Ajker Patrika

ইরাকে যৌথ বাহিনীর মিশন শেষ হবে আগামী বছর

আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০: ২৫
ইরাকে যৌথ বাহিনীর মিশন শেষ হবে আগামী বছর

ইরাকে বিদ্যমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যে যৌথ বাহিনী আছে, সেটির মিশন ২০২৫ সালের শেষ দিক নাগাদ শেষ হবে। তবে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী ও দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা অংশীদারত্ব থেকে যাবে। গতকাল শুক্রবার ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথ এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইরাকে আড়াই হাজার বিদেশি সেনা অবস্থান করছে। এ ছাড়া, প্রতিবেশী সিরিয়ায় আছে আরও ৯০০ সেনা। ২০১৪ সালে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে মোকাবিলায় এই যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। 

যৌথ বিবৃতিতে কতসংখ্যক মার্কিন সৈন্য ইরাক ছেড়ে যাবে এবং কোন ঘাঁটি থেকে যাবে, সে বিষয়ে খুব সামান্যই তথ্য দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, এই পদক্ষেপের অর্থ ইরাক থেকে সেনা প্রত্যাহার নয় এবং কোনো সৈন্য ইরাক ছেড়ে যাবে কি না, তা বলতেও তিনি অস্বীকার করেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি শুধু এই সত্য বলতে চাই যে, এটি প্রত্যাহার নয়। এটি একটি পরিবর্তন মাত্র। এটি জোটের সামরিক মিশন থেকে একটি সম্প্রসারিত যুক্তরাষ্ট্র-ইরাক দ্বিপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্পর্কের রূপান্তর মাত্র।’ ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরাকে মার্কিন সামরিক অবস্থানের বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। 

রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, এই চুক্তির ফলে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে যৌথ বাহিনীর শত শত সৈন্য ইরাক ত্যাগ করবে। বাকিরা ২০২৬ সালের শেষ দিকে চলে যাবে। পরিকল্পনার আওতায় যৌথ বাহিনী ইরাকের পশ্চিমের আনবার প্রদেশের আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটি ত্যাগ করবে এবং ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাগদাদে তাদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনবে। তবে মার্কিন নেতৃত্বের যৌথ বাহিনীর অন্যান্য সৈন্য ইরবিলে থেকে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, এই জোটে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, ইতালিসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ আছে। 

ইরাকে যৌথ বাহিনীর উপস্থিতির ধরন পরিবর্তন হলেও মার্কিন কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছেন, সিরিয়ায় মার্কিন মিশন অব্যাহত থাকবে। ইরাক থেকে মার্কিন নেতৃত্বের যৌথ বাহিনীর প্রস্থান বা সেনাসংখ্যা কমানোর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে ওয়াশিংটনের সামরিক উপস্থিতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বয়ে আনবে। 

মার্কিন সমর কর্মকর্তাদের মতে, প্রাথমিকভাবে ইসলামিক স্টেটের মোকাবিলায় মনোনিবেশ করার জন্য এই যৌথ বাহিনীর উপস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ হলেও ইরাকে মার্কিন উপস্থিতি ইরানের বিরুদ্ধে একটি কৌশলগত অবস্থান হিসেবে কাজ করে। মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইরাকে মার্কিন বাহিনী ইসরায়েলের দিকে ইরানের রকেট ও ড্রোন নিক্ষেপ করার মতো বিষয়ে ডিটারেন্স বা প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে ইরাকে মার্কিন উপস্থিতি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

বিশ্লেষকেরা এই চুক্তিকে ইরাকের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিয়া আল-সুদানির জন্য একটি বড় রাজনৈতিক জয় নলে মনে করেন। কারণ, তিনি একই সঙ্গে ইরানেরও মিত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

কর্মীদের আর সাইকেল চালানোর শাস্তি দেবে না ‘জাপান পোস্ট’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। ছবি: সংগৃহীত
জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। ছবি: সংগৃহীত

বিতর্কের মুখে একটি পুরোনো প্রথা বন্ধ করেছে জাপানের ডাক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘জাপান পোস্ট’। এই প্রথা অনুযায়ী, ছোটখাটো কোনো দুর্ঘটনা কিংবা ভুল-ভ্রান্তির জন্য জড়িত ডাক কর্মীদের মোটরসাইকেলের পরিবর্তে সাইকেলে ডেলিভারি করতে বাধ্য করা হতো। এমনকি প্রচণ্ড গরম বা প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেও এই শাস্তি দেওয়া হতো। সম্প্রতি একটি তদন্তের পর প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে—এই প্রথাটি কর্মক্ষেত্রের হয়রানি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত টোকিওর এক ডাক কর্মীকে কেন্দ্র করে। গত আগস্টের শেষ দিকে পার্ক করা একটি গাড়ির কিছুটা ক্ষতি সাধন করেছিলেন তিনি। পরে এর শাস্তি হিসেবে মোটরসাইকেলের বদলে সাইকেল চালিয়ে চিঠি বিতরণের নির্দেশ দেওয়া হয় তাঁকে। এভাবে প্রতিদিন কয়েক ডজন কেজি ওজনের ডাক বহন করতে গিয়ে ওই কর্মী শারীরিক ও মানসিক কষ্টে ভুগেছিলেন। তাঁর এই কষ্ট গণমাধ্যমের দৃষ্টিগোচর হয় এবং তা সাধারণ মানুষও জানতে পারে।

জাপান পোস্ট তখন দাবি করেছিল, এটি শাস্তি নয় বরং ভবিষ্যতে ভুল এড়ানোর প্রশিক্ষণ। তবে পরে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করে নেয়, শাস্তি দেওয়ার সময়টি অযৌক্তিক ছিল এবং এই নির্দেশের উদ্দেশ্যও স্পষ্ট করা হয়নি। ওই কর্মী টানা আট দিন কাজ করেন, যার মধ্যে পাঁচ দিনই তাপমাত্রা ছিল ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি।

তীব্র জনসমালোচনার পর কোম্পানির অভ্যন্তরীণ এক নোটে বলা হয়েছে, ‘এই প্রথার কোনো কার্যকর কোনো প্রয়োজন নেই; বরং এটি হয়রানিমূলক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।’

তদন্তে দেখা যায়, জাপান পোস্টের অন্যান্য শাখাতেও এই ধরনের শাস্তিমূলক সাইকেল চালানোর ঘটনা ঘটেছে এবং কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরেই এর বিরোধিতা করছিলেন। তিন বছর আগে একটি প্রস্তাবনাতেও এই প্রথা বাতিলের আহ্বান জানানো হয়েছিল, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘যে ডেলিভারি এলাকা মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত, সেখানে সাইকেল চালানো অসম্ভব। এটি নিঃসন্দেহে হয়রানি।’

এই বিষয়ে জাপান পোস্টের এক কর্মকর্তা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেছেন, ‘আমরা বুঝতে পেরেছি, অনেক সময় কর্মীদের কাছে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয় না।’

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ঘটনা জাপানের কর্মসংস্কৃতির গভীরে থাকা এক মানসিকতার প্রতিফলন—যেখানে ‘প্রশিক্ষণ’ বা ‘প্রেরণা’ নামের আড়ালে প্রায়ই শাস্তিমূলক আচরণ লুকিয়ে থাকে। কর্মক্ষেত্র গবেষক কানেকো মাসাওমি বলেন, ‘জাপানি কর্মসংস্কৃতি ঐতিহ্যগতভাবে অধ্যবসায়কে গুরুত্ব দেয়। কিন্তু কর্মীবান্ধব পরিবেশই শেষ পর্যন্ত কর্মদক্ষতা বাড়ায়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রমাণ ছাড়া শুধু ‘শারীরিক সম্পর্ক’ বললেই ধর্ষণ নয়: দিল্লি হাইকোর্ট

প্রতিনিধি কলকাতা 
ছবি: পিটিআই
ছবি: পিটিআই

ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট এক রায়ে জানিয়েছেন, কেবল ‘শারীরিক সম্পর্ক’ কথাটির ব্যবহারকে ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে ধরা যাবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এমন শব্দের ব্যবহার যদি প্রমাণসহ সমর্থিত না হয়, তাহলে তা ধর্ষণ বা জোরপূর্বক যৌন সম্পর্কের আইনি সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে না। গত শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক ব্যক্তির ১০ বছরের কারাদণ্ড বাতিল করে এ রায় দেন বিচারপতি মনোজ কুমার ওহরির বেঞ্চ। রায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খালাসও দেওয়া হয়।

মামলাটি শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। অভিযোগ ছিল বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে এক কিশোরীর সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেন ওই ব্যক্তি। কিন্তু আদালতে বিচার চলাকালে যে বক্তব্য ও প্রমাণ হাজির করা হয়, সেখানে শুধু ‘শারীরিক সম্পর্ক’ কথাটিই ব্যবহৃত হয়। কিন্তু এর অর্থ, প্রকৃতি বা তা আদৌ যৌন নিপীড়নের পর্যায়ে পড়ে কি না, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

বিচারপতি ওহরি বলেন, এ মামলার বিশেষ প্রেক্ষাপটে ‘শারীরিক সম্পর্ক’ শব্দের ব্যবহার কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা বা প্রমাণ ছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ধারা ৩৭৬ (ধর্ষণ) ও পকসো আইনের (শিশুদের যৌন অপরাধ থেকে সুরক্ষা আইন) ধারা ৬-এর অধীনে তাঁর দণ্ড আইনসংগত নয়।

আদালত রায়ে আরও উল্লেখ করেন, দুঃখজনক হলেও এই মামলায় প্রসিকিউশন বা নিম্ন আদালত কেউই কিশোরীকে প্রশ্ন করেনি—ঠিক কী বোঝাতে সে ‘শারীরিক সম্পর্ক’ বলেছে। ফলে আদালতের কাছে অপরাধের প্রকৃতি, জোরপূর্বক কিংবা প্রতারণার উপাদান কিছুই স্পষ্ট হয়নি। বিচারপতি বলেন, কোনো শিশুসাক্ষীর সাক্ষ্যে যদি প্রয়োজনীয় তথ্যের ঘাটতি থাকে, আদালতের দায়িত্ব সেখানে প্রশ্ন করে বিষয়টি পরিষ্কার করা। আদালত কখনোই নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, প্রসিকিউশন যদি তাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন না করে, আদালতকে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসে সত্য উদ্‌ঘাটন করতে হবে।

রায়ে বলা হয়, শিশু ও তার অভিভাবকেরা শুধু বলেছে যে—অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন’, কিন্তু ঠিক কীভাবে বা কী ঘটেছে, এর কোনো বর্ণনা দেওয়া হয়নি। কোনো ফরেনসিক বা চিকিৎসা প্রতিবেদনও আদালতের সামনে উপস্থাপিত হয়নি। ফলে শুধু মৌখিক সাক্ষ্যেই পুরো মামলা নির্ভর করেছিল।

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে, ‘শারীরিক সম্পর্ক’ শব্দটি ভারতীয় দণ্ডবিধি বা পকসো আইনে কোথাও সংজ্ঞায়িত নয়। তাই এর ব্যাখ্যা নির্ভর করে সাক্ষীর বক্তব্যে কী বোঝানো হয়েছে, তার ওপর। যেহেতু সেই অংশ অনুপস্থিত, তাই অপরাধ প্রমাণিত বলা যাবে না। বিচারপতি ওহরি আরও বলেন, এটা দুঃখজনক, কিন্তু আদালত আবেগে নয়, প্রমাণে চলেন। তাই এ মামলায় খালাস দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

আদালত একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেন—শিশুসাক্ষীর ক্ষেত্রে আদালতের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য, যাতে তারা যে ঘটনা বলতে চায়, তা সম্পূর্ণভাবে রেকর্ডে আসে। রায়ের পর আইনজীবী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এ রায় নতুন করে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের মানদণ্ড ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ, আদালত এখানে কেবল শব্দের ব্যাখ্যা নয়, প্রমাণের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের মতে, আইনের চোখে ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়, সঠিক প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা।

আদালত একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তদন্ত ও বিচারকার্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনাও দেন—শিশুসাক্ষীর ক্ষেত্রে আদালতের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য, যাতে তারা যে ঘটনা বলতে চায়, তা সম্পূর্ণভাবে রেকর্ডে আসে। রায়ের পর আইনজীবী মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, এ রায় নতুন করে ধর্ষণসংক্রান্ত মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের মানদণ্ড ও বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। কারণ, আদালত এখানে কেবল শব্দের ব্যাখ্যা নয়, প্রমাণের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছেন।

দিল্লি হাইকোর্টের মতে, আইনের চোখে ন্যায়বিচার মানে কেবল শাস্তি নয়, সঠিক প্রক্রিয়ার নিশ্চয়তা।

এ মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তি দীর্ঘ ১০ বছর সাজাভোগের মুখে ছিলেন। কিন্তু আদালতের বিশ্লেষণে দেখা যায়, যেভাবে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, তাতে অপরাধের উপাদান সম্পূর্ণ অনির্দিষ্ট রয়ে গেছে। এমনকি ‘বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা’ অংশটিও আদালতে যথাযথ প্রমাণিত হয়নি। আদালত রায়ে আরও মনে করিয়ে দেন, শিশু বা কিশোর সাক্ষীর বয়স অনুযায়ী তার বক্তব্য বোঝার চেষ্টা করাও আদালতের দায়িত্ব। শিশুরা প্রায়ই এমন ভাষা ব্যবহার করে, যা আইনগত সংজ্ঞার সঙ্গে মেলে না। তাই তদন্ত ও বিচারকাজে সংবেদনশীলতা ও ব্যাখ্যাশক্তি দুটোই প্রয়োজন। আদালতের ভাষায়, যেখানে রাষ্ট্র নিজের পক্ষ থেকে ব্যর্থ হয়, সেখানে আদালতকে নীরব থাকা চলবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ভারতের রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে হেলিপ্যাডে দেবে গেল হেলিকপ্টারের চাকা, ঠেলে তুলল নিরাপত্তাকর্মীরা

কলকাতা প্রতিনিধি  
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঠেলে হেলিকপ্টারের চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন। ছবি: সংগৃহীত
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঠেলে হেলিকপ্টারের চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের কেরালার পাথানামথিট্টায় আজ বুধবার সকালে একটি বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে, যা মুহূর্তে সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাঁর চার দিনের কেরালা সফরের দ্বিতীয় দিনে উদ্দেশ্য ছিল বিখ্যাত শবরিমালা মন্দির দর্শন। সূচি অনুযায়ী ঠিক করা ছিল রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার কেরালার নীলাক্কালে অবতরণ করবে। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত স্থান নীলাক্কাল থেকে বদলে প্রমাদমের রাজীব গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া হয়।

এ জন্য গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে তড়িঘড়ি করে প্রমাদমের রাজীব গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটি নতুন কংক্রিট হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু নামার পরপরই ঘটে যায় এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। হেলিকপ্টারের একটি চাকা সদ্য ঢালাই দেওয়া কংক্রিটের দুর্বল অংশে আটকে যায় এবং নিচের মাটি বসে গিয়ে ছোট গর্ত তৈরি হয়। পরে আশপাশে উপস্থিত পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও নিরাপত্তাকর্মীরা তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে ঠেলাঠেলি করে সেই চাকা গর্ত থেকে বের করে আনেন।

টেলিভিশনের ফুটেজে দেখা যায়, হেলিকপ্টারটি স্থির অবস্থায় রয়েছে, চাকা আধা বসা অবস্থায় আর চারদিক থেকে কয়েকজন কর্মী ঠেলে সেটিকে ওপরে তোলার চেষ্টা করছেন।

নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দাবি, হেলিপ্যাডের কংক্রিট পুরোপুরি শুকায়নি, ফলে চাকার নিচের অংশ বসে গিয়েছিল। তবে স্বস্তির খবর, রাষ্ট্রপতি বা তাঁর সঙ্গে থাকা কেউ আহত হননি এবং সফরসূচিও ব্যাহত হয়নি। হেলিকপ্টার থেকে নামার পর রাষ্ট্রপতি মুর্মু নির্ধারিত সড়কপথে পাম্বার উদ্দেশে যাত্রা করেন।

স্থানীয় প্রশাসন জানায়, আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে অবতরণের স্থান পরিবর্তন করা হয়েছিল। তবে প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতির মতো উচ্চ নিরাপত্তার ব্যক্তির সফরে কীভাবে এমন ত্রুটি ঘটল? প্রশাসনিক গাফিলতি নাকি সময়ের চাপে তৈরি হেলিপ্যাডের গুণগত ত্রুটি—তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।

স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্তে জায়গা বদল করি, রাতে দ্রুত হেলিপ্যাড বানানো হয়, কিন্তু কংক্রিট পুরোপুরি শক্ত হয়নি, তাই এ রকম সমস্যা হয়েছে।’

প্রমাদমের বাসিন্দারা জানান, হেলিকপ্টার ঠেলে তুলতে পুলিশ-ফায়ার সার্ভিসের ছোটাছুটি দেখে তাঁরা অবাক হয়েছেন। তবে জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিতভাবে চলেছে এবং রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তায় কোনো ঘাটতি হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারবিরোধী বড় সংস্কারের উদ্যোগ, আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের আপত্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৭: ৩৭
যুক্তরাজ্যে অর্থ পাচারবিরোধী বড় সংস্কারের উদ্যোগ, আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের আপত্তি

ব্রিটেনে আইনজীবী ও হিসাবরক্ষকদের সংগঠনগুলো দেশটির অর্থপাচারবিরোধী নীতিতে বড় ধরনের সংস্কারের অংশ হিসেবে তাদের ফাইন্যান্সিয়াল কনডাক্ট অথোরিটির (এফসিএ) তত্ত্বাবধানে আনার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে। ব্রিটেনের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশটির অর্থপাচারবিরোধী দুর্বলতা মোকাবিলায় ২৩টি সংস্থা থেকে প্রায় ৬০ হাজার আইন ও হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানের তদারকি দায়িত্ব সরিয়ে তা এফসিএ-এর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, যেসব সংস্থা বর্তমানে এই তদারকি করে ফি আয় করে থাকে, তারা এই পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, এতে খরচ বাড়বে, ব্যবসায় বড় ধরনের অস্থিরতা দেখা দেবে এবং অনেকের ফি হারিয়ে টিকে থাকাই কঠিন হয়ে পড়বে।

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস ইনস্টিটিউটের (আইসিএইডব্লিউ) নিয়ন্ত্রক বোর্ডের চেয়ারম্যান পারজিন্দার বাসরা বলেছেন, এ সিদ্ধান্তে তারা ‘হতাশ।’ তাঁর ভাষায়, ‘এটি প্রতিষ্ঠানের ওপর বাড়তি চাপ ও খরচ তৈরি করবে, যা ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করবে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁর ইনস্টিটিউট শিগগিরই মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবে, যাতে এই সিদ্ধান্তের সব দিক আলোচনায় আসে এবং বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া যায়।

অনেক বিশেষজ্ঞ বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, যুক্তরাজ্যের পেশাজীবী সেবাখাত—বিশেষ করে আইনজীবী, হিসাবরক্ষক এবং ট্রাস্ট ও কোম্পানি সেবা প্রদানকারীদের তদারকিতে নানা সংস্থা জড়িত থাকায় এখানে স্বার্থের সংঘাত তৈরি হয় এবং দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থ সহজেই ঢুকে পড়ে।

অর্থ মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সংস্থা ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের সর্বশেষ মূল্যায়নে দেখা গেছে, বিশেষত পেশাজীবী সেবাখাতে তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা ও অসামঞ্জস্যতা যুক্তরাজ্যের অর্থপাচারবিরোধী কাঠামোর একটি ‘গুরুতর ঝুঁকি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের গবেষণা ও অনুসন্ধান বিভাগের প্রধান স্টিভ গুডরিচ বলেন, ‘এই সংস্কার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল। যুক্তরাজ্যের ভাঙা অবৈধ অর্থ তদারকি ব্যবস্থাকে ঠিক করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

অভিযানভিত্তিক সংস্থা স্পটলাইট অন করাপশনের নির্বাহী পরিচালক সুসান হাওলি বলেন, এই ক্ষমতা এফসিএ—এর হাতে গেলে ‘আইন ও হিসাবরক্ষণ খাতে বড় ধাক্কা লাগবে, কারণ এত দিন তাদের তদারকি সংস্থাগুলো তাদের প্রতি নরম আচরণ করেছে।’

তবে এ নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। অনেকের আশঙ্কা, হিসাবরক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে নতুন করে ব্যয়বহুল মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে এবং এফসিএ এত বড় দায়িত্ব সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চার্টার্ড সার্টিফায়েড অ্যাকাউনট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশনের কৌশল ও পরিচালনা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ম্যাগি ম্যাকগি বলেন, ‘এই পরিবর্তন কার্যত অর্থপাচারবিরোধী প্রয়োগের দক্ষতা কমিয়ে দেবে, যা জনগণের স্বার্থবিরোধী।’

তিনি আরও বলেন, এটি হবে ‘এক বিশাল প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ’, যার সঙ্গে বাড়তি ব্যয় ও তথ্য-নিরাপত্তার ঝুঁকি জড়িত থাকবে, আর এতে ‘বিদ্যমান বহু মূল্যবান দক্ষতা হারিয়ে যাবে।’ কিছু আইন বিশেষজ্ঞও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কিংসলি ন্যাপলি নামের আইন সংস্থার অর্থপাচারবিরোধী বিভাগের পরিচালক ও সাবেক সলিসিটর্স রেগুলেশন অথোরিটির কর্মকর্তা কোলেট বেস্ট বলেন, ‘আইন সেবা খাতের জন্য এফসিএ প্রকৃত তদারকি সংস্থা নয়।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো জানতে চায়, পরিবর্তন কার্যকর হতে কত সময় লাগবে, তাদের নতুন করে এফসিএ অনুমোদন নিতে হবে কি না, আর এ সময়ে অর্থপাচারবিরোধী তদারকি কীভাবে চলবে।’

ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসআরএ—এর এক মুখপাত্র বলেন, তারা ‘হতাশ’ যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থপাচারবিরোধী তদারকিতে যে ‘গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি’ করেছে, তা আরও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, এ সিদ্ধান্ত ‘অত্যন্ত জটিল এক নিয়ন্ত্রক কাঠামোকে সরল করবে।’ তবে এটি কার্যকর হতে হলে সংসদে অনুমোদন, অর্থায়নের নিশ্চয়তা এবং একটি বিস্তারিত রূপান্তর ও বাস্তবায়ন পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই পরিবর্তনের সময়সূচি ‘পার্লামেন্টের সময়সূচির ওপর নির্ভরশীল’ বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। তারা আরও বলেছে, এফসিএ-কে নতুন দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ দেওয়া হবে এবং নভেম্বর মাসে অতিরিক্ত তদারকি ক্ষমতা নিয়ে পরামর্শ প্রক্রিয়া শুরু হবে।

সিটি মন্ত্রী লুসি রিগবি বলেন, ‘পেশাজীবী সেবাখাতে ২৩টি পৃথক তদারকি সংস্থা থাকার ফলে নজরদারি ও প্রয়োগে অসামঞ্জস্য তৈরি হয় এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা জটিল হয়ে ওঠে।’

এফসিএ-র বাজার তদারকি ও প্রয়োগ বিভাগের যৌথ নির্বাহী পরিচালক স্টিভ স্মার্ট বলেন, এই পরিবর্তন ‘পেশাজীবী সেবা খাতের তদারকি সহজ করবে’ এবং ‘আমাদের অপরাধ শনাক্ত ও ব্যাহত করার সক্ষমতা বাড়াবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত