Ajker Patrika

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস

নিয়মিত রক্ত দিতে চাইলে সুস্থ রাখুন নিজেকে

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ জুন ২০২৫, ১৬: ১৬
নিয়মিত রক্ত দিতে চাইলে সুস্থ রাখুন নিজেকে

বাংলাদেশে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষের দুর্ঘটনা, অস্ত্রোপচার, থ্যালাসেমিয়া ও অন্যান্য রক্তনির্ভর রোগের কারণে রক্ত প্রয়োজন। রক্ত পাওয়া সহজ করে তুলতে চালু আছে ব্লাড ব্যাংক। হাসপাতালে কিংবা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর ব্লাড ব্যাংক গড়ে ওঠে সাধারণ মানুষের রক্তদানের সিদ্ধান্ত থেকে। একজন দাতার এই সিদ্ধান্তের কারণে কখন কার জীবন বেঁচে যায়, তা অনেকে জানতেও পারেন না। একটি জীবন বাঁচানোর চেয়ে সুন্দর কাজ দ্বিতীয়টি নেই। একটি জীবন বেঁচে যাওয়া মানে তাঁর সঙ্গে জড়িত আরও অনেকগুলো জীবনের সুন্দর করে বেঁচে থাকা। তাই একজন রক্তদাতা সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রক্তদাতাদের সুস্থ থাকা জরুরি।

আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর একজন সুস্থ মানুষ ৩ থেকে ৪ বার রক্ত দিতে পারেন কোনো স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া। তবে নিয়মিত রক্তদানের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি, যাতে দাতার শরীরও সুস্থ থাকে, আর রক্তের মানও থাকে ভালো। রক্তদাতাকে সবার আগে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে জানতে হবে। রক্তদান মানেই শুধু অন্যকে বাঁচানো নয়, এটি নিজের শরীরকেও চর্চার মধ্যে রাখা। নিয়ম মেনে চললে রক্তদান কখনোই ক্ষতিকর নয়। বরং এতে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমে, শরীরের অতিরিক্ত আয়রন কমে যায় এবং একধরনের আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।

প্রতি ৩ মাসে একবারের বেশি রক্ত না দেওয়াই ভালো। প্রতিবার রক্ত দেওয়ার পর শরীর ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিলিটার রক্ত হারায়। এ রক্ত পূরণে শরীরের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। তাই ডব্লিউএইচও এবং বাংলাদেশ ব্লাড ডোনার সোসাইটির সুপারিশ অনুযায়ী, পুরুষেরা বছরে সর্বোচ্চ ৪ বার ও নারীরা ৩ বার রক্ত দিতে পারেন।

রক্ত দেওয়ার আগে কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। সেগুলো হলো,

রক্তদানের আগে শরীর পরীক্ষা করুন

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, রক্তদানের আগে অবশ্যই হিমোগ্লোবিন, ওজন ও উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। ডব্লিউএইচও–র তথ্য মতে, একজন পুরুষের ক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিনের ন্যূনতম মাত্রা হওয়া উচিত ১৩.০ গ্রাম/ডেসিলিটার এবং নারীর ক্ষেত্রে ১২.৫ গ্রাম/ডেসিলিটার। একজন ব্যক্তির ভর (ওজন) এবং উচ্চতা থেকে পাওয়া মানকে বলে বডি মাস ইনডেক্স। এই মান ১৮.৫ এর নিচে হলে রক্তদানে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ কম ওজনের মানুষের ক্ষেত্রে রক্তদানের পর দুর্বলতা দেখা দিতে পারে।

সুষম ও আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খান

আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা

  • মাংস: গরু–খাসির মাংস, মুরগির মাংস, কলিজা, মাছ।
  • শাকসবজি: সবুজ শাকসবজি।
  • ডাল: মসুর ডাল, ছোলা, রাজমা ইত্যাদি।
  • ফল: কলা, ডালিম, খেজুর, আপেলসহ অন্যান্য ফল।
  • বাদাম: বাদাম, কাজু, এবং অন্যান্য বাদাম।
  • অন্যান্য: টমেটো পেস্ট, টমেটো সস।

নিয়মিত রক্তদাতাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি গবেষণা বলছে, পর্যাপ্ত আয়রন গ্রহণ না করার কারণে নিয়মিত রক্তদানকারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি আয়রন ঘাটতির ঝুঁকিতে থাকেন। তাই রক্তদানের আগে ও পরে লাল মাংস, ডিমের কুসুম, পালং শাক, কলিজা, সবুজ শাকসবজি, কলা, ডাল ও আয়রন-ফোর্টিফায়েড খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

প্রচুর পানি পান করুন

রক্তদানের দিন ও তার আগের দিন বেশি পরিমাণে পানি পান করলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেবে না এবং দুর্বলতা কম হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক থেকে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী, রক্তদানের আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

প্রচুর পানি পান করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
প্রচুর পানি পান করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

রক্তদানের পর বিশ্রাম নিন

রক্তদানের পর অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট বসে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। রক্তদান কেন্দ্রে বসে বিশেষত হালকা মিষ্টি বা গ্লুকোজ জাতীয় খাবার খাওয়া দরকার। এরপর অন্তত ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা ভারী কাজ, জিম বা বাইক চালানো থেকে বিরত থাকতে হবে।

অত্যধিক রক্তদান নয়

প্রতি ৩ মাসে একবারের বেশি রক্ত না দেওয়াই ভালো। প্রতিবার রক্ত দেওয়ার পর শরীর ৪৫০ থেকে ৫০০ মিলিলিটার রক্ত হারায়। এ রক্ত পূরণে শরীরের ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ সময় লাগে। তাই ডব্লিউএইচও এবং বাংলাদেশ ব্লাড ডোনার সোসাইটির সুপারিশ অনুযায়ী, পুরুষেরা বছরে সর্বোচ্চ ৪ বার ও নারীরা ৩ বার রক্ত দিতে পারেন।

নিয়মিত রক্ত পরীক্ষায় অভ্যস্ত হন

যেহেতু নিয়মিত রক্তদাতারা দীর্ঘ মেয়াদে হিমোগ্লোবিন ও আয়রন ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়তে পারেন, তাই বছরে অন্তত একবার সিবিসি এবং আয়রন প্রোফাইল পরীক্ষা করানো উচিত। এতে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায়।

নিয়মিত রক্ত দিতে চাইলে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস
নিয়মিত রক্ত দিতে চাইলে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। ছবি: পেক্সেলস

রক্তদানের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিন

রক্তদান শুধু শারীরিকই নয়, এটি মানসিক দায়িত্বও বটে। অনেকেই সুচ ফোবিয়া থেকে বা দুর্বলতার কথা ভেবে ভয় পান। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা রক্তদানের আগে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেন এবং মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকেন তাঁদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেক কম হয়।

সূত্র: ডব্লিউএইচও, মায়ো ক্লিনিক, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত