Ajker Patrika

কাউকে ‘পাকিস্তানি’ বলা অপরাধ নয়: ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ছবি: সংগৃহীত

কাউকে ‘মিয়াঁ-টিয়াঁ’ বা ‘পাকিস্তানি’ সম্বোধন খারাপ, কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) ২৯৮ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো অপরাধ নয়। একটি মামলার রায় শেষে এমন মন্তব্য করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালত জানিয়েছে, এই ধরনের মন্তব্য অনুচিত। তবে এটি কোনোভাবেই ফৌজদারি বিধির লঙ্ঘন নয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হরি নন্দন সিং নামে এক ব্যক্তি জনৈক সরকারি কর্মীকে তাঁর দায়িত্ব পালনকালে ‘পাকিস্তানি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। এর প্রেক্ষিতে মামলা দায়ের করেন ওই সরকারি কর্মচারী।

বিচারপতি বি ভি নাগারথনা এবং বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। তারা মামলার সকল নথি পর্যবেক্ষণ করে অভিযুক্ত হরি নন্দন সিংয়ের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি খারিজ করে দেন।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি দেওয়া রায়ে আদালত বলেন, ‘নিঃসন্দেহে, এই মন্তব্যগুলো রুচিহীনতার পরিচয় দেয়। তবে, এটি অভিযোগকারীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মতো অপরাধ নয়। তাই, অভিযুক্তকে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।’

অভিযোগকারী ব্যক্তি ছিলেন একজন উর্দু অনুবাদক ও আরটিআই আইনের অধীনে সরকারি কেরানি। তিনি সরকারি নির্দেশের ভিত্তিতে অভিযুক্ত হরি নন্দন সিংকে কিছু নথি প্রদান করেন। প্রথমে হরি নন্দন সিং নথি গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করেন, পরে গ্রহণ করলেও অভিযোগকারীর ধর্মীয় পরিচয় উল্লেখ করে তাঁকে অপমান করেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি অভিযোগকারীকে ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে বলপ্রয়োগ করেছেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হরি নন্দন সিংয়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এফআইআর দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। যার মধ্যে ছিল ২৯৮ ধারা (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত), ৫০৪ ধারা (শান্তি ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান), ৫০৬ ধারা (অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন), ৩৫৩ ধারা (সরকারি কর্মচারীকে কর্তব্য পালনে বাধা দিতে হামলা বা বলপ্রয়োগ) এবং ৩২৩ ধারা (স্বেচ্ছায় আঘাত করা)।

তবে ম্যাজিস্ট্রেট মামলা পর্যালোচনা করে ৩৫৩, ২৯৮ এবং ৫০৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। আর প্রমাণের অভাবে ৩২৩ এবং ৫০৬ ধারার অভিযোগ খারিজ করে দেন।

এরপর হরি নন্দন সিং অব্যাহতির আবেদন করেন। কিন্তু প্রথমে সেশনস কোর্ট এবং পরে রাজস্থান হাইকোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

সুপ্রিম কোর্ট মামলা পর্যালোচনা করে রায় দেন, ৩৫৩ ধারার অভিযোগ টিকিয়ে রাখার মতো ‘হামলা বা বলপ্রয়োগের কোনো প্রমাণ নেই’ এবং উচ্চ আদালত এই ধারায় অভিযুক্তকে অব্যাহতি না দিয়ে ভুল করেছে। আদালত আরও জানায়, ৫০৪ ধারাও এখানে প্রযোজ্য নয়। কারণ, সিংয়ের তরফ থেকে এমন কোনো কাজ করা হয়নি যা ‘শান্তি ভঙ্গ করতে’ প্ররোচিত করতে পারে।

২৯৮ ধারা প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বলেন, সিংয়ের মন্তব্য অনুচিত হলেও আইনিভাবে তা ভারতীয় দণ্ডবিধির অধীনে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’ হানার পর্যায়ে পড়ে না। এর ফলে, হরি নন্দন সিংকে সমস্ত অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই রায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৮ ধারার প্রয়োগ এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের আইনি সংজ্ঞা সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টতা প্রদান করেছে। যা সামাজিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বাংলাদেশের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাল দিল্লি

‘ক্রিকেটাররা আমাকে ন্যুড পাঠাত’, বিস্ফোরক ভারতের সাবেক কোচের সন্তান

‘শেখ হাসিনা আসবে, বাংলাদেশ হাসবে’ ব্যানারে বিমানবন্দর এলাকায় আ.লীগের মিছিল

পরপর সংঘর্ষে উড়ে গেল বাসের ছাদ, যাত্রীসহ ৫ কিমি নিয়ে গেলেন চালক

ইটনায় এবার ডিলার নিয়োগে ঘুষ চাওয়ার কল রেকর্ড ফাঁস

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত