Ajker Patrika

গাজা পুনর্গঠনে ৫৩০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা: সমর্থন জাতিসংঘের, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২৫, ১৩: ০১
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি
১৫ মাসের সামরিক অভিযানে গাজা এখন ধ্বংসস্তূপ। ফাইল ছবি

আরব বিশ্বের দেশগুলোর নেতারা ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়া ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজা পুনর্গঠনের জন্য ৫৩ বিলিয়ন ডলারের একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) অধীনে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরায়’ পরিণত করার পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি জনগণকে নিজ ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে ফেলার কথা বলা হয়েছিল। ফিলিস্তিনি ও আরব নেতারা ট্রাম্পের এই প্রস্তাবকে জাতিগত নিধনের সমতুল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন।

মিসর উত্থাপিত ও আরব দেশগুলোর গৃহীত প্রস্তাবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কথা বলা হলেও পিএর অধীনে গাজার শাসনব্যবস্থা এখনো অনিশ্চিত। কারণ, ইসরায়েল ভবিষ্যতে পিএর কোনো ভূমিকা নাকচ করে দিয়েছে এবং ট্রাম্প তাঁর প্রথম দফায় ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) ওয়াশিংটন অফিস বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনও বাড়িয়েছিলেন।

এদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই পুনর্গঠন পরিকল্পনাকে ‘পরিস্থিতির বাস্তবতা উপেক্ষা’ করার শামিল বলে উল্লেখ করেছে। দেশটি বলেছে, এতে হামাসের ৭ অক্টোবর হামলার সময় ইসরায়েলিদের হত্যা ও অপহরণের বিষয়টি বা হামাসের সমালোচনা করা হয়নি। তবে, হামাস এ পরিকল্পনার সফলতা নিশ্চিত করতে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে এবং আঞ্চলিক সমর্থন পাওয়াকে ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ‘অগ্রগতি’ হিসেবে বিবেচনা করেছে।

কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লিগের শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপিত নতুন প্রস্তাবটি জরুরি ত্রাণ, বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপর ভিত্তি করে ছিল। মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে বলেন, তার সরকারের পুনর্গঠন পরিকল্পনা নিশ্চিত করবে যে ফিলিস্তিনিরা ‘তাদের ভূমিতে থাকতে পারে।’ পরে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জাতিসংঘ ‘সম্পূর্ণ সহযোগিতা’ দিতে প্রস্তুত।

সম্মেলনের চূড়ান্ত বিবৃতিতে ‘একটি সমন্বিত আরব পরিকল্পনা’ গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়, যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এসব প্রচেষ্টা ফিলিস্তিনির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিকে একটি রাজনৈতিক অগ্রগতির সঙ্গে সমান্তরালভাবে চলছে।’ সম্মেলনে পিএর অধীনে শাসনব্যবস্থায় ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব একত্র করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে এই অংশে হামাসের কথা বলা হয়নি।

মিসর সরকার উত্থাপিত নথিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি করা আবাসন উন্নয়ন, উদ্যান ও কমিউনিটি সেন্টারের চিত্র উপস্থাপন করেছে। এ ছাড়া একটি বাণিজ্যিক বন্দর, প্রযুক্তিকেন্দ্র, সৈকতে অবস্থিত হোটেল এবং একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা দেখানো হয়েছে এতে।

মিসরের প্রস্তাবে এই অঞ্চল কোন কর্তৃপক্ষ শাসন করবে তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে এক খসড়া বিবৃতিতে কেবল ফিলিস্তিনি প্রশাসনিক কমিটির সমর্থনের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হলো—এই পরিকল্পনা ইসরায়েল সমর্থন করেনি। এর আগে, ইসরায়েলি বাধার কারণে গাজাকেন্দ্রিক সব পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তিনি ফিলিস্তিনের পুরো ভূখণ্ডের ওপর স্থায়ী নিয়ন্ত্রণ চান।

এদিকে, উপকূলীয় অঞ্চলে হামাস গোষ্ঠী ১৬ মাসের যুদ্ধে দুর্বল হলেও রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে এবং এটি একটি প্রক্রিয়া মেনে নেবে না যা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হবে। হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা সামি আবু জুহরি বলেছেন, হামাস ফিলিস্তিনিদের ওপর প্রকল্প চাপিয়ে দেওয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মেলনের সফলতার প্রতি আগ্রহী এবং আশা করি যে, বাস্তুচ্যুতি প্রত্যাখ্যান এবং আমাদের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য একটি আহ্বান থাকবে এতে।’ হামাস গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতি প্রকাশ করে কায়রোতে অনুষ্ঠিত আরব লিগের সম্মেলনকে গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরকে ‘প্রতিরোধ’ করার আহ্বান জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা একটি কার্যকর আরব ভূমিকা প্রত্যাশা করি, যা গাজা উপকূলে দখলদারিত্বের সৃষ্টি করা মানবিক বিপর্যয় শেষ করবে...এবং (ইসরায়েলি) দখলদারত্বের পরিকল্পনাগুলোকে ব্যর্থ করবে।’

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস সম্মেলনে অংশ নেন। তবে গাজায় তাঁর কোনো প্রভাব নেই বললেই চলে। মিসরের পরিকল্পনাটি জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেসের সমর্থনও পেয়েছে। তিনি এর আগে ট্রাম্পের ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ পরিকল্পনার পর জাতিগত নিধনের সতর্কতা দিয়েছিলেন।

গুতেরেস বলেন, ‘আমি আরব নেতৃস্থানীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানাই এবং গাজা পুনর্গঠনে সমর্থন এগিয়ে নেওয়ার জন্য সম্মেলনে স্পষ্টভাবে প্রকাশিত এই পরিকল্পনা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি। জাতিসংঘ এই প্রচেষ্টায় পূর্ণ সহযোগিতা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

গুতেরেস গাজায় একটি অস্থির যুদ্ধবিরতি পুনরায় শুরু করার জন্য ‘কোনো বিলম্ব ছাড়াই’ আলোচনা পুনরায় শুরুর আহ্বান জানিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

বৃদ্ধের চার বিয়ে, থানায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার জেরার মুখে হাসির রোল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত