Ajker Patrika

বহুদিন পর ‘দুই ঘণ্টার’ ফোনালাপ, মাখোঁ-পুতিন কী কথা হলো

অনলাইন ডেস্ক
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ দীর্ঘদিন পর ফোনালাপে যুক্ত হয়েছিলেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই ফোনালাপে দুই নেতা ইরান-ইসরায়েল সংঘাত এবং ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ আলাপ করেছেন। এমনটাই জানিয়েছে ক্রেমলিন। মঙ্গলবারের এই ফোনালাপ ছিল দুই নেতার মধ্যে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের পর প্রথম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্যারিসে মাখোঁর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে—দুই ঘণ্টাব্যাপী ওই ফোনালাপে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে আলোচনা শুরু করার তাগিদ দেন।

ফরাসি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পুতিনের সঙ্গে কথা বলার আগে এবং পরে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেন মাখোঁ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও ওই ফোনালাপ নিয়ে আলোচনা করেন।

ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে, পুতিন বলেছেন—ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চালানোর অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তির আওতায় থাকা দায়বদ্ধতা বজায় রাখতে হবে।

ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, ইরানের পারমাণবিক ইস্যুকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন মাখোঁ। এ কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের সম্পৃক্ততা জরুরি বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে ইরানকে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ-এর সঙ্গে পুরোপুরি সহযোগিতা করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত মাসে ইরানের পার্লামেন্ট একটি বিল অনুমোদন করেছে। যার ফলে আইএইএ-র সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হবে। এরই মধ্যে এটি আইনে পরিণত হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়। দেশ দুটির অভিযোগ, তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের চেষ্টা করছে। তবে ইরান বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

মাখোঁর কার্যালয় আরও জানিয়েছে, তিনি কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, যা ইরানের পারমাণবিক ইস্যু, ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক ভূমিকাসহ সব বিষয়ে কঠোর ও টেকসই সমাধান নিয়ে আসবে। দুই নেতা এসব ইস্যুতে নিজেদের প্রচেষ্টা সমন্বয়ের ব্যাপারেও একমত হয়েছেন।

ফোনালাপে ইউক্রেন ইস্যুতে পুতিন তাঁর পুরোনো অবস্থানই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি মাখোঁকে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ সরাসরি পশ্চিমাদের নীতির ফল, যেখানে গত কয়েক বছর ধরে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগ উপেক্ষা করা হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে যেকোনো সম্ভাব্য শান্তিচুক্তি ‘ব্যাপক ও দীর্ঘমেয়াদি’ হতে হবে এবং ‘নতুন ভূখণ্ডগত বাস্তবতা’র ওপর ভিত্তি করে তা হতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন পুতিন।

পুতিন এর আগেও বলেছেন, ইউক্রেন যদি শান্তিচুক্তি চায় তবে রাশিয়ার দখলে থাকা ভূখণ্ডের বিষয়টি মেনে নিতে হবে। এ বিষয়ে মাখোঁর অবস্থান হলো—ইউক্রেনেরই এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে তারা ভূখণ্ড ছেড়ে দেবে কি না।

ফোনালাপের পর মাখোঁর কার্যালয় জানিয়েছে, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি ফ্রান্সের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। দুই নেতা ইউক্রেন ও ইরান ইস্যুতে আলোচনায় আরও এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ফরাসি প্রেসিডেন্টের দপ্তর।

উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার শুরুর সময় দুই নেতার মধ্যে নিয়মিত কথোপকথন হতো। তবে ইউরোপের কিছু মিত্র দেশ মাখোঁর এসব উদ্যোগের সমালোচনা করেছিল। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে মাখোঁ মস্কো গিয়ে পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত