Ajker Patrika

অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ঘাটতি বাড়লেও সমস্যা হবে না

ফারুক মেহেদী
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ঘাটতি বাড়লেও সমস্যা হবে না

দেশের অর্থনীতি এখন কেমন চলছে? অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারটা কীভাবে সম্ভব? বাজেট ঘাটতি আরও বাড়বে কি না? সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে? এসব বিষয়ে আজকের পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারুক মেহেদী

আজকের পত্রিকা: দেশের বর্তমান অর্থনীতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: অর্থনীতিকে সাধারণত দুভাবে বিশ্লেষণ করা যায়। একটি হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে কীভাবে আর অন্য দেশের তুলনায়, বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের দেশের অবস্থা কী রকম? যদি প্রথমটি বিবেচনায় নিই, তাহলে নিঃসন্দেহে করোনার কারণে আমাদের অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার কমে গেছে। সবশেষ বিবিএসের হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। যদিও কয়েক বছর ধরে আমরা ৭ শতাংশ বা তার ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। সেদিক থেকে আমাদের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশের সঙ্গে তুলনা করলে তাদের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। সেদিক থেকে আমাদের অর্জন ভালো। তবে এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়লেও এটি নিয়ে বেশি মাত্রায় আত্মতৃপ্তির সুযোগ নেই। এখন সরকার বাধ্য হয়ে ঝুঁকি থাকলেও জীবিকা ও অর্থনীতি চালু রাখার জন্য কোভিডের বিধিনিষেধগুলো তুলে দিয়েছে।

আজকের পত্রিকা: অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারটা কীভাবে সম্ভব?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সরকার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছে। দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়া মানুষ যাতে কিছুটা ত্রাণ পায় বা সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আসে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। যদিও বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু দুর্বলতা রয়েছে। এসএমই খাতের প্রণোদনা প্যাকেজ এখনো পুরোপুরি বিতরণ করা যায়নি। সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় যেসব বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, সেসবের ক্ষেত্রেও অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণে যারা পাওয়ার কথা নয়, তারা পাচ্ছে। আবার যারা পাওয়ার কথা, তারা বঞ্চিত হয়। ভিজিডি বা ভিজিএফের চাল বিতরণেও অনিয়ম আছে। এগুলো নজরে রাখতে হবে। আর রপ্তানি খাতের পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করবে বহির্বিশ্বের চাহিদা কী রকম হয় তার ওপর। সে ক্ষেত্রে রপ্তানিটা বাড়ানো যায় কীভাবে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রেমিট্যান্সের অবস্থা তো এখন পর্যন্ত ভালোই আছে। তা অবশ্য কত দিন থাকবে সেটি দেখার বিষয়।

আজকের পত্রিকা: ক্ষতির পর্যালোচনা করার উপায় কী?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: জরিপের মাধ্যমে সেটা করা যায়। এ ক্ষেত্রে বিবিএসের দায়িত্ব রয়েছে। বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, কর্মসংস্থাননির্ভর এসএমই খাত বেশি মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার। বিভিন্ন জরিপে এটাও এসেছে যে কোন খাত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কৃষি খাত অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জিডিপিতে কৃষির অবদান যদিও বেশি নয়। কিন্তু কৃষি খাতের একটা বড় ভূমিকা হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তবে উৎপাদন খাতে সমস্যা আছে। সে কারণে এ খাতে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। লকডাউনেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা সচল রাখা হয়।

আজকের পত্রিকা: ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করতে সরকারের ঘাটতি বাড়বে কি না?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: অর্থনীতিকে সহায়তা সরকার ঘাটতি বাজেটের মাধ্যমে করবে, সেটা বাজেটেই বলা আছে। তবে বাস্তবে দেখা যায় ঘাটতি কম হয়। কারণ আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো বরাদ্দের সব টাকা খরচ করতে পারে না। প্রয়োজন হলে সরকার ঘাটতি অর্থায়ন আরও বাড়াতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আরও ঘাটতি অর্থায়ন বাড়ালেও মূল্যস্ফীতির অসুবিধা হবে না।

আজকের পত্রিকা: ব্যাংকে তারল্য বাড়ছে কেন?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: কারণ হলো, ব্যাংকে অতিরিক্ত তারল্য আছে কিন্তু বেসরকারি খাতে ঋণ যাচ্ছে না। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি তো ৮ দশমিক ১ শতাংশে নেমে এসেছে। কাজেই এখানে ঋণের চাহিদা নেই। সুতরাং ব্যাংকগুলো বাড়তি তারল্য নিয়ে বসে থাকলে তো তাদের লোকসান। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এদের কাছে বিল বিক্রি করছে মানে হলো, স্বল্প মাত্রায় হলেও এতে ব্যাংকগুলোর কিছু আয় হবে।

আজকের পত্রিকা: সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ দেখছেন?
ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম: সামনে করোনা প্রতিরোধের জন্য বা সংক্রমণ কমাতে কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে। এসএমই খাতকে প্রাণবন্ত করতে হবে। সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে। রপ্তানি খাতের বাজার বৈচিত্র্যকরণে গতি আনতে হবে। রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ প্রণোদনা যেটা আছে, তা যথেষ্ট। যেসব প্রবাসী চাকরি হারিয়েছে, তাদের চাকরি ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা এবং নতুন লোক পাঠানোর চেষ্টা করতে হবে।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত