ অনবোর্ড (জারি) হয়ে যাবে। জুনে হয়তো উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন হয়ে যাবে।’

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খসড়া নীতিমালা নিয়ে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও অংশীজনদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। জুনে খসড়া নীতিমালা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হতে পারে। এরপর জুলাইয়ের মধ্যে নীতিমালার প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে গত এপ্রিলে ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এর খসড়া তৈরি করেছে ইউনেসকো। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে এটুআই, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ইউএনডিপির সমন্বয়ে এই খসড়া তৈরি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা, ২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪), দুটোই খসড়া আকারে রয়েছে। খসড়া নীতিমালাটি ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিসংক্রান্ত সুপারিশের মূল মূল্যবোধ ও নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক শাসনকাঠামোগত পরিবর্তনগুলো প্রতিফলিত করতে নীতিমালাটি হালনাগাদ করা গুরুত্বপূর্ণ; যাতে বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে।

গত বুধবার (২১ মে) বহুল বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করে গেজেট প্রকাশ করে। সেখানে আগের আইনের ৯টি ধারা বাদ দিয়ে কিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাইবার নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন বিতর্কিত ধারায় সাংবাদিকসহ বেশ কিছু মানুষকে হয়রানি, নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ কারণে তখন আইনটি বাতিলের দাবি উঠেছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে ওই আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১ ডিসেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের ওয়েবসাইটে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করে মতামত চাওয়া হয়েছিল।

কী আছে নীতিমালায়

খসড়া কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালার ৫.২.২ ধারায় ‘আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো’ অংশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিশাস্ত্রসংক্রান্ত দিকনির্দেশনা ও নীতিমালা সংযোজনের লক্ষ্যে জাতীয় কৌশল হালনাগাদের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দায়িত্বশীল ও নৈতিক উন্নয়ন ও ব্যবহারের জন্য দিকনির্দেশনা দেওয়া যায়।

মানবাধিকারের প্রসঙ্গে, খসড়া নীতিমালার ৩.৬ ধারা (‘মানব-কেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’)-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার পরিচালিত হবে আইনশৃঙ্খলা, মানবাধিকার, মর্যাদা, মূল্যবোধ এবং পছন্দকে সমুন্নত রাখার মাধ্যমে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে মানুষের হস্তক্ষেপ ও তত্ত্বাবধানের সুযোগ রাখা হবে।

খসড়া নীতিমালার ৫ নম্বর অধ্যায়, ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ অংশে প্রাতিষ্ঠানিক, আইনি ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

খসড়া নীতিমালায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিনিয়োগ ও অর্থায়নের জন্য একটি বাস্তবায়ন পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে খসড়া নীতিমালায় প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর জন্য নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ উল্লেখ করা হয়নি।

খসড়া নীতিমালার ৭ নম্বর অধ্যায় ‘নীতি পর্যালোচনা’-তে উল্লেখ করা হয়েছে যে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা প্রতি তিন বছর অন্তর নিয়মিতভাবে পর্যালোচনা করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের অংশগ্রহণ একটি মৌলিক উপাদান হিসেবে বিবেচিত হবে।

খসড়া নীতিমালার ৪.৬ ধারাতে (‘অর্থ, বাণিজ্য ও অর্থনীতি’) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত প্রভাব মূল্যায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ৩.২ ধারায় (‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি’) নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, নীতিমালাটি ডেটা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়া ব্যাখ্যাযোগ্য হয়।

ইউনেসকোর ‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা-২০২৪ এবং জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল (২০১৯-২৪) দুটোই খসড়া আকারে রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এখনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাসনের জন্য নির্ধারিত বাধ্যতামূলক আইন বা ‘সফট ল’ ধরনের কোনো কাঠামো কার্যকর নেই। এ বিষয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়ার সময় অংশীজনেরা পরামর্শ দেন যে বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নৈতিকতা সম্পর্কিত ইউনেসকোর সুপারিশগুলো ইসলামিক বিশ্ব শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার মূল্যবোধের সঙ্গে আরও ভালোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা উচিত। বিশেষ করে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি; যেমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্কভিত্তিক এআই সঙ্গী বা ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেসের মতো বিষয়গুলো বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে খাপ খেতে নাও পারে। সুতরাং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির সফল গ্রহণযোগ্যতার জন্য তা দেশের নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত প্রেক্ষাপটে উপযোগী করে তোলা জরুরি।

‘বাংলাদেশ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট’-এ আরও বলা হয়েছে, এআই প্রযুক্তি যখন ক্রমশ সরকারি সেবায় একীভূত হতে শুরু করবে, তখন ব্যবহারকারী, সেবা প্রদানকারী এবং সরকারি কর্তৃপক্ষের মধ্যে স্পষ্ট ও ধারাবাহিক যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।

এআই নীতিমালা কেন গুরুত্বপূর্ণ

এআইয়ের অপব্যবহারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে হ্যাকিং, স্প্যাম ই-মেইলের মতো ঝুঁকি রয়েছে। এআই-প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে বিপ্লব ঘটালেও এর অপব্যবহারও বেড়েছে সমান তালে। এআইয়ের সাহায্যে ডিপফেক ভিডিও, ভুয়া ছবি, কনটেন্ট তৈরিসহ মানুষের সম্মানহানি, চাঁদাবাজি, সামাজিক হেনস্তাসহ ব্ল্যাকমেলিংয়ের মতো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এআই প্রয়োগ নীতিমালা ও আইন প্রণয়ন করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২৩ সালে এআই আইন করেছে। কানাডায় এআই ও ডেটা অ্যাক্ট রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩ সালে এআই প্রয়োগের বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ এসেছিল। জাপান ও ইসরায়েলে এআই নীতিমালা রয়েছে। ভারতও এআই আইন নিয়ে কাজ শুরু করছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০৩১ সাল পর্যন্ত এআই নীতি ও কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে এআইয়ের ব্যবহার বাড়ছে। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাত, মোবাইল ব্যাংকিং, মার্কেটিং খাতে এআইয়ের ব্যবহার বেশি। কৃষি খাতেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশে এখন পাঁচ শতাধিক প্রতিষ্ঠান আছে, যারা এআই এবং মেশিন লার্নিং নিয়ে কাজ করে। তবে প্রতিষ্ঠানের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে কাজ করেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এমন অবস্থায় বাংলাদেশেও এআই প্রয়োগ নীতিমালা এবং আইন প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ২০১৯ সাল থেকে এআই কৌশল ও নীতিমালা নিয়ে কাজ করছে। গত বছর তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, সেপ্টেম্বরের মধ্যে এআই আইন প্রণয়ন হবে।

এআই নীতিমালার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এটা নিয়ে আমাদের কাজ চলছে। শিগগির এটা চূড়ান্ত হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সংসদ নির্বাচন ও গণভোট

ভোটের ঘণ্টা বাজবে আজ

  • সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা আজ।
  • সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন।
  • আদালতের রায়। আগের মতো বাগেরহাটে ৪টি ও গাজীপুরে পাঁচটি আসন থাকছে।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) ভোট গ্রহণ করা হতে পারে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ভাষণ ইতোমধ্যে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের জন্য সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় সেই ভাষণ প্রচার করা হবে।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ইসির সাক্ষাৎ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনের একটি প্রতিনিধিদল গতকাল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ, বেগম তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ এবং ইসি সিনিয়র সচিব মো. আখতার আহমেদ।

সাক্ষাতে রাষ্ট্রপতিকে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার (ওসিভি) এবং দেশের ভেতরে ডাকযোগে ভোট (আইসিপিভি) চালুর প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

এ ছাড়া একই দিনে একযোগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের জন্য দুটি আলাদা ব্যালট পেপার ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দেন।

সাক্ষাৎ শেষে ইসি সচিব সাংবাদিকদের জানান, ‘আমরা বিস্তারিতভাবে অবহিত করার পর রাষ্ট্রপতি সামগ্রিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’

সচিব আরও বলেন, ভোট গ্রহণের সময় এক ঘণ্টা বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কথাও রাষ্ট্রপতিকে জানানো হয়েছে। এবার ভোট গ্রহণ হবে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এ সিদ্ধান্তকে রাষ্ট্রপতি যৌক্তিক বলে উল্লেখ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

এবারের নির্বাচনে ৩০০টি সংসদীয় আসনের ৪২ হাজার ৭৬১টি ভোটকেন্দ্রে ১২ কোটি ৭৬ লাখ ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সংসদ ও গণভোটের কারণে কিছু ভোটকক্ষ ও গোপন কক্ষ (যেখানে ব্যালটে সিল দেওয়া হয়) বাড়াবে ইসি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাবরের মতো সাদা রঙের ব্যালট পেপার আর গণভোটের জন্য গোলাপি রঙের ব্যালট পেপার ব্যবহৃত হবে।

বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল

বাগেরহাটের সংসদীয় আসন একটি কমিয়ে আনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের গেজেটকে অবৈধ ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে গতকাল আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। ফলে নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানার গেজেট প্রকাশ না করে ৩০০ আসনে তফসিল ঘোষণা করতে পারবে না নির্বাচন কমিশন।

আজ তফসিল ঘোষণা করতে হলে আদালতের আদেশ অনুযায়ী নতুন করে সংসদীয় আসনের সীমানার গেজেট প্রকাশ করতে হবে। তা ছাড়া আইন অনুযায়ী, ৩০০ আসনের তফসিল ঘোষণা করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে বাগেরহাট ও গাজীপুর জেলার আসনগুলো বাদ রেখে ২৯১টি আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে।

সূত্র আরও জানায়, কমিশনের এই বিষয়ে রিভিউ করার সুযোগ রয়েছে। তবে কমিশন বর্তমান পরিস্থিতিতে আর রিভিউ করতে চায় না। কমিশন মনে করছে, এটা ইসির পক্ষে যাবে না, ইসি আদালতের রায় মেনে নিয়েছে। আজ তফসিলের আগেই আদালতের আদেশ ইসিতে চলে আসবে। কমিশনের পক্ষে যেসব কাজ করা প্রয়োজন, সেগুলো করা হচ্ছে। দ্রুতই গেজেট প্রকাশ করা হবে।

যদিও নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল এক ব্রিফিংয়ে ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ সীমানা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা এখনো আদালতের রায় হাতে পাইনি। সে জন্য আপাতত ৩০০ সংসদীয় আসনেই তফসিল ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ চূড়ান্ত করে। এতে ১৬ জেলার ৪৬টি সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনা হয়। এর ফলে বাগেরহাটে আসনসংখ্যা ৪টি থেকে কমিয়ে ৩টি করা হয় এবং গাজীপুরে আসন সংখ্যা ৫টি থেকে একটি বাড়িয়ে ৬টি করা হয়। আপিল বিভাগের রায়ের পর এখন নির্বাচন কমিশনকে বাগেরহাটে আবার ৪টি আসন এবং গাজীপুরে ৫টি আসন পুনর্বহাল করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ তফসিলের আগের দিন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: প্রেস উইং
পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। ছবি: প্রেস উইং

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগের দিন গতকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মো. মাহফুজ আলম। সন্ধ্যায় তাঁরা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এই দুই উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র কার্যকর হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

তফসিল ঘোষণার তোড়জোড়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগের গুঞ্জন ওঠে। গতকাল দুপুরে আসিফ মাহমুদ জরুরি সংবাদ সম্মেলন করবেন বলে গত মঙ্গলবার রাতে জানায় স্থানীয় সরকার বিভাগ।

দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসিফ মাহমুদ জানান, তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানাবে। এ বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারবেন না। পরে সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে আসিফ ও মাহফুজ তাঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।

পরে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যমুনার সামনে সংবাদ সম্মেলনে জানান, উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তাঁদের পদত্যাগ নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে।

আসিফ ও মাহফুজ পদত্যাগ করায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার সংখ্যা কমে ২০ জনে দাঁড়াবে। এই দুই উপদেষ্টার হাতে থাকা তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব কাদের দেওয়া হবে, এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘এই বিষয়টি পুরোপুরি প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন। আমি পদত্যাগপত্র দেখিনি।’

উপদেষ্টার পদে থেকে নির্বাচন করতে আইনি বাধা না থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনেকেই মত দিয়েছিলেন, তফসিল ঘোষণার পর দুই ছাত্র উপদেষ্টার সরকারে থাকা উচিত হবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সমন্বয়কদের নেতৃত্বে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ এই দলে যোগ দেবেন। তাঁরা দুজন সরকারে থাকার কারণে এনসিপি বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

বিএনপি গত ২৪ মে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লিখিতভাবে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানায়। সেদিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছিলেন, ‘পদত্যাগের ব্যাপারে আমরা লিখিত বক্তব্যে জানিয়েছি, আগেও জানিয়েছি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা (খলিলুর রহমান) এবং দুজন ছাত্র উপদেষ্টার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও মাহফুজ আলম) কারণে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হচ্ছে, তাঁদের বাদ দেওয়ার জন্য আজকেও লিখিত বক্তব্য দিয়েছি, মুখেও বলেছি।’

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে জায়গা পান। মো. নাহিদ ইসলামকে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আসিফ মাহমুদকে প্রথমে শ্রম মন্ত্রণালয় দেওয়া হলেও পরে তাঁকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

মাহফুজ আলম প্রথমে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর দায়িত্ব পান। এরপর তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়ে দপ্তরবিহীন ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে নাহিদ ইসলাম উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়ক হলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান মাহফুজ আলম।

এনসিপিতে যাচ্ছেন না আসিফ

পদত্যাগের গুঞ্জনের মধ্যে দুপুরে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘কোন অবস্থায় দায়িত্ব পেয়েছিলাম আর কোন অবস্থায় রেখে যাচ্ছি, সেটা আপনাদের জানাব। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১২-১৩ মাসের কার্যক্রম তুলে ধরছি।’ এরপর নিজের হাতে থাকা দুই মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিস্তারিত ঘণ্টাব্যাপী তুলে ধরেন তিনি।

এরপর সাংবাদিকেরা তাঁর পদত্যাগের বিষয়ে প্রশ্ন করলে স্পষ্ট করে কিছু না বললেও আসিফ জানান, তিনি এবারের নির্বাচনে অংশ নেবেন। কোন দল থেকে নির্বাচন করবেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করব, এটা স্পষ্টভাবেই বলা যায়। কিন্তু কোথায় থেকে করব, কোন দল থেকে, সেটা পরবর্তী সিদ্ধান্ত। আমরা এখন একটা পর্যায়ে আছি, পরের পর্যায় সবার সামনে আসবে।’

এনসিপি বা অন্য কোনো দল থেকে নির্বাচন করবেন কি না, এ প্রশ্নে আসিফ বলেন, ‘এ বিষয়ে সত্যিকার অর্থে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে সবাই জানতে পারবেন।’ এনসিপিতে যোগ দেবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যাঁরা গণ-অভ্যুত্থানে তাঁর সহযোগী ছিলেন, তাঁরাই সেই দলটা করেছেন। তিনি অনেক আগেই বলেছেন, এটা ধরে নেওয়া ঠিক হবে না, তিনি সেই দলেই যুক্ত হবেন বা অংশগ্রহণ করবেন।

আসিফ জানান, সকালে তিনি সম্পদের হিসাব দিয়েছেন এবং নিজের কূটনৈতিক পাসপোর্টও বাতিল করেছেন।

কিছুদিন আগে কুমিল্লা থেকে ঢাকা-১০ এলাকার ভোটার হয়েছেন আসিফ মাহমুদ। শোনা যাচ্ছে, তিনি ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করবেন।

মাহফুজ আলম নির্বাচন করবেন কি না, সে বিষয়ে কিছুই জানাননি। মাহফুজ লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ভোটার। আসিফ ও মাহফুজ বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন বলে গুঞ্জন থাকলেও ঢাকা-১০ আসনে ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে বিএনপি। বাংলাদেশ এলডিপিকে বিলুপ্ত করে ৮ ডিসেম্বর বিএনপিতে যোগ দেওয়া দলটির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিমকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে বিএনপির সূত্র বলেছে।

এনসিপি গতকাল ১২৫ আসনে দলীয় প্রার্থীদের যে তালিকা ঘোষণা করেছে, সেখানে ঢাকা-১০ ও লক্ষ্মীপুর-১ আসনে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার মঙ্গল কামনা

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারিতে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দুই ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রধান উপদেষ্টা তাঁদের ভবিষ্যৎ জীবনের মঙ্গল কামনা করেছেন বলে জানান প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তাঁদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা যেভাবে জাতিকে ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্তির পথে অবদান রেখেছ, তা জাতি মনে রাখবে। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতেও গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও বিকাশে তোমরা একইভাবে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে।’

শফিকুল বলেন, নিজেদের কর্মের মাধ্যমে দেশের মঙ্গলে নিয়োজিত থাকার আহ্বান জানিয়ে দুই ছাত্র উপদেষ্টার উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সরকারে থেকে যে অভিজ্ঞতা তাঁরা অর্জন করেছেন, তা ভবিষ্যৎ জীবনে অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা সরকারের তরফ থেকে সব সময় একই কথা বলছি, নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে হবে। আমরা যখন গ্রামে বা বিভিন্ন জেলা শহরে যাই, আমরা দেখেছি সেখানেও নির্বাচনের জোয়ার বইছে। কিন্তু কিছু কিছু তথাকথিত কমেন্টেটর ইউটিউবে বা বিভিন্ন টিভিতে বসে এই সন্দেহগুলো ছড়িয়েছে। তাদের মধ্যে তথাকথিত কিছু জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকও আছেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১৬ ডিসেম্বর চালু হবে এন‌ইআইআর, অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন নিবন্ধন করা যাবে মার্চ পর্যন্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
১৬ ডিসেম্বর চালু হবে এন‌ইআইআর, অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন নিবন্ধন করা যাবে মার্চ পর্যন্ত

মোবাইল ফোন চোরাচালান, ব্যবহৃত ও নকল ফোনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ এবং অপরাধ প্রতিরোধে ১৬ ডিসেম্বর থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) ব্যবস্থা চালু হবে। তবে বর্তমানে দেশে থাকা সব অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন আগামী বছরের ১৫ মার্চ পর্যন্ত নিবন্ধন করা যাবে।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশের (এমবিসিবি) সঙ্গে এ বিষয়ে গত তিন দিন ধারাবাহিক আলোচনা শেষে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশে থাকা সব অনিবন্ধিত মোবাইল ফোন ১৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ১৫ মার্চের মধ্যে নিবন্ধন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মোবাইল ফোন আমদানিতে কোনো বাধা নেই। কত পুরোনো ও কোন কোন মডেলের ফোন আমদানি করা যাবে, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবে। তবে সরকারের উপযুক্ত কর্তৃপক্ষকে আমদানির বিষয়ে জানাতে হবে। সব পক্ষকে আগামীকাল বৃহস্পতিবারের (১১ ডিসেম্বর) মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মোবাইল ফোন আমদানিতে শুল্ক পুনর্নির্ধারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলমান রয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এ বিষয়ে মধ্যস্থতা করবে। আমদানিকারক ও উৎপাদনকারীরা একসঙ্গে বসে সরকারকে লিখিতভাবে জানাবে।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আন্দোলনরত মোবাইল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেছে, এ সিদ্ধান্তের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নষ্ট করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর উদ্বোধন হবে। যেখানে মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এবং মোবাইল বিজনেস কমিউনিটির নেতারা দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারত হাসিনাকে ফেরত না দিলে কিছু করার নেই: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ১৭
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। ফাইল ছবি

জুলাই–আগস্ট অভ্যুত্থানে সংঘটিত হতাহতের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্তভাবে ভারতের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

দিল্লির আশ্রয়ে থাকা কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি হাসিনার প্রত্যর্পণের ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে আজ বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এমন তথ্য দেন।

জয়শঙ্করের বক্তব্যের বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কী তা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কী করতে পারি, বলেন তো? করণীয় তেমন কিছু আসলে নেই। কারণ ভারতকে রাজি হতে হবে অথবা চাইতে হবে তাকে ফেরত পাঠাতে।’

ভারত রাজি না হলে কিছুই কি করার নেই— এমন প্রশ্নের মুখে তৌহিদ হোসেন আবারও বলেন, ‘রাজি না হলে আসলেতো করার কিছু নাই। আমরা রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি, এইটুকুই। এর চেয়ে বেশি কিছু করতে পারি না।’

গত বছরের ৫ আগস্ট রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তারপর তিনি সেখানেই আছেন। তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও ভারতে আছেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনা ও কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। সেদিন এক বিবৃতিতে দুজনকে ফেরত দিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানায় সরকার। এরপর ২৩ নভেম্বর ভারতকে কূটনৈতিকপত্র পাঠায় সরকার।

তার তিনদিন পর দিল্লি চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করে। তবে শেখ হাসিনা ও কামালকে ফেরত দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে ভারত এখনো কিছু জানায়নি।

আওয়ামী লীগ সভাপতির ভারতে থাকার বিষয়টি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে অনুষ্ঠানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, হাসিনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর ‘ভারতে আসতে বাধ্য হওয়ার পরিস্থিতি’র প্রভাব থাকবে।

গত শনিবার এনডিটিভি লিখেছে, হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিটে এনডিটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক রাহুল কানওয়ালের সঙ্গে আলাপচারিতায় জয়শঙ্করের কাছে জানতে চাওয়া হয়, শেখ হাসিনা ‘যতদিন চান ততদিনই ভারতে থাকতে পারবেন কিনা’

জবাবে জয়শঙ্কর বলেন, ‘এটা একটা ভিন্ন বিষয়, তাই না? তিনি একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এখানে এসেছেন। তাকে ঘিরে যা ঘটছে তাতে সেই পরিস্থিতির স্পষ্ট প্রভাব রয়েছে বলে আমি মনে করি। কিন্তু তারপরও, এটা এমন এক বিষয় যে বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়টিতে দেশটির সরকারের ভূমিকার কথাও বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ভারতের বাইরে তৃতীয় কোনো দেশে শেখ হাসিনা যাওয়ার পরিকল্পনার বিষয়েও কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে খবর হয়েছে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটাও তো আমার কিছু করার নেই, বাংলাদেশেও খুব বেশি কিছু করার নেই। আমরা তো চাই যে, উনি ফেরত আসুক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত