Ajker Patrika

স্বপ্নের সাজেক ভ্যালি

সজল জাহিদ
স্বপ্নের সাজেক ভ্যালি

বাংলাদেশের পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগের এক অন্য নাম সাজেক। পাহাড়ি সৌন্দর্য আর অনায়াসে সোজা গাড়িতে চলে যাওয়ার মতো জায়গা বাংলাদেশে দ্বিতীয়টি নেই বললেই চলে। থাকা-খাওয়া, যাওয়া-আসার সুযোগ-সুবিধার জন্য আজকাল যেকোনো পাহাড়প্রিয় মানুষের অন্যতম পছন্দ সাজেক ভ্যালি। সেখানে পাহাড়ে ট্রেক করার কোনো রকম কষ্ট নেই, ছেলে বুড়ো বা শিশুদের নিয়েও অনায়াসে চলে যাওয়া যায়। উপভোগ করা যায় নীল পাহাড়ের সারি, সফেদ মেঘের খেলা, রুপালি বৃষ্টির রূপ বা কুয়াশা জড়ানো সকাল। থাকা-খাওয়া নিয়েও নেই তেমন ভাবনা যদি আগে থেকে বুকিং দিয়ে যাওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে সাজেক ভ্রমণ যে কারও জন্য হতে পারে দেশে আয়েশ করে পাহাড় উপভোগের আদর্শ জায়গা। 

সাপ্তাহিক ছুটির দিন এড়িয়ে যান
এ শর্ত মেনে যদি সাজেক যাওয়া যায়, তবে সাজেকের সৌন্দর্য আর রূপের ডালি উপভোগ করা যাবে তাড়িয়ে তাড়িয়ে। 

সাজেক ভ্যালি যেখানে
সাজেক আসলে রাঙামাটি জেলার একটি ছোট জায়গা। মূলত এটি উপত্যকা। তাই এর নাম হয়েছে সাজেক ভ্যালি। কিন্তু সেখানে যেতে হয় খাগড়াছড়ি জেলার ওপর দিয়ে। যে কারণে অনেকেই সাজেক ভ্যালিকে ভুল করে খাগড়াছড়ি জেলার একটি জায়গা হিসেবে মনে করেন। 

সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য
আমার প্রথমবার সাজেক যাওয়ার অনুভূতি বলি তাহলেই বুঝতে পারবেন সাজেক আসলে কী, কেমন আর কতটা এর সৌন্দর্য। প্রথমবার আমি সাজেকে যাই খাগড়াছড়ি থেকে সিএনজি নিয়ে, তিনজন মিলে। আকাশ বেশ মেঘলা। দূরের পাহাড় আর আকাশের নীলিমারা দৃষ্টির সাধ্যসীমায় ধরা দেবে না বলে মনেও মেঘের মেলা। দীঘিনালা যেতে যেতেই প্রকৃতি তার খেয়ালের পরিবর্তন ঘটাল। মেঘ মুছে গেল, আকাশ নীলে নীলে নিচে নেমে এল! যেন ওই পাহাড়টা ডিঙালেই ছুঁয়ে দেবে আমি ও আমাকে! 

গাছগুলো যেন তার পাতাদের নাচ দিয়ে আমাকে স্বাগত জানাল! দুপাশের বড় বড় ঘাসের সারি যেন সারাটা পথ জুড়ে সবুজ গালিচা। পাখিদের উদ্বেগহীন কিচিরমিচির যেন সম্মোহিত সংগীতের মূর্ছনা। আর কাছে-দূরের ছোট মাঝারি পাহাড়গুলো একেকটা একেকজনের সঙ্গে রেষারেষিতে মত্ত। 

ওই যে সাজেক! এমন মেঘহীন স্বচ্ছ নীল আকাশ এর আগে কোনো দিনই চোখে পড়েনি! কত ছবি যে তুলেছি তার হিসেব নেই। শুধুই আকাশের আর আকাশের সঙ্গে নিজের সেলফি! সাজেক এমনি রূপসী। 

সাজেকে সূর্যোদয়সাজেক ভ্রমণের বিস্তারিত
মোটামুটি হাতে সময় থাকলে সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং যাওয়া-আসা বাদ দিয়ে যদি দুই থেকে তিন দিন সাজেকে থাকতে পারেন, তাহলে সাজেকের সব রকমের সৌন্দর্য আপনি উপভোগ করতে পারবেন মনপ্রাণ ভরে। সকালের স্নিগ্ধ সাজেক, দুপুরের অলস সাজেক, বিকেলের বিলাসী সাজেক, সন্ধ্যার বর্ণিল সাজেক আর রাতের এক মায়াবী সাজেক। 

দেশের যেকোনো জায়গা থেকে বাসে করে যেতে হবে খাগড়াছড়ি। খাগড়াছড়ি শহর থেকে চাঁদের গাড়ি বা সিএনজি নিয়ে দীঘিনালা গিয়ে আর্মি স্কটের সঙ্গে সময় মিলিয়ে চলে যেতে হবে খাগড়াছড়ি থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরের অপূর্ব আর অনিন্দ্যসুন্দর সাজেক ভ্যালিতে। 

ভ্রমণে যা সঙ্গে নেবেন
আসলে সঙ্গে কী নেবেন সেটা নির্ভর করছে আপনি কাকে নিয়ে যাচ্ছেন, কদিন থাকবেন আর কতটা ছবি তুলতে ভালোবাসেন এবং সেই সঙ্গে লাগেজ বা ব্যাগ বহনে আপনার আগ্রহ কতটুকু তার ওপর। তবে কিছু জিনিস অবশ্যই সঙ্গে নেওয়া দরকার, যেগুলো সাজেকে একবার চলে গেলে আর কিনতেও পাওয়া যাবে না সাধারণত। যেমন নিজের দরকারি ওষুধ, শুকনা খাবার, খাবার স্যালাইন, পানির বোতল ও পানি এবং ফার্স্ট এইড (পাহাড়ে গেলে অবশ্যই সঙ্গে রাখা দরকার)। নিজের দরকারি লুঙ্গি, গামছা, ক্যাপ বা হ্যাট, নিক্যাপ যদি ট্রেক করতে চান, সানস্ক্রিন, চকলেট, চুইংগাম, সানগ্লাসসহ দরকারি আর পছন্দমতো এবং অবশ্যই নিজে বইতে পারবেন এমন কাপড়চোপড় সঙ্গে রাখবেন। একটা গায়ে দেওয়ার চাদর নেওয়া খুব দরকারি রাতে বা যেকোনো সময় দরকার হলে যেন মাটি বা ঘাসে পেতে বসতে পারেন আরাম করে। 

পেছনে মেঘ, তারও পেছনে পাহাড়ের সারিসাজেক ট্যুর প্ল্যান
চেষ্টা করবেন সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদ দিয়ে যাওয়া-আসাসহ চার থেকে পাঁচ দিনের ট্যুর প্ল্যান করলে সাজেকের অপরূপ প্রকৃতিকে প্রাণভরে উপভোগ করা যাবে।

যা দেখবেন 

সাজেকের ঝরনা
ঠিক সাজেকে তেমন কোনো ঝরনা নেই। ঝরনা যা আছে সাজেক যাওয়া-আসার পথেই পড়বে। আর সাজেক থেকে বেশ কিছুটা দূরে পাহাড় বেয়ে নিচে নেমে একটা ছোট ঝরনার দেখা পাওয়া যায়। কিন্তু বর্ষা ছাড়া সেখানে তেমন একটা পানি থাকে না। তাই গিয়ে হতাশ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। তবে সাজেক যাওয়ার আগে খাগড়াছড়ি শহরের কাছেই বেশ চমৎকার রিছাং ঝরনা উপভোগ করতে পারেন দারুণভাবে। 

পাহাড়
সাজেক নিজেই একটা পাহাড়ি উপত্যকা। পাহাড়ের ওপরেই দাঁড়ানো একটা বেশ বিস্তৃত সমতলভূমি যেন! চারপাশে নানা রঙের পাহাড়ের খেলা দেখাই সাজেকের মূল আকর্ষণ। আমাদের দেশের মেঘ কুয়াশা জড়িয়ে থাকা সবুজ পাহাড় আর অদূরেই মিজোরামের নীল রঙে রাঙানো নীল পাহাড়ের সারি দেখা যাবে। পাহাড় যাঁরা ভালোবাসেন তাঁদের কাছে সাজেকের পাহাড়ের রূপ চোখে লেগে থাকবে অনেক অনেক দিন। 

মেঘের খেলা
সাজেক আসলে অনন্য তার মেঘের খেলার জন্য। বিশেষ করে বর্ষা ও শরতে। শীতেও সাজেকে মেঘের যে অপূর্ব খেলা, রং বদলানো, এই আছে এই নেই ভাব, মেঘের চাদরে ঢেকে থাকা পাহাড় দেখা যায় তেমনটি আর কোথাও দেখা যায় বলে মনে হয় না। কখনো কখনো তো মনে হয়, সাজেক যেন একটা আলাদা মেঘের রাজ্য। সেখানে শুধু মেঘ দেখতে, মেঘ ছুঁতে, মেঘে হারাতে, মেঘে ভিজতে আর মেঘে ভেসে বেড়াতেই বারবার যাওয়া যায়। 

 
মেঘ ও পাহাড় সাজেকের মূল আকর্ষণসাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
সাজেক ভ্রমণের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়াটা সাজেকের অপরূপ রূপের সঙ্গে অন্যায় করা হয়ে যাবে। এটি আসলে সব ঋতুতেই অনন্য। একেক ঋতুতে তার একেক রকম রূপ। শীতে এক রকম সৌন্দর্য তো বর্ষায় আরেক রকম, হেমন্তে এক রকম তো বসন্তে রূপ একেবারে আলাদা। নিজের পছন্দের যেকোনো ঋতু বেছে নিয়ে যেকোনো সময়ই সাজেক যাওয়া যেতে পারে। 

চাঁদের গাড়ির ভাড়া
একটা সময় ৪ হাজার টাকাতেই খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়া-আসা করা যেত। আজকাল সেটা সময় আর দিনভেদে প্রায় ৬ থেকে ১০ হাজার টাকা হয়ে গেছে। তবে সপ্তাহের মাঝামাঝি অর্থাৎ ছুটির দিনগুলো বাদে একটু কমে যাওয়া-আসা করা যায়। আবার অল্প মানুষ হলে সিএনজিতেও সাজেক যাওয়া যায় খাগড়াছড়ি থেকে। 

হোটেল ভাড়া
খুবই স্পর্শকাতর বিষয় সাজেকের হোটেল ভাড়া। একটা সময় ১০০ টাকাতেও সাজেকে থাকা যেত। আজকাল অলীক বলে মনে হলেও সেটাই বাস্তবতা ছিল। তবে দিনভেদে এখনো ২ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে হোটেল পাওয়া যায়। তবে দীর্ঘ ছুটি, ঈদ বা এ রকম লম্বা ছুটির সময় সেখানে ভাড়া কোনো নিয়মনীতি বা মানবিকতা মেনে চলে না, সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। কখনো কখনো ১০ হাজার টাকারও বেশি হয়ে যায় এক রাতের রুম ভাড়া। 

সাজেকে লেখকএকনজরে
· সাপ্তাহিক বা লম্বা ছুটির দিনগুলো বাদ দিয়ে নিরিবিলি সময়ে সাজেক ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন। 

· ভ্রমণের আগে হোটেল রুম বুকিং করে যান। 

· প্রথমবার গেলে গাইড নিয়ে নিন সঙ্গে। 

· অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাবেন, যেন ভালো লাগলে এক দিন বেশি থেকে আসতে পারেন। তাতে পরে আফসোস করতে হবে না। 

· নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনী বা বিজিবির সহায়তা নিতে হবে। 

· প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিতে ভুলবেন না। তাতে বিপদ বাড়বে আপনারই। 


যা করবেন না
· বিবেচনায় রাখতে হবে, সাজেকে কিছু মানুষ বসবাস করেন। তাঁরাই সেখানকার আদি বাসিন্দা। তাঁদের নিজস্ব সংস্কৃতি আছে। সে সংস্কৃতিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবেন না। 

· সঙ্গে নিয়ে যাওয়া প্লাস্টিক পণ্য যেখানে সেখানে ফেলে পরিবেশ নষ্ট করবেন না। নির্দিষ্ট জায়গায় প্লাস্টিক পণ্য ফেলুন। পরিবেশের ক্ষতি হয় তেমন কোনো কাজ করবেন না। 

· গাইড ছাড়া দুর্গম জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত