Ajker Patrika

খ-এ খিচুড়ি

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ৪৬
খ-এ খিচুড়ি

আইনের ফ্যাকড়া
এখনকার দিনের আইন খুব কড়া। কারও কোনো বিষয়ের কনসেপ্ট যদি মেরে দেন আর মূল মালিক যদি প্রমাণসহ আপনার নামে কেস করে দেন, বুঝতে পারবেন কপিরাইটের মামলা বিষয়টা কী। আর আমাদের কোন প্রপিতামহ কোন আদ্দিকালে খিচুড়ি নামের খাবারটার কনসেপ্ট তৈরি করেছিলেন, সেটা আমরা জানি না। কিন্তু শতকের পর শতক খিচুড়ি নামের এই খাবারটি আমরা কপি পেস্টের মাধ্যমে উদরপূর্তি করেই চলেছি কোনো রয়্যালিটি ছাড়া। এবার ভাবুন তো, হাজার বছরের ইতিহাস ঠেলে এক পাথরের মানুষ আপনার সামনে এসে বললেন, খিচুড়ির কনসেপ্ট মেরে দেওয়ার জন্য তোমাদের নামে কেস করলাম। কী বলবেন তখন? সে যাকগে, খিচুড়ির ব্যাপারে আমরা থোড়াই কেয়ার করি মামলা-মোকদ্দমা। 

খিচুড়ি খাব
বলছিলাম, খ-এ খিচুড়ি যেমন হয়, খ-এ খাবও তেমন হয়। তাই না? পুরোটা মিলে খিচুড়ি খাব। খিচুড়ি নামের এই খাবারটা খাওয়ার আদর্শ সময় আসলে দুটো—শীত আর বর্ষা। তবে শীত এক নম্বর আদর্শকাল আর বর্ষা দুই নম্বর আদর্শকাল। একবার মনে করে দেখুন তো, এই শীতের সকালে চাল-ডাল-মসলার গন্ধ ভুর ভুর করে নাকে লাগছে। ঘুম টুটে যাবে না? টুটে যাওয়া ঘুম ভেঙে উঠে হালকা রোদে পিঠ পেতে হলুদ খিচুড়ির ওপর সোনালি রঙের ঘি ছড়িয়ে গরম-গরম খাওয়ার যে আনন্দ, সেটা অন্য সময় মিলবে না। আর শীত মানেই তো রং। অর্থাৎ তাজা সবজির রং। খিচুড়িতে সেসব তাজা সবজি দিয়ে দিন টপাটপ। তার তেজ ও স্বাদ দুটোই বাড়বে।

ছবি: সান্তনা চক্রবর্তীনিরামিষ ও আমিষ খিচুড়ি
নিরামিষ কিংবা আমিষ দুভাবেই খিচুড়ি রাঁধা যায়। আমিষ করে রাঁধতে হলে রসুন-পেঁয়াজ দিয়ে তাতে পাঁচফোড়নের বাগাড় দিয়ে চাল-ডাল তুলে দিন। আর নিরামিষের সময় সেগুলো দেবেন না। তাহলেই হলো। অন্য কোনো মসলা আপনি দিন বা না দিন, পাঁচফোড়ন অবশ্যই দিতে হবে। কারণ খিচুড়িতে ডাল থাকে। আর ডাল পাঁচফোড়নের বাগাড় ছাড়া সুস্বাদু হয় না, সে আপনি যতই তর্কবিতর্ক করুন না কেন। এই পর্যায়ে এসে আপনাদের কিছু তথ্য দিয়ে রাখি।

খিচুড়ি হলো ‘ঘৃতহরিদ্রাদিযুক্ত দ্বিদলমিশ্র অন্ন।’ অর্থাৎ চালের সঙ্গে ঘি, ডাল আর হলুদ মিশিয়ে খিচুড়ি বানানো হতো একসময়। ‘দ্বিদল’ অর্থ ডাল। সংস্কৃত ‘কৃশর’ শব্দ থেকে খিচুড়ি শব্দটি এসেছে। চালের সঙ্গে তিল সেদ্ধ করে তৈরি হতো সে কৃশর বা খিচুড়ি। আমরা সাধারণত যে খিচুড়ি খাই বা বড় কোনো অনুষ্ঠানে যে খিচুড়ি রান্না হয়, সেটাই আসলে জগাখিচুড়ি। সে খিচুড়িতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। আর ভুনা শব্দটির অর্থ হলো ভাজা। মানে ভাজা চাল ও ডালের খিচুড়ি হলো ভুনা খিচুড়ি।

আমাদের একমাত্র স্টেপল ফুড খিচুড়ি। এটি শুধু চাল ও ডালের মিশ্রণেই রান্না হয় না। এর সঙ্গে যোগ করা যায় প্রায় সব ধরনের সবজি। শীতের এ সময় ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুঁটি, গাজর, পালংশাক, শিমের বিচি, মিষ্টি কুমড়াসহ প্রায় সবকিছু দিয়েই রান্না হয় খিচুড়ি। খিচুড়ির স্বাদ বাড়াতে চাল ভাজুন আর না-ই ভাজুন সবজিগুলো হালকা ভেজে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তেল গরম করে পাঁচফোড়ন দিয়ে সবজিগুলো সাঁতলে নিন বা একটু ভেজে নিন। তারপর চালগুলো দিয়ে দিন। সেগুলোসহ সবজিগুলো আর একটু ভেজে নিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে দিন। ঠান্ডা পানির বদলে গরম পানি দেওয়া ভালো। অন্যান্য মসলা দেবেন কি দেবেন না, সেটা ভেবে দেখতে পারেন। 

সঙ্গে যা খেতে পারেন
ভাতের মতো খিচুড়ি খেতেও দরকার বিভিন্ন অনুষঙ্গ। নইলে ঠিক জমে না। খিচুড়ির সঙ্গে চোখ বন্ধ করে যে নিরামিষ অনুষঙ্গের কথা বলা যায়, তা হলো বিভিন্ন ধরনের ভাজা ও ভর্তা; আর আমিষের ক্ষেত্রে ডিম ভাজা ও মাংস ভুনার কথা।

কিসের ভাজা খাবেন সে এক প্রশ্ন বটে। সবজি কিংবা জগাখিচুড়ির সঙ্গে খাওয়া যায় পাঁপর ভাজা, পাট পাট করে কাটা বেগুন ভাজা অথবা বেগুনি, চাকা চাকা করে কাটা আলু ভাজা অথবা ছোট ছোট মার্বেলের আকারের যে আলু পাওয়া যায় তার ভাজা, বেসন দিয়ে ভাজা ঢ্যাঁড়স, চালের গুঁড়োয় মাখানো মিষ্টিকুমড়োর ফালি ভাজা। আর খাওয়া যায় বেসনে মাখানো ডুবো তেলে ভাজা কুমড়ো ফুল কিংবা বক ফুল। ঝাল আলু ভর্তা, শিম ভর্তা, কালিজিরার ভর্তা গরম-গরম খিচুড়ির সঙ্গে দারুণ মেলবন্ধন তৈরি করে।

বলে রাখা ভালো, ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে ঘন ঝোল বা ভুনা জাতীয় তরকারি আর জগাখিচুড়ির সঙ্গে ভাজা বা ভর্তার জুড়ি মেলে ভালো। অবশ্য এই ফিউশনের যুগে ইচ্ছেমতো নিরীক্ষা করার অধিকার আপনার আছে। সে অধিকার আপনি প্রয়োগ করতেই পারেন। 

নিরামিষ লাবড়া

উপকরণ
গোটা ও বাটা জিরা, তেজপাতা, শুকনো মরিচ, আদাবাটা ডালের বড়ি, ধনেপাতা কুচি, চিনি, এ সময় পাওয়া যায় তেমন পাঁচ বা ছয় পদের সবজি। 

প্রণালি
সবজি ধুয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে নিন। তারপর গোটা জিরা, তেজপাতা, শুকনো মরিচ ফোড়ন দিয়ে সবজিগুলো সাঁতলে নিন। তারপর আদা-জিরা বাটায় কষিয়ে নিন ভালো করে। তারপর ঢেকে দিন। আধা সেদ্ধ হবার পর অল্প পানি দিয়ে গা মাখা করে রান্না করুন লাবড়া। তাতে ভেজে রাখা ডালের বড়ি আর ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে দিন। স্বাদে আসবে ভিন্নতা। নিরামিষ খিচুড়ির সঙ্গে ঝোলহীন লাবড়া জমবে ভালো। 

তথ্য সহায়তা: খাদ্য, কিন্তু আহার্য নয়, সিরাজ সালেকীন, কথাপ্রকাশ, ঢাকা, ২০২১

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত