অনলাইন ডেস্ক
মৃদুভাষী ড. আহসান এইচ মনসুরকে দেখে মনে হয় না তিনি দাগি দুর্নীতিবাজদের মনে ভয় ধরাতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গভর্নর ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য অবজারভার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকারের আমলেও তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
চলতি মাসের লম্বা সময়জুড়ে ৭৪ বছর বয়সী আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে ছিলেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, বিভিন্ন এনজিও, আইনজীবী এবং ‘অ্যাসেটস’ ট্র্যাকিং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে পাচার হওয়া কয়েক শ কোটি ডলার খুঁজে বের করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আহসান মনসুরের এই সফরের আগে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ এমপির কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল তাঁর সম্মানহানির উদ্দেশ্যে। এই প্রচারণার পেছনে কারা, তা স্পষ্ট নয়। ব্রিটিশ এমপিরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং ই-মেইলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এক এমপি এটিকে ‘অপতথ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
দ্য অবজারভারকে আহসান মনসুর বলেন, ‘সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায়...যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এবং বিশেষভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সরিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের ধাওয়া করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নাম জানি, আমরা সবাই তাদের নাম জানি এবং তারাই অথবা তাদের সহযোগীরা এগুলো (অপতথ্য) তৈরি করছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আমার খ্যাতি কমানো এবং আমি এমন নই।’
ব্রিটিশ এমপিদের কাছে পাঠানো ই-মেইলগুলোতে এমন ‘সাংবাদিকদের’ লেখা প্রতিবেদনের লিংক ছিল, যাঁদের নাম ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং দ্য অবজারভার তাঁদের ছবি স্টক ইমেজ হিসেবে খুঁজে পেয়েছে। এসব আর্টিকেলে বিশেষভাবে আহসান এইচ মনসুরের মেয়ে মেহরিনের দামি পোশাক ও আর্থিক সচ্ছলতার ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল।
নিজের মেয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘তিনি (মেহেরিন) একজন মার্কিন নাগরিক, বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সামান্যই সম্পর্ক আছে। কেন তাঁর পোশাকের ধরন একজন আমেরিকান থেকে আলাদা হতে হবে? আমার উপদেষ্টারা আমাকে এটি উপেক্ষা করতে বলছেন। অথবা আমি পদত্যাগ করতে পারি। কিন্তু যদি আমি পদত্যাগ করি, তবে তাঁরা জিতে যাবে।’
পাঠানো মেইলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর অংশ ছিল একটি ব্রিটিশ খ্যাতি ব্যবস্থাপনা সংস্থার পাঠানো একটি ই-মেইল, যেখানে অভিযোগ করা হয়, তাঁকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী এবং হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘মানহানি করতে প্রস্তুত’ বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের পর তিনি এ বছরের শুরুতে পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশের সম্পদ উদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিলেও তিনি বলছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে কিছুই বলিনি। আমার প্রধান লক্ষ্য হলো যারা আমার ব্যাংক লুট করেছে।’
লন্ডন হয়তো তাঁর সেই লক্ষ্যের চাবিকাঠি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএসএআইডির তহবিল কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তহবিলের ছোট একটি উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় যখন বাংলাদেশ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, তখন দেশের অন্যতম বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খুব একটা বেশি না-ও হতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ান, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও আলজাজিরার তদন্তে দেখা গেছে, হাসিনা সরকারের কিছু সদস্য লন্ডনের রিয়েল এস্টেট খাতে শত শত কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছেন। অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আহসান মনসুর বলেন, ‘এটি (লন্ডন) কেবল বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও আসা এই দুর্নীতিবাজদের জন্য অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এটি একটি নিরাপদ আশ্রয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ব্রিটেন থেকে এ পর্যন্ত কত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে? খুব বেশি নয়।’ তবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে অত্যন্ত সমর্থন করে, যা খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।
ব্রিটিশ তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় তদন্তকারীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোও সাহায্য করছে। এ মাসের শুরুতে মনসুর কয়েক ডজন আইনি সংস্থা, মামলায় তহবিল সরবরাহকারী ও সম্পদ ট্র্যাকারদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। এই সম্মেলনে এত বেশি লোকসমাগম হয়েছিল যে, যাঁরা দেরিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা জায়গা পাননি। তাঁদের জুম কলের মাধ্যমে যুক্ত হতে হয়েছিল।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা মনে করি, ব্রিটিশ আইনে এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অনেক শক্তিশালী বিধান রয়েছে। ইংলিশ আইনি ব্যবস্থার একটি সুনাম রয়েছে এবং যদি আমরা এখানে বিজয়ী হতে পারি, তবে আমরা দেশের অন্যান্য বিচার বিভাগেও অনুরূপ বিজয় অর্জন করতে পারব। আমরা সবাই এই খেলায় নতুন। এ ধরনের দুর্নীতিবাজ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না।’
মনসুরের মতে, এর পরের পদক্ষেপ হবে যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদের বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার (জব্দ করার আদেশ) জারির জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো। তিনি বলেন, ‘এটি নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়ার অংশ। আমরা এটিকে দ্রুত করার চেষ্টা করছি। আমরা এ বছর সেই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৃষ্ট ছিদ্রগুলো বন্ধ করা। সেই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্যই তিনি ৭০ বছর বয়সে অবসর থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ, কারণ আমার রক্তচাপ ওঠানামা করছে। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেন, আর আমি এখানে দিনে ১৫টি মিটিং করছি।’
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ২৫ বছরেরও বেশি সময় কাজ করা আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশের নতুন যাত্রার শুরুতে থাকতে না পেরে নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে সরকার আমাকে গভর্নরের পদ প্রস্তাব করেছিল। আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমি গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ, আমি জানতাম তিনি তিন মাসের মধ্যে আমাকে বরখাস্ত করবেন এবং তারপরে আমাকে হয় মুখ বন্ধ রাখতে হবে অথবা দেশ ছাড়তে হবে। আমি এর কোনোটিই করতে চাইনি।’
হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গতি মনসুরকে অবাক করেছিল। তবে সরকারের পতন হবে, বিষয়টি তিনি জানতেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবদ্দশায় এই বিপ্লব দেখব তা কখনো ভাবিনি। তিনি দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন, এটি হিটলারের শাসনের মতো ছিল। তবে আমি একটি বিষয় জানতাম, তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই তাদের পতন ডেকে আনবে। সবকিছু এতটাই দ্রুত ঘটেছে, যা কেউ ভাবতেও পারেনি। এটি একটি বড় স্বস্তি, আশা করি আরও ভালো কিছু আসছে।’
মৃদুভাষী ড. আহসান এইচ মনসুরকে দেখে মনে হয় না তিনি দাগি দুর্নীতিবাজদের মনে ভয় ধরাতে পারবেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই গভর্নর ক্ষমতাধর অনেক ব্যক্তিকেই নাড়িয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান দ্য অবজারভার ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, হাসিনা সরকারের আমলেও তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।
চলতি মাসের লম্বা সময়জুড়ে ৭৪ বছর বয়সী আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে ছিলেন। সেখানে তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরের মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট, বিভিন্ন এনজিও, আইনজীবী এবং ‘অ্যাসেটস’ ট্র্যাকিং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাঁরা তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের আমলে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে পাচার হওয়া কয়েক শ কোটি ডলার খুঁজে বের করতে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আহসান মনসুরের এই সফরের আগে বেশ কয়েকজন ব্রিটিশ এমপির কাছে ই-মেইল পাঠানো হয়েছিল তাঁর সম্মানহানির উদ্দেশ্যে। এই প্রচারণার পেছনে কারা, তা স্পষ্ট নয়। ব্রিটিশ এমপিরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন এবং ই-মেইলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। এক এমপি এটিকে ‘অপতথ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
দ্য অবজারভারকে আহসান মনসুর বলেন, ‘সম্পদ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায়...যাঁরা বাংলাদেশ থেকে এবং বিশেষভাবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ সরিয়ে ফেলেছেন, তাঁদের ধাওয়া করে যাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নাম জানি, আমরা সবাই তাদের নাম জানি এবং তারাই অথবা তাদের সহযোগীরা এগুলো (অপতথ্য) তৈরি করছে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আমার খ্যাতি কমানো এবং আমি এমন নই।’
ব্রিটিশ এমপিদের কাছে পাঠানো ই-মেইলগুলোতে এমন ‘সাংবাদিকদের’ লেখা প্রতিবেদনের লিংক ছিল, যাঁদের নাম ভুয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে এবং দ্য অবজারভার তাঁদের ছবি স্টক ইমেজ হিসেবে খুঁজে পেয়েছে। এসব আর্টিকেলে বিশেষভাবে আহসান এইচ মনসুরের মেয়ে মেহরিনের দামি পোশাক ও আর্থিক সচ্ছলতার ওপর আলোকপাত করা হয়েছিল।
নিজের মেয়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ‘তিনি (মেহেরিন) একজন মার্কিন নাগরিক, বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁর সামান্যই সম্পর্ক আছে। কেন তাঁর পোশাকের ধরন একজন আমেরিকান থেকে আলাদা হতে হবে? আমার উপদেষ্টারা আমাকে এটি উপেক্ষা করতে বলছেন। অথবা আমি পদত্যাগ করতে পারি। কিন্তু যদি আমি পদত্যাগ করি, তবে তাঁরা জিতে যাবে।’
পাঠানো মেইলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিভ্রান্তিকর অংশ ছিল একটি ব্রিটিশ খ্যাতি ব্যবস্থাপনা সংস্থার পাঠানো একটি ই-মেইল, যেখানে অভিযোগ করা হয়, তাঁকে যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মন্ত্রী এবং হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের ‘মানহানি করতে প্রস্তুত’ বলে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।
বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়েরের পর তিনি এ বছরের শুরুতে পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশের সম্পদ উদ্ধার প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিলেও তিনি বলছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্তের সঙ্গে তিনি জড়িত নন। তিনি বলেন, ‘আমি তাঁর পরিস্থিতি নিয়ে কিছুই বলিনি। আমার প্রধান লক্ষ্য হলো যারা আমার ব্যাংক লুট করেছে।’
লন্ডন হয়তো তাঁর সেই লক্ষ্যের চাবিকাঠি হতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের ইউএসএআইডির তহবিল কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তে ঢাকার অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য তহবিলের ছোট একটি উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় যখন বাংলাদেশ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে, তখন দেশের অন্যতম বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ অনুসন্ধানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা খুব একটা বেশি না-ও হতে পারে।
দ্য গার্ডিয়ান, ফিন্যান্সিয়াল টাইমস ও আলজাজিরার তদন্তে দেখা গেছে, হাসিনা সরকারের কিছু সদস্য লন্ডনের রিয়েল এস্টেট খাতে শত শত কোটি পাউন্ড বিনিয়োগ করেছেন। অবশ্য তাঁদের বিরুদ্ধে এখন তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে আহসান মনসুর বলেন, ‘এটি (লন্ডন) কেবল বাংলাদেশ নয়, অন্যান্য দেশ থেকেও আসা এই দুর্নীতিবাজদের জন্য অন্যতম পছন্দের গন্তব্য। এটি একটি নিরাপদ আশ্রয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই।’
এ সময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘ব্রিটেন থেকে এ পর্যন্ত কত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে? খুব বেশি নয়।’ তবে তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য চুরি হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে অত্যন্ত সমর্থন করে, যা খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ।
ব্রিটিশ তদন্ত সংস্থা ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির বিশেষজ্ঞরা ঢাকায় তদন্তকারীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এসেছিলেন। পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানিগুলোও সাহায্য করছে। এ মাসের শুরুতে মনসুর কয়েক ডজন আইনি সংস্থা, মামলায় তহবিল সরবরাহকারী ও সম্পদ ট্র্যাকারদের একটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন। এই সম্মেলনে এত বেশি লোকসমাগম হয়েছিল যে, যাঁরা দেরিতে যোগ দিয়েছেন তাঁরা জায়গা পাননি। তাঁদের জুম কলের মাধ্যমে যুক্ত হতে হয়েছিল।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমরা মনে করি, ব্রিটিশ আইনে এ ধরনের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে অনেক শক্তিশালী বিধান রয়েছে। ইংলিশ আইনি ব্যবস্থার একটি সুনাম রয়েছে এবং যদি আমরা এখানে বিজয়ী হতে পারি, তবে আমরা দেশের অন্যান্য বিচার বিভাগেও অনুরূপ বিজয় অর্জন করতে পারব। আমরা সবাই এই খেলায় নতুন। এ ধরনের দুর্নীতিবাজ ও সম্পদ পুনরুদ্ধারসংক্রান্ত বিষয়গুলোর সঙ্গে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতা আমার আগে ছিল না।’
মনসুরের মতে, এর পরের পদক্ষেপ হবে যুক্তরাজ্যে থাকা সম্পদের বিরুদ্ধে ফ্রিজিং অর্ডার (জব্দ করার আদেশ) জারির জন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো। তিনি বলেন, ‘এটি নিষেধাজ্ঞার প্রক্রিয়ার অংশ। আমরা এটিকে দ্রুত করার চেষ্টা করছি। আমরা এ বছর সেই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখতে চাই।’
তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সৃষ্ট ছিদ্রগুলো বন্ধ করা। সেই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্যই তিনি ৭০ বছর বয়সে অবসর থেকে ফিরে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ, কারণ আমার রক্তচাপ ওঠানামা করছে। ডাক্তার বিশ্রাম নিতে বলেন, আর আমি এখানে দিনে ১৫টি মিটিং করছি।’
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) ২৫ বছরেরও বেশি সময় কাজ করা আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশের নতুন যাত্রার শুরুতে থাকতে না পেরে নিজেকে সামলাতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে সরকার আমাকে গভর্নরের পদ প্রস্তাব করেছিল। আমি বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। আমি গ্রহণ করতে পারিনি। কারণ, আমি জানতাম তিনি তিন মাসের মধ্যে আমাকে বরখাস্ত করবেন এবং তারপরে আমাকে হয় মুখ বন্ধ রাখতে হবে অথবা দেশ ছাড়তে হবে। আমি এর কোনোটিই করতে চাইনি।’
হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গতি মনসুরকে অবাক করেছিল। তবে সরকারের পতন হবে, বিষয়টি তিনি জানতেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবদ্দশায় এই বিপ্লব দেখব তা কখনো ভাবিনি। তিনি দেশের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন, এটি হিটলারের শাসনের মতো ছিল। তবে আমি একটি বিষয় জানতাম, তাদের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনাই তাদের পতন ডেকে আনবে। সবকিছু এতটাই দ্রুত ঘটেছে, যা কেউ ভাবতেও পারেনি। এটি একটি বড় স্বস্তি, আশা করি আরও ভালো কিছু আসছে।’
শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের এক লাখের বেশি নেতা-কর্মী দিল্লিতে আশ্রয় নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা এখনো ভারতে বসে চক্রান্ত করছে। আওয়ামী লীগ দল ছিল না, তারা ছিল মাফিয়া। তাদের কোনো দিন রাজনৈতিকভাবে দাঁড়াতে দেবো না
৩৯ মিনিট আগেমার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’–এ ‘অ্যাজ বাংলাদেশ রিইনভেন্ট ইটসেলফ, ইসলামিস্ট হার্ড–লাইনারস সি অ্যান ওপেনিং’ বা বাংলাদেশের নতুন পরিস্থিতিকে কট্টর ইসলামপন্থীরা মতাদর্শ কায়েমের সুযোগ হিসেবে দেখছে—এমন শিরোনামে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তবে এই নিবন্ধকে বিভ্রান্তিকর ও এটি একপক্ষীয় ধারণা তৈরি করছে
১ ঘণ্টা আগেমিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ সামগ্রীর দ্বিতীয় মিশন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তিনটি পরিবহন বিমানের মাধ্যমে এসব ত্রাণ পাঠানো হয়। এছাড়াও ত্রাণের সঙ্গে রয়েছেন ৫৫ সদস্যের উদ্ধারকারী দল।
৬ ঘণ্টা আগেভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের এই সময়ে বাংলাদেশ ও তুরস্কের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক সাউথ-সাউথ তথা দক্ষিণ-দক্ষিণ (গ্লোবাল সাউথের দুটি দেশের মধ্যকার) সহযোগিতার এক চমৎকার উদাহরণ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে। ঐতিহাসিক বন্ধন ও প্রায় একই রকমের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এই দুটি দেশকে দীর্ঘকাল ধরে...
১০ ঘণ্টা আগে