মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী
২১ জুলাই সোমবার মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি আমাদের হৃদয় ভেঙে খানখান করে দিয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, যা দিয়ে এই হৃদয়বিদারক ঘটনার বিবরণ লেখা যায়। যে শিশুগুলো এখনো মায়ের আঁচল ধরে ঘুমায়, তারা আজ যেভাবে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে; যারা এখনো হাসপাতালের শয্যায় অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে, তাদের এই কষ্টের কথা কোনো ভাষায় লিখব জানি না।
সোমবার বেলা ১.১৫ মিনিটে বিমান বিধ্বস্ত হলে বিস্ফোরণ-আগুনে পুড়ে ঝরে গেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অনেকের জীবন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে বহু কচি প্রাণ। আহত সন্তান নিয়ে অভিভাবকদের গগনবিদারী আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হাসপাতালে হাসপাতালে কান্না আর আহাজারিতে সোমবার বিকেলটা হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
মাইলস্টোনে শহীদ হওয়া শিশুদের আগুনে ঝলসানো মুখ ও শরীর দেখে আমরা যেখানে চোখের পানি থামাতে পারছি না; সেখানে তাদের মা-বাবাদের অবস্থা কী নিদারুণ হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। তাদের পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও জানা নেই।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকটি মানুষের মৃত্যু অবধারিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো।’ (সুরা নিসা: ৭৮)
যেসব ইমানদার অগ্নিকাণ্ড বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্য নবী করিম (সা.)-এর সুসংবাদ রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাবা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ...। (সুনানে আবু দাউদ)
মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে, তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের এক মুহূর্ত আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারও মৃত্যু যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন।
উল্লিখিত হাদিসটি সুনানে ইবনে মাজাহতে এসেছে এভাবে—জাবের বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করিম (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সকল আমাদের ফুলের মতো সুন্দর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করুন এবং উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন!
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।
২১ জুলাই সোমবার মাইলস্টোন স্কুল ট্র্যাজেডি আমাদের হৃদয় ভেঙে খানখান করে দিয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো ভাষা নেই, যা দিয়ে এই হৃদয়বিদারক ঘটনার বিবরণ লেখা যায়। যে শিশুগুলো এখনো মায়ের আঁচল ধরে ঘুমায়, তারা আজ যেভাবে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে; যারা এখনো হাসপাতালের শয্যায় অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে, তাদের এই কষ্টের কথা কোনো ভাষায় লিখব জানি না।
সোমবার বেলা ১.১৫ মিনিটে বিমান বিধ্বস্ত হলে বিস্ফোরণ-আগুনে পুড়ে ঝরে গেছে শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ অনেকের জীবন। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে বহু কচি প্রাণ। আহত সন্তান নিয়ে অভিভাবকদের গগনবিদারী আর্তনাদে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। হাসপাতালে হাসপাতালে কান্না আর আহাজারিতে সোমবার বিকেলটা হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়।
মাইলস্টোনে শহীদ হওয়া শিশুদের আগুনে ঝলসানো মুখ ও শরীর দেখে আমরা যেখানে চোখের পানি থামাতে পারছি না; সেখানে তাদের মা-বাবাদের অবস্থা কী নিদারুণ হতে পারে, তা সহজেই বোঝা যায়।
এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু মেনে নেওয়া কঠিন। তাদের পরিবার-পরিজনকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা কারও জানা নেই।
তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে জন্ম নেওয়া প্রত্যেকটি মানুষের মৃত্যু অবধারিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই; যদিও তোমরা সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করো।’ (সুরা নিসা: ৭৮)
যেসব ইমানদার অগ্নিকাণ্ড বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে, তাদের জন্য নবী করিম (সা.)-এর সুসংবাদ রয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) আগুনে পুড়ে মরা ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে জাবের (রা.) তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বাবা জাবের (রা.)-কে তাঁর রোগশয্যায় দেখতে গেলেন। তাঁর কাছে গিয়ে দেখলেন নারীরা কেঁদে কেঁদে বলছে, আমরা মনে করেছিলাম, তুমি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহর রাস্তায় শহীদ না হলে তোমরা কাউকে শহীদ মনে করো না? এমন হলে তো তোমাদের শহীদের সংখ্যা অতি অল্পই হবে। আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত ব্যক্তি শহীদ, কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তি শহীদ, নিউমোনিয়াজাতীয় কঠিন পীড়ায় মৃত ব্যক্তি শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মৃত্যুবরণ করে সেও শহীদ...। (সুনানে আবু দাউদ)
মানুষের মৃত্যু অবধারিত। যখন সময় আসবে, তখন তাকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। সময়ের এক মুহূর্ত আগেও কেউ তাকে মারতে পারবে না। তবে কারও মৃত্যু যদি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা বা কঠিন রোগে হয়, মহান আল্লাহ তার বিনিময়ে তাকে শাহাদাতের মতো অতি সম্মানের মর্যাদা দিয়ে দেন।
উল্লিখিত হাদিসটি সুনানে ইবনে মাজাহতে এসেছে এভাবে—জাবের বিন আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী করিম (সা.) তাঁকে দেখতে আসেন। জাবের (রা.)-এর পরিবারের কেউ কেউ বলল, আমরা আশা করতাম যে সে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তাহলে আমার উম্মতের শহীদের সংখ্যা তো খুব কম হয়ে যাবে। আল্লাহর পথে নিহত হলে শহীদ, মহামারিতে নিহত হলে শহীদ, যে নারী গর্ভাবস্থায় মারা যায় সে শহীদ এবং পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও ক্ষয় রোগে মৃত্যুবরণকারীও শহীদ। (সুনানে ইবনে মাজাহ)
আল্লাহ তাআলা বিমান দুর্ঘটনায় নিহত সকল আমাদের ফুলের মতো সুন্দর শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের শহীদের মর্যাদা দান করুন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য দান করুন। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তৌফিক দান করুন এবং উত্তম প্রতিদান দিন। আমিন!
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা।
সপ্তাহের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম ও সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক ঈদের মতো, যা আত্মশুদ্ধি, ইবাদত এবং কল্যাণ অর্জনের বিশেষ সুযোগ এনে দেয়। এই বরকতময় দিনে কী কী করণীয় তা জানা এবং তা মেনে চলা একজন মুমিনের দায়িত্ব।
১৯ ঘণ্টা আগেমানুষের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর মুহূর্তগুলোর একটি হলো আপনজন হারানোর বেদনা। এমন শোকের সময় মানুষ থাকে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, দুর্বল ও অনেকটা একা। ঠিক তখনই সে আশায় থাকে কারও সহানুভূতির, সান্ত্বনার কিংবা একটু অনুভব করার মতো মানবিক উপস্থিতির। এই বিপদ ও কষ্টের সময়টিতে...
১ দিন আগেহিজরি সনের দ্বিতীয় মাস সফর। জাহিলি যুগে এই মাসকে অশুভ, বিপৎসংকুল ও অলক্ষুনে মাস হিসেবে বিবেচনা করা হতো। মানুষ মনে করত, এ মাসে শুভ কিছু হয় না—বিয়ে করলে বিচ্ছেদ হয়, ব্যবসা করলে লোকসান হয়, রোগবালাই বাড়ে। এমনকি সফরকে বলা হতো ‘আস-সাফারুল মুসাফফার’, অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস। কারণ তখন খরা ও খাদ্যসংকট দেখা...
১ দিন আগেআমাদের অফিসের টপ ফ্লোরে নামাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা আছে। সেখানে নির্ধারিত আলেম ইমামের মাধ্যমে জামাতের সঙ্গে ওয়াক্তিয়া নামাজ আদায় করা হয়। কিন্তু আমরা জুমার নামাজ আদায় করি পাশের একটি বড় মসজিদে। অফিসের নামাজ আদায়ের স্থানটি ওয়াক্ফ করা নয়। এ অবস্থায় আমরা কি ইচ্ছে করলে সেখানে জুমার নামাজের আয়োজন...
১ দিন আগে