Ajker Patrika

প্রণোদনার ঋণের কিস্তি পেতে ঝুঁকিতে ব্যাংক

ফারুক মেহেদী
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২১, ১৩: ১১
প্রণোদনার ঋণের কিস্তি পেতে ঝুঁকিতে ব্যাংক

আজকের পত্রিকা: সাম্প্রতিক পুঁজিবাজার নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড. এম এ বাকী খলিলী: আমার প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে পুঁজিবাজার কিছুদিন ধরে বেশ ভালোই এগোচ্ছে। নতুন নেতৃত্বে বাজারটিতে আস্থার সঞ্চার হয়েছে। সামনে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছে, বিভিন্ন খাত ও উপখাতে নীতি-কৌশলে সংস্কার আনা হচ্ছে, আগে যেমন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়ে অনিয়ম ছিল, এখানে বিএসইসি একটা শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছে। নতুন আইপিও এলেও ভালো সাড়া পাচ্ছে। সুতরাং চাহিদার দিক থেকে যে আস্থার সংকট ছিল, এটা অনেক কমেছে। তারপরেও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতায় ঘাটতি আছে। আইসিবির তহবিল নিয়েও তারা কাজ করছে। বিএসইসি কিছু সমস্যা হয়তো চিহ্নিত করেছে,  বাজারে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

আজকের পত্রিকা: বাজারটি ধারাবাহিকভাবে ভালো করার কারণ কী?
ড. এম এ বাকী খলিলী: সামষ্টিক অর্থনৈতিক সূচকগুলো এখন পুঁজিবাজার সহায়ক। যেমন সুদের হার এখন অনেক কম। ব্যাংকে আমানত রাখাটা খুব লাভজনক নয়। সে ক্ষেত্রে যাঁদের একটু জানাশোনা আছে, তাঁদের এখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করাটা ভালো। যেমন মিউচুয়াল ফান্ডগুলো আরও কার্যকর হচ্ছে। সবাই তো সরাসরি লেনদেন করবে না। কিছু লোক লেনদেন করবে মিউচুয়াল ফান্ডে। আরেকটি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকও নীতিসহায়তাকে পুঁজিবাজার সহায়ক করার চেষ্টা করছে। এসবই পুঁজিবাজারে প্রভাব ফেলছে। নীতিসহায়তার পাশাপাশি নতুন পর্ষদ আসাতে একধরনের আস্থা তৈরি হয়েছে এবং তারা যে কাজগুলো করছে, তা ইতিবাচক প্রভাব রাখছে।

আজকের পত্রিকা: মিউচুয়াল ফান্ডকে আরও আকর্ষণীয় করা যায় কীভাবে?
ড. এম এ বাকী খলিলী: আমার মনে হয়, মিউচুয়াল ফান্ড কী, এখনো অনেকে তা জানেন না। অনেকে মনে করেন এটা শেয়ারের মতো একটি প্রোডাক্ট। এটা যে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ বিনিয়োগ এবং তার ব্যবস্থাপনা যারা করবে, তারা বিচার-বিশ্লেষণ করে বিনিয়োগ করে, এতে তাদের পোর্টফলিও যে শক্তিশালী হয় এবং ঝুঁকি কমে—এটা সবাই ঠিকমতো বোঝেন বলে মনে হয় না। তাই এটাকে আরও জনপ্রিয় করা যায়। আর আমাদের এখানে বেশির ভাগ বিনিয়োগ করে তারা ক্যাপিটাল গেইন নিয়ে ভাবে। এটা যে ডিভিডেন্ডভিত্তিক বিনিয়োগ হতে পারে, সে রকম সচেতনতার অভাব রয়েছে। যদিও এখন তা বাড়ছে। তবে সার্বিকভাবে মিউচুয়াল ফান্ডকে জনপ্রিয় করার দরকার আছে।

আজকের পত্রিকা: বাজারটিকে টেকসই করা যায় কীভাবে?
ড. এম এ বাকী খলিলী: বাজার এখন আগের চেয়ে টেকসই অবস্থায় আছে। বিনিয়োগকারীদের একটা পুরোনো চরিত্র যে বাজার পড়তে থাকলে সবাই বিক্রি করতে থাকে। আর দাম বাড়তে থাকলে কিনতে থাকে। এ বাজার তো দক্ষ না। অনেকগুলো সমস্যা আছে। তারপরও যেটুকু দক্ষতা আছে সেখানেও শেয়ারের চাহিদা-জোগানের ওপর ভিত্তি করেই দাম ওঠানামা করবে। কোনোটির দাম কোনো দিন কমবে, আবার বাড়বে। যখন ইনডেক্স বেশি কমে যায়, তখন হুজুগ শুরু হয়ে যায়। আমাদের দেশে এটা একটা নেতিবাচক মনোভাব বিনিয়োগকারীদের। তারপরও আমি মনে করি এ অবস্থার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শিখতে শিখতেই দক্ষতা তৈরি হচ্ছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোরও কিছু ভূমিকা আছে। এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। দুর্বলতা আছে। অনেকে বলেন, গেইম থাকতে পারে। অদক্ষতার সুযোগে এটা হয়। তথ্যভিত্তিক হলে এটা কেটে যাবে।

আজকের পত্রিকা: প্রণোদনার চাপে ব্যাংকিং খাতের বর্তমান অবস্থা কী?
ড. এম এ বাকী খলিলী: করোনার কারণে প্রণোদনার দিক থেকে ব্যাংক সহায়তা দিচ্ছে। যখন করোনা কেটে যাবে এবং ঋণ পরিশোধের সময় আসবে, তখন কী হবে, সেটাই দেখার বিষয়। বাংলাদেশ ব্যাংক যেহেতু কিস্তি পরিশোধে বিশেষ ছাড় দিয়ে রেখেছে, তাতে ঋণ বা গ্রহীতারা সুবিধা পাচ্ছে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে চাপ তৈরি হচ্ছে। যখন কিস্তি পরিশোধের সময় হবে তখন বড় ধরনের ঝুঁকি আসতে পারে। যদিও আশা করি এমন কিছু হবে না। পোশাক খাত ছাড়া প্রায় সব খাতই লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চালু হওয়ার পর ঋণ পরিশোধ করাটা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। আমি মনে করি করোনাকালে প্রণোদনা দিয়ে সরকার অর্থনীতিটাকে সচল রাখার চেষ্টা করেছে। তবে সামনে এ দায়দায়িত্বটা কে নেবে, সেটা দেখার বিষয়। সরকারের উচিত হবে উদ্যোক্তাদের কিস্তি পরিশোধে আহ্বান জানানো। কারণ, ব্যাংকিং খাতে একটা চাপ আছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত