সানা উল্লাহ মুহাম্মাদ কাউসার
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’ নামে প্রজ্ঞাপন জারি করে রাষ্ট্রের কর্মক্ষম সব মানুষকে পেনশন-সুবিধার আওতাধীন করার একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ব্যাপারটিকে বেশ প্রশংসনীয় ও জুতসই উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সচেতন নাগরিকেরা। তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বেশ কিছু মূলনীতি ইসলামি শরিয়তের বিরোধী হওয়ার দাবি তুলেছেন ইসলামি গবেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, এটি একটি সুদভিত্তিক প্রকল্প, যা রাষ্ট্রের কর্মক্ষম নাগরিকদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি ধর্মীয় রীতিনীতি পালনকারীদের জোর করে সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার নামান্তর।
কারণ এই আয়ের উৎস ঠিক ব্যাংকিং সিস্টেমের ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)-এর মতোই। আইনের ১৬ (২) উপবিধিতে এই স্কিমের আয়ের উৎস বলা হয়েছে যথাক্রমে: (ক) পেনশন-ব্যবস্থায় নিবন্ধিত চাঁদাদাতার চাঁদা, (খ) প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণমূলক চাঁদা, (গ) বিনিয়োগকৃত অর্থের পুঞ্জীভূত মুনাফা, (ঘ) কম আয়ের বা অসচ্ছল চাঁদাদাতাগণের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান এবং (ঙ) অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়। অথচ, সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিজীবীদের ১৪ (২) উপধারা অনুযায়ী ওই স্কিম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্কিমে অন্তর্ভুক্তদের যে কেউ চাইলে নিজের আদায় করা টাকার ৫০ শতাংশের সমান ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে এই ঋণের অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের অধীনে সরকার শুধু সুদ দিচ্ছে না; বরং পেনশনারের টাকার ওপর থেকেও সুদ নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ শরিয়তবিরোধী। অথচ নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কিস্তি আদায়ের পর সরকার গ্রাহককে যে পেনশন দেবে বলে ওয়াদা করেছে, তাতে তাদের জমা দেওয়া চাঁদার বিপরীতে ৮ শতাংশ হারে সুদ দেবে সরকার। অর্থাৎ, প্রত্যেক গ্রাহক তার নির্ধারিত টাকার ৮ শতাংশ করে সুদ নেবে; এটাও সম্পূর্ণ নাজায়েজ।
একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের ৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বর্ণিত ‘নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান’ করার ঘোষণাকে ইসলামি শরিয়ত বিশ্লেষকেরা জুলুম হিসেবে গণ্য করেছেন। সেই সঙ্গে চাঁদা অনাদায়ে যে আর্থিক জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকেও সুস্পষ্ট সুদ বলে মনে করছেন। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনের ১৬ নম্বর বিধির ৫ নম্বর উপবিধিতে বর্ণিত ৭৫ বছরের আগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির পেনশন নমিনিকে হস্তান্তরের বিষয়টি জীবন-মৃত্যুর অনিশ্চিত বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করার শামিল হিসেবে দেখছেন তাঁরা, যা শরিয়তের সঙ্গে অনেকটা সাংঘর্ষিক।
তবে ইসলামবিষয়ক গবেষকদের এ ব্যাপারে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ স্কিম থেকে ৫০ শতাংশ ঋণসুবিধা ঠিক যেন সরকারি চাকরিজীবীদের জিপিএফের (জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড) মতোই। এ ছাড়া, বিশ্লেষকদের দাবি করা ৮ শতাংশ মুনাফা প্রদানের বিষয়টি বিধি ৩-এর উপবিধি (২) এবং ১২-এর বিধান সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, স্পষ্ট বোঝা যায়, লভ্যাংশের পরিমাণেরও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে।
এ ছাড়া আর্থিক জরিমানার বিষয়টি যেহেতু ইসলামে সুদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাই ধর্মীয় দিক বিবেচনায় এটি বাতিল করার প্রস্তাব প্রদান করা যেতে পারে। তবে নমিনি নির্ধারণের বিষয়টিকে অনিশ্চিত মৃত্যুকে নির্দিষ্ট করার সঙ্গে তুলনা করা সমীচীন হবে বলে মনে করছি না। কেননা, সরকারি-বেসরকারি যেকোনো আর্থিক লেনদেনজনিত ব্যাপারে নমিনি নির্ধারণ করা ন্যায়সংগত একটি কাজ, যা ইসলামে বৈধ ও উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।
মোট কথা, সরকারের এই উদ্যোগে নিঃসন্দেহে ত্রুটি রয়েছে, তা পরিমার্জন-পরিবর্ধন যেমন দরকার; তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের সব সেক্টরের কর্মক্ষম মানুষকে উপকৃত করার এই মেগা প্রজেক্টকে সাধুবাদ প্রদানও আমাদের একান্ত জরুরি।
লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩’ নামে প্রজ্ঞাপন জারি করে রাষ্ট্রের কর্মক্ষম সব মানুষকে পেনশন-সুবিধার আওতাধীন করার একটি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ব্যাপারটিকে বেশ প্রশংসনীয় ও জুতসই উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন সচেতন নাগরিকেরা। তবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বেশ কিছু মূলনীতি ইসলামি শরিয়তের বিরোধী হওয়ার দাবি তুলেছেন ইসলামি গবেষকেরা। তাঁরা মনে করছেন, এটি একটি সুদভিত্তিক প্রকল্প, যা রাষ্ট্রের কর্মক্ষম নাগরিকদের ওপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি ধর্মীয় রীতিনীতি পালনকারীদের জোর করে সুদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার নামান্তর।
কারণ এই আয়ের উৎস ঠিক ব্যাংকিং সিস্টেমের ডিপিএস (ডিপোজিট পেনশন স্কিম)-এর মতোই। আইনের ১৬ (২) উপবিধিতে এই স্কিমের আয়ের উৎস বলা হয়েছে যথাক্রমে: (ক) পেনশন-ব্যবস্থায় নিবন্ধিত চাঁদাদাতার চাঁদা, (খ) প্রতিষ্ঠানসমূহের অংশগ্রহণমূলক চাঁদা, (গ) বিনিয়োগকৃত অর্থের পুঞ্জীভূত মুনাফা, (ঘ) কম আয়ের বা অসচ্ছল চাঁদাদাতাগণের জন্য সরকার কর্তৃক প্রদত্ত অনুদান এবং (ঙ) অন্যান্য উৎস থেকে প্রাপ্ত আয়। অথচ, সরকারি ও আধা সরকারি চাকরিজীবীদের ১৪ (২) উপধারা অনুযায়ী ওই স্কিম থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্কিমে অন্তর্ভুক্তদের যে কেউ চাইলে নিজের আদায় করা টাকার ৫০ শতাংশের সমান ঋণ নেওয়ার সুযোগ থাকবে। পরবর্তী ২৪ কিস্তিতে এই ঋণের অর্থ সুদসহ ফেরত দিতে হবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের অধীনে সরকার শুধু সুদ দিচ্ছে না; বরং পেনশনারের টাকার ওপর থেকেও সুদ নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ শরিয়তবিরোধী। অথচ নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কিস্তি আদায়ের পর সরকার গ্রাহককে যে পেনশন দেবে বলে ওয়াদা করেছে, তাতে তাদের জমা দেওয়া চাঁদার বিপরীতে ৮ শতাংশ হারে সুদ দেবে সরকার। অর্থাৎ, প্রত্যেক গ্রাহক তার নির্ধারিত টাকার ৮ শতাংশ করে সুদ নেবে; এটাও সম্পূর্ণ নাজায়েজ।
একই সঙ্গে প্রজ্ঞাপনের ৫ নম্বর ধারার ৪ নম্বর উপধারায় বর্ণিত ‘নির্ধারিত তারিখের মধ্যে চাঁদা জমা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী এক মাস পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া চাঁদা প্রদান করা যাবে এবং এক মাস অতিবাহিত হলে পরবর্তী প্রতিদিনের জন্য ১ শতাংশ হারে বিলম্ব ফি জমা প্রদান’ করার ঘোষণাকে ইসলামি শরিয়ত বিশ্লেষকেরা জুলুম হিসেবে গণ্য করেছেন। সেই সঙ্গে চাঁদা অনাদায়ে যে আর্থিক জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাকেও সুস্পষ্ট সুদ বলে মনে করছেন। এ ছাড়া প্রজ্ঞাপনের ১৬ নম্বর বিধির ৫ নম্বর উপবিধিতে বর্ণিত ৭৫ বছরের আগে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তির পেনশন নমিনিকে হস্তান্তরের বিষয়টি জীবন-মৃত্যুর অনিশ্চিত বিষয়টিকে নির্দিষ্ট করার শামিল হিসেবে দেখছেন তাঁরা, যা শরিয়তের সঙ্গে অনেকটা সাংঘর্ষিক।
তবে ইসলামবিষয়ক গবেষকদের এ ব্যাপারে আরও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি। কারণ স্কিম থেকে ৫০ শতাংশ ঋণসুবিধা ঠিক যেন সরকারি চাকরিজীবীদের জিপিএফের (জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড) মতোই। এ ছাড়া, বিশ্লেষকদের দাবি করা ৮ শতাংশ মুনাফা প্রদানের বিষয়টি বিধি ৩-এর উপবিধি (২) এবং ১২-এর বিধান সাপেক্ষে মাসিক পেনশনের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং, স্পষ্ট বোঝা যায়, লভ্যাংশের পরিমাণেরও হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে।
এ ছাড়া আর্থিক জরিমানার বিষয়টি যেহেতু ইসলামে সুদ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, তাই ধর্মীয় দিক বিবেচনায় এটি বাতিল করার প্রস্তাব প্রদান করা যেতে পারে। তবে নমিনি নির্ধারণের বিষয়টিকে অনিশ্চিত মৃত্যুকে নির্দিষ্ট করার সঙ্গে তুলনা করা সমীচীন হবে বলে মনে করছি না। কেননা, সরকারি-বেসরকারি যেকোনো আর্থিক লেনদেনজনিত ব্যাপারে নমিনি নির্ধারণ করা ন্যায়সংগত একটি কাজ, যা ইসলামে বৈধ ও উত্তম হিসেবে বিবেচিত হবে।
মোট কথা, সরকারের এই উদ্যোগে নিঃসন্দেহে ত্রুটি রয়েছে, তা পরিমার্জন-পরিবর্ধন যেমন দরকার; তেমনি তৃণমূল পর্যায়ের সব সেক্টরের কর্মক্ষম মানুষকে উপকৃত করার এই মেগা প্রজেক্টকে সাধুবাদ প্রদানও আমাদের একান্ত জরুরি।
লেখক: শিক্ষক ও ইসলামবিষয়ক গবেষক
সন্তান আমাদের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান উপহার, এক টুকরা অস্তিত্ব, হৃদয়ের স্পন্দন। সন্তানের সঙ্গে মা-বাবার সম্পর্ক ভালোবাসা ও দয়ার এক স্বর্গীয় বন্ধন। এই ভালোবাসা আল্লাহর পক্ষ থেকে মানব হৃদয়ে প্রবাহিত এক অলৌকিক অনুভব।
৬ ঘণ্টা আগেমানুষ শুধু শারীরিক কাঠামো নয়; বরং আত্মা ও নৈতিকতা দ্বারা পরিপূর্ণ একটি সত্তা। আত্মার পরিচর্যা ও পরিশুদ্ধিই মানুষের চরিত্রকে করে তোলে মহৎ, আত্মাকে করে আলোকিত। আত্মশুদ্ধি এমন এক গুণ, যা মানুষকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছায়, মানবিক গুণাবলিতে পরিপূর্ণ করে, পার্থিব ও পারলৌকিক সফলতার পথ খুলে দেয়।
১ দিন আগেমানুষ সামাজিক জীব। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সমাজ প্রয়োজন। আর একটি সুস্থ, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের জন্য প্রয়োজন সুশাসন, নৈতিকতা, আইন ও পারস্পরিক সহানুভূতি। কিন্তু যখন সমাজে শৃঙ্খলার পরিবর্তে বিশৃঙ্খলা, শান্তির পরিবর্তে হানাহানি এবং ন্যায়ের পরিবর্তে জুলুমের সয়লাব হয়...
২ দিন আগেমহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁর ইবাদতের জন্য। পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাষায় এ কথা বলেও দিয়েছেন। সুরা জারিয়াতের ৫৬ নম্বর আয়াতে এসেছে, ‘আমি জিন ও মানুষ কেবল এ জন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদত করবে।’ আর মানুষের মাধ্যমে ইবাদত তখনই বাস্তবায়ন হওয়া সম্ভব, যখন মানুষ থাকবে জীবন্ত।
২ দিন আগে