Ajker Patrika

মমতায় শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি-ম্যাজিক 

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ২৩
Thumbnail image

একুশের শুরুর দিকে ভারত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে। সেই করোনাতেই প্রথম বেকায়দায় পড়ে নরেন্দ্র মোদির সরকার। এরপর পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তোপে নাজেহাল হয় ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। মুখ্যত মোদি-ম্যাজিক ম্লান হওয়ার কাল শুরু এভাবেই।    

একুশের শুরুতে চেনা হুল্লোড় চোখে পড়েনি করোনার দাপটে। কিন্তু বিদায়কালে ওমিক্রনের দাপট থাকলেও বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে কোনো খামতি নেই। কলকাতা থেকে শুরু করে গোটা ভারতের জনজীবন স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে মরিয়া।

এক ডেলটায় রক্ষে নেই, দাপট দেখাতে শুরু করেছে ওমিক্রনও। ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার বাৎসরিক উৎসবেও খামতি নেই। অভাব শুধু সচেতনতার। অনেকের মধ্যেই মাস্ক না পরেই চলছে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর মচ্ছব। ফলে আক্রান্ত হচ্ছেন সচেতন লোকজনও।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রাজনীতির কথাই যদি বলা হয়, বাঙালির রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বছরের শুরুটা হয়েছিল দলত্যাগের হিড়িকে। তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদানের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বিজেপিই আসবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায়।

কিন্তু মমতা শুধু জিতলেনই না, তাঁর দল অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এখন উল্টো বিজেপিকেই ভাঙতে বসেছে। পশ্চিমবঙ্গে হ্যাটট্রিক করে এখন সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের জায়গা নিতে মরিয়া তৃণমূল।

বিজেপি তো বটেই, বছর শেষে কংগ্রেসের বহু সাবেক নেতা এখন মমতাকেই তুলে ধরতে চাইছেন মোদিবিরোধী মুখ হিসেবে। কংগ্রেস অবশ্য বলছে, বিরোধী ভোট ভাগ করাতেই মমতার আনন্দ। বিজেপির সুবিধা করতেই নাকি তিনি এসব করছেন।

শুরুতে অবশ্য মমতা ছিলেন সর্বভারতীয় রাজনীতিতে কংগ্রেসের পক্ষেই। শেষে এখন চলছে উভয় পক্ষের বিবৃতিযুদ্ধ। গোয়া, মেঘালয় ও ত্রিপুরায় দুর্বল হচ্ছে কংগ্রেস। শক্তি বাড়াচ্ছে তৃণমূল। বিরোধী ঐক্যের দফারফা। আর পাঞ্জাবে গোষ্ঠী কোন্দলে জেরবার কংগ্রেস।

 ডেল্টা সংক্রমণে ভারতে বেড়েছিল করোনায় মৃত্যু স্বচ্ছন্দে নেই বিজেপিও। তাই ভারতের কৃষক আন্দোলনের জেরে ক্ষমা চেয়ে বিজেপির সাধের তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করে নিতে হলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের ভোট বড় বালাই, বলছেন নিন্দুকেরা।

এতে করে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে মোদি-ম্যাজিক। আসামে জিতলেও পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, তামিলনাডু ও পুদুচেরিতে বিজেপির পদ্ম ফোটেনি। উপনির্বাচনেও একুশের শেষ ভাগে বেহাল পদ্মের। উল্টো ফের রমরমা অবস্থা আঞ্চলিক দলগুলোর।

একুশের শুরুতে রাফাল বিমান এসেছে ভারতের হাতে। চীন ও পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে বাড়ল সামরিক শক্তিও। কিন্তু রাফালের হাত ধরেই শুনতে হলো দুর্নীতির অভিযোগ। সঙ্গে পেগাসাস সফটওয়্যারে ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগ তো আছেই।

আর বছরের শেষ দিকে আলোচনায় ছিল বিপিন রাওয়াতের আকস্মিক মৃত্যু। ভেঙে পড়ে বিমান বাহিনীর অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার। সস্ত্রীক সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতসহ ১৪ জনের মৃত্যু হয় ৯ ডিসেম্বরের ওই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায়।

বিপিন রাওয়াতভারতে বছরের শুরুটা হয়েছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি আলোচনার ইতিবাচক দিক উন্মোচিত করে। কিন্তু ৬ ডিসেম্বর নাগাল্যান্ডে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ১৪ জন নিরীহ গ্রামবাসীর মৃত্যুতে ফের অশান্তির কালো মেঘ উত্তর-পূর্ব ভারতে।

অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীরা অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের বদলে রামমন্দির বানানো শুরু করেছেন বটে, কিন্তু জমি নিয়ে মন্দির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক কেলেঙ্কারি এড়ানো যায়নি। বছর শেষে হিন্দুত্ববাদীদের বিরুদ্ধে ক্রমশ তীব্র হচ্ছে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ।

২০২১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কেরও সুবর্ণজয়ন্তী। বছরের স্বাধীনতার মাসে ঢাকা উড়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আর বিজয়ের মাসে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। বছরের শেষটায় তাই ছিল বন্ধুত্বের বন্ধন দৃঢ় করার আশাবাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত