Ajker Patrika

‘ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ লাগবে’

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৯: ০৮
‘ব্যাংকের ঋণপ্রবাহ বাড়াতে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ লাগবে’

আজকের পত্রিকা: করোনায় ঋণের কিস্তি স্থগিতে ব্যাংকের মুনাফায় কী প্রভাব পড়ছে?
ফারুক মঈনুদ্দীন: মালিকপক্ষ ছাড়া ব্যাংকের মুনাফার কথা খুব বেশি ভাবা উচিত নয়। করোনাভাইরাসের কারণে ব্যাংকগুলো যদি কাগুজে মুনাফা করে, তাহলে এটা তাদের সুশাসনের পরিপন্থী। কারণ, কিস্তির টাকা পাবে না। গ্রাহকেরা টাকা দিতে পারবেন কি না, বলা যাচ্ছে না। সেটা আনক্লাসিফাইড রেখে তার ওপর মুনাফা হিসাব করে মুনাফা নেওয়া সুশাসনের পরিপন্থী। সে কারণে ভালো ব্যাংক প্রভিশন রেখে দেয়। মুশকিল হচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে সুযোগসন্ধানী গ্রুপ এত শক্তিশালী যে, এটা করা যায় না। যেমন, ব্যাংকের মালিকপক্ষ। তারা প্রায় মাফিয়ার মতো হয়ে গেছে। তারা যা চায় তাই করা হচ্ছে।

আজকের পত্রিকা: এখানে কি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতা আছে?
ফারুক মঈনুদ্দীন: বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়টা স্পষ্ট করা দরকার ছিল। বলতে পারত আনক্লাসিফাইড রাখা যাবে, তবে প্রকৃত আদায় না হলে সেটা প্রভিশন রাখতে হবে, মুনাফায় নেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও সেই আগের মতো তাদের শক্ত অবস্থানে নেই। তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে এবং মালিকপক্ষের কাছে প্রায় নতজানু। তাদের ইমেজ হারিয়ে ফেলেছে। সে কারণে গ্রাহকদের ঋণ খেলাপি হয়ে যাচ্ছে, সেটা আবার আনক্লাসিফাইড রাখা হচ্ছে। সেখানে বলা উচিত ছিল, কিস্তি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তা আয় দেখানো যাবে না। বরং প্রভিশন রাখতে হবে। এটা করলে সত্যিকার মুনাফা হতো। ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যাচ্ছে, এই নিয়ে আমি চিন্তিত নই। আমি চিন্তিত যে, পরে দেখা গেল এটা ফেরত এল না। আসলে এখন যে মুনাফা করছে, এটা হলো কাগুজে মুনাফা।

আজকের পত্রিকা: ঋণ দেওয়ায় ব্যাংক এখন অনেকটাই রক্ষণশীল। কেন?
ফারুক মঈনুদ্দীন: ব্যাংকের কাজই ঋণ দেওয়া। না হলে ব্যাংক টিকবে কীভাবে? ব্যাংকের কাজ কিন্তু সুদের হার বাড়িয়ে আমানতকারীদের সুবিধা দেওয়া নয়। ব্যাংকের কাজ আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তা খাটিয়ে ব্যবসা করা। সুতরাং এখন যদি মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে ভারসাম্য রেখে সুদের হার ঠিক করা হয়, সেটা ঠিক আছে, সামাজিক কর্তব্য হিসেবে করতে পারে। কিন্তু ব্যাংক যেহেতু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, তার কাজ কি শুধু আমানতকারীর স্বার্থরক্ষা করা? ব্যাংক যদি ৯ শতাংশের নিচে সুদ রেখে ৮ শতাংশও গ্রাহক না পান, তাহলে ব্যাংক আমানতকারীদের বাড়তি সুদ কোথা থেকে দেবে? সুতরাং এখানে ঋণের চাহিদা আছে কি না, সেটা বড় বিষয়। বিনিয়োগের পরিবেশ থাকলে ব্যাংককে বিনিয়োগের জন্য বলতে হবে না।

আজকের পত্রিকা: ঋণের চাহিদা কীভাবে তৈরি হবে?
ফারুক মঈনুদ্দীন: যখন মন্দা থাকে, তখন চাহিদা তৈরির বিষয়টি সরকারের ওপর নির্ভর করে। সরকারকে তখন নানা রকম উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বিনিয়োগ করতে হয়, যাতে মানুষের আয় বাড়ে। মানুষের আয় বাড়লেই অর্থনীতি চাঙা হবে। অর্থনীতি চাঙা হলে ঋণের চাহিদা তৈরি হবে এবং বিনিয়োগ হবে। চাহিদা তৈরি করা না হলে অর্থনীতি, শিল্পকারখানা চলবে কীভাবে? তখন শিল্পের উৎপাদন কমিয়ে ফেলতে হবে। ভোক্তার ক্রয়ে অক্ষমতার জন্য ব্যাংক নয়, সরকারকে এমন সব কাজ করতে হবে, যার ফলে লোকজনের কাজের সুযোগ হবে, তাতে তাঁদের আয় বাড়বে। আয় বাড়লে তাঁরা তা ভোগ বাড়াবে, তখন শিল্পকারখানাও তাদের উৎপাদন বাড়াবে। তখন ব্যাংকের ঋণের চাহিদা আসবে।

আজকের পত্রিকা: এসএমই, ছোট ছোট ব্যক্তি উদ্যোগে তো এখন ঋণ দেওয়া উচিত।
ফারুক মঈনুদ্দীন: সরকার বললেই ব্যাংক যে কাউকে ঋণ দিয়ে দেবে না। তারা যাচাই-বাছাই করবে। সমস্যা হচ্ছে, সরকার জনপ্রিয়তা পেতে ব্যাংককে ঋণ দিতে বলে। ব্যাংক তার ঝুঁকি বিবেচনা করেই এগোবে। সরকারের কাজ সরকার করবে, ব্যাংকগুলো তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই সহায়তা করবে। সহজ কথা, বিনিয়োগের জন্য পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

আজকের পত্রিকা: রেমিট্যান্সপ্রবাহ এখন কমে যাচ্ছে কেন?
ফারুক মঈনুদ্দীন: রেমিট্যান্সে যে ঊর্ধ্বগতি ছিল, এটা আগে আমি ইউফোরিয়া বলেছিলাম। একসময় তা পড়ে যাবে, তা-ও বলেছিলাম। এখন তা বাস্তবে ঘটতে শুরু করেছে। কারণ, করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে যখন শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে যায়, অনেকে চাকরি হারান, তখন তাঁরা একসঙ্গে অনেক টাকা পাঠিয়ে দেন। এ রকম আরও কিছু কারণে টাকার প্রবাহ বেড়েছিল। তা ছাড়া, সরকার ২ শতাংশ হারে একটা প্রণোদনা দিয়েছিল। এর ফলে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। এটা এখন আবার কমতে শুরু করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত