Ajker Patrika

বিপুল জনপ্রিয়তার পরও কেন রক্ষণশীলদের বিরাগভাজন ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১৮: ৫০
২০১৬ সালে মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করেন পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: সানডে টাইমস
২০১৬ সালে মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণা করেন পোপ ফ্রান্সিস। ছবি: সানডে টাইমস

পোপ ফ্রান্সিসের পোপ হিসেবে পথচলা ছিল অনন্য। দুর্নীতি দমন, শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ এবং চার্চের আইন আধুনিকীকরণের যে চেষ্টা তিনি করেছিলেন, তা সব সময় সফল না হলেও কোটি কোটি ক্যাথলিকের হৃদয় জিতে নিয়েছে।

দায়িত্ব গ্রহণের দুই বছর পর ২০১৫ সালে এক বক্তৃতায় চার্চকে ‘পরিত্যক্ত ও অপূর্ণ’ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি চেয়েছিলেন, চার্চ হোক—একটি খুশির মা, যে বোঝে, পাশে থাকে এবং স্নেহ করে।

২০১৫ সালে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত তাঁর এক প্রার্থনাসভায় ৬০ লাখ মানুষ যোগ দিয়েছিলেন। আর ২০২৩ সালে কঙ্গোর কিনশাসায় জড়ো হন ১০ লাখের বেশি মানুষ। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে পূর্ব তিমুর সফরে তাঁর প্রার্থনায় অংশ নেন দেশটির অর্ধেক মানুষ—প্রায় ৬ লাখ। এ থেকেই বোঝা যায়, বিশ্বজুড়ে পোপ ফ্রান্সিসের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী।

তাঁর আগের পোপ বেনেডিক্ট ছিলেন কঠোর ধর্মীয় নিয়মের প্রহরী। সেই তুলনায় ফ্রান্সিসের চার্চ ছিল জনবান্ধব ও প্রাণবন্ত। চার্চে সাধারণ মানুষের মতামত শুনতে আগ্রহী ফ্রান্সিস ২০২৩ ও ২০২৪ সালে রোমের সিনোডে নারীদের প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার দেন। এসব উদ্যোগ রক্ষণশীলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। রক্ষণশীলেরা বিশ্বাস করে, চার্চের কাজ প্রশ্ন করা নয়, বরং ঈশ্বরের বাণী প্রচার।

সমকামিতার প্রসঙ্গে সাহসী অবস্থান নিয়েছিলেন প্রয়াত পোপ। এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি বিচার করার কে?’ আবার ভ্যাটিকানে নারীদের উচ্চপদে নিয়োগের বিষয়টিও চার্চের ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। ২০১৬ সালে তালাকপ্রাপ্তদের পুনর্বিবাহের পর কমিউনিয়নে অংশ নেওয়ার সুযোগ সহজ করার চেষ্টা করে তিনি বিশপদের বাধার মুখে পড়েছিলেন।

এ ছাড়া ২০১৯ সালে আমাজন অঞ্চলে তাঁর বিবাহিত পুরোহিতের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাবও উচ্চপদস্থ যাজকদের চাপে থেমে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল ক্যাথলিকেরা তাঁর অভিবাসীবান্ধব মনোভাবে অসন্তুষ্ট ছিলেন।

তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফ্রান্সিস এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। তিনি সমকামীদের আশীর্বাদ করার অনুমতি দেন। পরে তিনি ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিদের বাপ্তিস্ম গ্রহণের সুযোগ দেওয়ায় কড়া সমালোচনায় মুখর হন জার্মান কার্ডিনাল গেরহার্ড মুলার।

রাজনৈতিক বিষয়েও পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন নির্ভীক। ২০১৫ সালে পরিবেশ রক্ষা নিয়ে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইকে ক্যাথলিকদের দায়িত্ব হিসেবে অভিহিত করেন। রাশিয়ান অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বিশপ নিয়োগের চুক্তিও তাঁর যুগান্তকারী কূটনৈতিক পদক্ষেপ ছিল। যদিও পরে এই দুই সম্পর্কই টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে।

ফ্রান্সিস অন্যান্য পোপের মতো রাজকীয় জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন না। তিনি ভ্যাটিকানের অ্যাপার্টমেন্ট ছেড়ে পুরোহিতদের অতিথিশালায় থাকতেন এবং ভ্যাটিকানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে সরাসরি কথা বলতে কুণ্ঠাবোধ করতেন। এতে তাঁকে স্বেচ্ছাচারী বলেও অভিহিত করা হয়।

ভ্যাটিকানের আর্থিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে তিনি কিছু সাহসী পদক্ষেপ শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরে জানা যায়, তিনি নিজেই কিছু বিতর্কিত বিনিয়োগে সম্মতি দিয়েছিলেন।

এই সবকিছুর মাঝেও পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন এক সাহসী ভাবনার মানুষ। কখনো নতুন পথের দিশারি, কখনো পথভ্রষ্ট।

তিনি ছিলেন এমন এক পোপ, যিনি ধর্মীয় রীতিনীতিকে মানবিকতার আলোয় দেখার চেষ্টায় ছিলেন। রক্ষণশীলদের বিরাগভাজন হলেও গরিবদের পাশে দাঁড়ানো, সিরিয়ার শরণার্থীদের ভ্যাটিকানে স্থান দেওয়া, পিটার্স স্কয়ারে গৃহহীনদের জন্য গোসলখানা বসানো, আর মাদার তেরেসাকে সন্ত ঘোষণার মতো কাজগুলো তাঁকে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থায়ী করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত