Ajker Patrika

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জামায়াতের তিন প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠক। ছবি: সংগৃহীত

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। প্রথম প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে বাছাই কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় প্রস্তাবে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ ১০ সদস্যের সমন্বয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটির কথা বলছে দলটি।

এতেও সমাধান না এলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করার পক্ষে মত দিয়েছে তারা। তবে ১/১১-এর মতো পরিস্থিতি এড়াতে রাষ্ট্রপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে চায় না দলটি।

গত সোমবার ঐকমত্য কমিশনের কাছে এই তিন প্রস্তাব তুলে ধরে জামায়াতে ইসলামী।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গতকাল মঙ্গলবার রাজনৈতিক দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের বিষয়ে একমত হয়।

তবে উপদেষ্টা পরিষদের নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। কমিশনের পক্ষ থেকে শুরুতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের (এনসিসি) মাধ্যমে নিয়োগের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু দলগুলোর আপত্তির মুখে এনসিসির প্রস্তাব থেকে পিছু হটে কমিশন।

এই অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বিকল্প দুটো প্রস্তাব দিয়েছিল কমিশন। তবে তাতেও একমত হয়নি দলগুলো।

গত রোববার তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে একটি প্রস্তাব দেয় জামায়াতে ইসলামী। পরদিন এর রূপরেখা দেয় দলটি।

আগামী সপ্তাহে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া প্রস্তাব ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হতে পারে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের প্রস্তাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ ১২০ দিনের কথা বলা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করবে। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে মেয়াদ আরও ৬০ দিন বাড়বে।

জাতীয় সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫-৩০ দিন আগে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভঙ্গ হওয়ার সর্বোচ্চ ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত করতে হবে।

সংসদের মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে: প্রধান বিচারপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমন্বয়ে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে একটি বাছাই কমিটি হবে, যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি।

কমিটি গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে সভা করবে। প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য কমিটির কাছে সরকারি দল/জোট পাঁচজন, প্রধান বিরোধী দল/জোট পাঁচজন এবং সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী অন্যান্য বিরোধী দলগুলো দুজন করে নির্দলীয় প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারবে।

কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একজনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে।

বিকল্প প্রস্তাবে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫-৩০ দিন আগে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে এবং সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় সংসদীয় কমিটির কথা বলা আছে।

এতে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী/সংসদ নেতা/সরকারি দলের সংসদীয় দলনেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদের স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় ডেপুটি স্পিকার, সংসদ উপনেতা, সংসদের প্রধান হুইপ, বিরোধীদলীয় উপনেতা, বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দলের দুজন প্রতিনিধি।

এ কমিটি নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একজনকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বাছাই করবে।

এই পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কোনো ব্যক্তিকে চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা পদের জন্য সংসদের সরকারি দল/জোট পাঁচজন, সংসদের প্রধান বিরোধী দল/জোট পাঁচজন এবং সংসদের অন্যান্য বিরোধী দল তিনজন সর্বমোট ১৩ জন নির্দলীয় ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে।

কমিটি ওই ১৩ জনের মধ্যে একজনের নাম প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত করবে।

প্রথম দুটি পদ্ধতিতে একমত হওয়া না গেলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পুনর্বহাল করা হবে। তবে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার অপশনটি বাদ দেওয়া হবে।

জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে ভেঙে যাওয়ার ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে।

সে ক্ষেত্রে তাদের প্রস্তাবিত তিনটি পদ্ধতির যেটি গ্রহণ করা হবে, তার আলোকে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের প্রক্রিয়া করা হবে।

উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়ে জামায়াতের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রথম দুটি প্রস্তাবের কমিটি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পরামর্শ করে ১০-১৫ ব্যক্তির নাম রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবেন, যাদের মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি উপদেষ্টা নিয়োগ দেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত