Ajker Patrika

‘বাংলাদেশি’ ধরতে পুলিশের ঘন ঘন তল্লাশি, অতিষ্ঠ দিল্লির বস্তিবাসী

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের দিল্লিতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
ভারতের দিল্লিতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। ছবি: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

২৬ বছর বয়সী নার্গিস মণ্ডল। দিল্লির সঙ্গম বিহারের এফ ব্লকের বাসিন্দা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কর্মরত অবস্থায় প্রতিবেশীর ফোন আসে, এফ ব্লকে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে, নথিপত্র চেক করছে। তড়িঘড়ি বাড়ি ফিরতে হয় তাঁকে। এটি নতুন কিছু নয় অভিযোগ করে নার্গিস বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে পুলিশ তাঁর এলাকায় ঘন ঘন এ ধরনের তল্লাশি চালাচ্ছে।

অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের শনাক্ত করতে ভারতের দিল্লিতে ব্যাপক তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। কিছুদিন পরপরই পুলিশের তল্লাশিতে আতঙ্কিত অবস্থা পার করছে দিল্লির নিম্নবিত্তদের এলাকাগুলোর মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, ‘কয়েক দিন পরপর পুলিশ আসে, একই নথি পরীক্ষা করে।’

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে নার্গিস বলেন, ‘দুই মাস আগে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই তল্লাশি শুরু হয়েছিল। এরপর থেকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। তারা কয়েক দিন পরপর আসে, নথিপত্র পরীক্ষা করে। একই নথি বারবার যাচাই করে। আমি জানি না, তারা আমাদের থেকে আর কী চায়।’

সঙ্গম বিহারের ব্লক-এফ এলাকায় পাঁচটি বস্তিতে বিপুলসংখ্যক বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসী বসবাস করে। সেখানে কোনো অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গতকাল পুলিশ যাচাই অভিযান পরিচালনা করে। পুলিশ জানায়, সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতরা বাসিন্দাদের ব্যক্তিগত বিবরণ নিশ্চিত করার পরই তাদের নথিপত্রকে যাচাইকৃত বলে গণ্য করা হবে।

দিল্লি পুলিশ আরও জানায়, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পশ্চিম দিল্লিতে অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে তারা একজন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে এবং আরেকজনকে আটক করেছে। সজল মিয়া ও মোহাম্মদ আলী নামে এই দুই ব্যক্তি পাঞ্জাবিবাগে থাকতেন।

ডিসিপি (ওয়েস্ট ডিস্ট্রিক্ট) বিচিত্র বীর বলেন, মাদিপুর পুলিশ পোস্ট (পাঞ্জাবিবাগ থানার অধীনে) থেকে একটি গোপন সূত্রে তথ্য পাওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী একজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয় এবং অন্যজনকে একটি আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন সেন্টার) পাঠানো হয়েছে।

সঙ্গম বিহারের এফ ব্লকে পুলিশ বস্তিবাসীদের আধার কার্ড, ভোটার আইডি ও প্যান কার্ড পরীক্ষা করে। এ সময় তারা ব্যাংক পাসবুক দেখতে চায়, এমনকি বাসিন্দাদের ফোনে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ, ইউপিআই অ্যাপ ও কল লগ খুলতে বলে।

একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের দেখতে হবে তারা কোথা থেকে টাকা পাচ্ছে এবং কাকে পাঠাচ্ছে...আমরা তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপও পরীক্ষা করছি, যাতে তারা কোনো বাংলাদেশি পেজ ফলো করছে কি না বা বাংলাদেশে কোনো নম্বরে কল করছে কি না, তা বোঝা যায়।’

এসব বস্তিতে বসবাসকারী অধিকাংশ নারী গৃহপরিচারিকা হিসেবে বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজ করেন আর পুরুষেরা আবর্জনা সংগ্রহের কাজ করেন। ঘন ঘন এই তল্লাশি অভিযানের প্রভাব পড়ছে তাদের জীবনজীবিকায়। এ নিয়ে অসহায় অবস্থায় আছেন তাঁরা।

২৭ বছর বয়সী আরিফার অসুস্থ বৃদ্ধা ফুপু বাংলাদেশে থাকেন। আরিফা বলেন, ‘আমি প্রতিদিন তাঁকে ফোন করি। পুলিশ দেখে, আমি প্রায়ই বাংলাদেশি নম্বরে কল দিচ্ছি, এরপর তাঁরা আমার স্বামী খোরশেদকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।’

আরিফা দাবি করেন, তাঁর পরিবার বহু বছর আগে ভারতে অভিবাসন করে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলায় বসতি গড়েছিল। তবে তার কিছু আত্মীয় বাংলাদেশেই থেকে যান।

শাহজামাল আলসানা (২৯), বলেন, ‘নথি দেখালে তারা বলে আমরা নকল তৈরি করেছি। আর যদি যাচাই করাতে না যাই, তাহলে বলে আমরা লুকিয়ে ছিলাম। যারা সত্যিকারের অবৈধভাবে বসবাস করছে, তারা ঝুপড়িতে থাকে না বা আবর্জনা কুড়ানোর কাজ করে না। তারা বহুতল ভবনে থাকে।’

গত জানুয়ারিতে অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের ভারতে প্রবেশ করানোর একটি চক্র ধরা পড়ার পর এই অভিযান আরও কঠোর হয়েছে। দক্ষিণ জেলার ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান বলেন, ‘এই চক্র মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে মানুষ পাচার করত।’

তিনি আরও জানান, সঙ্গম বিহার, আম্বেদকর নগর, নেব সরাই ও তিগরি অঞ্চলে নতুন গড়ে ওঠা বস্তিগুলোতে এখন অভিযান চালানো হচ্ছে।

গতকাল মন্দির মার্গ এলাকায়ও যাচাই অভিযান চালায় পুলিশ। আজ শুক্রবারও এই অভিযান চলবে জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চার মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সেবা ডিজিটাইজ করার নির্দেশ দিল সরকার

গত দশ বছর ভিসা না পাওয়ার কারণে বাংলাদেশে আসতে পারিনি: মাইলাম

ঈদে পুলিশের সহযোগী ফোর্স হবে বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী, পাবে গ্রেপ্তারের ক্ষমতা

তিন নারী আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: তারেক রহমান

একাত্তর ও এক-এগারোর সময় বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন নীতি ভুল ছিল: ড্যানিলোভিচ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত