Ajker Patrika

ফ্যাশনে এগিয়ে ছিলেন সালমান

ইমন আরিয়ান
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২: ৩০
ফ্যাশনে এগিয়ে ছিলেন সালমান

নায়ক সালমান শাহ অভিনয়ে যেমন দক্ষ ছিলেন, তেমনি তাঁর স্টাইল ও ফ্যাশন-সচেতনতা ছিল সময়ের চেয়ে বেশ এগিয়ে। সিনেমা-সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মুখাবয়ব, সুমিষ্ট বাচনভঙ্গি, হাসি, ক্যারিশম্যাটিক অভিনয়ের বাইরে সালমান শাহ তৎকালীন হাজারো তরুণ-তরুণীর হৃদয় জয় করতে পেরেছিলেন শুধু তাঁর ফ্যাশন সেন্সের কারণে।

সে সময় তিনি ছিলেন অনেকেরই ফ্যাশন আইকন। বিশেষ করে মাথায় ব্যান্ডানা, ডান হাতে ঘড়ি, ব্যাকব্রাশ চুল, কলারে রুমালের ব্যবহার, টি-শার্ট, জিনস, বাহারি ডিজাইনের টুপি বা হ্যাট ব্যবহারের কারণে তিনি হয়ে উঠেছিলেন তারুণ্যের ক্রেজ। ১৯ সেপ্টেম্বর জনপ্রিয় এই তারকার জন্মদিন। 

সালমান শাহর ‘স্বপ্নের পৃথিবী’ ছবির পরিচালক বাদল খন্দকার বলেন, ‘তখন রাস্তায় বের হলেই চোখে পড়ত অসংখ্য তরুণের সালমান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তরুণীদের কাছে তিনি ছিলেন স্বপ্নের নায়ক। এখনো সালমান সবার হৃদয়ে আছেন। নতুন যাঁরা নায়ক হতে চান, তাঁরা আসলে সালমান শাহ হতে চান।’ 

চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী কথা প্রসঙ্গে সালমান শাহ সম্পর্কে বলেন, ‘সিনেমার হিরোদের নানান স্টেরিওটাইপের ভিড়ে সালমান শাহ ছিলেন স্বতঃস্ফূর্ত একজন অভিনেতা। তিনি সময়ের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে ছিলেন, এমনকি এখনকার সময়ের তুলনায়ও যেন তিনি এগিয়ে। শিক্ষাদীক্ষা বা জীবনযাপনের ছাপ মানুষের চলন-বলন, এমনকি তাকানোতেও ফুটে ওঠে। মেইনস্ট্রিম স্টার কারখানার মধ্যেও এ কারণে তিনি আলাদা আলো ছড়াতেন।’ 

সিনেমা ও বাস্তবে অভ্যাসগতভাবে যেসব পোশাকশৈলীতে স্বচ্ছন্দবোধ করতেন, সেটাই ছিল সালমান শাহর ফ্যাশন। স্টাইলের দিক থেকে সালমানের নিজস্ব ধরন বা ভঙ্গি ছিল। দেশীয় আবহের সঙ্গে পশ্চিমা কালচারের মিল রেখে নিত্যনতুন ধারণা যোগ করেছিলেন ফ্যাশনে এবং মৃত্যুর আগপর্যন্ত নিজেকে আপ টু ডেট রেখেছিলেন। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তাঁর পোশাক, শরীরী ভাষা, অভিব্যক্তি, লুক, চরিত্রের সঙ্গে মানানসই স্টাইল—সবকিছুতে ছিল আধুনিকতার ছোঁয়া।

সালমান শাহর ফ্যাশন সম্পর্কে চিত্রনায়িকা মৌসুমী বলেন, ‘তাঁর গোল ফ্রেমের চশমা, দাঁত দিয়ে নখ কাটা অথবা হাঁটুতে রুমাল বাঁধা—এসব ফ্যাশন লুফে নিয়েছিল তরুণেরা।’ চিত্রনায়ক রিয়াজ বলেন, ‘সময়কে ধরে রাখা যায় না। কিন্তু কর্ম, ফ্যাশন, বৈচিত্র্য যুগের পর যুগ সতেজ থাকে। তারই প্রমাণ সালমান শাহ।’ 

সালমান শাহর কয়েকটি ছবিতে ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন মো. মতি। তিনি জানিয়েছেন, যেকোনো সিনেমাতে কস্টিউম সিলেকশনের বিষয়টি সালমানের ওপর ছেড়ে দিতেন পরিচালকেরা। ফরমাল পোশাক পরবেন, নাকি ক্যাজুয়াল লুক নেবেন, সে সিদ্ধান্ত সালমানই নিতেন। যেকোনো প্রয়োজনে আউটডোরে গেলে কিংবা শুটিংয়ের জন্য দেশের বাইরে গেলে ফিরে আসার সময় তাঁর সঙ্গে থাকত বিভিন্ন ধরনের পোশাকভর্তি একাধিক লাগেজ। অধিকাংশ সময়ে দেশের বাইরেই কেনাকাটা করতেন সালমান শাহ। 

জুতা, টুপি ও ঘড়ি
তৎকালীন ফ্যাশন আইকন সালমান শাহ ‘নিউ এরা কোম্পানি’সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অ্যাডজাস্টেবল বা স্ট্র্যাপ ক্যাপ পরতেন। অনেক সিনেমায় লম্বা পাঞ্জাবির সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী নেপালি টুপি পরতেও দেখা গেছে তাঁকে। সালমানের বাসায় শত শত জোড়া জুতা, লোফার, কনভার্স, হাই বুট ও স্নিকার্স ছিল। তিনি সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে জুতা পরিবর্তন করতেন। অল্প দিনের ক্যারিয়ারে সালমান সিনেমায় মোট তিন শতাধিক জোড়া জুতা ব্যবহার করেছিলেন! ছেলেরা বাঁ হাতে ঘড়ি পরলেও সালমান সব সময় ডান হাতে ঘড়ি পরতেন। এদিক থেকেও তিনি ব্যতিক্রম ছিলেন। সালমান শাহ যেদিন মারা যান, সেদিনও তাঁর হাতে দেড় লাখ টাকা মূল্যের রাডো ব্র্যান্ডের ঘড়ি ছিল। 

জুয়েলারি
ফরমাল ও ক্যাজুয়াল—উভয় ধরনের পোশাকের সঙ্গে সালমান বিভিন্ন ধরনের ব্রেসলেট ব্যবহার করতেন, গলায় সোনার চেইনের পাশাপাশি হর্ন বা সিলভার পেন্ডেন্ট পরতেন। কানে পুরুষের পরার উপযোগী মেন স্টাড থাকত। হাতের আঙুলে সোনার আংটির সঙ্গে পাথরের আংটিও পরতেন তিনি। 

চশমা ও সানগ্লাস 
সালমানের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল সানগ্লাস ও চশমা। তাঁর চেহারা ওভাল শেপের ছিল, সে কারণে সব ফ্রেমের চশমাতেই তাঁকে মানিয়ে যেত। সিনেমায় তাঁকে গোলাকার, এভিয়েটর, ক্লাব মাস্টার ও ওয়েফেরারস সানগ্লাস পরতে দেখা গেছে। গোলাকার ফ্রেমের চশমাও ব্যবহার করতেন তিনি। সানগ্লাস ও চশমার পাশাপাশি কনটাক্ট লেন্স ব্যবহার করতেন সালমান। 

গত কয়েক বছরে চলচ্চিত্রে কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছেন ফারাহ দিবা। বিশেষ করে সুপারস্টার শাকিব খানের আলোচিত সব চলচ্চিত্রের কস্টিউম তাঁর ডিজাইনে তৈরি করা। ফারাহ জানিয়েছেন, সালমান শাহর সিনেমায় ফ্যাশন প্রেজেন্টেশনে ভারসাম্য ছিল লক্ষণীয়। তাঁর পোশাকের কালার সেন্স ছিল ইউনিক। তিনি নিউট্রাল শেডে স্মার্ট পোশাক পরতেন। তাঁর ব্যবহৃত ফ্যাশন অনুষঙ্গ, যেমন চশমা, ব্রেসলেট, নেপালি টুপি, ক্যাপ, ব্যান্ডানা অনেক ফ্যাশনেবল ছিল। সেগুলো তাঁর চরিত্রের সঙ্গে মিলে যেত।

নব্বইয়ের দশকে তিনি স্টাইল দেখিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে তিনি ফ্যাশনে অনেক এগিয়ে ছিলেন। সালমান শাহর হেয়ারস্টাইলকে যুগ যুগ ধরে বলা যায় ‘সালমান শাহ স্টাইল’। সিনেমাতে এখন শাকিব খানের কস্টিউম করতে গেলে তিনি ব্যক্তিগত জীবনে কেমন, সেটা বিবেচনায় রেখে ব্যালান্স করতে হয়। সালমান শাহ যেসব চরিত্র ও ফ্যাশনে উপস্থাপিত হতেন, সেখানে তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে হতো। ফারাহ বলেন, ‘আমার মনে হয় সালমান শাহর এসব স্টাইল আজীবন ইউনিক থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত