Ajker Patrika

নেপথ্যে থেকেও ফ্রন্টলাইনে রাশিয়া-ইউক্রেন সাইবার যুদ্ধ

আপডেট : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২: ৩১
নেপথ্যে থেকেও ফ্রন্টলাইনে রাশিয়া-ইউক্রেন সাইবার যুদ্ধ

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনের হয়ে সামনের সারিতেই লড়ছে সাইবার অপারেটররা। রুশ হ্যাকারদের বিরুদ্ধে অন্তর্জালে নতুন ধরনের এই উচ্চ প্রযুক্তির যুদ্ধ সমানতালেই করে যাচ্ছে ইউক্রেনীয় প্রতিদ্বন্দ্বীরা।

বিবিসির কাছে সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনীয় সিকিউরিটি সার্ভিসের (এসবিইউ) সাইবার বিভাগের প্রধান ইলিয়া ভিটিউক বলেন, ‘আমাদের এমন লোক আছে, যারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত।’ অত্যন্ত সুরক্ষিত এসবিইউ সদর দপ্তরের ভেতরে বসে কীভাবে তাঁরা হ্যাকার ও বিশেষ বাহিনীর সম্মিলিত দক্ষতা ব্যবহার করে রুশ সিস্টেমে অনুপ্রবেশ করছেন, তা ব্যাখ্যা করেন তিনি।

স্নাইপারদের সঙ্গে এসবিইউ কীভাবে কাজ করে, সর্বশেষ প্রযুক্তি কীভাবে কাজে লাগানো হয়-সেসব নিয়েও কথা বলেন ইউক্রেন সাইবার বিভাগের প্রধান। তিনি বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা, এরিয়াল ড্রোন যেমন স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণের জন্য এসবিইউ ব্যবহার করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ভিজ্যুয়াল রেকগনিশন সিস্টেম। সামরিক বাহিনীর কাছে শত্রুপক্ষের অবস্থান জানিয়ে দেওয়ার কাজে লাগে এসব উচ্চ প্রযুক্তি।

ইলিয়া বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারি তারা (রাশিয়া) কোন ধরনের সামরিক অস্ত্র ব্যবহার করতে চলেছে এবং সেই অস্ত্রের নিশানা কোন দিকে।’ 

ইলিয়া ভিটিউক জানান, রুশ সৈন্যদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য তার দল অধিকৃত অঞ্চলে নজরদারি ক্যামেরাও হ্যাক করবে। ইউক্রেনীয় সৈন্যদের ওপর নজরদারি করা রাশিয়ান ক্যামেরা ধ্বংস করার জন্য ক্যামিকেজ ড্রোন (সুইসাইড ড্রোন নামেও পরিচিত) ব্যবহারের কথাও জানান তিনি। আর এই কাজে নিযুক্ত দলের প্রায়শই ছদ্মবেশের প্রয়োজন হয়, যাতে তারা লক্ষ্যবস্তুর কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

কখনো নজরদারি, কখনো অস্ত্র হিসেবে কাজ করার জন্য ব্যবহৃত ড্রোন এই সাইবার যুদ্ধে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রুশ সার্ভেইল্যান্স ক্যামেরা ধ্বংস করার জন্য এসবিইউ সাইবার টিম ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব ড্রোন। সেই সঙ্গে, রুশ ড্রোন শনাক্ত করার জন্য বিশেষ সেন্সর স্থাপন করে এসবিইউ সাইবার টিম। এতে করে কেবল ড্রোনগুলোকে আটকে ফেলাই নয়, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মাধ্যমে অবতরণের নির্দেশও পাঠায় এসবিইউ সাইবার টিম।

আর এই সবই ঘটে যেতে পারে খুবই কম সময়ের মধ্যে। তাই, টিমের সদস্যদের নিরাপত্তাও ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে। ভিটিউক বলেন, এ রকম পরিস্থিতিতে দলের একজন আরেকজনের নিরাপত্তার দিকটি দেখে। আশপাশে তাই নিরাপত্তা বিধানের ব্যবস্থাও থাকতে হয়। 

ইউক্রেনের রাজধানীর বাইরে সামরিক বাহিনীর অপারেটরদের ড্রোনের ব্যাপারে ট্রেনিং দেওয়া হয়। সেখানে ট্রেনিং পাওয়া আন্তন এক সময় ট্রাভেল গাইডের কাজ করতেন। ড্রোন চালানোও শিখেছিলেন সেই কাজের অংশ হিসেবে। বিবিসিকে তিনি জানান, কীভাবে ড্রোন চালাতে হয়, অপারেটরদের তা শেখানোই জরুরি নয়। বরং, শত্রুপক্ষের চোখে ধরা না পড়ে জীবিত থাকাটাই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। 

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে, ছোট ড্রোনগুলো উড়ানো হতো ১০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত। কিন্তু এখন রুশ জ্যামিং সংকেতকে ফাঁকি দিতে ইউক্রেনীয় অপারেটরদের যেতে হবে আরও কাছে। আন্তন ব্যাখ্যা করে বলেন, দুই পক্ষের ফ্রন্টলাইনের দূরত্ব এখন ছোট হয়ে আসছে। রুশ জ্যামিং সংকেতের চেয়ে আমাদের সংযোগ বেশি শক্তিশালী করতে হবে। 

ইলিয়া ভিটিউক জানান, সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ বেগবান করা এবং ইউক্রেনের জব্দকৃত ডিভাইসগুলোর তথ্য দ্রুত বের করতে রুশ ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসও তাদের সাইবার টিমগুলোকে ফ্রন্টলাইনের কাছে নিয়ে এসেছে। ইউক্রেনীয় ডিভাইস জব্দ করার পর তা ইউক্রেনীয়রা টের পাওয়ার আগেই রুশ বাহিনীর কাছে তথ্যগুলো পেয়ে যাওয়াটা জরুরি। 

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণের আগেও সাইবার সংঘাত ছিল সামরিক অভিযানের সঙ্গে জোরালোভাবে আবদ্ধ। তার এক মাস আগে ইউক্রেনের পাবলিক ওয়েবসাইট অফলাইন করে দিয়ে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল রাশিয়া। ভিটিউক বলেন, ‘অবশ্যই এই লড়াই মনস্তাত্ত্বিক। ইউক্রেন বেশিরভাগ সিস্টেমই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু আক্রমণের কয়েক ঘণ্টা আগে শুরু হয় নতুন আরেক যুদ্ধ। ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী কয়েক ঘণ্টা যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেছিল মার্কিন স্যাটেলাইট। সেটিকেও অকার্যকর করে দেয় রুশ সাইবার টিম।’ 

দ্রুত বিজয় অর্জনে রাশিয়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ায় এবং নৃশংসতার প্রতিবেদন বিশ্ববাসীর কাছে প্রকাশিত হওয়ায় তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণের গুরুত্বও বেড়ে যায়। ২০২২ সালের ১ মার্চ কিয়েভের একটি টিভি টাওয়ারকে লক্ষ্য করে একযোগে চালানো হয় সাইবার এবং ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণ। ইউক্রেনের যোগাযোগ রক্ষাকারী রাষ্ট্রীয় পরিষেবার প্রধান ইউরি শাইহোল বলেন, ‘রুশ বাহিনী চেষ্টা করছিল, যাতে ইউক্রেনীয়রা সত্যি তথ্য না পায়।’

তিনি জানান, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো প্রতিস্থাপনের জন্য প্রকৌশলীরা পুরো শহর ঘুরেছিল। এবং, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবারও শুরু হয় টিভি সম্প্রচার।

ইউরি শাইহোল বলেন, রুশ আগ্রাসনকে ইউক্রেন যে প্রতিরোধ করতে পেরেছে তার কৃতিত্ব অনেকাংশেই আমাদের বিশেষজ্ঞদের, যারা সিস্টেমটি তৈরি করেছেন। বিশেষজ্ঞ দলসহ আমাদের অংশীদারদেরও সহায়তার জন্য ধন্যবাদ। 

ইউক্রেনের নিজস্ব প্রযুক্তিকর্মীরা যুদ্ধে সাধ্যমতো কাজ করছে। কিয়েভের এক ভাঙাচোরা অফিসে তরুণ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক ব্যাখ্যা করেছেন যে, কীভাবে তারা গ্রিসেল্ডা নামে একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন যা দিয়ে সামাজিক মাধ্যম ও অন্যান্য উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে নতুন পরিস্থিতিতে কাজে লাগবে এমন সমাধান দেওয়া সম্ভব হয়। এমনকি, এই সিস্টেমের সাহায্যে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এবং সরকারও উপকৃত হয়েছে। কোথায় মাইন পুঁতে রাখা হয়েছে, কিংবা কোন ভবনের মেরামত জরুরি; তা খুঁজে বের করার কাজেও সহায়তা করেছে গ্রিসেল্ডা। 

রুশ স্পাই সার্ভিসের হ্যাকারদের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে ইলিয়া ভিটিউকের সাইবার টিম। রুশ হ্যাকারদের কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করা এবং তাদের ফোনকল শোনার মাধ্যমেই মূলত এই কাজ চালানো হয় বলে তিনি জানান। দুই দেশের হ্যাকাররা কেমন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করছে তার তুলনা করে ভিটিউক বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, রাশিয়ান হ্যাকারদের নিয়ে সব রহস্য উন্মোচন করেছে ইউক্রেন।’

তিনি জানান, রাশিয়ার সাইবার আক্রমণকে প্রতিহত করতে নিজেদের নির্মিত সিস্টেমের সহায়তা নিচ্ছে ইউক্রেন। মস্কো এখন তাদের সাইবার সক্ষমতা নিংড়ে দিয়ে আক্রমণ করছে ইউক্রেনকে। পশ্চিমাদের আক্রমণ করার মতো অবস্থায় এখন আর নেই রাশিয়া। ভিটিউক সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেন যদি যুদ্ধে পরাজিত হয় তবে রুশ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে আসবে অন্য কেউ। কিন্তু রুশদের বিপক্ষে লড়তে গিয়ে ইউক্রেন এবং অন্যান্য মিত্ররাও নতুন করে শিখছে কীভাবে প্রযুক্তিকে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে কাজে লাগানো যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: তিন দফা দাবিতে সোমবার মাঠে নামছেন শিক্ষার্থীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত