Ajker Patrika

টিকটকে লাইভ করার সময় হত্যার শিকার ভ্যালেরিয়া সম্পর্কে যা জানা গেল

অনলাইন ডেস্ক
ভ্যালেরিয়া মার্কেজ। ছবি: বিবিসি
ভ্যালেরিয়া মার্কেজ। ছবি: বিবিসি

২৩ বছর বয়সী ম্যাক্সিকান ইনফ্লুয়েন্সার ভ্যালেরিয়া মার্কেজ টিকটকে লাইভ করা অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে মেক্সিকোর জালিস্কো রাজ্যের জাপোপান শহরে অবস্থিত ভ্যালেরিয়ার নিজস্ব বিউটি পারলারে। ঘটনার পর দেশজুড়ে শুরু হয়েছে চাঞ্চল্য ও নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। কেউ বলছেন, এটি মাদকচক্রের কাজ, কেউ আবার এটিকে নারীর প্রতি সহিংসতার দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউম জানিয়েছেন, হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ উদ্‌ঘাটনে তদন্ত চলছে। জালিস্কো রাজ্য প্রসিকিউটর দপ্তর জানিয়েছে, ঘটনাটি ‘নারী-হত্যা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, অর্থাৎ শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

আজ শুক্রবার বিবিসি জানিয়েছে, ভ্যালেরিয়া ২০২১ সালে ‘মিস রোস্ত্রো’ (মিস ফেস) প্রতিযোগিতা জয়ের মাধ্যমে পরিচিতি লাভ করেন এবং এরপর থেকেই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তাঁর ইনস্টাগ্রাম অনুসারীর সংখ্যা মৃত্যুর সময় ২ লাখ ২৩ হাজারের বেশি ছিল। আর টিকটকে তাঁর ফলোয়ার ছিল প্রায় ১ লাখ। ভ্রমণ, ফ্যাশন, মেকআপ টিপস ও বিলাসবহুল জীবনের ঝলকই ছিল তাঁর কনটেন্টের মূল আকর্ষণ।

শেষ লাইভ স্ট্রিমে তিনি জানিয়েছিলেন, কুরিয়ারের মাধ্যমে এক পরিচিত বন্ধুর উপহার এসেছে। এই বিষয়েই তিনি লাইভে ফলোয়ারদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। কথা বলার মাঝখানে হঠাৎ তিনি বুক ও পেটে হাত দিয়ে কুঁচকে পড়ে যান, তাঁর কোলের গোলাপি রঙের খেলনাটি তখনো তাঁর হাতে। সঙ্গে থাকা আরেক নারী লাইভ বন্ধ করে দেন।

পুলিশ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভ্যালেরিয়ার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মোটরসাইকেলে করে দুই ব্যক্তি এসেছিল। একজন ভ্যালেরিয়াকে চেনার জন্য তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করে এবং ‘হ্যাঁ’ বলার পরই তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।

যে এলাকাটিতে ভ্যালেরিয়াকে হত্যা করা হয়েছে, সেই এলাকাটি একটি অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত। তবে এখানে প্রায় সময়ই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেখানকার অধিকাংশ জমি ও ব্যবসা-বাণিজ্য মাদক ব্যবসার টাকায় পরিচালিত হয়। এখানেই গড়ে উঠেছে কুখ্যাত সিজেএনজি খ্যাত একটি মাফিয়া চক্র। তবে প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, ভ্যালেরিয়ার হত্যা কোনো অপরাধচক্রের নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে, এমন প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

এদিকে তদন্তে জানা গেছে—এর আগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত কিছু বার্তায় ভ্যালেরিয়া তাঁর সাবেক প্রেমিকের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, তাঁর যদি কিছু হয়ে যায়, তবে যেন তাঁর সেই প্রেমিককেই দায়ী করা হয়। তবে তিনি কখনোই কর্তৃপক্ষকে নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো সাহায্য চাননি বলে জানিয়েছেন জাপোপানের মেয়র হুয়ান হোসে ফ্রাঞ্জি।

একই দিনে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে সাবেক এক কংগ্রেসম্যান লুইস আর্মান্দো কোর্দোবা দিয়াসকেও হত্যা করা হয়েছে। এ ছাড়া মার্চ মাসে জাপোপান থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে একটি মাদকচক্রের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রও উন্মোচিত হয়েছে।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ভিডিও ফুটেজ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট ও সব ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ করে ঘটনার পেছনের কারণ অনুসন্ধান চলছে।

মেক্সিকোতে নারী-নির্যাতন ও গৃহ-নির্যাতনের হার ক্রমেই বাড়ছে। ভ্যালেরিয়ার মৃত্যু যেমন মেক্সিকোর সহিংস বাস্তবতারই প্রতিফলন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত