Ajker Patrika

মেক্সিকোতে জনতার ভোটে বিচারক নির্বাচন কোন প্রক্রিয়ায়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ২১: ৩১
মেক্সিকো সিটি ইলেকটোরাল কাউন্সিলের কর্মকর্তা প্যাট্রিসিয়া আভেনডানোর হাতে বিচারক নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালটের একটি কপি। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে
মেক্সিকো সিটি ইলেকটোরাল কাউন্সিলের কর্মকর্তা প্যাট্রিসিয়া আভেনডানোর হাতে বিচারক নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালটের একটি কপি। ছবি: রয়টার্সের সৌজন্যে

মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন দল বলছে, দেশটির বর্তমান বিচারব্যবস্থায় বিচারকেরা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাই সরাসরি জনগণের ভোটে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক থেকে শুরু করে আপিল আদালতের সদস্য এবং সব স্তরের বিচারক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। এই বিষয়ে একটি আইনও পাস করেছে দেশটির পার্লামেন্ট। আগামীকাল রোববার এই ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ৭ হাজার বিচারক সরাসরি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বিশ্বের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র দেশ হিসেবে সরাসরি জনগণের ভোটে সব স্তরের আদালতের বিচারক নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেক্সিকো। তবে এর আগে ২০০৯ সালে বলিভিয়া কিছু বিচারকের জন্য নির্বাচনব্যবস্থা চালু করেছিল। কিন্তু এই নির্বাচনে অনেক ভোটারই খালি ব্যালট জমা দিয়েছিলেন। ফলে প্রক্রিয়াটি তখন থেকে আপাতত স্থগিত আছে। বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো কিছু দেশেও স্থানীয় বা পরোক্ষভাবে বিচারকদের নির্বাচন করা হয়। কিন্তু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে পুরো বিচারব্যবস্থায় বিচারক নির্বাচন করা একমাত্র দেশ হতে যাচ্ছে মেক্সিকো।

মেক্সিকোতে এই সংস্কারের প্রবক্তা হলেন মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেজ ওব্রাডর। তিনি বিচারব্যবস্থাকে ‘ঘৃণ্য’, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের স্বার্থরক্ষাকারী বলে সমালোচনা করেছিলেন।

চলুন, এই সংস্কারের কিছু বড় বিষয় জেনে নিই—

বিচারকদের নির্বাচন কীভাবে হবে

সংস্কারের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিচারক পদে দাঁড়ানোর জন্য একজন ব্যক্তির শুধু আইনের ডিগ্রি, ভালো ফল এবং বিচারিক ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা (যা স্পষ্ট করে বলা হয়নি) থাকতে হবে। এ ছাড়া যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে একটি সুপারিশপত্রও লাগবে। প্রার্থীদের আবেদন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা যাচাই-বাছাই করা হবে। কিছু ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম লটারি করে বেছে নেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের জন্য ১০ বছরের অভিজ্ঞতা দরকার হবে।

কিন্তু আগামীকালের এই নির্বাচন ঘিরে অনেক প্রশ্নের ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন ব্যালটে কতজনের নাম থাকবে? শত শত, এমনকি হাজার হাজার অপরিচিত ব্যক্তি এসব পদের জন্য লড়তে পারেন। ভোটাররা কি এত প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত যাচাই করবেন, নাকি রাজনৈতিক দলগুলো শুধু তাদের পছন্দের প্রার্থীদের তালিকা সমর্থকদের হাতে তুলে দেবে?

এ ছাড়া প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার খরচ কে বহন করেছে, তা-ও পরিষ্কার নয়। যদিও প্রস্তাবে প্রচারণার খরচ ও সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তবে যাঁরা বিচারক প্রার্থীদের অর্থায়ন করতে রাজি হন, তাঁদের হয়তো আদালতের মামলায় বিশেষ স্বার্থ থাকতে পারে।

এ ছাড়া ভোটারদের জন্য একটি প্রধান উদ্বেগের বিষয় হলো ভোট প্রদানের জটিলতা। যেমন মেক্সিকো সিটির জনগণকে স্থানীয় ও ফেডারেল বিচারকদের জন্য ৯টি ব্যালট দেওয়া হবে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে ৭ হাজার বিচারকের মধ্যে ২ হাজার ৬০০ জন নির্বাচিত হবেন। বাকিরা ২০২৭ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের আরেকটি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন। নির্বাচনের পরেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের সংখ্যা ১১ জন থেকে কমিয়ে ৯ জন করা হবে এবং তাঁদের মেয়াদ ১৫ বছর থেকে কমিয়ে ১২ বছর করা হবে।

মেক্সিকোর স্থানীয় এল ইউনিভার্সাল ও এল পাইস সংবাদপত্রের জরিপ অনুসারে, মাত্র অর্ধেক ভোটার এই নির্বাচনের তারিখ জানেন এবং ১০ জনের মধ্যে মাত্র ৪ জন নিশ্চিত করেছেন, তাঁরা ভোট দিতে যাবেন (শতকরা ৪০ শতাংশ)। তবে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লদিয়া শেইনবাউম ভোটাররা কম অংশগ্রহণ করবেন এমন আশঙ্কাকে গুরুত্ব দেননি। এই অভিজ্ঞ বামপন্থী নেত্রী বলেন, ‘মানুষ খুব বুদ্ধিমান এবং তারা জানে, কাকে ভোট দেবে।’

বর্তমানে মেক্সিকোতে বিচারক কীভাবে হন

বর্তমানে বিচারক ও আদালতের সচিবেরা (সহকারী বিচারকদের মতো) নিয়মিত পর্যালোচনা ও মূল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে উচ্চ পদে উন্নীত হন।

বর্তমান ব্যবস্থায় স্বজনপ্রীতি ও পক্ষপাতিত্বের সমস্যা রয়েছে এবং এটি দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকদের শাস্তি দিতেও তেমন ভালো কাজ করে না। সর্বোচ্চ স্তরে, কিছু বিচারক আইনসভা বা নির্বাহী শাখা দ্বারা মনোনীত বা নির্বাচিত হন।

মেক্সিকোর ক্ষমতাসীন দল বলছে, ভোটারদের দ্বারা বিচারক নির্বাচিত হলে তাঁরা দায়িত্বশীল হবেন এবং খারাপ বিচারকদের শাস্তি দেওয়াও সহজ হবে। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারকেরাই যে মেক্সিকোর একমাত্র সমস্যা, তা নয়; সমস্যা হলো, মেক্সিকোর পুলিশ এবং আইনজীবীরা এতটাই অদক্ষ ও রাজনৈতিক চাপে থাকেন যে ৯০ শতাংশের বেশি অপরাধের বিচার আদালতেই আসে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

হঠাৎ ব্যাংকের ভেতরে সবাই অচেতন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত