Ajker Patrika

বাড়ি কিনলেই মিলবে ভারী পাসপোর্ট

অনলাইন ডেস্ক
সেন্ট কিটস ও নেভিসের পাসপোর্ট। ছবি: বিবিসি
সেন্ট কিটস ও নেভিসের পাসপোর্ট। ছবি: বিবিসি

ক্যারিবীয় সাগরের পূর্ব অংশে অবস্থিত দ্বীপগুলো নয়নাভিরাম সমুদ্রসৈকত আর আরামদায়ক জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। তবে শুধু সৌন্দর্যই নয়, এসব দ্বীপে বাড়ি কিনলেই নাগরিকত্ব বা ভারী পাসপোর্টও মিলছে। এমন লোভনীয় প্রস্তাব দ্বীপগুলোর প্রতি বিদেশিদের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলছে।

বিবিসি জানিয়েছে, মাত্র ২ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করলেই নাগরিকত্ব দেয় পাঁচটি ক্যারিবীয় দেশ—অ্যান্টিগা ও বারবুডা, ডোমিনিকা, গ্রেনাডা, সেন্ট কিটস ও নেভিস এবং সেন্ট লুসিয়া। বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব (সিবিআই) প্রক্রিয়ায় ওই দেশগুলোর পাসপোর্ট পাওয়া যায়, যা দিয়ে যুক্তরাজ্য, ইউরোপের শেনজেন অঞ্চল সহ প্রায় ১৫০টি দেশে ভিসা ছাড়াই যাতায়াত করা যাবে।

বাড়ি কেনার পাশাপাশি এই দেশগুলোতে পুঁজিপতিদের জন্য বিশেষ আকর্ষণ হলো—সম্পদ আহরণ কর, উত্তরাধিকার কর, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আয়কর পর্যন্ত নেই। সবচেয়ে বড় কথা, এই নাগরিকত্ব গ্রহণের পরেও আগের দেশের নাগরিকত্ব বজায় রাখা যায়।

অ্যান্টিগার রিয়েল এস্টেট এজেন্ট নাদিয়া ডাইসন জানান, বর্তমানে প্রায় ৭০ শতাংশ ক্রেতা বাড়ি কিনে নাগরিকত্ব চাইছেন। তাঁদের বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। গত বছরও যেখানে মানুষ শুধু জীবনধারার কারণে বাড়ি কিনতেন, এখন তাঁরা বলছেন—এমন বাড়ি চাই যেখানে নাগরিকত্বও মিলবে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির সময় ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা ধনী মার্কিন নাগরিকদের বেশ নড়েচড়ে বসায়। এরপর ২০২০ এবং ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের পরও এই স্রোত বেড়ে যায়। ‘হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স’-এর বিশেষজ্ঞ ডমিনিক ভোলেক বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ শুধুমাত্র একটি বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে দ্বিতীয় পাসপোর্ট চায়।’

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, ইউক্রেন, তুরস্ক, নাইজেরিয়া এবং চীনের নাগরিকেরাও এই প্রকল্পের আওতায় নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে, ২০২৪ সালের শেষ প্রান্তিকের তুলনায় ২০২৫ সালে ১২ শতাংশ বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

এভাবে বাড়ি কেনাদের মধ্যে কানাডার হ্যালিফ্যাক্সের রবার্ট টেইলরও একজন। অ্যান্টিগায় তিনি ২ লাখ ডলারে একটি সম্পত্তি কিনে নাগরিকত্ব পেয়েছেন এবং অবসরকালীন জীবন সেখানেই কাটাবেন বলে জানিয়েছেন।

তবে এই নাগরিকত্ব ব্যবসা নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। ২০১২ সালে যখন অ্যান্টিগা সরকার অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় এই প্রকল্প চালু করে, তখন জাতীয়তাবাদী আবেগ থেকে স্থানীয় অনেক মানুষই এর বিরোধিতা শুরু করে।

এমনকি ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর কিছু নেতাও এর সমালোচনা করেছেন। সেন্ট ভিনসেন্ট ও গ্রেনাডিনসের প্রধানমন্ত্রী রাল্ফ গনসালভেস বলেছেন, ‘নাগরিকত্ব কোনো বিক্রয়ের পণ্য হওয়া উচিত নয়।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই পাসপোর্টধারীদের ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার বাতিলের হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও কর ফাঁকি ও আর্থিক অপরাধের ঝুঁকির কথা বলেছে।

তবে সংশ্লিষ্ট পাঁচটি দেশ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে কঠোর নজরদারি ও সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছে। তারা যৌথভাবে একটি আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠন, আবেদনকারীদের ইন্টারভিউ বাধ্যতামূলক এবং আবেদনকারী এক দেশে প্রত্যাখ্যাত হলে অন্য দেশে আবেদন করার পথ বন্ধের মতো ছয়টি নীতি গ্রহণ করেছে।

বর্তমানে উল্লেখিত দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর মোট জিডিপির ১০ থেকে ৩০ শতাংশই এই পাসপোর্ট বিক্রির ওপর নির্ভর করছে। সেন্ট কিটসের সাংবাদিক আন্দ্রে হুই বলেন, ‘এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার যা করতে পেরেছে, তাতে জনগণ এর মূল্য বুঝতে শিখেছে।’

অর্থনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা পেনশন তহবিলের ঘাটতি—এসব মোকাবিলায় নাগরিকত্ব বিক্রিকে এখন এই দ্বীপগুলো ‘লাইফলাইন’ হিসেবেই দেখছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ব্যাংকিংয়ের নামে কারসাজি, ফাঁসছে ফার্স্ট সিকিউরিটি

‘আমার নিরপরাধ ছেলেডারে ডাইক্যা নিয়া ওসি স্যার জেলে ডুকাইয়া দিল’

রাঙামাটির হোটেল থেকে নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, ম্যানেজার আটক

চাঁদাবাজদের কথিত তালিকা নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড়, বিএনপি-জামায়াত নেতাদের নাম

ম্যানহোলে পড়ে নারী নিখোঁজ: ‘‎মব’ তৈরি করে হামলার চেষ্টা, উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত