Ajker Patrika

নতুন ইতিহাসের অংশ অংকিতা

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭: ০৫
নতুন ইতিহাসের অংশ অংকিতা

সবাই যখন শীতযাপনে ব্যস্ত, তখন অংকিতা ইসলাম একটি ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের এমবিএ প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছেন রূপান্তরিত লিঙ্গের মানুষ অংকিতা ইসলাম। বিষয়টি যত সহজে বলা হলো, ততটা সহজ যে ছিল না, সেটা সহজেই বোঝা যায়।  সে কঠিন বিষয়টি সহজ করেছেন অংকিতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অংকিতার স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। অদম্য ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ‘ভয়ে’ তিনি ভর্তি পরীক্ষা দেননি। স্নাতক শেষ করে সেই স্বপ্ন পূরণ করতে বাণিজ্যিক কোর্স এমবিএতে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হন তিনি।

অংকিতার স্বপ্নপূরণের সক্রিয় অংশীদার রূপান্তরিত লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট হোচিমিন ইসলাম। টাঙ্গাইলের নান্দুরিয়ায় অংকিতার বাড়ি। করটিয়ার সরকারি সা’দত কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক শেষ করেছেন তিনি। একটি এনজিওর মানবসম্পদ বিভাগে কাজও শুরু করেন অংকিতা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নের কথা তিনি জানিয়েছিলেন হোচিমিন ইসলামকে। এরপর সাহস করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ফোন করেন অংকিতা। বিষয়টি খোলামেলাভাবে উপাচার্যকে জানালে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে আশ্বাস দেন।

অংকিতা ইসলাম।

অংকিতা জানিয়েছেন, ‘আমার ভর্তি হওয়ার পথটি সহজ ছিল না। হোচিমিন আপু আমার জন্য আশীর্বাদ। উপাচার্য স্যার যখন আমার বিষয়টি জানতে পারেন, তখন তিনি ডিন স্যারকে ফোনে জানান। পরে হোচিমিন আপুসহ আমি ডিন স্যারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করি। শুধু একটি কাগজ পূরণ করে ভর্তি হয়ে যাই। সার্বক্ষণিক সঙ্গে থেকে ডিন স্যার সহযোগিতা করেছেন।’

এমবিএতে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৮৩তম স্থান অর্জন করেন অংকিতা। হোচিমিন ইসলাম বলেন, ‘অংকিতার ইচ্ছাপূরণে অংশীদার হতে পেরে খুশি লাগছে। তার খুশিতে আমিও খুশি। কবে থেকে সে বলাবলি করছিল! পরে যখন এমবিএর সার্কুলার দেখলাম, তখন তার ভর্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। উপাচার্য স্যার বিষয়টি আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন, বাণিজ্যিক এই কোর্সে অংকিতাকে কোনো ফি দিতে 
হবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘নিজের যোগ্যতায় অংকিতা এত দূর এসেছে। এ ঘটনার মাধ্যমে সমাজে নতুন একটা মেসেজ যাবে। অংকিতার ভর্তি হওয়াতে নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হবে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যাঁরা স্টেকহোল্ডার আছেন, তাঁরা এটি দেখে অনুপ্রাণিত হবেন। আমরা চাই, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হোক।’

উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসডিজি বাস্তবায়নে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সমাজে নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত ও নিগৃহীত ছিল ট্রান্সজেন্ডাররা। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ বিনির্মাণের জন্য, বিশেষ করে সুবিধাবঞ্চিত, অবহেলিত প্রান্তিক মানুষের প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত