Ajker Patrika

ট্রাম্পের কাতারি রাজপরিবারের বোয়িং ‘উপহার’ পাওয়ার নেপথ্যে কী আছে

অনলাইন ডেস্ক
ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতারের বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি
ফেব্রুয়ারিতে ফ্লোরিডার পাম বিচ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাতারের বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজ। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র বিতর্কিত সেই ‘উড়ন্ত রাজপ্রাসাদ’ তথা কাতারের বিলাসবহুল উড়োজাহাজ বোয়িং-৭৪৭ গ্রহণ করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র বলছে, উড়োজাহাজটি স্থানান্তর নিয়ে দুই দেশের আইনজীবীদের মধ্যে এখনো আলোচনা চলমান। কোনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।

তবে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, এরই মধ্যে উড়োজাহাজটি তাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। পেন্টাগনের তথ্যমতে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ কাতারের বোয়িং-৭৪৭ বিমানটি গ্রহণ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যবহারের আগে বিমানটিতে নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে পেন্টাগন।

পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সব নিয়মকানুন মেনেই কাতারের কাছে থেকে বোয়িং ৭৪৭ উড়োজাহাজটি গ্রহণ করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। এই বিমান যেন নিরাপদ হয় এবং প্রেসিডেন্টের কাজের জন্য উপযুক্ত হয়, সেটা নিশ্চিত করতে প্রতিরক্ষা বিভাগ কাজ করবে।’

তবে উড়োজাহাজটি কি বিনা মূল্যে গ্রহণ করা হয়েছে নাকি এর জন্য কোনো অর্থ পরিশোধ করা হয়েছে—সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেননি পারনেল। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের মার্কিন বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয় পেন্টাগনের তরফ থেকে। এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কাতারি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। তবে, তারা কী উত্তর দিয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

এর আগে, গত সোমবার কাতারের প্রধানমন্ত্রী আব্দুল আজিজ আল-থানি ব্লুমবার্গকে বলেন, ‘উড়োজাহাজ সংক্রান্ত বিষয়টি কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের মধ্যে একটি সরকারি লেনদেন। যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার বহু বছর ধরে সু-সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করছে কাতার এবং এই সহযোগিতার প্রক্রিয়াটি পুরোপুরিভাবে স্বচ্ছ এবং এটি আইন মেনেই হচ্ছে।’

এরপর গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনী সচিব ট্রয় মেইঙ্ক ও বিমানবাহিনীর চিফ অব স্টাফ ডেভিড অ্যালভিন আইনপ্রণেতাদের জানান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বিমানবাহিনীকে উড়োজাহাজটিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন। মেইঙ্ক বলেন, ‘প্রতিরক্ষামন্ত্রী উড়োজাহাজটি পরিমার্জন-পরিবর্ধনের পরিকল্পনা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা সেই প্রস্তুতি নিয়েই এগোচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহিনীর এক মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, প্রতিরক্ষা সচিবের নির্দেশে তারা একটি বোয়িং-৭৪৭ বিমানকে প্রেসিডেন্ট বা অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাতায়াতের জন্য উপযোগী করে তোলার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য তারা একটি বিশেষ কোম্পানিকে কাজ দেওয়ার (চুক্তি করার) প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে এই চুক্তির বিস্তারিত তথ্য গোপন রাখা হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প যখন মধ্যপ্রাচ্য সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তার ঠিক আগে আগে সামনে আসে কাতারের এই বিলাসবহুল উড়োজাহাজ ট্রাম্পকে উপহার দেওয়ার বিষয়টি। ট্রাম্প নিজেই তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে জানান, কাতারের রাজপরিবার তাঁকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের একটি বিলাসবহুল উড়োজাহাজ উপহার দিচ্ছে। তারপর থেকেই এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। প্রথমে প্রশ্ন ওঠে—এত দামি একটি উপহার কি ট্রাম্প নিতে পারেন কিনা। আর এই উপহার কি কাতারের সঙ্গে চুক্তিতে প্রভাব ফেলতে পারে কিনা?

পরে, এ নিয়ে জল ঘোলা হতে শুরু করলে একপর্যায়ে সামনে আসে— কাতার ট্রাম্পকে কোনো উপহার দিচ্ছে না। বরং, ট্রাম্প প্রশাসনই এয়ারফোর্স ওয়ান হিসেবে ব্যবহারের জন্য উড়োজাহাজটি কিনতে কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গত সোমবার এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই এয়ারফোর্স ওয়ান পরিবর্তনে তোড়জোড় শুরু করেন ট্রাম্প। কারণ, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজটি ৩৫ বছরের পুরোনো। প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশও (সিনিয়র বুশ) এটি ব্যবহার করতেন।

নতুন উড়োজাহাজের জন্য গত জানুয়ারিতেই বোয়িংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কিন্তু আগামী দুই বছরের মধ্যে নতুন কোনো প্রেসিডেনশিয়াল উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে না বলে জানায় বোয়িং। এয়ারফোর্স ওয়ান পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি দ্রুত সম্পন্ন করতে চাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তাই শুরু হয় বিকল্প খোঁজা।

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফকে এয়ারফোর্স ওয়ানের বহরের জন্য সম্ভাব্য উড়োজাহাজের তালিকা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সময় বোয়িং জানায়, বিশ্বজুড়ে তাদের যেসব ক্লায়েন্টের কাছে এয়ারফোর্স ওয়ান হওয়ার মতো উড়োজাহাজ আছে তার একটি তালিকা তারা পেন্টাগনকে দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে মাত্র আটটি উড়োজাহাজ খুঁজে পাওয়া যায়, যেগুলো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বহনের যোগ্য হতে পারে। ওই তালিকায় ছিল কাতারের ওই আলোচিত জাম্বো জেট। দেশটির রাজপরিবার একসময় এই উড়োজাহাজটি ব্যবহার করত। পরে, উইটকফ কাতারিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেটটি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

আলোচনার সঙ্গে অবহিত চারটি সূত্র সিএনএনকে জানিয়েছে, উড়োজাহাজটি কেনার বিষয়টি নিয়ে এখনো দুই দেশের আইনজীবীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে যখন উড়োজাহাজটি কেনার আগ্রহ দেখায়, সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিষয়টি আইনজীবীদের হাতেই আছে। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

গত সোমবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিটও উড়োজাহাজ হস্তান্তরকে ‘দেশের জন্য অনুদান’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘কাতারের রাজপরিবার এই উড়োজাহাজটি মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছে অনুদান হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, আইনি ও নীতিগত প্রক্রিয়া অনুযায়ীই সেটি গ্রহণ করা হবে।’

নৈতিক এবং আইনগত প্রশ্ন ছাড়াও, অন্য একটি দেশের ব্যবহৃত বিমানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সরঞ্জাম বসানো অনেক বড় এবং জটিল একটি কাজ। বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা সিএনএনকে জানিয়েছেন, এই কাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ২ বছর সময় লাগতে পারে এবং এতে উড়োজাহাজের মূল দামের চেয়েও অনেক বেশি খরচ হতে পারে।

এই রূপান্তরের দায়িত্বে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মূলত পুরো বিমানটি ভেঙে কেবল ফ্রেম রেখে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে—যাতে সব প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ঠিকভাবে বসানো যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নারীকে লাথি মেরে ফেলে দেওয়া ‘শিবিরের লোক’ আকাশ চৌধুরীকে ধরছে না পুলিশ

প্রফেসর আনোয়ারা আ.লীগের লোক হলে এত অপমান নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হত না: ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময়

বৈষম্যবিরোধীদের মিছিল থেকে জি এম কাদেরের বাড়ি ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে আগুন

ফারুক কেন নিঃসঙ্গ হলেন

পরিচালক পদ বাতিল, বিসিবি সভাপতির পদ থেকে ফারুককে অপসারণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত