Ajker Patrika

বাইডেন–জনসন বৈঠকে ব্রেক্সিটের ছায়া

অনলাইন ডেস্ক
Thumbnail image

ঢাকা: মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জি–সেভেন সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম এই বিদেশ সফর বাইডেন প্রশাসনের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরসূচিতে জি–সেভেন সম্মেলন যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি। যেকোনো পরিস্থিতিতেই এমন বৈঠক গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে তা আরও বেশি গুরুত্ব বহন করছে। বিশেষত ব্রেক্সিট ইস্যুতে দুই নেতার অবস্থান সম্পূর্ণ বিপরীত হওয়ায় বৈঠকে এ ইস্যুর ছায়া পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের কর্নওয়ালের কারবিস বে–তে খুব শিগগিরই মুখোমুখি বৈঠকে বসছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সবার নজর এই বৈঠকের দিকেই থাকবে। কারণ, এই দুই নেতা স্বভাবে ও রাজনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে একেবারে বিপরীত দিকে অবস্থান করেন। বরিস জনসনকে অনেক সময়ই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। ট্রাম্প ও বরিস জনসন একই রকম জনতুষ্টিবাদী রাজনীতির অনুসারী। বেফাঁস কথা বলার ক্ষেত্রেও তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সফল অনুলিপি বলা যায়। এ নিয়ে বহু আলোচনাও হয়েছে। আর জো বাইডেন ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েই ক্ষমতায় এসেছেন। ফলে এবারের বৈঠকে বাইডেন তাঁর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বীর একটি দুর্বল অনুলিপির মুখোমুখিই হতে যাচ্ছেন বলা যায়। বিষয়টি এমনকি বাইডেনও জানেন। ২০২০ সালে বাইডেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শারীরিক ও আবেগীয় অনুলিপি’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন লিখেছে, বৈশ্বিক রাজনীতির মাঠে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই বৈশ্বিক রাজনীতির গতিপথের নির্ধারক হয়ে ওঠে। ফলে বিপরীত মেরুর দুই নেতা আলোচনায় বসে উভয় দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে এবং গোটা বিশ্বের ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা তৈরিতে কী করেন, সেদিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।

তবে এসব বিষয় সত্ত্বেও দুই দেশের নেতার মধ্যকার এই প্রথম বৈঠক ভালো হবে বলেই আশা করছেন সবাই। বরাবরের মতোই রীতি মেনে বরিস জনসন বাইডেনকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাবেন। আলোচনায় আন্তরিকতাও নিশ্চয় থাকবে। কিন্তু গোটা বিশ্ব, তথা বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের সম্পর্ক, শক্তির নবায়ন ও বিন্যাস ইত্যাদির পথনির্দেশ তৈরিতে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কতটা সফল আলোচনা করতে পারবেন, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় থেকে যাচ্ছে। বাইডেন নিশ্চিতভাবে এই সফরের মধ্য দিয়ে ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো মৈত্রীকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন। ট্রাম্প জমানায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যাদের কিছুটা তিক্ত সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা সারাই করা তো বটেই, একে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব এখন তাঁর কাঁধে। এদিকে জনসন ব্রেক্সিট চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপনে সবচেয়ে বেশি স্বস্তি পান। যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বিশ্ব মঞ্চে নিজের পুরোনো প্রভাব ও শৌর্যকে ফিরিয়ে আনতে তৎপর, বরিস জনসনের সরকার সেখানে ইউরো থেকে বেরিয়ে একলা চলো নীতির নতুন অধ্যায় রচনায় মশগুল। এই ইউরো থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়েও দুই নেতার অবস্থান সুস্পষ্টভাবে আলাদা। বাইডেন ব্রেক্সিটের বিরোধিতা করেছিলেন।

সঙ্গে রয়েছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের প্রসঙ্গটি, যা অঞ্চলটিতে চলতি বছর বেশ উত্তেজনার জন্ম দিয়েছিল। এই সংকটও ব্রেক্সিটের কারণেই তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে উত্তর আয়ারল্যান্ডের বাণিজ্য কীভাবে চলবে, তা নিয়ে চলমান এ সংকটের এখনো কোনো মীমাংসা হয়নি। বিষয়টি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের আলোচনায়ও এবার উঠছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের পূর্বপুরুষদের বাস ছিল আয়ারল্যান্ডে। ফলে অঞ্চলটি নিয়ে তাঁর এক ধরনের আবেগ রয়েছে। এই আবেগের জায়গাটি নিয়ে আসন্ন বৈঠকে বাইডেন আলোচনা তুলতেও পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। এ বিষয়ে এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান।

গতকাল বুধবার জ্যাক সুলিভান সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর আয়ারল্যান্ডের বিষয়ে বরিস জনসনের সঙ্গে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কোনো আলোচনায় যাবেন না প্রেসিডেন্ট বাইডেন। তবে বিষয়টির মীমাংসা যেন করা হয়, সে বিষয়ে তিনি কথা বলবেন। এ বিষয়ে নিজের উদ্বেগের কথাও তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত