রজত কান্তি রায়, ঢাকা
থালার মাঝখানে আমনের মোটা চালের লালচে ভাত, তার ওপর আলগোছে রেখে দেওয়া এক টুকরো কাগজি বা গন্ধরাজ লেবু। একদিকে পাট কিংবা কলমিশাক ভাজা, পটোল, উচ্ছে অথবা কাঁকরোল ভাজা। মিষ্টিকুমড়া-আলু-বরবটি-শজনে ডাঁটার ঘন্ট কিংবা সুক্তো, বাটিতে পাঁচফোড়ন ও আস্ত কাঁচা মরিচ চিরে দেওয়া টলটলে ঝোলে রান্না করা পাকা রুই মাছ। সঙ্গে চালতা, শুকনা বরই, কেওড়া কিংবা আমের টক অথবা একটুখানি আচার আর কাঁসার গ্লাসে ঠান্ডা পানিতে চিপে দেওয়া সুগন্ধি লেবুর রস—সাধারণত এ রকমই এক প্যাটার্নে গ্রীষ্মের খাবার সাজানো হয় পাতে। তরকারির উনিশ-বিশ হতে পারে। কিন্তু এই যে হালকা মসলায় পাতলা ঝোল, খাবারে তিতা ও টক স্বাদের উপস্থিতি, বিভিন্ন ধরনের শরবতের প্রাধান্য আর ফার্মেন্টেড বা গাঁজানো খাবার, এটাই গ্রীষ্মের ট্রেডমার্ক।
এবারের এল নিনো প্রভাবিত গ্রীষ্ম যখন প্রাণিকুলকে বেশ কাবু করে ফেলেছে, তখন মানুষকে নিদান দেওয়া হচ্ছে, সুস্থ থাকতে খাবারটা হতে হবে হালকা। কিন্তু থাকতে হবে ভিটামিন-মিনারেলসহ যাবতীয় উপাদান। বিষয়টা এমন, যেন সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে।
খেয়াল করলেই দেখবেন, খাবারের দিক দিয়ে বাঙালি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ ভাগ্যবান। এই ভূখণ্ডে আশ্চর্যজনকভাবে ছয় ঋতু বিরাজ করে। আবার প্রতিটি ঋতুতে নির্দিষ্ট ধরনের ধানসহ শাকসবজি ও ফলমূল জন্মে। শত শত বছর ধরে এভাবেই গড়ে উঠেছে এ দেশের খাদ্যসংস্কৃতি। ফলে খাবার নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না আমাদের।
গ্রীষ্মকালে প্রায়ই খাওয়া হয় পান্তা। রাতে ভাত রান্না করে তাতে পানি ঢেলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে সেটা পান্তা হয়। আমাদের শত শত বছরের অভিজ্ঞতা, পান্তা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। একসময় এটা ছিল আমাদের ধারণা; এখন সেটা ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত সত্য। টেলে বা পুড়িয়ে নেওয়া শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, যেকোনো ভর্তা, বাসি তরকারি মেখে পান্তা খাওয়া যায়। আর এসব না থাকলে মরিচ চটকে, লবণ মেখে ও পেঁয়াজ কামড়ে এক প্লেট পান্তা তো খাওয়াই যায় এই গরম সকালে।
আগেই বলেছি, এ সময় প্রচুর পরিমাণে টক ও তিতা খাবার খাওয়ার প্রচলন আছে আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে। মসুর ডালে কাঁচা আম ফেলে দিয়ে টক রান্না করা যায়। আমরুল শাক দিয়ে পুঁটি মাছের টক রান্না করা যায়। কিংবা শীতে দেশি বরই শুকিয়ে রেখে গ্রীষ্মে তার পাতলা ঝোলের টক খাওয়ার চল আছে এ দেশে। আর এসব রান্নায় তেল-মসলার বালাই খুব একটা নেই বলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। শুধু টক ফল নয়; ঢাকার এক ঐতিহ্যবাহী খাবার আছে—নুনিয়া শাক দিয়ে গরুর মাংস। এই নুনিয়া বা নুইন্যে শাক টক স্বাদের এবং এটি গ্রীষ্মের শাক। এ সময় তিতা স্বাদের শাকও পাওয়া যায়। কুচি কুচি করে আলু কেটে তাতে গিমি বা গিমা শাকের তিতা খুব একটা খারাপ লাগে না।
গ্রীষ্মের হিরো হলো শজনে। ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ প্রবাদের যে খাড়া, সেটাই হলো শজনে। শজনে ডাঁটা ও শাক—দুটিই আমরা খেয়ে থাকি। মসুরের ডালের সঙ্গে এক ইঞ্চি সমান লম্বা করে কাটা শজনে ডাঁটা কিংবা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে মিশেল দিয়ে তার ঘন্ট সবকিছুতেই ছক্কা হাঁকায় শজনে। এর পাতা তথা শাক দিয়ে খাওয়া হয় উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত খাবার প্যালকা। শজনেপাতা, কচুপাতা, পুঁইশাক, পাটপাতা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই বিখ্যাত খাবার। এর সঙ্গে ছোট ছোট আলুর ভাজা দারুণ কম্বিনেশন গ্রীষ্মের দুপুরে।
সাজিয়ে-গুছিয়ে আমাদের খাওয়ার অভ্যাস দুপুরে। তারপর একটা ভাতঘুম। মূল খাবার বলে দুপুরকেন্দ্রিক আয়োজনটাও হয় রাজসিক। মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন রান্না এ সময়ই হয়ে থাকে সাধারণত। ফলে রান্নার ঘনঘটা দুপুরেই বেশি। সেই মঙ্গলকাব্যের যুগ বা মৈমনসিংহ গীতিকার আদিকাল থেকেই দেখি, ধারাটা একই।
বলতে পারেন, সবই তো সবজি আর নিরামিষের মতো খাবার। হবেই তো। ‘পীত-সুগন্ধি ঘৃতে অন্ন সিক্তকৈল।/ চারিদিগে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল।।’ তেল-মসলা-ঘিয়ের স্রোত বয়ে যাওয়া খাবার খাওয়ার সময় নয় গ্রীষ্মকাল। এ সময় রয়েসয়ে মোলায়েম খাবার খেতে হয়। না হলে শরীর ঝামেলায় ফেলতে পারে।
থালার মাঝখানে আমনের মোটা চালের লালচে ভাত, তার ওপর আলগোছে রেখে দেওয়া এক টুকরো কাগজি বা গন্ধরাজ লেবু। একদিকে পাট কিংবা কলমিশাক ভাজা, পটোল, উচ্ছে অথবা কাঁকরোল ভাজা। মিষ্টিকুমড়া-আলু-বরবটি-শজনে ডাঁটার ঘন্ট কিংবা সুক্তো, বাটিতে পাঁচফোড়ন ও আস্ত কাঁচা মরিচ চিরে দেওয়া টলটলে ঝোলে রান্না করা পাকা রুই মাছ। সঙ্গে চালতা, শুকনা বরই, কেওড়া কিংবা আমের টক অথবা একটুখানি আচার আর কাঁসার গ্লাসে ঠান্ডা পানিতে চিপে দেওয়া সুগন্ধি লেবুর রস—সাধারণত এ রকমই এক প্যাটার্নে গ্রীষ্মের খাবার সাজানো হয় পাতে। তরকারির উনিশ-বিশ হতে পারে। কিন্তু এই যে হালকা মসলায় পাতলা ঝোল, খাবারে তিতা ও টক স্বাদের উপস্থিতি, বিভিন্ন ধরনের শরবতের প্রাধান্য আর ফার্মেন্টেড বা গাঁজানো খাবার, এটাই গ্রীষ্মের ট্রেডমার্ক।
এবারের এল নিনো প্রভাবিত গ্রীষ্ম যখন প্রাণিকুলকে বেশ কাবু করে ফেলেছে, তখন মানুষকে নিদান দেওয়া হচ্ছে, সুস্থ থাকতে খাবারটা হতে হবে হালকা। কিন্তু থাকতে হবে ভিটামিন-মিনারেলসহ যাবতীয় উপাদান। বিষয়টা এমন, যেন সাপও মরে আবার লাঠিও না ভাঙে।
খেয়াল করলেই দেখবেন, খাবারের দিক দিয়ে বাঙালি প্রাকৃতিকভাবেই বেশ ভাগ্যবান। এই ভূখণ্ডে আশ্চর্যজনকভাবে ছয় ঋতু বিরাজ করে। আবার প্রতিটি ঋতুতে নির্দিষ্ট ধরনের ধানসহ শাকসবজি ও ফলমূল জন্মে। শত শত বছর ধরে এভাবেই গড়ে উঠেছে এ দেশের খাদ্যসংস্কৃতি। ফলে খাবার নিয়ে খুব একটা চিন্তা করতে হয় না আমাদের।
গ্রীষ্মকালে প্রায়ই খাওয়া হয় পান্তা। রাতে ভাত রান্না করে তাতে পানি ঢেলে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে সেটা পান্তা হয়। আমাদের শত শত বছরের অভিজ্ঞতা, পান্তা খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। একসময় এটা ছিল আমাদের ধারণা; এখন সেটা ল্যাবরেটরিতে প্রমাণিত সত্য। টেলে বা পুড়িয়ে নেওয়া শুকনা মরিচ, পেঁয়াজ, যেকোনো ভর্তা, বাসি তরকারি মেখে পান্তা খাওয়া যায়। আর এসব না থাকলে মরিচ চটকে, লবণ মেখে ও পেঁয়াজ কামড়ে এক প্লেট পান্তা তো খাওয়াই যায় এই গরম সকালে।
আগেই বলেছি, এ সময় প্রচুর পরিমাণে টক ও তিতা খাবার খাওয়ার প্রচলন আছে আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে। মসুর ডালে কাঁচা আম ফেলে দিয়ে টক রান্না করা যায়। আমরুল শাক দিয়ে পুঁটি মাছের টক রান্না করা যায়। কিংবা শীতে দেশি বরই শুকিয়ে রেখে গ্রীষ্মে তার পাতলা ঝোলের টক খাওয়ার চল আছে এ দেশে। আর এসব রান্নায় তেল-মসলার বালাই খুব একটা নেই বলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। শুধু টক ফল নয়; ঢাকার এক ঐতিহ্যবাহী খাবার আছে—নুনিয়া শাক দিয়ে গরুর মাংস। এই নুনিয়া বা নুইন্যে শাক টক স্বাদের এবং এটি গ্রীষ্মের শাক। এ সময় তিতা স্বাদের শাকও পাওয়া যায়। কুচি কুচি করে আলু কেটে তাতে গিমি বা গিমা শাকের তিতা খুব একটা খারাপ লাগে না।
গ্রীষ্মের হিরো হলো শজনে। ‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’ প্রবাদের যে খাড়া, সেটাই হলো শজনে। শজনে ডাঁটা ও শাক—দুটিই আমরা খেয়ে থাকি। মসুরের ডালের সঙ্গে এক ইঞ্চি সমান লম্বা করে কাটা শজনে ডাঁটা কিংবা বিভিন্ন সবজির সঙ্গে মিশেল দিয়ে তার ঘন্ট সবকিছুতেই ছক্কা হাঁকায় শজনে। এর পাতা তথা শাক দিয়ে খাওয়া হয় উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত খাবার প্যালকা। শজনেপাতা, কচুপাতা, পুঁইশাক, পাটপাতা মিশিয়ে তৈরি করা হয় এই বিখ্যাত খাবার। এর সঙ্গে ছোট ছোট আলুর ভাজা দারুণ কম্বিনেশন গ্রীষ্মের দুপুরে।
সাজিয়ে-গুছিয়ে আমাদের খাওয়ার অভ্যাস দুপুরে। তারপর একটা ভাতঘুম। মূল খাবার বলে দুপুরকেন্দ্রিক আয়োজনটাও হয় রাজসিক। মাছ-মাংসসহ বিভিন্ন রান্না এ সময়ই হয়ে থাকে সাধারণত। ফলে রান্নার ঘনঘটা দুপুরেই বেশি। সেই মঙ্গলকাব্যের যুগ বা মৈমনসিংহ গীতিকার আদিকাল থেকেই দেখি, ধারাটা একই।
বলতে পারেন, সবই তো সবজি আর নিরামিষের মতো খাবার। হবেই তো। ‘পীত-সুগন্ধি ঘৃতে অন্ন সিক্তকৈল।/ চারিদিগে পাতে ঘৃত বাহিয়া চলিল।।’ তেল-মসলা-ঘিয়ের স্রোত বয়ে যাওয়া খাবার খাওয়ার সময় নয় গ্রীষ্মকাল। এ সময় রয়েসয়ে মোলায়েম খাবার খেতে হয়। না হলে শরীর ঝামেলায় ফেলতে পারে।
তাই হাই গ্রামের বাসিন্দারা ২২ বছর ধরে একসঙ্গে তিন বেলা খাওয়াদাওয়া করে। ২০১৪ সালে ভিয়েতনামের থাই গুয়েন প্রদেশ সরকার এই গ্রামকে আনুষ্ঠানিক পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করে। ২০২২ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা তাই হাই-কে বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটন গ্রামের মর্যাদা দেয়।
৩ ঘণ্টা আগেআমরা সবাই কখনো না কখনো রেগে যাই। কারও ওপর, নিজের ওপর, পরিস্থিতির ওপর, কিংবা কখনো এমনকি অজানা এক শূন্যতার ওপরও। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মানুষ কেন রেগে যায়? রাগ কি কেবলই একটি আবেগ, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে থাকে বহুস্তর বিশ্লেষণ, অতীত অভিজ্ঞতা, অসহায়ত্ব, অপূর্ণতা এবং একধরনের মানসিক প্রতিক্রিয়া?
১২ ঘণ্টা আগেঅনেকে কাঁকড়া খেতে ভালোবাসেন। তবে যাঁরা এই প্রথম বাজার থেকে কাঁকড়া কিনে এনেছেন রাঁধবেন বলে, তাঁদের জন্য কাঁকড়া ভুনার রেসিপি ও ছবি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী ওমাম রায়হান।
১ দিন আগেশহরটির বয়স প্রায় ১১০ বছর। ‘ম্যাড ম্যাক্স বিয়ন্ড থান্ডারডোম’, ‘প্রিসিলা’, ‘ডেজার্ট কুইন’ ও ‘রেড প্ল্যানেট’ চলচ্চিত্র যাঁরা দেখেছেন, বিস্তারিত না জানলেও তাঁরা এই শহর এবং তার পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত। কারণ, এই চলচ্চিত্রগুলো শতবর্ষী শহরটিতেই চিত্রায়িত হয়েছিল।
১ দিন আগে