Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

দারিদ্র্য জয় করে প্রশাসন ক্যাডারে মোহন

Thumbnail Image

নাম মোহন আহমেদ। জন্ম ও বেড়ে ওঠা রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার অভ্যাগতপাড়া গ্রামে। পড়াশোনা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে। ৪০তম বিসিএসে খাদ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। তবে স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। সেই মতোই চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। শেষমেশ ৪৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন মোহন। নানা প্রতিকূলতাঘেরা তাঁর এই বিসিএস যাত্রা সম্পর্কে জেনেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

আজকের পত্রিকা: আপনার শৈশব ও পড়াশোনা সম্পর্কে জানতে চাই?
মোহন আহমেদ: আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামেই শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। মা আমার প্রথম শিক্ষক। তিনিই নিজ হাতে আমাকে লিখতে ও পড়তে শেখান। তারপর নিজ গ্রামে অভ্যাগতপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শুরু করি। সেখানে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি পাই। এরপর ভর্তি হই হাটগাংগোপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে। সেই স্কুল থেকে আবার অষ্টম শ্রেণিতেও বৃত্তি লাভ করি। এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অর্জন করি জিপিএ ৫। এইচএসসি শেষে উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাথম্যাটিকস ডিসিপ্লিনে এবং ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক শেষ করি।

আজকের পত্রিকা: বিসিএস দেবেন এমন ভাবনা মাথায় এল কীভাবে?
মোহন আহমেদ: বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ভাইদের দেখতাম বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে। তাঁদের সঙ্গে অনার্স চতুর্থ বর্ষ থেকে পড়াশোনা শুরু করি। বড় ভাইদের ক্যাডার হতে দেখে নিজের মনে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সংকল্প মাথায় নিয়ে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান হলের রিডিংরুমে পড়াশোনা শুরু করি।

আজকের পত্রিকা: বিসিএস ক্যাডার হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন কীভাবে?
মোহন আহমেদ: আমি গরিব ঘরের সন্তান। বিসিএসের যাত্রাটা খুব কঠিন ছিল। টিউশনি করাতাম আর রিডিংরুমে পড়াশোনা করতাম। বাবা খুব কষ্ট করে টাকা পাঠাতেন, যখন প্রিলিমিনারি বা লিখিত পরীক্ষা আসত; তখন আর টিউশনি করাতাম না। বাবার টাকা যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতাম। বাবা একবার বলেছিলেন, প্রয়োজনে নিজের শরীরের রক্ত বিক্রি করে টাকা পাঠাবেন। তারপরও আমাকে ক্যাডার হতেই হবে। দিনে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করতাম। শুধু খাওয়া ও ঘুমানো বাদে পড়াশোনার পেছনে সময় দিতাম। যখনই পড়াশোনায় মনোযোগ হারাতাম, তখন দরিদ্র পরিবারের কথা ভেবে আবার পড়তে বসতাম। মা-বাবার স্বপ্ন পূরণ করতেই হবে–এ কথাটা সব সময় মনে রাখতাম।

আজকের পত্রিকা: বিসিএস ক্যাডার হতে অনুপ্রেরণা দিতেন কারা?
মোহন আহমেদ: ক্যাডার পেতে অনেকেই অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মো. সোহাগ পারভেজ, মো. আসাদুজ্জামান রাজু ও মুত্তাজুল ইসলাম মুন্না ভাইয়ের কথা না বললেই নয়। রাজু ভাই আমার জীবনটা বদলে দিয়েছেন। আমার জীবনে তাঁর সঙ্গে হওয়া পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, তাঁর দিকনির্দেশনা ছাড়া আমি দুবার ক্যাডার হতে পারতাম না। এ ছাড়া আমার পরিবারের সহযোগিতা তো ছিলই।

আজকের পত্রিকা: খাদ্য ক্যাডার পরিবর্তন করে প্রশাসন ক্যাডারে আসবেন?
মোহন আহমেদ: জাতীয় খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফুড ক্যাডারের অবদান অনস্বীকার্য। বিসিএস (প্রশাসন) ও বিসিএস (খাদ্য) ক্যাডার পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। আমার স্বপ্ন ছিল প্রশাসক হওয়ার। তাই ফুড ক্যাডার ছেড়ে প্রশাসনেই আসতে চাই। আমার পরিবারও সেটা চায়। প্রশাসন ক্যাডারে বৃহত্তর পরিসরে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারব।

আজকের পত্রিকা: নতুনেরা বিসিএসের জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
মোহন আহমেদ: নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতিতে প্রথমেই গণিত, ইংরেজি ও বাংলায় দক্ষ হতে হবে। এই তিনটি বিষয়ে দক্ষতা থাকলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া সহজ হয়ে যায়। সে জন্য রোজ ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পড়াশোনা করে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে হবে। বাজারে প্রচলিত বিসিএস বই পাওয়া যায়। সেই বইগুলো ভালোভাবে পড়তে হবে। বারবার রিভিশন দিতে হবে। রিভিশনের কোনো বিকল্প নেই। প্রস্তুতির প্রথম ছয় মাস কষ্ট হয়। কিন্তু পরে সব বিষয় আয়ত্তে চলে এলে আর কষ্ট লাগে না। প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি ভালো হলে লিখিত ও ভাইভা অনেক সহজ হয়ে যায়। এ ছাড়া বিসিএস প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি ভালো হলে অন্য যেকোনো চাকরির পরীক্ষায় পাস করাও সহজ হয়ে যায়। তাই প্রিলিমিনারির প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মোহন আহমেদ: ভবিষ্যতে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগ দিয়ে দেশের সেবা করতে চাই। দারিদ্র্য দূরীকরণে সর্বশক্তি নিয়োগ করব। পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধিশালী করার জন্য দুর্নীতি দমনে ভূমিকা রাখার অপেক্ষায় আছি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত