Ajker Patrika

বাংলাদেশে লকডাউন খুবই নিষ্ঠুর পদক্ষেপ

ফারুক মেহেদী
বাংলাদেশে লকডাউন খুবই নিষ্ঠুর পদক্ষেপ

লকডাউন অর্থনীতিতে কী প্রভাব ফেলছে? এর ক্ষতি পোষাতে করণীয় কী? কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকা তুলে নিচ্ছে কেন? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন বিডিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী

আজকের পত্রিকা: লকডাউনে অর্থনীতিতে কী প্রভাব পড়ছে?
অধ্যাপক আবু আহমেদ: করোনার প্রথম থেকেই বলছি, বাংলাদেশের মতো দেশে লকডাউন থেকে দূরে থাকা উচিত। হাসপাতাল, স্বাস্থ্যসেবার পরিধি বাড়ানো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকার ব্যবস্থা করা–এসবই একমাত্র সমাধান। যাদের পকেটে টাকা আছে, তারা লকডাউনে চলতে পারে। গরিব লোকজন কীভাবে চলবে? ইউরোপে চলে। কারণ, তাদের মানুষ কম। আমাদের তো গরিব মানুষ বেশি। আগে ২০ শতাংশের নিচে ছিল দরিদ্র মানুষের সংখ্যা, এখন তা বেড়ে ৩৫ শতাংশের কাছে চলে গেছে। সব স্থবির হয়ে পড়ছে। আমি মনে করি, অবিলম্বে সব খুলে দেওয়া উচিত। লকডাউন দিলেও করোনা যাবে না, আর লকডাউন না দিলেও করোনা যাবে না। লকডাউনে ঘরে বসে থেকে কী হলো–করোনা কি চলে গেছে? করোনা এভাবে যাবে না।

আজকের পত্রিকা: লকডাউন দেওয়ার আগে ক্ষতির বিষয়টি পর্যালোচনা করা উচিত কি না?
অধ্যাপক আবু আহমেদ: অর্থনীতিকে গলাটিপে ধরা যাবে না। যারা এসব বলে, তারা অর্থনীতি না বুঝেই বলে। লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করার আগে তারা এর অর্থনৈতিক প্রভাবটি পর্যালোচনা করেছে বলে আমার মনে হয় না। তারা বেতন-ভাতা পাচ্ছে। তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মানুষের কাজ হারানো, তাদের কষ্ট, না খেয়ে থাকা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। যত মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি মানুষ খাওয়ার কষ্টে আছে। আমি যদি কমিটির লোকজনকে একটি প্রস্তাব করি–আপনারা অর্ধেক বেতন-ভাতা নেবেন, বাকিটা সরকারের কাছে থাকুক। তখন দেখবেন তারা কী বলে। বাংলাদেশের জন্য লকডাউন খুবই নিষ্ঠুর পদক্ষেপ। রেস্টুরেন্ট বন্ধ, পরিবহন বন্ধ। দোকানপাট বন্ধ। শুধু শাকসবজি খেয়ে বাঁচবে মানুষ? আর এটার জন্য টাকা লাগবে না? সার্ভিস সেক্টর অচল। সুতরাং লকডাউন থেকে বাইরে এসে, অর্থনীতি সচল রেখেই চলার ব্যবস্থা নিতে হবে।

আজকের পত্রিকা: অর্থনৈতিক ক্ষতি পরিমাপের উপায় কী?
অধ্যাপক আবু আহমেদ: লকডাউনে অর্থনীতির ক্ষতি বিরাট, বিপুল। এর পরিমাণ কত হতে পারে, তা পরিকল্পনা কমিশন একটা জরিপ করে দেখতে পারে। চাইলে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়েও করা যায়। অর্থনীতি যদি সচল থাকে, এখানে যদি শৃঙ্খলা ফেরানো যায়, করহার পর্যালোচনা করা হয়, তবে আস্তে আস্তে অর্থনীতি ভালোর দিকে যেতে পারে। আর্থিক প্রণোদনা দিতে পারে।

আজকের পত্রিকা: অলস টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক তুলে নিচ্ছে। কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
অধ্যাপক আবু আহমেদ: তারল্য বেশি থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকব্যবস্থা থেকে বাড়তি টাকা তুলে নিচ্ছে–এটা আসলে একটা নীতির বিষয়। টাকা তুলে নেওয়া আবার টাকার প্রবাহ বাড়ানো–এই দু-ই কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার কৌশলের অংশ হিসেবে করে। এখানে ট্রেজারি বিল ব্যবহার করে সামান্য বেশি সুদ দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেবে। এটা মূলত অলস টাকাগুলো কোথায় কীভাবে ব্যবহার হয় না-হয়–এসব কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও তার নিরাপত্তা দিতে চায়। ব্যাংকগুলোও এতগুলো টাকা নিয়ে বসে আছে, বিনিয়োগ করতে পারছে না। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি সুদ দিলে তাদের হয়তো কিছু লাভ হবে। এতে মুদ্রাবাজারে একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। বাজারে বিদ্যমান সুদের হার কিছুটা বাড়তে পারে।

আজকের পত্রিকা: ব্যাংকে অলস টাকা বাড়ছে কেন?
অধ্যাপক আবু আহমেদ: মূলত কোভিডের কারণে অর্থনীতি অচল হয়ে পড়ায় বিনিয়োগ না হওয়ায় অলস তারল্য তৈরি হয়েছে। এই লকডাউন মানুষের লকডাউন হয়নি, হয়েছে অর্থনীতির লকডাউন। পুরো অর্থনীতি অচল করে বসে আছি। মানুষকে তাদের কাজ থেকে দূরে রেখেছি। পণ্য ও মালামাল যেতে পারছে না। ভোগ হচ্ছে না। ভোগ বন্ধ থাকলে অর্থনীতি কি চলে? উৎপাদন এবং ভোগ–এটাই তো অর্থনীতির শক্তি। এ কারণে বিনিয়োগ নেই। কিছু হচ্ছে সরকারি খাতে। বেসরকারি খাতে তো হচ্ছে না। ঋণপ্রবাহের প্রবৃদ্ধি দেখলেই বোঝা যায়। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি বলতে গেলে নেই। সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতি মন্দার মধ্যেই আছে। ব্যাংকিং সেক্টর কিছু লাভ হয়তো করছে। তাদের কিছু সেবা চালু ছিল বলে এটা সম্ভব হয়েছে। তবে সব ব্যাংক নয়। অনেক ব্যাংক ভালো অবস্থায় নেই। তারা হয়তো ১০-১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে। তবে ব্যাংকের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো নয়।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত