Ajker Patrika

হঠাৎ করে ধর্মে আগ্রহী হয়ে উঠছে ব্রিটেনের জেন–জি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৩ মে ২০২৫, ১৬: ১২
তরুণদের মধ্যে ধর্ম পালনের প্রবণতা বেড়েছে। ছবি: স্ট্রেইট টাইমস
তরুণদের মধ্যে ধর্ম পালনের প্রবণতা বেড়েছে। ছবি: স্ট্রেইট টাইমস

ব্রোম্পটন ওরেটরি, পশ্চিম লন্ডনের প্রাচীন এক গির্জা। পুরোনো জিনিসপত্র ও ধূপের গন্ধে ভরা এই গির্জায় দেখা মেলে অদ্ভুত এক চিত্র। বর্তমান সময়ে এসে সাধারণত গির্জা বা কোনো ধর্মীয় উপসনালয়ে তরুণদের ভিড় দেখা যায় না। গির্জাটিতে রোববারের প্রার্থনার সময় দেখা যায়, বেদীতে একজন পুরোহিত ধীরকণ্ঠে প্রার্থনা করছেন আর সামনে বসে আছেন সুন্দর সুন্দর পোশাকে সজ্জিত তরুণেরা। শক্ত বেঞ্চে বসে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনা করছেন তাঁরা। এমন চিত্র ক্রমশই বাড়ছে ব্রিটেনের ক্যাথলিক চার্চগুলোতে।

গত বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে জনমত জরিপকারী সংস্থা ইউগভ একটি জরিপ চালায়। বাইবেল সোসাইটি নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চালানো এ জরিপে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রায় ১৩ হাজার প্রাপ্তবয়স্কের ধর্মীয় মতামত ও অভ্যাস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। জরিপের ফলাফল ছিল চমকপ্রদ।

জরিপে দেখা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে মাসে অন্তত একবার গির্জায় যাওয়া লোকের সংখ্যা বেড়েছে ৫৬ শতাংশ এবং তরুণ বয়সীদের মধ্যে এই প্রবণতা সবচেয়ে বেশি, বিশেষ করে ছেলেদের মধ্যে। ২০১৮ সালে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ নিয়মিত গির্জায় যেত। তবে ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১৬ শতাংশ হয়েছে।

আরও একটি চোখে পড়ার মতো বিষয় হলো, নতুনভাবে ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট এই তরুণেরা ইংল্যান্ডের চার্চে নয়, বরং ক্যাথলিক চার্চে উপস্থিত হচ্ছেন। আর তাঁদের সংখ্যা এতটাই বেশি যে পাঁচ শতাব্দীর মধ্যে প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে ক্যাথলিক উপাসকদের সংখ্যা প্রোটেস্ট্যান্টদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।

তরুণদের মধ্যে ইতিমধ্যেই ক্যাথলিকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ছয় বছর আগে তরুণ গির্জাপ্রেমীদের এক-তৃতীয়াংশ অ্যাংলিকান বেঞ্চে ছিল। এখন মাত্র এক-পঞ্চমাংশ সেখানে যায়, আর ৪১ শতাংশ ক্যাথলিক চার্চে অংশ নেয়।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, মহামারি হয়তো ক্যাথলিক চার্চের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। লন্ডনের দক্ষিণে লুইশাম এলাকার ২৯ বছর বয়সী ব্যাংকার এডেন গেবোর্স বলেন, লকডাউন তাঁকে একটি সম্প্রদায় খোঁজার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি এটি খুঁজে পান মেফেয়ারের জেসুইট মন্দির ফার্ম স্ট্রিট চার্চে। ফার্ম স্ট্রিটের তরুণ-বয়স্কদের সেবায় নিয়মিতভাবে প্রায় ১৮০ জন উপস্থিত থাকেন। তরুণ-বয়স্ক মন্ত্রণালয়ের নেতা ফাদার কেনসি জোসেফ বলেন, দশ বছর আগে এই সংখ্যা হয়তো অর্ধেক ছিল।

যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশের তরুণদের কাছে ক্যাথলিক ধর্ম দুটি কারণে আকর্ষণীয় বলে মনে হচ্ছে। একদিকে ধ্যান ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রতি নিবেদন অনলাইনের জগতে একটি শক্তিশালী প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে ইন্টারনেটও ধর্ম প্রচারের একটি বড় মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

একটি ক্যাথলিক মিডিয়া সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা আমেরিকান বিশপ রবার্ট ব্যারন এবং পডকাস্টার ও ক্যাম্পাস মিনিস্টার ফাদার মাইক শমিটজ—এ দুজনই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখ লাখ অনুসারী সংগ্রহ করেছেন। বিশপ ব্যারন ‘মাচো খ্রিষ্টিয়ানিটি’র ধারণাকে উদ্‌যাপন করেন, যেখানে পুরুষেরা ‘নায়ক’ হয়ে উঠতে পারেন।

ঔপন্যাসিক গ্রাহাম গ্রিন তাঁর ক্যাথলিক বিশ্বাস সম্পর্কে এমনভাবে বর্ণনা করেছেন, যা সম্ভবত আজকের তরুণ চার্চগামীদের আকর্ষণের সঙ্গে মিল খায়। তিনি বলেন, এটি ‘সাধারণ পরিবর্তনের মধ্যে একটি সুন্দর, কঠিন ও নিশ্চিত কিছু, যদিও তা কিছুটা অস্বস্তিকর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত