Ajker Patrika

আল্লাহর ভয় জীবনে যে ১২ সুফল বয়ে আনে

মো. আব্দুল ওহাব
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র কোরআন। ছবি: সংগৃহীত

আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া জীবনের একটি মূল স্তম্ভ। মুসলমানদের জীবনে আল্লাহর প্রতি ভয় এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষাই তাদের আমল, চরিত্র এবং নৈতিকতার কেন্দ্রবিন্দু। কোরআন ও হাদিসে আল্লাহকে ভয় করার গুরুত্ব এবং প্রকৃত পদ্ধতি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে ভয় করো এবং অবশ্যই ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা আলে ইমরান: ১০২)

এই আয়াতে যথাযথভাবে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। যার মানে হচ্ছে এমন ভয়—যা আমাদের গুনাহ থেকে বিরত রাখে, আল্লাহর আদেশ পালন করায় উদ্বুদ্ধ করে এবং নিষেধাজ্ঞা থেকে দূরে রাখে। ভয় করো বললেই যথেষ্ট হতো কিন্তু যথাযথ শব্দটা উল্লেখ করে তিনি তাগিদ দিয়ে বলেছেন।

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই তাঁকে ভয় করে।’ (সুরা ফাতির: ২৮)

এখানে বোঝা যায়, আল্লাহকে ভয় করতে হলে প্রয়োজন সঠিক জ্ঞান—আল্লাহর গুণাবলি, শাস্তি ও প্রতিদান সম্পর্কে জানাশোনা।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভয় করি এবং তাঁর প্রতি সবচেয়ে বেশি তাকওয়াযুক্ত।’ (সহিহ্ বুখারি: ৬১৩০)

অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যেখানেই থাকো, আল্লাহকে ভয় করো। খারাপ কাজের পরে ভালো কাজ করো, যা সেটিকে মুছে দেবে। আর মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (জামে তিরমিজি: ১৯৮৭)

এই হাদিসে স্পষ্টভাবে বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহভীতি শুধু অন্তরের বিষয় নয়, বরং তা জীবনের প্রতিটি কাজে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

আল্লাহকে ভয় করার পদ্ধতি

১. তাকওয়া অবলম্বন করা

তাকওয়া মানে নিজেকে এমন সব কাজ থেকে বিরত রাখা, যা আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। পাশাপাশি আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে হেব। যেমন নামাজ কায়েম করা, রোজা রাখা, হারাম কাজ এড়িয়ে চলা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা নাহল: ১২৮)

২. অন্তরে আল্লাহর উপস্থিতি অনুভব করা

আল্লাহ সবকিছু দেখেন ও জানেন—এই বিশ্বাস হৃদয়ে স্থাপন করতে হবে। তাহলেই গোপনে বা প্রকাশ্যে সব কাজে আমরা আল্লাহকে ভয় করতে পারব। যেমন আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তিনি তোমাদের চোখের বিশ্বাসঘাতকতা এবং অন্তরের কথা জানেন।’ (সুরা গাফির: ১৯)

৩. আখিরাতের জবাবদিহির ভয়

আল্লাহর কাছে প্রত্যেকটি কাজের হিসাব দিতে হবে—এই বোধ আমাদের ভেতরে আল্লাহভীতি সৃষ্টি করে। যেমন আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে তুলে ধরেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোর ভয় পায় এবং নিজ প্রবৃত্তিকে কুপ্রবৃত্তি থেকে দূরে রাখে, নিশ্চয়ই তার ঠিকানা হবে জান্নাত।’ (সুরা নাজিআত: ৪০–৪১)

৫. অন্তরের ভয় ও চোখের অশ্রু

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুই ধরনের চোখকে জাহান্নাম আগুন স্পর্শ করবে না—এক. সেই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে...।’ (জামে তিরমিজি: ১৬৩৯)

আল্লাহভীতি যেসব পরিবর্তন আনে—

  • ১. গুনাহ থেকে বিরত রাখে।
  • ২. চরিত্র ও নৈতিকতা উন্নত করে।
  • ৩. সততা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে।
  • ৪. আত্মনিয়ন্ত্রণ শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • ৫. ইবাদতে মনোযোগ ও গভীরতা আনে।
  • ৬. মানবিক আচরণে উন্নতি ঘটে।
  • ৭. অহংকার ও হিংসা থেকে মুক্ত রাখে।
  • ৮. আখিরাতের জবাবদিহির প্রস্তুতি তৈরি করে।
  • ৯. দুনিয়ায় শান্তি ও তৃপ্তি এনে দেয়।
  • ১০. সবর (ধৈর্য) ও শোকর (কৃতজ্ঞতা) শেখায়।
  • ১১. হারাম থেকে বাঁচিয়ে হালাল জীবনে অভ্যস্ত করে।
  • ১২. আল্লাহর নৈকট্য ও রহমত অর্জনের পথ সুগম করে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে সহিংসতায় নিহত ৪ জনের ময়নাতদন্ত হলো না, প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ডিআইজি

বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল: সাবেক এমপিসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত