Ajker Patrika

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান নেতানিয়াহুর, সংশয়ে গাজার ভবিষ্যৎ 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৪৮
Thumbnail image

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, অঞ্চলটিতে হামাসের বিরুদ্ধে বিজয়ের অতি সন্নিকটে তাঁর দেশ। গাজায় ইসরায়েলের একমাত্র লক্ষ্য হলো চূড়ান্ত বিজয়। তবে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনার পরিকল্পনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর ও কাতার। এই অবস্থায় গাজার ভবিষ্যৎ আবারও সংশয়ে পড়ে গেছে। 

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় কোনো ধরনের যুদ্ধবিরতির পক্ষে নন। তাঁর লক্ষ্য হামাসের পুরোপুরি বিনাশ। তাঁর মতে, হামাসের চূড়ান্ত পরাজয়ই কেবল ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। 

ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ‘আমরা পরিপূর্ণ বিজয়ের পথে আছি। বিজয় আমাদের হাতের নাগালেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিজয় থেকে মাত্র কয়েক মাস দূরে। কেবল পরিপূর্ণ বিজয়ই আমাদের ইসরায়েলের উত্তর ও দক্ষিণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সুযোগ দেবে।’ 

নেতানিয়াহু এ সময় হামাস প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিকে ‘ভ্রমপূর্ণ’ বলে আখ্যা দেন। সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু হামাসকে সমূলে ধ্বংস করার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, হামাসকে পুরোপুরি ধ্বংস করা ছাড়া ইসরায়েলের সামনে আর কোনো পথ নেই। তিনি আরও বলেন, ‘এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে দিনের পর দিন হামাসের পেছনে লেগে থাকতে হবে। এখন প্রতিটি দিনই সফলতার দিন।’ 

এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গাজায় চলমান দেশটির নৃশংস আগ্রাসন বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে এই অবস্থায়ও যুদ্ধবিরতির সুযোগ দেখছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। তাঁর মতে, এখনো সব সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি। আলোচনার মাধ্যমে একটি অবস্থানে পৌঁছার জন্য যথেষ্ট সুযোগ আছে। 

রয়টার্সের অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা গাজা উপত্যকায় চার মাস ধরে চলমান যুদ্ধে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়ন করতে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্য সফররত অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন জানিয়েছেন, এখনো চুক্তির সুযোগ আছে। 

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘হামাস যে প্রস্তাব দিয়েছে, তাতে যুদ্ধবিরতি এগিয়ে নেওয়ার স্পষ্ট সুযোগ কম।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে আমরা যে আলোচনার করছি, তাতেও আমরা দেখছি যে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সুযোগ আছে।’ 
 
এর আগে গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি শুরুর আগে তিন ধাপের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় হামাস। তিন ধাপের এই যুদ্ধবিরতির প্রতিটি ধাপের স্থায়িত্ব হবে ৪৫ দিন করে। অর্থাৎ যুদ্ধবিরতির মোট সময়কাল হবে ১৩৫ দিন। হামাসের প্রস্তাব অনুসারে, গোষ্ঠীটি তাদের হাতে জিম্মি থাকা বাকি ইসরায়েলিদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ইসরায়েলকেও বিপুল পরিমাণ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিতে হবে। 

হামাস প্রস্তাবিত এই সময়ের মধ্যে গাজার পুনর্গঠন শুরু হবে এবং অঞ্চলটি থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ক্রমান্বয়ে প্রত্যাহার করা হবে। এমনকি উভয় পক্ষের কাছে থাকা মৃতদেহ ও অন্যান্য উপকরণও বিনিময় করা হবে এই সময়ে। 

হামাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব অনুসারে, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের মুক্তির বিনিময়ে প্রথম ৪৫ দিনে সমস্ত ইসরায়েলি নারী জিম্মি, ১৯ বছরের কম বয়সী পুরুষ, বয়স্ক ও অসুস্থদের মুক্তি দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্বে অবশিষ্ট পুরুষ বন্দীদের ছেড়ে দেওয়া হবে এবং ইসরায়েলি কারাগার থেকে ফিলিস্তিনি পুরুষ বন্দীদের ছাড়তে হবে। 

হামাসের প্রস্তাব অনুসারে, তৃতীয় অর্থাৎ শেষ ধাপে হামাস আশা করে ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে এটি স্থায়ী চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হবে। পাশাপাশি হামাসের প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, প্রতিটি ধাপেই গাজার বেসামরিক নাগরিকদের জন্য প্রচুর ত্রাণসহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। 

প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, হামাস চায় অন্তত ১ হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনি বন্দীকে ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ বন্দীর তালিকা দেবে হামাস। যারা ইসরায়েলি আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত