অনলাইন ডেস্ক
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার (৭ মে) মধ্যরাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই পাল্টা হামলা চালানো হয় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর অঞ্চলে।
তবে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার পেছনে কী প্রমাণ ছিল ভারতের কাছে? যেই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালাল দেশটি? চলুন, জানি পুরো বিষয়টির আদ্যোপান্ত।
গত ২২ এপ্রিল ট্যুরিস্ট মৌসুমের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলাকে বলা হচ্ছে কয়েক দশকের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চার থেকে ছয়জন সশস্ত্র ব্যক্তি সামরিক পোশাকে একটি নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে এবং কাছ থেকে নির্বিচার গুলি চালায়।
প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করেছে। এই অপারেশন কাশ্মীর সীমান্তবর্তী ভারতের আকাশসীমা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে। আঘাত হানা স্থাপনাগুলো সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও অবকাঠামো ছিল। এসব এলাকা থেকে ভারতের ওপর আরও সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হচ্ছিল।
তারা আরও জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনী মোট নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাজধানী দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা সন্ত্রাসী ক্যাম্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে এবং বিমান হামলার কিছু আকাশচিত্র প্রদর্শন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং এগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় জড়িত থাকার প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে। যেসব স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেগুলো বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা একটি কাজ। এখন যেসব ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর ছবি আমরা আপনাদের দেখাব।’
তিনি আরও জানান, ভারতের এই সীমান্তবর্তী অভিযানে ‘নির্ভুল প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হয়েছে। সুনিপণ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে কোনো অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি না হয়। প্রতিটি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে একটি নির্দিষ্ট ভবন বা ভবনগোছের ওপর। এতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারত্বের প্রমাণ মেলে। ভারত অনেক সহনশীলতা দেখিয়েছে এই প্রতিক্রিয়ায়। তবে এটা স্পষ্ট করে বলা দরকার, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের কোনো ‘দুঃসাহসিকতা’র জবাব দিতে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত, যদি তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে যেসব জায়গায় হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান-অধিকৃত মুজাফফরাবাদ, কোটলি, রাওয়ালকোট, চাকস্বাড়ি, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝেলম ও চকওয়াল এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরের বাহাওয়ালপুর।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের এই বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণাস্বরূপ’ বলে আখ্যায়িত করে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের ‘উপযুক্ত ও কড়া জবাব’ দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
পেহেলগাম হামলার পরদিন ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের শাস্তিমূলক পদক্ষেপকে ‘অপরিপক্ব’ ও ‘তড়িঘড়ি’ বলে অভিহিত করেন। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারত কোনো প্রমাণ দেয়নি। তারা প্রতিক্রিয়ায় কোনো পরিপক্বতা দেখায়নি। এটি একেবারে কাঁচা পদক্ষেপ। ঘটনাটির পরপরই তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।’
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সৈয়দ আসিম মুনির জানিয়েছেন, ভারতের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁরা শুধু পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত ভূখণ্ডে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছে। পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোতে কোনো আঘাত হানা হয়নি।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পদক্ষেপ ছিল সুপরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত এবং উত্তেজনা প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। লক্ষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং হামলা পরিচালনায় ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই হামলায় জড়িতদের জবাবদিহি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ভারতের ওয়াশিংটন দূতাবাস বিমান হামলার পর এক বিবৃতিতে জানায়, পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার দৃঢ় তথ্যপ্রমাণ রয়েছে ভারতের কাছে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত ইনপুট, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ—যেগুলো এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের স্পষ্ট জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তাই আমাদের পক্ষে প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। আজ সকালে, যেমনটি আপনারা জানেন, ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে এবং সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করেছে।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, এই বিমান হামলাগুলো মূলত সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং যেসব সন্ত্রাসী ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল, তাদের নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় নিহতদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। এই হামলার পর থেকে ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সূত্রের বরাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, হামলাটি সম্ভবত পাঁচজন জঙ্গি চালিয়েছে—তিনজন পাকিস্তানি এবং দুজন কাশ্মীরি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছে অনন্তনাগের আদিল হুসেইন ঠোকার এবং পাকিস্তানের হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই।
পুলিশ দাবি করেছে, এই ব্যক্তিরা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। যদিও সংগঠনটি দায় অস্বীকার করেছে। এখন পর্যন্ত এই হামলার ঘটনায় ভারত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল—‘ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয় হিন্দ।’ সঙ্গে #PahalgamTerrorAttack শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার দায় সংক্ষেপে স্বীকার করে পরে মুছে ফেলে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ অতীতেও ভারতের বিরুদ্ধে বহু প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। তারাই টিআরএফের মাধ্যমে কাজ করছিল।
মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার তদন্তে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগের তথ্য উঠে এসেছে। রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং পরে লস্করের পরিচিত সামাজিক মাধ্যম হ্যান্ডেল থেকে সেটি পুনরায় পোস্ট করা—এসবই অনেক কিছু বলে দেয়।
তিনি আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকা অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে হামলাকারীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। এই হামলার ধরন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়, যা বিস্তৃতভাবে প্রমাণিত এবং প্রশ্নাতীত। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীরা সেখানে অবাধে ঘোরাফেরা করে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে দেশটির বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ভারত। বুধবার (৭ মে) মধ্যরাত ১টা ৫ মিনিট থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত এই পাল্টা হামলা চালানো হয় পাকিস্তান এবং পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু কাশ্মীর অঞ্চলে।
তবে পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার পেছনে কী প্রমাণ ছিল ভারতের কাছে? যেই প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ চালাল দেশটি? চলুন, জানি পুরো বিষয়টির আদ্যোপান্ত।
গত ২২ এপ্রিল ট্যুরিস্ট মৌসুমের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়। এই হামলাকে বলা হচ্ছে কয়েক দশকের মধ্যে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, চার থেকে ছয়জন সশস্ত্র ব্যক্তি সামরিক পোশাকে একটি নিকটবর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসে এবং কাছ থেকে নির্বিচার গুলি চালায়।
প্রতিশোধমূলক হামলা চালানোর পর ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে ‘অপারেশন সিন্দুর’ পরিচালনা করেছে। এই অপারেশন কাশ্মীর সীমান্তবর্তী ভারতের আকাশসীমা থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো পাকিস্তানের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত হেনেছে। আঘাত হানা স্থাপনাগুলো সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ও অবকাঠামো ছিল। এসব এলাকা থেকে ভারতের ওপর আরও সন্ত্রাসী হামলা পরিকল্পনা ও পরিচালনা করা হচ্ছিল।
তারা আরও জানায়, ভারতীয় সেনাবাহিনী মোট নয়টি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। বুধবার রাজধানী দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা সন্ত্রাসী ক্যাম্পগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে এবং বিমান হামলার কিছু আকাশচিত্র প্রদর্শন করে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভারতীয় বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং বলেন, ‘অপারেশন সিন্দুরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং এগুলোর সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনায় জড়িত থাকার প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে। যেসব স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেগুলো বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষতি এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করা একটি কাজ। এখন যেসব ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে, সেগুলোর ছবি আমরা আপনাদের দেখাব।’
তিনি আরও জানান, ভারতের এই সীমান্তবর্তী অভিযানে ‘নির্ভুল প্রযুক্তি’ ব্যবহার করা হয়েছে। সুনিপণ যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে কোনো অতিরিক্ত ক্ষয়ক্ষতি না হয়। প্রতিটি লক্ষ্যে আঘাত হেনেছে একটি নির্দিষ্ট ভবন বা ভবনগোছের ওপর। এতে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারত্বের প্রমাণ মেলে। ভারত অনেক সহনশীলতা দেখিয়েছে এই প্রতিক্রিয়ায়। তবে এটা স্পষ্ট করে বলা দরকার, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তানের কোনো ‘দুঃসাহসিকতা’র জবাব দিতে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত, যদি তাতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
ভারতের পক্ষ থেকে যেসব জায়গায় হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান-অধিকৃত মুজাফফরাবাদ, কোটলি, রাওয়ালকোট, চাকস্বাড়ি, ভিম্বার, নীলম উপত্যকা, ঝেলম ও চকওয়াল এবং পাকিস্তানের অভ্যন্তরের বাহাওয়ালপুর।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের এই বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধের ঘোষণাস্বরূপ’ বলে আখ্যায়িত করে জানিয়েছেন, ইসলামাবাদের ‘উপযুক্ত ও কড়া জবাব’ দেওয়ার অধিকার রয়েছে।
পেহেলগাম হামলার পরদিন ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে। তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ভারতের শাস্তিমূলক পদক্ষেপকে ‘অপরিপক্ব’ ও ‘তড়িঘড়ি’ বলে অভিহিত করেন। একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ভারত কোনো প্রমাণ দেয়নি। তারা প্রতিক্রিয়ায় কোনো পরিপক্বতা দেখায়নি। এটি একেবারে কাঁচা পদক্ষেপ। ঘটনাটির পরপরই তারা উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।’
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান সৈয়দ আসিম মুনির জানিয়েছেন, ভারতের হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন এবং ৪৬ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারতের বিমান হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাঁরা শুধু পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত ভূখণ্ডে অবস্থিত সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করেছে। পাকিস্তানের সামরিক অবকাঠামোতে কোনো আঘাত হানা হয়নি।
ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের পদক্ষেপ ছিল সুপরিকল্পিত, নিয়ন্ত্রিত এবং উত্তেজনা প্রশমিত করার উদ্দেশ্যে। কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি। লক্ষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে এবং হামলা পরিচালনায় ভারত যথেষ্ট সংযম দেখিয়েছে। পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিক হত্যার পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই হামলায় জড়িতদের জবাবদিহি করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ভারতের ওয়াশিংটন দূতাবাস বিমান হামলার পর এক বিবৃতিতে জানায়, পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার দৃঢ় তথ্যপ্রমাণ রয়েছে ভারতের কাছে। এসবের মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তিগত ইনপুট, বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সাক্ষ্য এবং অন্যান্য প্রমাণ—যেগুলো এই হামলায় পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসীদের স্পষ্ট জড়িত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে।
ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি বলেন, পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ডের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তাই আমাদের পক্ষে প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। আজ সকালে, যেমনটি আপনারা জানেন, ভারত তার আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করেছে এবং সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধ ও প্রতিহত করেছে।
বিক্রম মিশ্রি আরও বলেন, এই বিমান হামলাগুলো মূলত সন্ত্রাসী অবকাঠামো গুঁড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং যেসব সন্ত্রাসী ভারতে অনুপ্রবেশের জন্য প্রস্তুত ছিল, তাদের নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় নিহতদের বেশির ভাগ ছিলেন পর্যটক। এই হামলার পর থেকে ভারতের পাল্টা প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।
এনডিটিভি ও দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সূত্রের বরাতে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী জানায়, হামলাটি সম্ভবত পাঁচজন জঙ্গি চালিয়েছে—তিনজন পাকিস্তানি এবং দুজন কাশ্মীরি। পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজনদের মধ্যে রয়েছে অনন্তনাগের আদিল হুসেইন ঠোকার এবং পাকিস্তানের হাশিম মুসা ওরফে সুলেমান এবং আলি ভাই ওরফে তালহা ভাই।
পুলিশ দাবি করেছে, এই ব্যক্তিরা পাকিস্তানভিত্তিক নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবার সদস্য। যদিও সংগঠনটি দায় অস্বীকার করেছে। এখন পর্যন্ত এই হামলার ঘটনায় ভারত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
গত সপ্তাহে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, পেহেলগাম হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রকাশের পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিশিয়াল সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট দেওয়া হয়, যেখানে লেখা ছিল—‘ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জয় হিন্দ।’ সঙ্গে #PahalgamTerrorAttack শব্দবন্ধ ব্যবহার করা হয়।
বিক্রম মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার দায় সংক্ষেপে স্বীকার করে পরে মুছে ফেলে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ বা টিআরএফ। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা এবং জইশ-ই-মুহাম্মদ অতীতেও ভারতের বিরুদ্ধে বহু প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। তারাই টিআরএফের মাধ্যমে কাজ করছিল।
মিশ্রি বলেন, পেহেলগাম হামলার তদন্তে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তানের যোগাযোগের তথ্য উঠে এসেছে। রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্টের দায় স্বীকার এবং পরে লস্করের পরিচিত সামাজিক মাধ্যম হ্যান্ডেল থেকে সেটি পুনরায় পোস্ট করা—এসবই অনেক কিছু বলে দেয়।
তিনি আরও জানান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে থাকা অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে হামলাকারীদের শনাক্ত করার প্রক্রিয়াও এগিয়ে চলেছে। এই হামলার ধরন পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাসের সঙ্গে মিলে যায়, যা বিস্তৃতভাবে প্রমাণিত এবং প্রশ্নাতীত। পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সারা বিশ্বের সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ সন্ত্রাসীরা সেখানে অবাধে ঘোরাফেরা করে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া সংঘাতে ইরান বীরের মতো লড়াই করেছে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বর্তমানে তিনি ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থান করছেন।
১০ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত’ হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। আল-জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাঈ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানান।
১ ঘণ্টা আগেরুটে তাঁকে তুলনা করেছেন স্কুলের শিশুর বাবার সঙ্গে। ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতিকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘এটি যেন দুই শিশুর মারামারি—যেখানে শেষ পর্যন্ত ‘‘বাবাকে হস্তক্ষেপ করতে হয়’’।’
১ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কারণে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কতটা পিছিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, মূলত কয়েক দশক। তারা যদি এটি পেত, তাহলে তারা নরকে যেত। সবশেষ তারা সমৃদ্ধকরণ করতে চেয়েছিল। ওই আঘাত যুদ্ধের সমাপ্তি টেনেছে।’
১ ঘণ্টা আগে