Ajker Patrika

দোষারোপের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে সুষ্ঠু বিচার করুন: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
দোষারোপের সংস্কৃতি বাদ দিয়ে সুষ্ঠু বিচার করুন: টিআইবি

দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কুমিল্লাসহ দেশের অন্তত ১৫টি জেলায় শতাধিক সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় অন্তত ছয়জন নিহত এবং কয়েক শ মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজনৈতিক দোষারোপের ঘেরাটোপে আটকে এসব ঘটনার বিচার না হওয়ায় নিয়মিত বিরতিতে এ ধরনের সহিংসতা ঘটছে বলে মনে করছে সংস্থাটি। তাই এই ধারাবাহিক সহিংসতাকে আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার সুযোগ নেই। 

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ জীবন-জীবিকার ওপর প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলমান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ মাঠ প্রশাসন দুঃখজনক ব্যর্থতার পরিচয় দিল। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শতাধিক মামলায় কয়েক হাজার আসামি করা হলো। অথচ চিরাচরিত রাজনৈতিক দোষারোপের বাইরে এখন পর্যন্ত অধিকাংশ স্থানেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। এই ঘটনার পূর্ববর্তী সব সহিংসতাতেও আমরা একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যায় এবং নিয়মিত বিরতিতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটতেই থাকে।’ 

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিগত এক দশকে ৩ হাজারেরও অধিক সহিংস হামলায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের দেড় হাজারেরও বেশি বাড়িঘর, প্রতিমা, পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের একটি ঘটনাতেও আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির তথ্য পাই না। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতিই হামলাকারীদের আরও উসকে দিচ্ছে এবং সাম্প্রদায়িকতার বীজ জিইয়ে রেখেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রতি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা চিরতরে নির্মূল করে সহিংসতার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণ অসম্ভবই রয়ে যাবে।’ 

কুমিল্লার ঘটনার পরপর কারিগরি ত্রুটির কথা বলে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখে এবং মূলধারার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার না করে সহিংসতা রোধের প্রাগৈতিহাসিক ব্যর্থ প্রচেষ্টার সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে নয়, বরং দলমত নির্বিচারে তাৎক্ষণিকভাবে প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনলে পরিস্থিতি এত দূর গড়াত না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। বিশেষ করে, সাম্প্রতিক অতীতে রামু, উখিয়া, নাসিরনগর, সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার তথ্য থেকে এই আশঙ্কা অমূলক নয় যে, প্রতিটি সহিংসতার পেছনেই কোনো না কোনো স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশ আছে। ধর্মের মোড়কে যা ভয়ংকর আগ্রাসী হয়ে উঠছে। কিন্তু পর্দার পেছনের কুশীলবদের অদৃশ্য আঙুলের ইশারায় তারা সব সময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’ 

এই সব প্রভাবশালীদের সুরক্ষা দিতেই প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করা হয় না—এমন সন্দেহ অলীক হবে না মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের সাংবিধানিক অধিকার বাস্তবায়নে অপরাধীকে সুরক্ষা প্রদান না করে প্রচলিত আইনে এ ধরনের ফৌজদারি অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’ 

২০০১ সালের নির্বাচনের পরপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা তদন্তে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট গঠিত শাহাবুদ্দিন কমিশন ২০১২ সালে বেশ কিছু সুপারিশসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদন প্রায় এক দশক পরও কেন প্রকাশ করা হলো না—এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই কমিশন প্রায় ১৮ হাজার সহিংসতার ঘটনার বিপরীতে জমা পড়া ৫ হাজার ৫৭৯টি অভিযোগের মধ্যে ৩ হাজার ৬২৫টি অভিযোগের তদন্ত করে ১ হাজার ৭৮ পৃষ্ঠার বিশাল প্রতিবেদন জমা দিল। আমরা এমনকি জানতেও পারলাম না যে, সেখানে কি সুপারিশ ছিল! আমরা মনে করি, এ ধরনের প্রতিটি ঘটনাতে তদন্ত কমিটি গঠন এবং তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ না করার চর্চা বাদ দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে আন্তরিকভাবে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ করার এখনই সময়। টিআইবি সাম্প্রতিক ঘটনায় জড়িত সবার কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি দেশে ভবিষ্যতে যেন আর এমন জঘন্য অপরাধ সংঘটিত না হয়, সে জন্য সুনির্দিষ্ট ও বাস্তবায়নযোগ্য কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের দাবি জানায়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত