অনলাইন ডেস্ক
.বিশ্বজুড়ে নজরদারি সরঞ্জাম উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সম্প্রতি ভারত সরকারের নতুন নিরাপত্তা বিধি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে। নতুন নিয়মে সিসিটিভি ক্যামেরা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে তাদের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং সোর্স কোড ভারতের সরকারি পরীক্ষাগারে মূল্যায়নের জন্য জমা দিতে হবে। সরকারি নথি এবং সংস্থার ই-মেইল থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরীক্ষার নীতিকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের সঙ্গে বিদেশি সংস্থাগুলোর ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ বিভিন্ন বিষয় এবং দেশটির ‘সংরক্ষণবাদ নীতির’ কারণে যে বিতর্ক চলছে, এই ঘটনা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনের অত্যাধুনিক নজরদারি সক্ষমতার কারণে নয়া দিল্লির উদ্বেগের ফলে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে মোদির তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা ১০ লাখ ক্যামেরা চীনা সংস্থার তৈরি এবং এসব ক্যামেরার ভিডিও জমা হয় বিদেশি সার্ভারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এ ক্ষেত্রে ভিডিওর তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী—চীনের হিকভিশন, শাওমি ও দাহুয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়া এবং আমেরিকার মটোরোলা সলিউশনসের মতো সংস্থাগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে সিসি ক্যামেরা বিক্রি করার আগে সরকারি পরীক্ষাগারে জমা দিতে হবে। এই নীতি ৯ এপ্রিলের পর থেকে তৈরি বা আমদানি করা সব ইন্টারনেট সংযুক্ত সিসিটিভি মডেলের জন্য প্রযোজ্য।
ভারতে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব পালন করা গুলশান রাই রয়টার্সকে বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি সব সময়ই থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিপজ্জনক অবস্থানে বসে যে কেউ ইন্টারনেট-সংযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই সেগুলোকে অবশ্যই শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত হতে হবে।’
সরকারি কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ৩ এপ্রিল ভারতীয় কর্মকর্তারা হানওয়া, মটোরোলা, দাহুয়া, হানিওয়েল এবং শাওমিসহ ১৭টি বিদেশি ও দেশীয় নজরদারি সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে অনেক প্রস্তুতকারক সংস্থা জানায়, তারা নতুন বিধির শর্তগুলো পূরণ করতে প্রস্তুত নয় এবং সময়সীমা পেছানোর তদবির করলেও তা ব্যর্থ হয়।
অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ভারত সরকার জানায়, এই নীতি ‘একটি প্রকৃত নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করছে’ এবং এটি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটি জানিয়েছিল, সিসিটিভি সংক্রান্ত এই নিয়মের লক্ষ্য হলো—‘দেশের নজরদারি ব্যবস্থার গুণমান এবং সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।’
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনটি কয়েক ডজন নথি পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তুতকারক এবং ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক ও ই-মেইলের রেকর্ড এবং ভারতের এই প্রযুক্তি নিরীক্ষার উদ্যোগের সঙ্গে পরিচিত ছয়জনের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত।
ক্যামেরা প্রস্তুতকারকেরা জানিয়েছেন, ভারতের অপর্যাপ্ত পরীক্ষার সক্ষমতা, দীর্ঘ সময় ধরে চলা কারখানা পরিদর্শন এবং সংবেদনশীল সোর্স কোডের সরকারি যাচাই-বাছাই দেশটিতে সিসিটিভি ক্যামের বাজারজাতকরণের অনুমোদনে দেরি করিয়েছে। এর ফলে অনির্দিষ্ট পরিকাঠামো ও বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। হানওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার অধিকর্তা অজয় দুবে ৯ এপ্রিল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে এক ই-মেইলে জানান, এমনটা হলে ‘শিল্পক্ষেত্রের লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হবে, যা বাজারে কম্পন সৃষ্টি করবে।’
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৩ এপ্রিল কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, তারা আরও বেশি পরীক্ষাগারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বাড়াতে ভারতের শহর, অফিস এবং আবাসিক কমপ্লেক্সগুলোতে লাখ লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নয়াদিল্লিতে ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ক্যামেরা রয়েছে, যার বেশির ভাগই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খুঁটিতে লাগানো।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের বিশ্লেষক বরুণ গুপ্ত রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই দ্রুত অগ্রগতি ভারতের নজরদারি ক্যামেরার বাজারকে গত বছরের সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে। গুপ্ত আরও জানান, চীনের হিকভিশন এবং দাহুয়া বাজারের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে। অবশ্য ভারতের সিপি প্লাসের শেয়ার ৪৮ শতাংশ। তিনি আরও যোগ করেন, প্রায় ৮০ শতাংশ সিসিটিভি যন্ত্রাংশ চীন থেকে আসে।
হানওয়া, মটোরোলা সলিউশনস এবং ব্রিটেনের নর্ডেন কমিউনিকেশন এপ্রিলে নিজ নিজ কর্মকর্তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানায়, ৬ হাজার ক্যামেরা মডেলের ১ শতাংশেরও কম ভারতের নতুন নিয়মের অধীনে অনুমোদিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২২ সালে হিকভিশন এবং দাহুয়ার সরঞ্জাম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছিল। ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়াও চীনের তৈরি ডিভাইসের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই পথে হাঁটছে ভারতও। ভারতের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একইভাবে, সিসিটিভি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ভারতকে ‘নিশ্চিত হতে হবে যে, এই ডিভাইসগুলোতে কী ব্যবহৃত হচ্ছে, কোন চিপগুলো যাচ্ছে। কারণ, চীন আমাদের উদ্বেগের একটি অংশ।’
চীনের নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকেও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা কাজে সহযোগিতা করতে হয়। রয়টার্স এ মাসে জানিয়েছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞরা কিছু চীনা সৌরবিদ্যুৎ ইনভার্টার পরীক্ষা করে তাতে গোপন যোগাযোগের সরঞ্জাম খুঁজে পেয়েছেন।
২০২০ সালে ভারতীয় ও চীনা বাহিনী সীমান্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ভারত জাতীয় নিরাপত্তার কারণে টিকটকসহ কয়েক ডজন চীনা মালিকানাধীন অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। নিজের সঙ্গে সীমান্ত আছে ভারত এমন দেশগুলোর জন্যও বিদেশি বিনিয়োগের নিয়মও কঠোর করেছে। গত বছর লেবাননে পেজারের সিরিজ বিস্ফোরণ প্রযুক্তি ডিভাইসের সম্ভাব্য অপব্যবহার এবং সিসিটিভি সরঞ্জামগুলোর পরীক্ষা দ্রুত কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভারতীয় উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে বলে জানান ওই শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা।
গত মাসে শাওমি জানায়, তারা ভারতে তাদের সরবরাহ করা সিসিটিভি ডিভাইস পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা জানায়, শাওমি এই মূল্যায়ন এগিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, ‘অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা’ অনুযায়ী চীনে শাওমি যে দুটি প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে দিয়ে তাদের পণ্য তৈরি করায় তাদের বিষয়ে দিল্লিকে আরও বেশি তথ্য দিতে হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা ‘চীনা কোম্পানিগুলোকে কলঙ্কিত ও দমন করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তার ধারণার সাধারণীকরণের’ বিরোধিতা করে এবং আশা করে যে, ভারত চীনা সংস্থাগুলোর জন্য একটি বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
কাউন্টারপয়েন্টের মতে, ভারতে সিসিটিভি চাহিদার ২৭ শতাংশই সরকারি খাতের এবং বাকি ৭৩ শতাংশ করপোরেট ক্লায়েন্ট, শিল্প এবং অন্যান্য সংস্থা এবং বাড়ির জন্য। ভারতের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সিসিটিভি ক্যামেরায় টেম্পার-প্রুফ ঘের থাকতে হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী ম্যালওয়্যার শনাক্তকরণ এবং এনক্রিপশন থাকতে হবে। সিসি ক্যামেরা প্রস্তুতকারক দুটি কোম্পানি দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎপাদক সংস্থাগুলোকে সোর্স কোড পরীক্ষা করার সফটওয়্যার সরঞ্জাম পরিচালনা করতে হবে এবং সরকারি পরীক্ষাগারে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নতুন নিয়ম ভারতের পরীক্ষাগারগুলোকে উৎপাদক কোম্পানির কাছে সোর্স কোড চাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, এটি ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের কারখানা পরিদর্শন এবং সাইবার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যেসব স্থাপনা আছে সেগুলোও পরিদর্শন করার ক্ষমতা দেয়।
চীনা কোম্পানি ইনফিনোভার ভারতীয় শাখা গত মাসে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে জানায়, এ ধরনের ‘প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’ ইনফিনোভার বিপণন কর্মকর্তা সুমিত চানানা ১০ এপ্রিল এক ই-মেইলে বলেন, ‘সোর্স কোড শেয়ারিং, ফার্মওয়্যার আপগ্রেডের পরে পুনরায় পরীক্ষা এবং একাধিক কারখানা নিরীক্ষার মতো প্রত্যাশাগুলো অভ্যন্তরীণ সময়সীমাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।’
একই দিনে তাইওয়ানভিত্তিক ভিভোটেকের ভারত শাখার কর্মকর্তা সঞ্জীব গুলাটি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, এমনটা হলে ‘চলমান সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি এ মাসে রয়টার্সকে জানান, ভিভোটেক পণ্যের আবেদন জমা দিয়েছে এবং আশা করছে ‘শিগগিরই ছাড়পত্র পাবে।’
ভারতে নজরদারি সরঞ্জাম পরীক্ষাকারী সংস্থা হলো স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন ডিরেক্টরেট। এটি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন। সংস্থাটির ১৫টি পরীক্ষাগার রয়েছে যা একসঙ্গে ২৮টি আবেদন পর্যালোচনা করতে পারে এবং প্রতি আবেদনে সর্বোচ্চ ১০টি পর্যন্ত মডেল যাচাই করানো যেতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, আজ ২৮ মে পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তুতকারকের শত শত মডেল পরীক্ষার জন্য সংস্থাটিতে ৩৪২টি আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৭টি নতুন। এর মধ্যে ৩৫ টির পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে শুধু একটি বিদেশি সংস্থার। ভারতের সিপি প্লাস রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা তাদের ফ্ল্যাগশিপ ক্যামেরাগুলোর ছাড়পত্র পেয়েছে তবে আরও বেশ কয়েকটি মডেল ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে।
দাহুয়া বলেছে, তারাও পরীক্ষার জন্য ডিভাইস জমা দিয়েছে, কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পণ্যগুলোর ‘ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা’ বজায় রাখার অনুমতি দিতে।
.বিশ্বজুড়ে নজরদারি সরঞ্জাম উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো সম্প্রতি ভারত সরকারের নতুন নিরাপত্তা বিধি নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে। নতুন নিয়মে সিসিটিভি ক্যামেরা প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোকে তাদের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং সোর্স কোড ভারতের সরকারি পরীক্ষাগারে মূল্যায়নের জন্য জমা দিতে হবে। সরকারি নথি এবং সংস্থার ই-মেইল থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই নিরাপত্তা সরঞ্জাম পরীক্ষার নীতিকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশাসনের সঙ্গে বিদেশি সংস্থাগুলোর ‘নিয়ন্ত্রণমূলক’ বিভিন্ন বিষয় এবং দেশটির ‘সংরক্ষণবাদ নীতির’ কারণে যে বিতর্ক চলছে, এই ঘটনা সেই তালিকায় নতুন সংযোজন।
নীতি নির্ধারণের সঙ্গে যুক্ত এক শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চীনের অত্যাধুনিক নজরদারি সক্ষমতার কারণে নয়া দিল্লির উদ্বেগের ফলে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২১ সালে মোদির তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে থাকা ১০ লাখ ক্যামেরা চীনা সংস্থার তৈরি এবং এসব ক্যামেরার ভিডিও জমা হয় বিদেশি সার্ভারে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, এ ক্ষেত্রে ভিডিওর তথ্য চুরি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
গত এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া নতুন নিয়ম অনুযায়ী—চীনের হিকভিশন, শাওমি ও দাহুয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়া এবং আমেরিকার মটোরোলা সলিউশনসের মতো সংস্থাগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটিতে সিসি ক্যামেরা বিক্রি করার আগে সরকারি পরীক্ষাগারে জমা দিতে হবে। এই নীতি ৯ এপ্রিলের পর থেকে তৈরি বা আমদানি করা সব ইন্টারনেট সংযুক্ত সিসিটিভি মডেলের জন্য প্রযোজ্য।
ভারতে ২০১৫-২০১৯ সাল পর্যন্ত সাইবার নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব পালন করা গুলশান রাই রয়টার্সকে বলেন, ‘গুপ্তচরবৃত্তির ঝুঁকি সব সময়ই থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিপজ্জনক অবস্থানে বসে যে কেউ ইন্টারনেট-সংযুক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাই সেগুলোকে অবশ্যই শক্তিশালী এবং সুরক্ষিত হতে হবে।’
সরকারি কার্যবিবরণী অনুযায়ী, ৩ এপ্রিল ভারতীয় কর্মকর্তারা হানওয়া, মটোরোলা, দাহুয়া, হানিওয়েল এবং শাওমিসহ ১৭টি বিদেশি ও দেশীয় নজরদারি সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে অনেক প্রস্তুতকারক সংস্থা জানায়, তারা নতুন বিধির শর্তগুলো পূরণ করতে প্রস্তুত নয় এবং সময়সীমা পেছানোর তদবির করলেও তা ব্যর্থ হয়।
অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে ভারত সরকার জানায়, এই নীতি ‘একটি প্রকৃত নিরাপত্তা সমস্যার সমাধান করছে’ এবং এটি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটি জানিয়েছিল, সিসিটিভি সংক্রান্ত এই নিয়মের লক্ষ্য হলো—‘দেশের নজরদারি ব্যবস্থার গুণমান এবং সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।’
রয়টার্সের এই প্রতিবেদনটি কয়েক ডজন নথি পর্যালোচনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রস্তুতকারক এবং ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বৈঠক ও ই-মেইলের রেকর্ড এবং ভারতের এই প্রযুক্তি নিরীক্ষার উদ্যোগের সঙ্গে পরিচিত ছয়জনের সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত।
ক্যামেরা প্রস্তুতকারকেরা জানিয়েছেন, ভারতের অপর্যাপ্ত পরীক্ষার সক্ষমতা, দীর্ঘ সময় ধরে চলা কারখানা পরিদর্শন এবং সংবেদনশীল সোর্স কোডের সরকারি যাচাই-বাছাই দেশটিতে সিসিটিভি ক্যামের বাজারজাতকরণের অনুমোদনে দেরি করিয়েছে। এর ফলে অনির্দিষ্ট পরিকাঠামো ও বাণিজ্যিক প্রকল্পগুলি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। হানওয়ার দক্ষিণ এশিয়ার অধিকর্তা অজয় দুবে ৯ এপ্রিল ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে এক ই-মেইলে জানান, এমনটা হলে ‘শিল্পক্ষেত্রের লাখ লাখ ডলার ক্ষতি হবে, যা বাজারে কম্পন সৃষ্টি করবে।’
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ৩ এপ্রিল কর্মকর্তাদের জানিয়েছিল, তারা আরও বেশি পরীক্ষাগারকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ বাড়াতে ভারতের শহর, অফিস এবং আবাসিক কমপ্লেক্সগুলোতে লাখ লাখ সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, নয়াদিল্লিতে ২ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি ক্যামেরা রয়েছে, যার বেশির ভাগই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে খুঁটিতে লাগানো।
কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের বিশ্লেষক বরুণ গুপ্ত রয়টার্সকে জানিয়েছেন, এই দ্রুত অগ্রগতি ভারতের নজরদারি ক্যামেরার বাজারকে গত বছরের সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে ৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে। গুপ্ত আরও জানান, চীনের হিকভিশন এবং দাহুয়া বাজারের ৩০ শতাংশ দখল করে আছে। অবশ্য ভারতের সিপি প্লাসের শেয়ার ৪৮ শতাংশ। তিনি আরও যোগ করেন, প্রায় ৮০ শতাংশ সিসিটিভি যন্ত্রাংশ চীন থেকে আসে।
হানওয়া, মটোরোলা সলিউশনস এবং ব্রিটেনের নর্ডেন কমিউনিকেশন এপ্রিলে নিজ নিজ কর্মকর্তাদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানায়, ৬ হাজার ক্যামেরা মডেলের ১ শতাংশেরও কম ভারতের নতুন নিয়মের অধীনে অনুমোদিত হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০২২ সালে হিকভিশন এবং দাহুয়ার সরঞ্জাম বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছিল। ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়াও চীনের তৈরি ডিভাইসের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এই পথে হাঁটছে ভারতও। ভারতের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একইভাবে, সিসিটিভি ক্যামেরার ক্ষেত্রে ভারতকে ‘নিশ্চিত হতে হবে যে, এই ডিভাইসগুলোতে কী ব্যবহৃত হচ্ছে, কোন চিপগুলো যাচ্ছে। কারণ, চীন আমাদের উদ্বেগের একটি অংশ।’
চীনের নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোকেও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা কাজে সহযোগিতা করতে হয়। রয়টার্স এ মাসে জানিয়েছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞরা কিছু চীনা সৌরবিদ্যুৎ ইনভার্টার পরীক্ষা করে তাতে গোপন যোগাযোগের সরঞ্জাম খুঁজে পেয়েছেন।
২০২০ সালে ভারতীয় ও চীনা বাহিনী সীমান্তে সংঘর্ষে লিপ্ত হলে ভারত জাতীয় নিরাপত্তার কারণে টিকটকসহ কয়েক ডজন চীনা মালিকানাধীন অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। নিজের সঙ্গে সীমান্ত আছে ভারত এমন দেশগুলোর জন্যও বিদেশি বিনিয়োগের নিয়মও কঠোর করেছে। গত বছর লেবাননে পেজারের সিরিজ বিস্ফোরণ প্রযুক্তি ডিভাইসের সম্ভাব্য অপব্যবহার এবং সিসিটিভি সরঞ্জামগুলোর পরীক্ষা দ্রুত কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ভারতীয় উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তোলে বলে জানান ওই শীর্ষ ভারতীয় কর্মকর্তা।
গত মাসে শাওমি জানায়, তারা ভারতে তাদের সরবরাহ করা সিসিটিভি ডিভাইস পরীক্ষার জন্য আবেদন করেছিল। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা জানায়, শাওমি এই মূল্যায়ন এগিয়ে নিতে পারবে না। কারণ, ‘অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা’ অনুযায়ী চীনে শাওমি যে দুটি প্রস্তুতকারক কোম্পানিকে দিয়ে তাদের পণ্য তৈরি করায় তাদের বিষয়ে দিল্লিকে আরও বেশি তথ্য দিতে হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা ‘চীনা কোম্পানিগুলোকে কলঙ্কিত ও দমন করার জন্য জাতীয় নিরাপত্তার ধারণার সাধারণীকরণের’ বিরোধিতা করে এবং আশা করে যে, ভারত চীনা সংস্থাগুলোর জন্য একটি বৈষম্যহীন পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
কাউন্টারপয়েন্টের মতে, ভারতে সিসিটিভি চাহিদার ২৭ শতাংশই সরকারি খাতের এবং বাকি ৭৩ শতাংশ করপোরেট ক্লায়েন্ট, শিল্প এবং অন্যান্য সংস্থা এবং বাড়ির জন্য। ভারতের নতুন নিয়ম অনুযায়ী সিসিটিভি ক্যামেরায় টেম্পার-প্রুফ ঘের থাকতে হবে। পাশাপাশি শক্তিশালী ম্যালওয়্যার শনাক্তকরণ এবং এনক্রিপশন থাকতে হবে। সিসি ক্যামেরা প্রস্তুতকারক দুটি কোম্পানি দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উৎপাদক সংস্থাগুলোকে সোর্স কোড পরীক্ষা করার সফটওয়্যার সরঞ্জাম পরিচালনা করতে হবে এবং সরকারি পরীক্ষাগারে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে।
নতুন নিয়ম ভারতের পরীক্ষাগারগুলোকে উৎপাদক কোম্পানির কাছে সোর্স কোড চাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, এটি ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিদেশে ডিভাইস প্রস্তুতকারকদের কারখানা পরিদর্শন এবং সাইবার দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য যেসব স্থাপনা আছে সেগুলোও পরিদর্শন করার ক্ষমতা দেয়।
চীনা কোম্পানি ইনফিনোভার ভারতীয় শাখা গত মাসে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে জানায়, এ ধরনের ‘প্রয়োজনীয়তা চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।’ ইনফিনোভার বিপণন কর্মকর্তা সুমিত চানানা ১০ এপ্রিল এক ই-মেইলে বলেন, ‘সোর্স কোড শেয়ারিং, ফার্মওয়্যার আপগ্রেডের পরে পুনরায় পরীক্ষা এবং একাধিক কারখানা নিরীক্ষার মতো প্রত্যাশাগুলো অভ্যন্তরীণ সময়সীমাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে।’
একই দিনে তাইওয়ানভিত্তিক ভিভোটেকের ভারত শাখার কর্মকর্তা সঞ্জীব গুলাটি ভারতীয় কর্মকর্তাদের সতর্ক করে বলেন, এমনটা হলে ‘চলমান সব প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে।’ তিনি এ মাসে রয়টার্সকে জানান, ভিভোটেক পণ্যের আবেদন জমা দিয়েছে এবং আশা করছে ‘শিগগিরই ছাড়পত্র পাবে।’
ভারতে নজরদারি সরঞ্জাম পরীক্ষাকারী সংস্থা হলো স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন টেস্টিং অ্যান্ড কোয়ালিটি সার্টিফিকেশন ডিরেক্টরেট। এটি তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীন। সংস্থাটির ১৫টি পরীক্ষাগার রয়েছে যা একসঙ্গে ২৮টি আবেদন পর্যালোচনা করতে পারে এবং প্রতি আবেদনে সর্বোচ্চ ১০টি পর্যন্ত মডেল যাচাই করানো যেতে পারে।
সরকারি তথ্য বলছে, আজ ২৮ মে পর্যন্ত বিভিন্ন প্রস্তুতকারকের শত শত মডেল পরীক্ষার জন্য সংস্থাটিতে ৩৪২টি আবেদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৭টি নতুন। এর মধ্যে ৩৫ টির পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে শুধু একটি বিদেশি সংস্থার। ভারতের সিপি প্লাস রয়টার্সকে জানিয়েছে, তারা তাদের ফ্ল্যাগশিপ ক্যামেরাগুলোর ছাড়পত্র পেয়েছে তবে আরও বেশ কয়েকটি মডেল ছাড়পত্রের অপেক্ষায় রয়েছে।
দাহুয়া বলেছে, তারাও পরীক্ষার জন্য ডিভাইস জমা দিয়েছে, কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত পণ্যগুলোর ‘ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা’ বজায় রাখার অনুমতি দিতে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর জাপান ও চীনসহ এশিয়ার একাধিক দেশ ওই শিক্ষার্থীদের নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরের সুযোগ করে দিতে এগিয়ে এসেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার ফলে অনেক শিক্ষার্থী যুক্তরাষ্ট্রের মাটি ছেড়ে নতুন গন্তব্য
১ ঘণ্টা আগেদক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েস্টার্ন কেপ প্রদেশের সালদানাহ শহর থেকে নিখোঁজ হওয়া ছয় বছরের শিশু জশলিন স্মিথ-এর মামলায় আদালত তাঁর মা কেলি স্মিথ সহ তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। নিজের মেয়েকে অপহরণ ও পাচারের অভিযোগে কেলি স্মিথকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন উচ্চ আদালত।
২ ঘণ্টা আগেআলিপুরদুয়ার ‘শিলিগুড়ি করিডর’ বা ‘চিকেন নেক’-এর অংশ। এটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সিকিম ও উত্তর-পূর্বের সেভেন সিস্টার্সের একমাত্র স্থলপথ। এই অঞ্চলের ভৌগোলিক দুর্বলতা ভারতের জন্য সব সময় উদ্বেগের। আর এখানেই আসে বাংলাদেশের প্রসঙ্গ—গত মার্চ মাসে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের বেইজিং
৩ ঘণ্টা আগেবসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজধানী সারায়েভো এখন ইঁদুরবাহিত রোগের সংক্রমণে বিপর্যস্ত। এ অবস্থায় শহরটির বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিলজাকা নদীতে দল বেঁধে ইঁদুরের সাঁতার কাটার ভিডিও এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা আবর্জনার ছবি শেয়ার করছেন।
৪ ঘণ্টা আগে