Ajker Patrika

সাইক্লিং ও ভ্রমণ তার নেশা

রিক্তা রিচি, ঢাকা
সাইক্লিং ও ভ্রমণ তার নেশা

খুলনার দৌলতপুরের মেয়ে জিনিয়া তাবাসসুম। নেশা সাইক্লিং। এরই মধ্যে সাইক্লিং করে দেশের ৪৫ টির বেশি জেলা ভ্রমণ করেছেন তিনি। এ ছাড়া সাইকেলে চড়ে ভ্রমণ করেছেন ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানও। 

শুধু ভ্রমণ নয়। ভ্রমণের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়েও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। কিশোর-কিশোরী ও গ্রামের মানুষকে সচেতন করার জন্যও তিনি কিছু ট্যুর করেছেন। 

২০১৭ সাল থেকে সাইক্লিং করেন জিনিয়া তাবাসসুম। অবশ্য সাইকেলে চড়া শিখেছেন ছোটবেলায়ই। উত্তম নামে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে সাইক্লিং শিখতে সাহায্য করেন। জিনিয়া যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়েন, তখন তাঁর বাবা তাঁর চাচাতো ভাইয়ের জন্য একটা সাইকেল কিনে এনেছিলেন। দুই দিনের জন্য সেটা বাসায় ছিল। তখন বন্ধু উত্তমের সাহায্য নিয়ে সাইকেল চালাতে শুরু করেন জিনিয়া। এর পর আর সাইকেল চালানো হয়নি তাঁর। ২০১৬ সালে নিজের বেতনের টাকা জমিয়ে প্রথম সাইকেল কেনেন তিনি। মডেল ছিল ফিনিক্স টি কে ১২০০। 

মেয়েদের জন্য সাইক্লিং করে ভ্রমণের পথটা খুব সহজ নয়সাইক্লিং করে ভ্রমণের পথটা খুব সহজ ছিল না। তাবাসসুমকে পেরোতে হয়েছে অনেক ঘাত–প্রতিঘাত ও সমালোচনা। জিনিয়া মনে করেন, যতই নারী স্বাধীনতার কথা সবাই বলুক না কেন, কোথায় যেন একটা বাধা আছেই। নারীরা সাইকেলে চড়ে ঘুরে বেড়াবে—এ ব্যাপারটা সমাজের কাছে স্বাভাবিক নয় এখনো। 

তাবাসসুম যখন সাইকেলে চড়ে ভ্রমণ শুরু করেন, তখন অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে তাঁকে। পরিবার, পাড়া–প্রতিবেশী, আত্মীয়দের কাছ থেকে বাধা আসতে থাকে সে সময়। শুরুর দিকে এসব সমালোচনা শুনতে হলেও, পরে তিনি পরিবারকে বোঝাতে সক্ষম হন, সাইক্লিং ও ভ্রমণ খারাপ কিছু নয়। 

জিনিয়া বলেন, মানুষের অনেক ধরনের শখ থাকে। কারও বাগান করার শখ থাকে, কারও থাকে বই পড়ার শখ। বাগান করা, বই পড়াকে মানুষ যদি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে, তাহলে সাইক্লিং করা বা ভ্রমণকে কেন মানুষ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না? 

গ্রামের দিকে সাইক্লিংয়ে গেলে মানুষ অন্য চোখে তাকায়জিনিয়া এখন থাকেন ঢাকার আজিমপুরে। খুলনা থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করলেও বিএসসি ও এমএসসি করেন ঢাকার ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক থেকে। তাঁর পড়াশোনার বিষয় ছিল কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। পাস করে বের হওয়ার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক হিসেবে চাকরি করতেন তিনি। এখন করছেন ফ্রিল্যান্সিং। এ কাজ করে মোটামুটি ভালোই আয় করেন জিনিয়া। 

সাইক্লিং করে ভ্রমণে গিয়ে কোনো অসুবিধায় পড়তে হয় কিনা—জানতে চাইলে জিনিয়া জানালেন, ‘যখন গ্রামের দিকে সাইক্লিং করতে গেছি, তখন মানুষ অন্য চোখে তাকিয়েছে। মানুষ ভাবে, আমরা কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। জিজ্ঞেস করে, “আপনারা কোন কোম্পানি থেকে আসছেন”, “আপনাদেরকে সাইকেল কি ফ্রি দিসে” ইত্যাদি।’ 

জিনিয়া সাইক্লিং কখনো একা করেছেন। আবার কখনো দল বেঁধে। তবে অধিকাংশ সময় দল বেঁধেই সাইক্লিংয়ে যান জিনিয়া। সাইক্লিংয়ের শুরু থেকে তিনি ‘হেমন্ত রাইডার্স’ নামে একটি গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত। বললেন, ‘আমাদের গ্রুপ রাইড থাকে, লং রাইড থাকে। সে লং রাইডে আমরা একসঙ্গে ৩০-৩৫ জন থাকি। সাইক্লিং যারা করেন, তাঁরা ক্রস কান্ট্রি করেন। ক্রস কান্ট্রি করার সময় আমরা চার-পাঁচ-ছয় জনের টিম মিলে গেছি। দেশের বাইরে যে ট্যুরগুলোতে গেছি, সেখানে চার–পাঁচজনের টিম মিলে গেছি। এটা আসলে নির্ভর করে কখন কোথায় কীভাবে যাবেন।’ 

বন্ধুদের সঙ্গে লং রাইডে জিনিয়া তাবাসসুমকোনো মজার স্মৃতি বা ঘটনার কথা জানতে চাইলে জিনিয়া বলেন, ‘আমরা যখন রাইডে বের হই, আমাদের আসলে একেক সময় একেক রকম উদ্দেশ্য থাকে। একবার আমরা ক্রস কান্ট্রিতে বের হলাম। ওই সময়, নারীদের ওপর যে অত্যাচার হয়, ঘরে ঘরে নারীরা যে অত্যাচার সহ্য করেন, সে বিষয়ে সচেতনতামূলক কথা বলতে বের হয়েছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় যেখানে সুযোগ পেয়েছি, সেখানেই কথা বলেছি। আরেকবার আমরা একটা রাইডে বের হলাম। আমরা বিভিন্ন স্কুলে গেছি। সেখানে গিয়ে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন সময় আমাদের উদ্দেশ্য বিভিন্ন রকম থাকে। যখন মনে হয় এটা নিয়ে কথা বলা উচিত, তখন সেটা নিয়েই কথা বলি।’ 

দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গেলে গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কিছু জিনিস সংগ্রহ করেন জিনিয়া। ভারতে তিনি ভ্রমণ করেছেন চারবার। মানালি থেকে লেহ পর্যন্ত, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেছেন তিনি। তাও আবার সাইকেলে চড়ে। ভারতে গিয়ে বেশ কয়েকটা প্রদেশের দর্শনীয় স্থান ঘুরেছেন। 

প্রায় দেড় বছর ধরে করোনার কারণে ভ্রমণে বা রাইডে বের হচ্ছেন না জিনিয়া। নিজস্ব সতর্কতা মানছেন। তবে ভ্রমণ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাঁর প্রথম স্বপ্ন হলো, তিনি যেখানেই ভ্রমণে যাবেন সাইকেল নিয়ে যাবেন। ইতিমধ্যে সব জায়গায় সাইকেল নিয়ে গেছেন। ৬৪ জেলার মধ্যে যে কয়েকটি জেলা বাকি আছে, সেগুলো ভ্রমণ শেষ করতে চান তিনি। দেশের বাইরে অন্যান্য দেশ, যেমন নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডে যাওয়ার ইচ্ছে আছে জিনিয়ার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত