Ajker Patrika

মোদির সাত বছর: ভারতের অর্থনীতির বেহাল চিত্র

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
মোদির সাত বছর: ভারতের অর্থনীতির বেহাল চিত্র

ঢাকা: ভারত এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। আর জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে দ্বিতীয়। সঠিক নেতৃত্ব পেলে অল্প সময়ে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির। গবেষকরা বলছেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকারের হাতে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে দিল্লি।

গুজরাট মডেলে দেশকে স্বর্গ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। আশানুরূপ উন্নয়ন করতে না পারলেও ২০১৯ সালে আবার মসনদে বসেন মোদি। কথা ছিল, চাকরির অভাব থাকবে না, গরিবের কষ্ট থাকবে না, সর্বোপরি বিনিয়োগে–উন্নয়নের জোয়ারে ভাসবে দেশ।

কিন্তু মোদি শাসনের সাত বছর শেষে এসে উল্টো চিত্র দেখা গেল। দেখা গেল, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের সংকট, বিনিয়োগের অভাব, মূল্যস্ফীতি, স্বাস্থ্য খাতের করুণ অবস্থা প্রকট হয়ে উঠেছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এসব সমস্যা আরও গভীর হয়েছে।

২০২৫ সালের মধ্যে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) পাঁচ লাখ কোটি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মোদি। মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে এতটা না পারলেও অন্তত তিন লাখ কোটি ডলারের স্বপ্ন ছিল তার সরকারের। কিন্তু করোনা পূর্ব এক হিসাব মতে, বিজেপির হাত ধরে ঘোষিত সময়ে জিডিপি বড়জোর দুই লাখ ৬০ হাজার কোটি ডলার করা সম্ভব। তবে করোনার কারণে এখান থেকে আরও প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলার কমার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনীতি নিম্নমুখী হওয়ার পেছনে করোনার চেয়ে অন্য কারণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মোদি যখন ক্ষমতা নেয় তখন দেশটির জিডিপি ছিল ৭–৮ শতাংশ, যা দেশটির ইতিহাসের সর্বোচ্চ। ২০১৯–২০ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে তা ৩ দশমিক ১ শতাংশে নেমে আসে, যা সর্বনিম্ন।

২০১৬ সালে নোট বাতিলের ঘটনা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি বিশাল ধাক্কা, এর ফল ৮৬ শতাংশ নগদ অর্থ মানুষের হাতছাড়া হয়ে যায়। তা ছাড়া অভিন্ন পণ্য ও সেবা করও (জিএসটি) দেশটির ব্যবসাকে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

দেশটির আরেকটি বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। সরকারি তথ্য মতে, ২০১৭–১৮ অর্থবছরে বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। কিন্তু এ সংকট সম্প্রতি দ্বিগুণ হয়েছে বলে জানিয়েছে সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই)।

বিনিয়োগ কমায় এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সিএমআইইর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মহেশ ব্যাস বলেন, ২০১১–১২ সাল থেকে আমাদের বিনিয়োগ কমছে, এটিই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় মহামারির দেশটির এ সমস্যাকে আরও বাড়িয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ দিয়ে বাজিমাত করতে চেয়েছিলেন মোদি। এ উদ্যোগের মাধ্যমে বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং স্বর্গ হতে চেয়েছিল দিল্লি। কিন্তু এ প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ প্রকল্প থেকে দেশটির বার্ষিক জিডিপির ২৫ শতাংশ আসবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু গত সাত বছরে এ লক্ষ্যমাত্রা মাত্র ১৫ শতাংশেই ঘুরপাক খাচ্ছে। গত এক দশকে অর্থনীতিটির বার্ষিক রপ্তানি ৩০ হাজার কোটি ডলারেই আটকে আছে।

ব্যর্থতার মিছিলে মোদি সরকারের অবকাঠামো ও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতি খাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা দেখিয়েছে। অবকাঠামো খাত বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ফিডব্যাক ইনফ্রার তথ্য মতে, বিজেপি সরকার বছরে গড়ে ৩৬ কিলোমিটার নতুন মহাসড়ক নির্মাণ করেছে, যা কংগ্রেসের আমলে ছিল ৮–১১ কিলোমিটার।

বিশাল জনসংখ্যার দেশটিতে আগে বেশির ভাগ লেনদেনের কোনো হিসাব থাকত না। কারণ তা অনানুষ্ঠানিকভাবে হতো। মোদি সরকার দেশটির জনসংখ্যার বড় একটা অংশ ডিজিটাল লেনদেনের আওতায় এনেছে। অর্থাৎ ব্যাংক অ্যাকাউন্টধারী বেড়েছে। এ ব্যবস্থার ফলে মধ্যস্বত্বভোগী বিলোপের সুযোগ তৈরি হলেও অধিকাংশ গরিবের অ্যাকাউন্টে অর্থ নেই। ফলে বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট অব্যবহৃত থাকছে।

অন্যতম প্রধান খাত হওয়া সত্ত্বেও দেশটির স্বাস্থ্য ও কৃষির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অর্থনীতিবিদ ঋতিকা খের বলেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলোর মতো এ সরকারও স্বাস্থ্য খাতকে অবহেলা করেছে। বিশ্বে যে দেশে স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় কম ভারত তাদের অন্যতম।

এদিকে দেশটির কর্মক্ষম মানুষের অর্ধেকের বেশি কাজ করে কৃষি খাতে। কিন্তু জিডিপিতে তাঁদের অবদান খুব কম। তাই দেশটিকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এ খাতে মনোযোগ দেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

সরকারি মাধ্যমিকের সহকারী শিক্ষকেরা পাচ্ছেন গেজেটেড মর্যাদা

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে আরেকটি প্রক্সি ওয়ারে জড়াতে চায়: ফরহাদ মজহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত