Ajker Patrika

বাংলাদেশ হয়ে সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগকারী রেল প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করল ভারত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৩০
সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগ সহজ করতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত
সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগ সহজ করতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে রেল সংযোগ প্রকল্পের অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ স্থগিত করেছে ভারত। এই সিদ্ধান্তের ফলে অন্তত তিনটি চলমান প্রকল্প থেমে গেছে এবং আরও পাঁচটি প্রকল্পের জরিপ কাজও বন্ধ হয়ে গেছে। এই প্রকল্পগুলোর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করা।

এসব প্রকল্পের আকার প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপি বলে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

দ্য হিন্দু সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাত দিয়েছে জানিয়েছে, নয়াদিল্লি এই পরিস্থিতিতে তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে এবং উত্তর ভারতে রেল অবকাঠামো জোরদার করার পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে বিকল্প সংযোগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে।

সূত্র আরও জানায়, ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ পরিকল্পনা বিবেচনাধীন।

স্থগিত হওয়া প্রকল্পগুলো ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর (সেভেন সিস্টার্স) জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের রেল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই রাজ্যগুলোর সংযোগ স্থাপিত হলে সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডরের (চিকেন’স নেক) ওপর নির্ভরতা কমতো। এই করিডরটি উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই মুহূর্তে আমরা বাংলাদেশে নির্মাণ সামগ্রী বা অন্য কোনো জিনিস সরবরাহ করছি না। প্রতিবেশী দেশটির মাধ্যমে সংযোগকারী রুটের জন্য প্রকল্প তহবিলও স্থগিত রাখা হয়েছে। সেখানে প্রথমে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসা প্রয়োজন। তবে ভারতের অংশে নির্মাণকাজ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে।’

দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগ সহজ করতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত
সেভেন সিস্টার্সের সঙ্গে সংযোগ সহজ করতে বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি রেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারত। ছবি: সংগৃহীত

স্থগিত হলো যেসব প্রকল্প:

ভারত অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন তিনটি প্রকল্প বর্তমানে স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো:

১. আখাউড়া-আগরতলা আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন স্থাপন।

২. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন।

৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেললাইন সম্প্রসারণ প্রকল্প।

আখাউড়া-আগরতলা (ত্রিপুরা) আন্তঃদেশীয় রেল সংযোগ প্রকল্পটি ভারত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটি রুপি অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেল সংযোগের ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশে এবং ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার ত্রিপুরায়। কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইন এই প্রকল্পের অংশ এবং এর লক্ষ্য বিদ্যমান বাণিজ্য পথ ব্যবহার করে নতুন রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে আসামের সঙ্গে সংযোগ উন্নত করা।

খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্পটি ৩২৮ দশমিক ৯২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি) ব্যয়ে একটি ঋণ চুক্তির অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর এবং খুলনার বিদ্যমান রেল নেটওয়ার্কের মধ্যে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ব্রডগেজ রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই বন্দরের একটি টার্মিনালের পরিচালন স্বত্ব ভারতের।

ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পটি ২০২৭ সালের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও গত বছর পর্যন্ত এর অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কম। জানা যায়, এই প্রকল্পের প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি ভারতীয় ঋণ সহায়তা (এক্সিম ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে) থেকে আসার কথা ছিল। তহবিল ছাড়ের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা ছিল বলে সূত্র জানায়।

আরেক কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘আরও পাঁচটি স্থানে লোকেশন জরিপের কাজ চলছিল, সেগুলোও স্থগিত করা হয়েছে।’

এই পরিস্থিতিতে ভারত অভ্যন্তরীণ ও বিকল্প আঞ্চলিক কৌশল অবলম্বন করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

ভারত সরকার উত্তর প্রদেশ ও বিহারে রেললাইন দ্বিগুণ ও চারগুণ করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। এই দুটি রাজ্য শিলিগুড়ি করিডরে প্রবেশের প্রধান পথ এবং এর মাধ্যমে সক্ষমতা ও নির্ভরযোগ্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এক রেলওয়ে কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘জরিপের কাজ চলছে।’

একই সময়ে, নয়াদিল্লি ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে রেল সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে। ভারত-নেপাল রেল চুক্তি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিকটবর্তী হওয়ায় ভুটানের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ রয়েছে। যদিও রুটগুলো লজিস্টিকভাবে জটিল।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত