Ajker Patrika

ইফতারে প্রাণ জুড়ানো শরবত

মো. ইকবাল হোসেন 
আপডেট : ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১০: ৩২
ইফতারে প্রাণ জুড়ানো শরবত

শুধু রোজার ইফতারে নয়, ক্লান্তি দূর করতে ফলের শরবতের বিকল্প নেই। আর রোজার ইফতার শুরু হয় পানীয় পানের মাধ্যমে। তবে পানীয় যদি হয় ফলের শরবত, তাহলে সেটা হবে স্বাস্থ্যবান্ধব। এই মৌসুমে খুব সহজে পাওয়া যায় বেল, আনারস, পেয়ারা, তেঁতুল ইত্যাদি ফল। অনায়াসে এসব ফলের শরবত রাখতে পারেন আপনার প্রতিদিনের ইফতারিতে। 

প্রতিটি ফলে আছে শর্করা, খুব সামান্য প্রোটিন, সামান্য চর্বিসহ সব ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল। যেমন পেয়ারায় ১৫, আনারসে ১৪, তেঁতুলে ৬০ এবং বেলে ৩০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট থাকে। এ ছাড়া আছে বিটা ক্যারোটিন, ব্রমোলিন, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি-সহ অনেক কিছু। আরও আছে জিংক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ শরীরের সব প্রয়োজনীয় উপাদান। আরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে আছে আঁশ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে পানি। প্রতিটি ফলের জলীয় অংশের পরিমাণ গড়ে ৭৫ শতাংশ।

এই কাঠফাটা গরমে ১৫ ঘণ্টা রোজা রেখে শরীর সতেজ রাখা সত্যিই খুব চ্যালেঞ্জিং। তবে সঠিক খাদ্য ব্যবস্থাপনায় আমরা সেই চ্যালেঞ্জকে সহজে অতিক্রম করতে পারি। সেই খাদ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রধান উপাদান হচ্ছে ফলের শরবত।

শরবতের উপকারিতা

  • সারা দিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে শর্করার স্তর অনেক কমে যায়। এ জন্য ইফতারের কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই শারীরিক দুর্বলতা বেশি অনুভূত হয়। এ ক্ষেত্রে ফলে থাকা শর্করা ধীরে ধীরে আপনার রক্তে গ্লুকোজের স্তর বাড়িয়ে আপনাকে শক্তি জোগাবে। তবে যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁরা তেঁতুলের শরবত কম খাবেন। তাতে শর্করা একটু বেশি থাকে।
  • আমাদের মস্তিষ্কের প্রধান খাবারই হচ্ছে গ্লুকোজ। ইফতারে এক গ্লাস ফলের শরবত আপনার মস্তিষ্কের জ্বালানি হিসেবে কাজ করবে।
  • ক্লান্ত পেশিকে সতেজ করে ভিটামিন ও মিনারেল। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • ফলের পটাশিয়াম স্নায়বিক দুর্বলতা দূর করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • সারা দিন রোজা রাখার ফলে শরীরে কিছুটা পানিশূন্যতা তৈরি হয়। ফলের জলীয় অংশ শরীরের পানিশূন্যতা দূর করে শরীরের প্রতিটি কোষকে কর্মক্ষম রাখে। শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।
  • এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরে ফ্রি-র‍্যাডিকেল তৈরি হতে বাধা দেয় এবং সৃষ্ট মৃত কোষ অপসারণ করে। ফলে কোষের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়।
  • এই গরমে ইফতার বা সাহ্‌রিতে শুধু বেশি বেশি পানি পান করলেই হবে না। তার কিছু অংশ শরীরে ধরেও রাখতে হবে। ফলের আঁশ এ কাজটি খুব সুন্দরভাবে করে। এ ছাড়া ফলের আঁশ মূত্রের সংক্রমণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্ত রাখে।
  • আনারসে থাকা ব্রমোলিন হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
  • বিটা ক্যারোটিন চোখের রেটিনার সুরক্ষা দেয়।
  • শরীরে খারাপ চর্বি বা এলডিএল, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ কমিয়ে রক্তের ভালো চর্বি বা এইচডিএলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়।
    ফলের আয়রন, ভিটামিন সি, জিংক, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স এগুলো আপনার ত্বক ও চুলের সুরক্ষা দেবে।

তাই সাধারণ সময়ের পাশাপাশি প্রতিদিন ইফতারে যেকোনো একটি ফলের শরবত রাখুন। তবে সেটা যেন অবশ্যই বাসায় তৈরি হয়, কোনো চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে কেনা নয়।

লেখক: পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

ছবি: সুমাইয়া আফরিন জ্যোতিবেলের শরবত

উপকরণ
১টি পাকা বেল, লবণ, স্বাদমতো চিনি, লেবু ও লেবুপাতা।

প্রণালি
১টি পাকা বেলের ভেতরের অংশ চামচ দিয়ে উঠিয়ে একটি পাত্রে নিন। এরপর তাতে ১ চামচ লবণ দিয়ে ভালো করে কচলে নিয়ে ২ টুকরো লেবুর রস দিয়ে আবার ভালো করে কচলে নিন। এরপর এতে অল্প অল্প করে ঠান্ডা পানি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার তাতে লেবুর পাতা মেশান। 
বেলের শরবতে লেবুর পাতা দিলে ঘ্রাণ ভালো হবে। তারপর স্বাদমতো চিনি ভালো করে মিশিয়ে নিন। এরপর পরিষ্কার ছাঁকনি দিয়ে ভালো করে ছেঁকে নিন। গ্লাসে শরবত ঢেলে ১৫ মিনিট ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। এবার পরিবেশন করুন।

লেখা ও ছবি: সুমাইয়া আফরিন জ্যোতি

ছবি: আফসানা মিমিজিরা-তেঁতুলের শরবত

উপকরণ 
তেঁতুল, জিরা, বিট লবণ, চিনি, ঠান্ডা পানি, বরফ ও পুদিনাপাতা।

প্রণালি
তেঁতুলের বিচি ফেলে দিয়ে পানিতে ভালো করে গুলিয়ে নিন। তেঁতুল পানি ব্লেন্ডারে দিয়ে তার মধ্যে জিরা, স্বাদমতো বিট লবণ, চিনি, ঠান্ডা পানি দিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড করা হয়ে গেলে গ্লাসে বরফ 
দিয়ে শরবত ঢেলে পুদিনাপাতা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন। 

লেখা ও ছবি: আফসানা মিমি

ছবি: সোনিয়া নাছরিন সিমিআনারসের সিরাপ

উপকরণ
বড় আকারের আনারস ১টি, চিনি ২ কাপ।

প্রণালি
আনারস পরিষ্কার করে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার ছোবড়া ফেলে না দিয়ে ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। একটা বড় প্যানে প্রায় ২ লিটার পানি নিন। ছোবড়া পরিষ্কার করে ধুয়ে ২ লিটার পানিতে সেদ্ধ করে নিন। আধঘণ্টা পর আনারসের টুকরো দিয়ে আরও পনেরো মিনিট সেদ্ধ করে নিন। এবার চুলা বন্ধ করে আনারস সেদ্ধ পানি ঢেকে দিন, যাতে ফ্লেভার ঠিক থাকে। ২ ঘণ্টা পর ঢাকনা তুলে দিয়ে পরিষ্কার পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে তুলে নিন আনারস সেদ্ধ পানি। এরপর পরিষ্কার এক পাত্রে ২ কাপ চিনি দিয়ে আনারস সেদ্ধ পানি অল্প আঁচে জ্বাল দিন। চিনি গলে গিয়ে ঘন হয়ে এলে নামিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এবার একটা বোতলে ভরে ফ্রিজে রাখুন। পরিবেশন করার সময় এক গ্লাসের দুই-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক পরিমাণ সিরাপ এবং বাকিটা স্বাভাবিক খাবার পানি মিশিয়ে নিন। ইচ্ছে হলে দু-এক টুকরো বরফ দিয়ে দিতে পারেন। স্বাদে পরিবর্তন আনতে চাইলে সামান্য বিট লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন।

লেখা ও ছবি: সোনিয়া নাছরিন সিমি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত