Ajker Patrika

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের যেসব কারণ দেখাল অন্তর্বর্তী সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০: ২৩
Thumbnail image

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির দাবির মুখে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

আজ বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ‘নিষিদ্ধ সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ ৫ দফা দাবি জানিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল গতকাল মঙ্গলবার। 

একদিনের মাথায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আবদুল মোমেন ‘রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে’ এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করলেন। 

ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করার কারণ দেখিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে, বিশেষ করে বিগত ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ‘হত্যা, নির্যাতন, গণরুমকেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট-বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী’ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। এ বিষয়ে প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতে প্রমাণিতও হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে ‘উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ’ করে শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে।

পরবর্তী সময়ে ‘৫ আগস্ট তারিখ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের’ সঙ্গে জড়িত বলে সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ আছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়।

এসব কারণ দেখিয়ে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’-এর ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং এই ছাত্রসংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্তা হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাঙালির স্বাধিকারের বিভিন্ন আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ছাত্রলীগ। তবে সময়ের পরিক্রমায় ছাত্রলীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিজেদের মধ্যে দলাদলি, অন্তঃকোন্দল, হামলা-মারামারি, খুন, শিক্ষার্থী নির্যাতন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে ছাত্রলীগের সমালোচনা হয়েছে।

চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৯ সালে সমালোচনার মুখে ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী (শোভন) ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করেন শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন আবরার। পরে ওই হত্যা মামলায় ২০ জনের মৃত্যুদণ্ড আর ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন আদালত।

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় দরজি দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন মৃত্যুদণ্ড এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পান। একই বছর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদকে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০১৮ সালে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একই দাবিতে ২০২৪ সালে আবার আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫ জুলাই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। 

ওই দিনই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ক্যাম্পাসে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ হয়েছে, তার জবাব দেওয়ার জন্য ছাত্রলীগ প্রস্তুত। তবে ১৬ জুলাই রাতে এবং পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বের করে দেন শিক্ষার্থীরা। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাঁদের বের করে দেওয়া হয়।

২০২২ সাল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন সাদ্দাম হোসেন। সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান)। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আত্মগোপনে চলে যান ছাত্রলীগের নেতারা। 

তবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর রাতে ছাত্রলীগের প্যাডে তাঁদের স্বাক্ষরে একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। বিবৃতিতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তকে ‘অবৈধ ও অসাংবিধানিক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত