Ajker Patrika

ভারতের হামলায় পাকিস্তানে সন্ত্রাসী স্থাপনা দ্বিখণ্ডিত, ধরা পড়ল স্যাটেলাইটে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৫, ০০: ৩৬
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে অবস্থিত সায়েদনা বিলাল ক্যাম্প ছিল জইশ-ই-মুহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে
পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে অবস্থিত সায়েদনা বিলাল ক্যাম্প ছিল জইশ-ই-মুহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে

গত মাসে অপারেশন সিঁদুরের অংশ হিসেবে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের দুটি প্রধান সন্ত্রাসী স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল ভারত। এবার এই প্রথম হাই রেজল্যুশনের নতুন স্যাটেলাইট ছবিতে এসব হামলার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ধরা পড়েছে। এনডিটিভির হাতে আসা এই ছবিগুলোতে হামলার তীব্রতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। যদিও ভারতীয় সামরিক বাহিনী হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের নাম প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, উভয় লক্ষ্যবস্তুতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল।

এই ছবিগুলো কাশ্মীরের তাংধারের ৩৬ কিলোমিটার পশ্চিমে মুজাফফরাবাদের সায়েদনা বিলাল ক্যাম্প এবং জম্মুর রাজৌরি থেকে ৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে কোটলি গুলপুর ক্যাম্পের। ৭ মে ভোরের দিকে এই দুটি সন্ত্রাসী স্থাপনা লক্ষ্য করে ভারত হামলা চালায়। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এই হামলার জেরে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একাধিক সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে এই অভিযান চালায় ভারত। পেহেলগামের হামলা ছিল ২০০০ সালের মার্চে ছত্রিসিঙ্গপোরা হত্যাকাণ্ডের পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা, যেখানে ৩৬ জন শিখকে হত্যা করা হয়েছিল।

পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে অবস্থিত সায়েদনা বিলাল ক্যাম্প ছিল জইশ-ই-মুহাম্মদের সঙ্গে যুক্ত সন্ত্রাসীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি। এই ক্যাম্পে অস্ত্র পরিচালনা, জঙ্গলে টিকে থাকা এবং বিস্ফোরক ও গোলাবারুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।

হামলার আগের ও পরের ছবিগুলোতে দেখা যায়, ৮১ বাই ৯২ ফুট পরিমাপের একাধিক ভবন সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি ড্রোন হামলার ফল। এলাকার আশপাশে অন্য কোনো ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি।

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন মাসে বিশেষ প্রশিক্ষণের জন্য এই সায়েদনা বিলালে নতুন জঙ্গিদের পাঠানো হয়েছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল উরি ও কেরান সেক্টরে লাইন অব কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে কাঠুয়া ও রামবানের রেলসেতুতে হামলা চালানো। প্রশিক্ষণের পর এই সন্ত্রাসীদের পাকিস্তানের পাঞ্জাবের ঘাঁটি ও লঞ্চপ্যাডগুলোতে পাঠানো হতো, যেখানে তারা যোগাযোগেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ পেত। প্রশিক্ষণ শেষে তারা চার থেকে আটজনের দলে বিভক্ত হয়ে ২০২৪ সালের মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করে। গত বছর জম্মুতে সংঘটিত অধিকাংশ সন্ত্রাসী হামলা এই সন্ত্রাসীরাই চালিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

জইশ-ই-মুহাম্মদের শীর্ষ সন্ত্রাসী নেতা মুফতি আসগর খান কাশ্মীরি, আমির জে এম আবদুল্লাহ জেহাদি এবং আশিক নিগরু নিয়মিত এই ক্যাম্পে আসতেন। জইশ-ই-মুহাম্মদের সিনিয়র কমান্ডারদের জন্য ক্যাম্পের কাছে গেস্টহাউসও তৈরি করা হয়েছিল। সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, এই ক্যাম্পগুলোকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা, বিশেষ করে ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) অর্থসহায়তা ও সুরক্ষা দিত। এ ছাড়া জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র সরবরাহ এবং নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থাও করা হতো।

শ্রীনগরে অবস্থিত ১৫ কোরের সাবেক কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল সতীশ দুয়া (অব.) বলেন, কোটলি ও মুজাফফরাবাদের সন্ত্রাসী আস্তানাগুলো লক্ষ্য করে চালানো সুনির্দিষ্ট হামলার এই ছবিগুলো ভারতের সক্ষমতার সুস্পষ্ট প্রমাণ। তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দশক ধরে আমরা অসহায় বোধ করতাম যে সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানা সত্ত্বেও বিভিন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোতে আঘাত করতে পারছি না। কিন্তু পেহেলগাম সবকিছু বদলে দিয়েছে।’ জার্মান সংবাদমাধ্যম টিআরটি জার্মানও এই ছবিগুলো মুজাফফরাবাদের সায়েদনা বিলাল ক্যাম্পের বলে প্রচার করেছে।

কোটলির গুলপুরে অবস্থিত এই ভবন জম্মুর রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকার হামলায় জড়িত লস্কর-ই তাইয়েবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বেসক্যাম্প ছিল। হামলার আগে ও পরের ছবি। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে
কোটলির গুলপুরে অবস্থিত এই ভবন জম্মুর রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকার হামলায় জড়িত লস্কর-ই তাইয়েবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বেসক্যাম্প ছিল। হামলার আগে ও পরের ছবি। ছবি: এনডিটিভির সৌজন্যে

ছবির দ্বিতীয় সেটটি কোটলির গুলপুর ক্যাম্পের। এতে কিছু ভবনের ছবি দেখা যায়, যা জম্মুর রাজৌরি-পুঞ্চ এলাকার হামলায় জড়িত লস্কর-ই তাইয়েবা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর একটি বেসক্যাম্প বলে ধারণা করা হচ্ছে।

স্যাটেলাইট চিত্র দেখাচ্ছে, ১১০ বাই ৩০ ফুটের একটি কাঠামো ঠিক মাঝখান থেকে দুভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এই ভবনের ঠিক পাশে থাকা একটি ছোট কাঠামোর ছাদও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের দাবি, এখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা ২০২৩ সালে পুঞ্চে এবং গত বছর তীর্থযাত্রীদের বাসে হামলা চালিয়েছিল। এই ক্যাম্প ২০২২ সালের আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল।

সেনাবাহিনী সূত্রে জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র ছিল লস্কর-ই-তাইয়েবার একটি সুপ্রতিষ্ঠিত প্রশিক্ষণকেন্দ্র, যেখানে আত্মঘাতী বোমারুসহ বিপুলসংখ্যক সন্ত্রাসী উন্নত যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। আবাসিক সুবিধাসম্পন্ন এই স্থানে ৩০-৫০ জন সন্ত্রাসী ও তাদের প্রশিক্ষকেরা থাকতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পুঞ্চ এবং রাজৌরি অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টাকারী সন্ত্রাসীরা এটি ব্যবহার করত। সেনাবাহিনী সূত্রে আরও জানা গেছে, এই প্রশিক্ষণকেন্দ্র একাধিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছিল। এটি পাকিস্তানি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য গেরিলা যুদ্ধ, বেঁচে থাকার কৌশল এবং অস্ত্র প্রশিক্ষণের একটি সুপরিচিত কেন্দ্র ছিল।

২০১৯ সালে ভারতের বালাকোট হামলার পর ক্যাম্পটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তবে ২০২০ সালে এটি সন্ত্রাসীদের জন্য আবার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুদা (অব.) ২০১৬ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক পাকিস্তানে পরিচালিত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর সময় ভারতের নর্দান আর্মি কমান্ডার ছিলেন। জেনারেল ডি এস হুদা বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুরের সময় আমাদের মনোযোগ ছিল মুরিদকে, বাহাওয়ালপুর এবং পাকিস্তানি বিমানঘাঁটিগুলোর দিকে। তবে পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সন্ত্রাসী স্থাপনাগুলোতে চালানো হামলাও সমান গুরুত্বপূর্ণ ছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ক্যাম্পগুলো থেকেই সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশের রুটগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশের আগে চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনা করে। এই অবকাঠামো ধ্বংসের ফলে সন্ত্রাসীদের মনোবল এবং জম্মু ও কাশ্মীর উভয় অঞ্চলে হামলা চালানোর ক্ষমতায় তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়বে।’

প্রসঙ্গত, ভারত ৭ মে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। এই অভিযানের অংশ হিসেবে ভারত লস্কর-ই-তাইয়েবা, জইশ-ই-মুহাম্মদ এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে নয়টি অবকাঠামোতে আঘাত হানে। হামলাগুলো ওই দিন রাত ১টা ৫ থেকে ১টা ৩০-এর মধ্যে হয়েছিল।

লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে চারটি ছিল পাকিস্তানে—বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, শিয়ালকোট এবং শাকার গড়ের কাছাকাছি একটি গ্রাম। বাকি পাঁচটি লক্ষ্যবস্তু ছিল পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদ, কোটলি, ভিম্বর, রাওয়ালকোট ও চাকসওয়ারি। ধারণা করা হচ্ছে, এই হামলায় শতাধিক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিশ্বে চাকরির বাজারে কম দামি ১২ ডিগ্রি, কদর বাড়ানোর উপায় কী

তোমার অন্যায়ে জেনো এ অন্যায় হয়েছে প্রবল

পোশাক কারখানায় রাতভর নির্যাতনে ইলেকট্রিশিয়ানের মৃত্যু, সহকর্মী গ্রেপ্তার

ভাটারা থেকে নিখোঁজ এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহিরা সাভার থেকে উদ্ধার

চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে ধর্ষণ, অভিযোগ শ্রমিক-ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত