Ajker Patrika

ঈদুল আজহা কোন দেশে কেমন

জীবনধারা ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জুন ২০২৪, ১৮: ২৫
ঈদুল আজহা কোন দেশে কেমন

আমাদের দেশে ঈদুল আজহা পালনের রীতিনীতি আমরা জানি। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি পালনের রীতি আমরা তেমন জানি না। পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম দেশে এ উৎসব পালনে ধর্মীয় বিধানের সঙ্গে যুক্ত থাকে স্থানীয় রীতিনীতি। কয়েকটি দেশে ঈদুল আজহা পালনের রীতি দেখে নেওয়া যাক।

মিসরে ঈদুল আজহা উৎসবমিসর
আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর-পূর্ব কোণ ও এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণ–পশ্চিম কোণে অবস্থিত দেশ মিসর ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন দেশ। এই প্রাচীন জনপদের রয়েছে নিজস্ব রীতিনীতি। পশু কোরবানির আগে এর সঙ্গে যুক্ত কিছু প্রাচীন রীতিনীতি এখনো অব্যাহত আছে দেশটির কোনো কোনো অঞ্চলে।

মিসরের দক্ষিণ অংশের বা আপার ইজিপ্টের একটি প্রশাসনিক জায়গার নাম সোহাগ। এখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা কোরবানি দেওয়ার আগে কোরবানির জন্য নির্বাচিত ভেড়াগেুলোকে বিশেষভাবে সাজিয়ে নেয়। এ সময় সেগুলোর মাথায় মেহেদি লাগিয়ে রঙিন করা হয়। এ ছাড়া সেগুলোর শরীরের নির্দিষ্ট জায়গায়ও রং লাগানো হয়। সাজানো এই ভেড়া নিয়ে লোকজন নির্দিষ্ট জায়গায় উপস্থিত হয়। তারপর একে একে কোরবানি দেওয়া হয় ভেড়াগুলোকে। এ সময় অনেকে কোরবানি দেওয়া ভেড়ার রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করে বাড়ির দেয়ালে এবং দরজায় তার ছাপ দিয়ে রাখে।

মিসরীয়দের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আরেকটি ঐতিহ্যবাহী রীতি আছে। তারা আরাফাহ দিবস বা ঈদের পরের দিন আত্মীয়স্বজনের কবর জিয়ারত করতে যায়।

ঈদের নামাজের পর বিতরণের জন্য মিষ্টি ও খেজুরের ঝুড়ি হাতে শিশুরাসৌদি আরব
ইসলামের জন্মস্থান সৌদি আরব সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। ঈদুল আজহা দেশটিতে জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হয়। এখানে ঈদুল আজহা শুধু সেই দেশের মানুষের একার উৎসব নয়। সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ হজ পালন করতে যায় দেশটিতে, এটি তাদেরও উৎসব।

সৌদি আরবে ঈদুল আজহা শুরু হয় মসজিদ বা নির্দিষ্ট উন্মুক্ত জায়গায় প্রার্থনার মাধ্যমে। পুরুষ ও নারীরা আলাদা আলাদাভাবে অংশ নেন সেসব প্রার্থনায়। শিশুরাও থাকে। ঈদের নামাজের পর বিতরণ করার জন্য মিষ্টি ও খেজুরের ঝুড়ি দেওয়া হয় শিশুদের হাতে।

নামাজ শেষে ভোজের আয়োজন করা হয়। করা হয় উপহার বিনিময়। আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মধ্যে কোরবানির পশুর মাংস বিতরণ করা হয়। সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী খাবার খাবসা। যেকোনো উৎসবের মতো ঈদুল আজহাতেও এটি খাওয়া হয়।

তুরস্ক
তুরস্কে ঈদ নামে পরিচিত উৎসবটিকে ‘শেকার বায়রামি’ বলা হয়। এর অর্থ সুগার ফেস্ট বা চিনির ভোজ। কারণ, তুরস্কে ঈদ উপলক্ষে বাকলাভা ও হালওয়া বা হালুয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি খাবার তৈরি করা হয়।

দিনের শুরুতে পরিষ্কার হয়ে নতুন জামা–কাপড় পরে তুর্কিরা মসজিদ বা নির্ধারিত নামাজের মাঠে চলে যায় নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে পশু কোরবানি দেওয়া হয়। তুরস্কে অনুমোদিত কসাইখানার বাইরে পশু কোরবানি দেওয়া নিষিদ্ধ। সাধারণত ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয় দেশটিতে। এরপর পরিবারের সদস্য, প্রতিবেশী ও দরিদ্রদের মাংস বিতরণ করা হয়। তুরস্কের জীবনযাত্রায় ইউরোপীয় প্রভাব বেশি বলে এখন অনেকেই পশু কোরবানি না করে সে অর্থ বিভিন্ন দাতব্য কাজে দান করে থাকে। ঈদের দিন তুর্কিরা আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করে। এটি তাদের সংস্কৃতির অংশ।

মরক্কোর বোজেলড উৎসবমরক্কো
ঈদুল আজহা মরক্কোয় পরিচিত ঈদ আল-কবির নামে। মসজিদ বা মনোনীত জায়গায় সকালের প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। এদিন মরক্কোর অধিবাসীরা ঐতিহ্যবাহী উৎসবের পোশাক ও অলংকারে সজ্জিত হয়। এ দেশেও সাধারণত ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়। তারপর মাংস বিলিয়ে দেওয়া হয় ধর্মীয় বিধি মতে। এদিন মরক্কোয় ঐতিহ্যবাহী খাবার, যেমন মাংসের সঙ্গে কুসকুস ও দারুচিনি সুবাসিত পেস্ট্রি তৈরি করা হয়।

মরক্কোর ইদুল আজহার বৈশিষ্ট্য হলো দেশটির নিজস্ব বোজলাউড উৎসব। এটি মরোক্কান হ্যালোইন নামেও পরিচিত। ইদুল আজহার কয়েক দিন পর এ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। প্রাচীন বর্বর সংস্কৃতির গভীরে এই আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির মূল নিহিত আছে বলে ধারণা করা হয়। ভেড়া বা ছাগলের চামড়া, পাখির পালক, বিচিত্র দর্শন মুখোশ ইত্যাদি পরে এতে লোকজন অংশ নেয়। বাৎসরিক বোজলাউড উৎসব ভালো ও মন্দের যে চিরকালীন দ্বন্দ্ব, সেটাকে প্রকাশ করে।

জর্ডানে সাধারণত মানসাফা রান্না করা হয় ঈদুল আজহায়জর্ডান
জর্ডানেও সকাল বেলা প্রথামতো সব ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করা হয়। তারপর মূলত একটা পারিবারিক পরিবেশে থাকার চেষ্টা করে সবাই। এর জন্য পরিবারগুলো সাধারণত পিকনিকের আয়োজন করে থাকে।

রাস্তায় মিষ্টি বিতরণ করছেন একজন ফিলিস্তিনিফিলিস্তিন
ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিনে ঈদুল আজহা পালনের নিজস্ব রীতি ছিল। এদিন ফিলিস্তিনিরা কবর জিয়ারতে যেত এবং সেখানে মিষ্টি বিতরণ করত। পরিবারের প্রধান বাবা হোক বা ভাই, সাধারণত ঈদের দিন ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয় পরিবারের প্রধানের বাড়িতে। সেখানে পার্সলে পাতা ও রসুন দিয়ে রান্না করা ভেড়ার লিভারের সঙ্গে মানসাফ খাওয়া হতো।

আলজেরিয়া
আলজেরিয়া মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশটির কিছু অঞ্চলের মানুষ কোরবানির পশুর কপালে মেহেদি এবং একটি ফুলের ফিতা দেঁধে দেয়। আলজেরিয়ার আর একটি অদ্ভুত রীতি হলো, কোরবানির পশুদের কোরবানি দেওয়ার আগে লড়াই লাগিয়ে দেওয়া হয়। এটা দেশটির ঐতিহ্য।

সূত্র: আল জাজিরা, আরআইএ, অ্যারাবিয়া ওয়েদার ডট কম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত