Ajker Patrika

গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে ইসরায়েলি সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস

অনলাইন ডেস্ক
গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। প্রতীকী ছবি
গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনে নতুন প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। প্রতীকী ছবি

ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস ঘোষণা করেছে যে, গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি অর্জনের লক্ষ্যে তারা একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে। যেখানে দ্বিতীয় ধাপে অবশিষ্ট সব ইসরায়েলি জিম্মিকে একসঙ্গে মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে সব ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করতে হবে।

তবে ইসরায়েল এই বিষয়ে এখনো কোনো অবস্থান ব্যক্ত করেনি। বরং দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করার লক্ষ্যে আসন্ন আলোচনায় ইসরায়েলের শর্ত হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজায় তাদের কোনো উপস্থিতি না রাখা। পাশাপাশি, যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা না রাখা।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামাসের মুখপাত্র হাজেম কাসেম বলেছেন, হামাসের হাতে থাকা সব জিম্মিদের মুক্তি তখনই সম্ভব হবে যখন ইসরায়েল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করবে এবং গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণভাবে সেনা প্রত্যাহার করবে।

হাজেম কাসেম আরও জানান, মধ্যস্থতাকারীদের অনুরোধে হামাস মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে এবং দাবি করেছে যে, তারা যুদ্ধবিরতি মেনে চলার প্রতিশ্রুতি প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। কাসেম বলেন, ‘হামাসকে গাজা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ইসরায়েলের যে দাবি, সেটি হাস্যকর। এটি কেবল একটি মনস্তাত্ত্বিক কৌশল। প্রতিরোধ চলবে, নিরস্ত্রীকরণ কোনোভাবেই সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘গাজার ভবিষ্যৎ ব্যবস্থা জাতীয় ঐকমত্যের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে।’

অপরদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি এক বৈঠকে মন্ত্রীদের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি বর্ধিত করতে আসন্ন দ্বিতীয় ধাপের আলোচনায় ইসরায়েলের শর্ত হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা এবং গাজায় তাদের কোনো উপস্থিতি না রাখা। পাশাপাশি, যুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা না থাকা।

গত সোমবার রাতে ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশটির সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১২। বৈঠকে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনার বিষয়ে আলোচনা হয়, যদিও এটি ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শুরু হয়নি। ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু গাজার সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণেরও দাবি জানিয়েছেন।

বৈঠকের পর গতকাল মঙ্গলবার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদিওন সা’আর বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা ‘এ সপ্তাহেই’ শুরু হবে। এ পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি, গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং যুদ্ধের সমাপ্তির বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

আসন্ন আলোচনায় ইসরায়েলের অবস্থান সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে সা’আর সতর্ক করেন, ‘জেরুজালেম গাজায় হামাস বা অন্য কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনের উপস্থিতি মেনে নেবে না।’ তবে তিনি যোগ করেন, আলোচনায় গঠনমূলক অগ্রগতি হলে ইসরায়েল আলোচনার সময়সীমা বাড়ানোর ব্যাপারে আগ্রহী থাকবে এবং যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত হতে পারে।

সা’আর বলেন, ‘যদি আলোচনায় ইতিবাচক দিক থাকে এবং চুক্তিতে পৌঁছানোর বাস্তব সম্ভাবনা থাকে, তবে আমরা এই সময়সীমা আরও দীর্ঘ করব।’

তবে বিশ্লেষকদের মতে, নেতানিয়াহুর দাবির সঙ্গে বন্দীদের মুক্তি সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতি কীভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তা অনিশ্চিত। কারণ, বন্দীদের মুক্তির একমাত্র সম্ভাব্য উপায় হতে পারে হামাসকে গাজায় কিছুটা কার্যকর অবস্থায় থাকতে দেওয়া, যা নেতানিয়াহু বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন।

আল-জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, বন্দী ও যুদ্ধবন্দি বিনিময়ের প্রশ্নে হামাস ও ইসরায়েল উভয় পক্ষই নৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, ‘হামাস ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ছে। যদিও সাম্প্রতিক বন্দিবিনিময় প্রক্রিয়ায় এটি প্রমাণিত হয়েছে, হামাস এখনো ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে টিকে থাকতে পারছে, কিন্তু এর মানে এই নয় যে—তারা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। বরং তারা দুর্বল অবস্থানে আছে।’

বিশারা আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের সমস্যা হলো, তারা শক্তিশালী হলেও হামাসকে সম্পূর্ণ পরাজিত করতে পারছে না। তবে বাস্তবতা হলো, ইসরায়েল এখনো পুরো প্রক্রিয়ার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে—কবে, কোথায় সাহায্য প্রবেশ করবে তা নির্ধারণ করছে এবং বিকল্প আশ্রয় প্রকল্পগুলো না পৌঁছানো পর্যন্ত, এটি ফিলিস্তিনিদের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে।’

বিশারা আরও বলেন, ‘প্রকৃত সমস্যা শুধু প্রথম ধাপে নয়, বরং দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপেই সবচেয়ে বেশি জটিলতা দেখা দেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত