Ajker Patrika

নকশা মানেনি ঠিকাদার, ভারতে টানেলে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ৪১ শ্রমিক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৯ নভেম্বর ২০২৩, ১০: ০১
Thumbnail image

ভারতের উত্তরাখন্ড রাজ্যের একটি টানেলে ৪১ জন শ্রমিক আটকে পড়ার পর ১৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। এখনো তাঁদের উদ্ধারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি সরকার। 

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর মধ্যে ওই টানেলের একটি মানচিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এটি দেখে বোঝা যায়, টানেলটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কোম্পানির কাজে গুরুতর ত্রুটি রয়েছে। 

স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) অনুসারে, তিন কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ টানেল নির্মাণের সময় সম্ভাব্য বিপর্যয়কালে ভেতরের লোকজনকে উদ্ধার করার জন্য একটি উদ্ধার পথ নির্মাণ করতে হবে।

মানচিত্রটিতে দেখা যায়, ৪ দশমিক ৫ কিলোমিটার সিল্কিয়ারা টানেলের জন্যও এ ধরনের একটি উদ্ধারপথের পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটি বানানো হয়নি। 

নির্মাণের সময় তো বটেই; ধস, ভূমিধস বা অন্য কোনো দুর্যোগের কারণে বড় বিপর্যয় ঘটলে মানুষজনকে উদ্ধার করার জন্য টানেল নির্মাণ শেষেও এ ধরনের উদ্ধারের পথ রেখে দেওয়া হয়। 

গত রোববার সকাল থেকে টানেলের ভেতরে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে এখন বিকল্প উপায় ভাবছে উদ্ধারকারী দলগুলো। শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সুড়ঙ্গে জোরে কোনো কিছু ফেটে যাওয়ার শব্দ হওয়ার পর আমেরিকান অগার বা ড্রিল মেশিনের কাজও বন্ধ করা হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন ৪১ জন নির্মাণ শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা, যাদের বেশির ভাগই অভিবাসী। 

পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত অন্য শ্রমিকেরা জানান, উদ্ধারপথ তৈরি করা থাকলে এত দিনে শ্রমিকদের জীবিত উদ্ধার করা যেত। 

মানচিত্রটি এমন সময় প্রকাশ্যে এল, যেখানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভি কে সিং গত বৃহস্পতিবার টানেল ধসের স্থান পরিদর্শন করেন এবং বলেন যে, শ্রমিকদের দু-তিন দিনের মধ্যে উদ্ধার করা হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, উদ্ধারকাজ শিগগির শেষ করা যাবে। এমনকি শুক্রবারের আগেই শেষ হতে পারে। 

টানেলের ভেতরে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধারে এখন পর্যন্ত তিনটি পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। তিনটিই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে।

একটি পরিকল্পনা হলো—ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বুলডোজার ব্যবহার করা। কিন্তু উদ্ধারকারী দলগুলো দ্রুতই বুঝতে পারে এখানকার শিলা আলগা। ফলে ধ্বংসাবশেষ সরালে ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। 

দ্বিতীয় উপায় হিসেবে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে ৯০০ মিলিমিটারের একটি পাইপ প্রবেশ করানোর জন্য একটি অগার মেশিন ব্যবহার করা হয়। এই পাইপ দিয়ে ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হবে এমন পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু মেশিনটি খুব শক্তিশালী না হওয়ায় এ উপায়ও পরিত্যক্ত হয়। 

তৃতীয় উপায় হিসেবে আরও শক্তিশালী আমেরিকান অগার মেশিন ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় বিমানবাহিনীর উড়োজাহাজে করে এই মেশিন উড়িয়ে আনা হয়। যন্ত্রটি ধ্বংসস্তূপের ভেতরে খনন করা শুরু করে। বৃহস্পতিবার প্রাথমিকভাবে ৪০ থেকে ৭০ মিটার খনন করে। কিন্তু কিছু একটা ফেটে যাওয়ার শব্দ শোনার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

শনিবার টানেলের ম্যাপ প্রকাশ্যে আসার পর ঠিকাদারের কাজে ত্রুটি ধরা পড়েচতুর্থ উপায় হিসেবে এখন ইন্দোর থেকে আরেকটি অনুভূমিক ড্রিল মেশিন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আশা করা যায়, এই সরঞ্জামের মাধ্যমে আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছ পর্যন্ত পাইপ প্রবেশ করানো যাবে। 

এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হলে আরও দুটি পরিকল্পনার কথা ভাবা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো, উল্লম্বভাবে ড্রিল করে গর্ত তৈরি করা। পাথরের ওপর দিয়ে সুড়ঙ্গটি খনন করা হবে। সেদিক দিয়েই শ্রমিকদের বের করে আনা হবে। 

চূড়ান্ত পরিকল্পনাটি প্রস্তাব করেছে রেলওয়ে। অনুভূমিকভাবে একটি সমান্তরাল টানেল খনন করা হবে। এই টানেলটি মূল টানেল ভেদ করবে। এভাবে শ্রমিকদের উদ্ধার করা হবে। 

এদিকে যত সময় গড়াচ্ছে আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের উদ্বেগ বাড়ছে। পরিবারের কয়েকজন সদস্য সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, তাঁরা আশা হারাচ্ছেন। এক শ্রমিকের ভাই বলেন, তাঁদের স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার আগেই দ্রুত উদ্ধার করা দরকার। 

দীর্ঘক্ষণ আটকে থাকার কারণে শ্রমিকদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় আটকে পড়া শ্রমিকদের পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত