Ajker Patrika

মায়ের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য দিল কিশোর, বাবার যাবজ্জীবন 

মায়ের হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য দিল কিশোর, বাবার যাবজ্জীবন 

মায়ের হত্যাকাণ্ডের সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালে আরিয়ানের বয়স ছিল মাত্র চার বছর। বাবা এবং দাদা–দাদির নির্যাতনে মায়ের মারা যাওয়ার বিষয়টি নিজ চোখে দেখেছিল সে। সেই ৪ বছরের আরিয়ানের বয়স এখন ১১ এবং তাঁর দেওয়া সাক্ষ্যের ভিত্তিতেই তার বাবা ও দাদা–দাদিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে আরিয়ানের বাবা অশোক সিং, তার দাদা মুন্নালাল এবং দাদি সাবিত্রী সিং মিলে যৌতুকের দাবিতে তার মা সাধনা সিংকে পুড়িয়ে হত্যা করে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রমাণ ছিল। সাধনা সিং আগুনে পুড়ে মরার আগে দেওয়া এক জবানবন্দিতে জানিয়েছিলে, কারা তাঁকে পুড়িয়ে দিয়েছে। 

ভারতের উত্তর প্রদেশের আলী গড় জেলার সরকারি কৌঁসুলি অমর সিং তোমার বলেন, ‘তাঁর (সাধনা) সারা শরীর পুড়ে গিয়েছিল, কেবল মুখমণ্ডলই অক্ষত ছিল। ভাগ্য ভালো যে, চিকিৎসকেরা সময়মতো পুলিশকে ডাকতে পেরেছিল। এবং পুলিশ তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তিনি মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার আগে বলে যান, তাঁর স্বামী এবং শ্বশুর–শাশুড়ি মিলে তাঁর গায়ে আগুন দিয়েছে।’ 

সাধনাকে নির্যাতনের প্রমাণ দিয়েছেন তাঁর বাবা–মাও। তাঁরা আদালতকে বলেন, সাধনাকে আলীগড়ে তাদের বাড়িতে মারধর করা হয়েছিল। তারা আরও বলেন, ‘সাধনার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে মারধর করেছে যে সে আমাদের কাছ থেকে স্বামীর মোটরসাইকেল কেনার জন্য ১ হাজার ডলার নিয়ে যায়।’ 

তবে সবচেয়ে বেদনাদায়ক সাক্ষ্য দিয়েছে সাধনার ছেলে। বর্তমানে ১২ বছরের আরিয়ানের সামনেই তাঁর মাকে হত্যা করা হয়। মায়ের যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যুর সময় আরিয়ানের বড় বোন—যার বয়স তখন ৬ বছর ছিল—বাড়িতে ছিল না। হত্যাকারীরা আরিয়ান ছোট থাকায় তাকে অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়ার কথা চিন্তা করেনি। যাই হোক, ২০১৫ সালের হত্যাকাণ্ডের মামলাটির বিচার শুরু হয় ২০২০ সালে। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আরিয়ানের বাবা, দাদা–দাদি কারাগারে রয়েছেন। এবং আরিয়ান ও তার বোনা এখন তাদের নানা–নানির সঙ্গে বাস করে। 

সর্বশেষ আদালতে বাবা এবং দাদা–দাদির বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় আরিয়ান। বিষয়টি উল্লেখ করে অমর সিং তোমার বলেন, ‘আরিয়ান আদালতে জানিয়েছে, তার বাবা মদ্যপ অবস্থায় বাড়িতে এসে মাকে মারধর শুরু করে। পরে তাঁর সঙ্গে দাদা-দাদিও যোগ দেয়। মারধরের একপর্যায়ে তাঁরা রান্নাঘর থেকে কিছু কেরোসিন এনে আরিয়ানের মায়ের গায়ে ছুড়ে দেয়। এরপর আরিয়ানের দাদা আরিয়ানের বাবাকে বলেন, “যাও, ম্যাচ জ্বালিয়ে দাও”।’ 

ভারতের ইতিহাসে আদালতে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষ্য গ্রহণ খুবই বিরল ঘটনা। সাক্ষী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে আরিয়ানকে ভারতীয় আইন অনুসারে আদালতে প্রমাণ করতে হয়েছিল যে, তিনি তাকে করা প্রশ্নগুলো ঠিকমতো বুঝতে পারে, যুক্তিযুক্ত উত্তর দিতে পারে এবং প্রমাণ করতে পারে যে, সে সত্য উত্তর দেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছিল। এরপরও বিপক্ষ আইনজীবী আরিয়ানকে ভুয়া ও সাজানো সাক্ষ্য দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল। তবে সেগুলো আদালতে ধোপে টেকেনি।  
 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত