Ajker Patrika

পাকিস্তানের আইএমএফ ঋণ আটকাতে তৎপর ভারত

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ মে ২০২৫, ১৪: ৩৯
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত ক্রসিং। ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সীমান্ত ক্রসিং। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিপুল পরিমাণ ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জরাজীর্ণ অর্থনীতির পাকিস্তানের জন্য এই ঋণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত সরকার চেষ্টা করছে, পাকিস্তান যাতে এই ঋণের অর্থ সহজেই না পায়। পাশাপাশি, ভারতে পাকিস্তানিদের কণ্ঠ রোধ করতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ভারত সরকার।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের খবরে বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের অভ্যন্তরে যেভাবে সমালোচকদের দমন করে থাকেন, ঠিক সেভাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধেও পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন। মোদির সরকার যেমন সমালোচক ও ভিন্নমতাবলম্বীদের অর্থ ও গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও ঠিক সেরকমটাই করছে।

গত রোববার কলকাতা থেকে প্রকাশিত টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের শুক্রবার কেরালায় এক বন্দর উদ্বোধনের সময় মোদি যখন বিরোধীদের নিয়ে ব্যঙ্গ করছিলেন, ঠিক তখনই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের ইউটিউব চ্যানেল ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়। ভারত সরকার দাবি করে, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলার স্বার্থেই এমন সিদ্ধান্ত।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর পাকিস্তানি ডিজিটাল কনটেন্টের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়নের অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এখন ভারতে শাহবাজ শরিফের ইউটিউব চ্যানেলে ঢুকতে গেলে একটি বার্তা দেখা যায়, ‘জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সরকারি আদেশের কারণে এই কনটেন্ট এ দেশে আপাতত দেখা যাচ্ছে না।’

এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ ও আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের ইউটিউব চ্যানেলের বিরুদ্ধেও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। তবে শাহবাজের চ্যানেল ব্লক করা এ পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চপর্যায়ের পদক্ষেপ।

ভারতের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের জরুরি ধারাগুলোর অধীনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে যেন, পাকিস্তানের একাধিক অ্যাকাউন্ট ভারতের ভেতর থেকে দেখা না যায়। অভিযোগ, এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ভারতবিরোধী প্রচার ও ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পেহেলগামে হামলার পর এটি একটি ‘সমন্বিত প্রতিঘাতমূলক প্রচার’ কৌশলের অংশ। বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে পাকিস্তানের জনপ্রিয় ক্রিকেটারদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের ওপর, যেগুলোর বিপুলসংখ্যক অনুসারী ভারতে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদি ও হারিস রউফের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট ভারতে ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।

ভারত থেকে এসব প্রোফাইলে ঢুকতে গেলেই এখন লেখা আসছে, ‘এই অ্যাকাউন্ট ভারতে দেখা যাচ্ছে না। আইনগত অনুরোধের ভিত্তিতে এটি সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।’ শহিদ আফ্রিদি, শোয়েব আখতার ও বাসিত আলীর ইউটিউব চ্যানেলও ভারতে ‘জিও-রেস্ট্রিক্ট’ করা হয়েছে। ভারতীয় দর্শকদের জন্য সেগুলোর কনটেন্ট আর দেখা যাচ্ছে না।

সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, কাশ্মীর হামলার পর এসব তারকা ব্যক্তিত্ব নিজেদের অ্যাকাউন্টে হয় সরাসরি, নয়তো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে এমন কনটেন্ট শেয়ার করছিলেন, যেগুলো ভারতবিরোধী মনোভাব ছড়াতে পারে। তবে ইনস্টাগ্রামে ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস ও আফ্রিদির অ্যাকাউন্ট এখনো দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আরও কিছু প্রোফাইল পর্যালোচনার অধীনে রয়েছে।

রাজনীতি ও ক্রীড়ার বাইরে গিয়েও এসব নিষেধাজ্ঞা পৌঁছেছে বিনোদন অঙ্গনে। পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মাহিরা খান ও হানিয়া আমিরের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল ভারতে দেখা যাচ্ছে না। আলি জাফর ও ফাওয়াদ খানের মতো তারকারাও সম্প্রতি একই রকম নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদ, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতির প্রেক্ষাপটে ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি তৈরি করতে পারে এমন ডিজিটাল কনটেন্টের বিরুদ্ধে সরকার নজরদারি ও ব্যবস্থা চালিয়ে যাবে।

অন্যদিকে, পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে চাপে ফেলতে ভারত বৈশ্বিক বহু-পক্ষীয় সংস্থাগুলোকে অনুরোধ জানিয়েছে, যেন তারা পাকিস্তানকে দেওয়া ঋণ ও আর্থিক সহায়তা পুনর্মূল্যায়ন করে। রয়টার্স ভারতের এক সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আমরা সব বহুপক্ষীয় সংস্থাকে বলব, যেন তারা পাকিস্তানকে দেওয়া ঋণ ও সহায়তা পর্যালোচনা করে।’

পাকিস্তান গত বছর আইএমএফের কাছ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের বেইলআউট পেয়েছে এবং চলতি বছরের মার্চে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের নতুন জলবায়ু সহনশীলতা ঋণ পেয়েছে। রয়টার্স জানিয়েছে, আইএমএফ ও ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

তবে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা খুররম শেহজাদ রয়টার্সকে বলেছেন, ‘আমাদের আইএমএফ কর্মসূচি সম্পূর্ণ সঠিক পথে আছে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক মূল্যায়ন ইতিবাচক হয়েছে এবং আমরা পুরোপুরি সঠিক পথে আছি। আমরা ওয়াশিংটনে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রায় ৭০টি বৈঠক করেছি। পাকিস্তানে বিনিয়োগে আগ্রহ অনেক বেশি।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত