Ajker Patrika

রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেনের ৫১ ক্যাডেট নিহত

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩: ১৩
রুশ ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেনের ৫১ ক্যাডেট নিহত

রাশিয়ার ছোড়া অন্তত দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের মধ্যাঞ্চলীয় পোলতাভা শহরে আঘাত হেনেছে। এতে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫১ জন নিহত এবং ২১৯ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। আহত ও নিহতদের বেশির ভাগই ইউক্রেনের একটি সামরিক স্কুলের ক্যাডেট শিক্ষার্থী ছিল। মঙ্গলবার ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী একটি বিবৃতিতে সেনাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

সশস্ত্র বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কয়েকজন নিহত ও শতাধিক আহত। আমরা সাহসী ইউক্রেনীয়, আমাদের ভাই ও বোন, সৈন্যদের হারিয়েছি।’ এই বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দিমিত্রো লাজুটকিনও। 

এর আগে হামলার পরপরই এই ঘটনার জন্য ‘রুশ দুষ্কৃতকারীদের’ দায়ী করে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি। তিনি জানান, পোলতাভা শহরে একটি সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং একটি হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র দুটি আঘাত করে। এতে আহত ও নিহতদের মধ্যে অনেককে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে টেনে বের করা হয়েছে। 

বিবিসির কাছে এই হামলার ঘটনাকে ‘বর্বর’ আখ্যা দিয়েছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শহরটিতে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার আগে সাইরেন বাজিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বোমা আশ্রয়কেন্দ্র যাওয়ার পথেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মুখোমুখি হন অনেকে। 

তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থল থেকে ২৫ জনকে বাঁচাতে সক্ষম হন। তাদের মধ্যে ১১ জন ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ছিল। 

এদিকে রাশিয়ার যুদ্ধপন্থী একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে দাবি করা হয়, ক্ষেপণাস্ত্র দুটি ইউক্রেনের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে এবং এই ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে, সবাই সামরিক সদস্য। হামলায় ব্যবহৃত দুটি ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইস্কান্দার মিসাইল’ বলেও দাবি করা হয়েছে একাধিক প্রতিবেদনে। তবে এসব দাবির কোনোটিই শুরুতে যাচাই করতে পারেনি বিবিসি। এ বিষয়ে বিবিসির ইউরোপ ডিজিটাল এডিটর পল কিরবি বলেছিলেন, ‘এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। তবে পোলতোভায় নিহত ও আহতরা যদি প্রকৃতপক্ষে ক্যাডেট এবং সৈনিক হয়ে থাকে, তবে এটি ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি ভয়ংকর ট্র্যাজেডি।’ 

পোলতাভা শহরটি রাশিয়ার সীমান্ত থেকে প্রায় ১৪০ কিলোমিটার দূরে হলেও একাধিকবার এই শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৩ লাখের বেশি জনসংখ্যার এই শহর সাম্প্রতিককালে পূর্ব দিকে রাশিয়ার আক্রমণের জের ধরে শরণার্থীদের আবাসস্থলে পরিণত হয়েছিল। 

এর আগে গত গ্রীষ্মের শুরুতে পোলতোভার একটি বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান ধ্বংসের দাবি করেছিল রাশিয়া। তবে সর্বশেষ হামলার ঘটনাটি শহরটিকেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। 

কিয়েভ থেকে ৩০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত পোলতোভায় সামরিক যোগাযোগ ইনস্টিটিউট ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হামলায় এই ইনস্টিটিউটের একটি ভবন আংশিকভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়েছে বলে জানায় ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। হামলার ঘটনায় পোলতোভায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন শহরটির গভর্নর ফিলিপ প্রোনিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসরায়েলকে খুশি করতে সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের প্রতিবেদন ‘দুর্বল’ করে বাইডেন প্রশাসন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে ফিলিস্তিনের এই স্থানটিতে আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি: এএফপি
২০২২ সালে ফিলিস্তিনের এই স্থানটিতে আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরায়েলি সেনারা। ছবি: এএফপি

ফিলিস্তিনি-আমেরিকান সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্ত থাকা একজন অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কর্নেল স্টিভ গ্যাভাবিক্স চাঞ্চল্যকর দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, তাঁর তদন্তে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গিয়েছিল যে, আল-জাজিরার এই সাংবাদিককে একজন ইসরায়েলি সেনা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ গুলি করে হত্যা করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘জেটিও নিউজ’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কর্নেল স্টিভ গ্যাভাবিক্স অভিযোগ করেন, বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে সন্তুষ্ট করতে এই তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন দুর্বল করে দেয়।

২০২২ সালের মে মাসে যখন অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরায়েলি হামলার সময় আবু আকলেহ নিহত হন। তখন গ্যাভাবিক্স ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের জন্য নিযুক্ত মার্কিন নিরাপত্তা সমন্বয়কের কার্যালয়ের (ইউএসএসসি) চিফ অব স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এফবিআই যখন এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে অস্বীকৃতি জানায়, তখন মার্কিন সরকারের পক্ষে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্যাভাবিক্সের ওপর।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, তাঁর অনুসন্ধান যুক্তিসংগত সন্দেহের ঊর্ধ্বে প্রমাণ করেছে যে আকলেহকে হত্যা ছিল ‘ইচ্ছাকৃত’।

গ্যাভাবিক্সের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ইসরায়েলি সৈন্যরা স্পষ্টভাবে অবগত ছিল যে ওই এলাকায় সাংবাদিকেরা উপস্থিত আছেন। এমনকি, নিহত আকলেহর পরনে থাকা নীল রঙের ‘প্রেস’ ভেস্টটি তারা দেখতেও সক্ষম ছিল। সাবেক এই কর্নেল আরও বলেন, যে নির্ভুলতার সঙ্গে গুলি আবু আকলেহর মাথায় আঘাত করেছিল, তা কোনো এলোপাতাড়ি গোলাগুলির মধ্যে পড়ে ঘটেনি।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তদন্তে দাবি করা হয়েছিল, তাদের সেনার গুলিতে আকলেহ সম্ভবত নিহত হয়েছেন, তবে তিনি ইচ্ছাকৃত লক্ষ্যবস্তু ছিলেন না। কিন্তু বিভিন্ন স্বাধীন তদন্তে বারবারই উঠে এসেছে, আবু আকলেহ এবং তাঁর সহকর্মীদের সাংবাদিক হিসেবে শনাক্ত করা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে গুলি করা হয়েছিল।

গ্যাভাবিক্স জানান, তিনি হত্যার কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁর অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি সে সময় ইউএসএসসি যোগাযোগ কার্যালয়ের প্রধান জেনারেল মাইকেল ফেঞ্জেলের কাছে পেশ করেন। জেনারেল ফেঞ্জেল অবশ্য ইসরায়েলি কেন্দ্রীয় কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ইয়েহুদা ফক্সের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে জানিয়েছিলেন, একজন ইসরায়েলি সেনা ভুল করে গুলি চালিয়েছেন এবং এটিকে ‘দুঃখজনক পরিস্থিতি’ বলে উল্লেখ করেন।

ফেঞ্জেলের এই পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে গ্যাভাবিক্স খুব হতাশা প্রকাশ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, ইউএসএসসি-তে কাজ করার সময় তিনি দেখেছেন, ‘সুবিধা সব সময়ই ইসরায়েলিদের দিকে যায়।’

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গ্যাভাবিক্স বলেন, তিনি এবং তাঁর তিনজন সাবেক সহকর্মী পররাষ্ট্র দপ্তরের ওই বিবৃতিতে আরও কড়া ভাষা যুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জেনারেল ফেঞ্জেল তা বাতিল করে দেন। তিনি বলেন, এমন আচরণে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা ‘হতবাক’ হয়েছিলেন। বিষয়টি এখনো তাঁর বিবেকে আঘাত করে চলেছে।

তবে জেনারেল ফেঞ্জেল দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক বিবৃতিতে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ভারতে মন্দিরে পদদলিত হয়ে নারী ও শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু

ভারতের মন্দিরে পদদলনের ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ শনিবার অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে কাসিবুগগা ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে এ ঘটনা ঘটে। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আরও অনেকে আহত হয়েছেন বলে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

একাদশী উপলক্ষে মন্দিরটিতে তীর্থযাত্রীদের ভিড় ছিল। আজ শনিবার সকাল ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে কাসিবুগগা সাব-ডিভিশন ইনচার্জ ডিএসপি লক্ষ্মণ রাও জানান।

কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা যায়, হিন্দুধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষে মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত সমবেত হয়েছিলেন। এই দিনে উপবাস করে ভগবান বিষ্ণুকে প্রার্থনা ও পূজা অর্পণ করেন তারা।

পুলিশ জানায়ে, ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় মন্দির প্রাঙ্গণের কাছে এ পদদলনের ঘটনা ঘটে। এক কর্মকর্তা বলেন, ‘একসঙ্গে অনেক ভক্ত এগোতে থাকলে ভিড়ের চাপে পড়ে অনেকে লুটিয়ে পড়েন।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, শতাধিক নারী পূজার থালা হাতে সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কা করছেন এবং নিজেদের বাঁচাতে হুড়োহুড়ি করে শুরু করে দিয়েছেন। এরপর এই বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং পদদলনের ঘটনা ঘটে।

পরে মন্দিরের প্রাঙ্গণে একাধিক মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। শোক জানিয়ে এ ঘটনাকে ‘হৃদয়বিদারক’ বলে বর্ণনা করেন তিনি।

নাইডু বলেন, ‘শ্রীকাকুলাম জেলার কাশিবাগ্গাতে ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে পদদলিত হওয়ার ঘটনাটি গভীর আঘাত দিয়েছে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ভক্তদের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আমি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আমি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।’

স্থানীয় কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদেরও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ত্রাণ কার্যক্রম তদারকি করার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

মন্ত্রী নারা লোকেশও এই মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে বলেন, তিনি ‘গভীরভাবে স্তম্ভিত’।

লোকেশ বলেন, ‘এই একাদশীর দিনে আমাদের গভীর শোক গ্রাস করেছে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। পদদলিত হয়ে যারা আহত হয়েছেন, সরকার তাদের উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছে।’

নারা লোকেশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বিধায়কের সঙ্গে কথা বলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুর্বল শাসনব্যবস্থার কারণেই বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও নেপালে সরকার পরিবর্তন: অজিত দোভাল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৫
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল। ছবি: সংগৃহীত

শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা এবং জনগণের অসন্তোষের কারণেই প্রতিবেশী বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের মতো কয়েকটি দেশে শাসক পরিবর্তন হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভাল।

গতকাল শুক্রবার ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত বক্তৃতা অনুষ্ঠানে সুশাসনের অপরিহার্যতা নিয়ে আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অজিত দোভাল জোর দিয়ে বলেন, জাতি গঠন এবং দেশের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে শাসনের ভূমিকা কেন্দ্রীয়। সুশাসনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে একটি দেশ তার জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করতে পারে এবং সেই সঙ্গে সাধারণ জনগণের ক্রমবর্ধমান আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে সক্ষম হয়।

দোভাল স্পষ্ট করে বলেন, ‘একটি জাতির ক্ষমতা তার শাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে তার কার্য সম্পাদন করে এবং জাতি গঠনের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিরা হলেন তাঁরাই, যারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে তৈরি করেন, শক্তিশালী করেন ও যত্ন নেন।’

অজিত দোভাল সুশাসনের ক্ষেত্রে উদ্ভূত নতুন চ্যালেঞ্জগুলোর বিশ্লেষণ তুলে ধরে জানান, সাধারণ মানুষকে সন্তুষ্ট রাখা এখন রাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে। তাঁর মতে, ‘সাধারণ মানুষ এখন অনেক বেশি সচেতন ও উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তাদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশা অনেক বেশি, এবং তাই রাষ্ট্র এই মানুষকে সন্তুষ্ট রাখার জন্য বিনিয়োগ করতে আগ্রহী।’

দুর্বল শাসনব্যবস্থা কী ধরনের মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে, সে বিষয়ে সতর্ক করে দোভাল সরাসরি প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি বাদ দিয়ে শাসন পরিবর্তনের বিপদ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘দুর্বল শাসন যেকোনো শাসন পরিবর্তনের সম্ভাব্য কারণ হতে পারে।’

এই প্রসঙ্গে তিনি প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ টেনে আনেন। দোভাল উল্লেখ করেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপালের মতো কয়েকটি দেশে অ-প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি (নন-ইনস্টিটিউশনাল মেথড) উপায়ে শাসন পরিবর্তন হয়েছে, যার মূলে ছিল শাসনের দুর্বলতা এবং জনগণের অসন্তোষ। এই উদাহরণগুলো দেখায়, অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং চরম পরিস্থিতি এড়াতে একটি শক্তিশালী ও কার্যকর শাসনব্যবস্থা কতটা জরুরি।

উল্লেখ্য, শাসন পরিবর্তনের অপ্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি বলতে সাধারণত সামরিক হস্তক্ষেপ, গণ-আন্দোলন বা অন্যান্য অস্বাভাবিক পরিস্থিতিকে বোঝায়।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসন মডেলের উচ্চ প্রশংসা করেন দোভাল। তাঁর মতে, ভারত বর্তমানে ‘কক্ষপথ পরিবর্তন’-এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এই পরিবর্তন শুধু এক ধরনের শাসনব্যবস্থা, সরকার এবং সামাজিক কাঠামোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিশ্বমঞ্চে ভারতের অবস্থানকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।

সূত্র: এনডিটিভি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১২: ৩২
পাসপোর্ট সূচকে কেন ভারতের এত পতন, কূটনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন

ভারত বর্তমানে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। অথচ দেশের অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে পাসপোর্টের ক্ষমতার কোনো সামঞ্জস্য নেই। সম্প্রতি প্রকাশিত হেনলি পাসপোর্ট সূচকে ভারতের পাসপোর্টের দুর্বলতা আবারও প্রকট হয়েছে। ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুবিধার ওপর ভিত্তি করে তৈরি এই সূচকে ভারত গত বছরের তুলনায় পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ৮৫তম স্থানে নেমে এসেছে।

ভারতীয় নাগরিকদের জন্য পশ্চিমা ও ইউরোপীয় দেশগুলোতে ভিসা প্রাপ্তি এখনো একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহল ভারতের ‘সফট পাওয়ার’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বিশ্বের মোট ১৯৯টি পাসপোর্টের মধ্যে ভারতের বর্তমান অবস্থান ৮৫তম। এটি হতাশাজনক বলছেন পর্যবেক্ষকেরা। এর বিপরীতে রুয়ান্ডা (৭৮তম), ঘানা (৭৪তম) এবং আজারবাইজানের (৭২তম) মতো ভারতের তুলনায় অনেক ছোট অর্থনীতির দেশগুলো সূচকে এগিয়ে রয়েছে। বর্তমানে ভারতীয় পাসপোর্টধারীরা মাত্র ৫৭টি দেশে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুবিধা পান, যা আফ্রিকার দেশ মৌরিতানিয়ার নাগরিকদের সমান।

অবশ্য গত দশকেও পাসপোর্ট সূচকে ভারত ৮০-এর ঘরেই ওঠানামা করেছে, এমনকি ২০২১ সালে ৯০-এর ঘরে নেমে গিয়েছিল। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায় ভারতের জন্য এটি মোটেও সম্মানজনক নয়। এশিয়ার এই দেশগুলোর পাসপোর্ট বরাবরই সূচকের শীর্ষস্থানে থাকে।

গত বছরের মতো চলতি বছরও সিঙ্গাপুর ১৯৩টি দেশে ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা নিয়ে সূচকের শীর্ষে অবস্থান করছে। দক্ষিণ কোরিয়ার অবস্থান দ্বিতীয়, ভিসামুক্ত ভ্রমণ সুবিধা আছে ১৯০টি দেশে। ১৮৯টি দেশে ভিসামুক্ত সুবিধা নিয়ে জাপানের অবস্থান তৃতীয়।

যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০। বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা মাত্র ৩৮টি। উত্তর কোরিয়ার অবস্থানও একই।

পাসপোর্টের ক্ষমতা কেবল একটি ভ্রমণ নথি নয়; এটি একটি দেশের ‘সফট পাওয়ার’ এবং বৈশ্বিক প্রভাবকে প্রতিফলিত করে। একটি দুর্বল পাসপোর্ট নাগরিকদের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসা, উচ্চশিক্ষা এবং পেশাগত সুযোগ সীমিত করে। এর ফলে ভিসা খরচ বাড়ে এবং ভ্রমণের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সময় তৈরি হয়।

বিগত এক দশকে ভারতে ভিসামুক্ত প্রবেশের সুযোগ দেওয়া দেশের সংখ্যা বাড়লেও, র‍্যাঙ্ক কেন পিছিয়েছে?

২০১৪ সালে ভারতে যখন প্রথম নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসে তখন ভিসামুক্ত ভ্রমণের সুযোগ ছিল ৫২টি দেশে এবং র‍্যাঙ্ক ছিল ৭৬তম। এর এক বছর পরই বড় ধাক্কা খায় ভারতীয় ভিসা, অবস্থান একলাফে ৮৫-তে নেমে যায়। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালে একটু উন্নতি হয়, ৮০তম স্থানে ওঠে। এরপর ২০২৫ সালে আবার নেমে ৮৫তম স্থানে চলে গেছে। এই সময় ভারতীয়দের ভিসামুক্ত ভ্রমণ গন্তব্য ২০১৫ সালের ৫২ থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে ৬০ এবং ২০২৪ সালে ৬২টি হয়েছে। স্পষ্টত ২০২৫ সালে ভিসা গন্তব্য ৫৭টিতে ঠেকলেও তা ২০১৫ সালের (৫২) তুলনায় বেশি। এরপরও পাসপোর্ট সূচকে ৮৫-তে নেমে যাওয়ার কারণ কী?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ হলো বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক গতিপ্রকৃতিতে তীব্র প্রতিযোগিতা। বৈশ্বিক গড় ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ২০০৬ সালের ৫৮ থেকে বেড়ে ২০২৫ সালে ১০৯ হয়েছে। এর অর্থ হলো, বিশ্বের অন্যান্য দেশ দ্রুতগতিতে তাদের নাগরিকদের জন্য নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দৌড়ে ভারত পিছিয়ে পড়েছে।

যেখানে গত এক দশকে চীন তাদের ভিসামুক্ত গন্তব্যের সংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮২ করেছে, যার ফলে তাদের র‍্যাঙ্ক ৯৪ থেকে ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। এই উদাহরণ স্পষ্ট করে, কূটনৈতিক উদ্যোগের মাধ্যমে র‍্যাঙ্ক দ্রুত উন্নত করা সম্ভব।

র‍্যাঙ্ক পতনের নেপথ্যে রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও নিরাপত্তাও বড় কারণ। সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত আচল মালহোত্রা এই র‍্যাঙ্ক পতনের পেছনে একাধিক অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কারণ তুলে ধরেছেন।

মালহোত্রার মতে, ১৯৭০-এর দশকে ভারতীয়রা অনেক পশ্চিমা দেশে ভিসা ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারতেন। কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে খালিস্তান আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ভারতের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে আঘাত করে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমা দেশগুলো ভিসা নীতি কঠোর করে। পরবর্তী রাজনৈতিক উত্থান-পতন ভারতের স্থিতিশীলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তোলে।

মালহোত্রা উল্লেখ করেন, অনেক দেশই বর্তমানে অভিবাসন নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক। ভারত থেকে অন্য দেশে স্থায়ীভাবে যাওয়া বা ভিসার মেয়াদ শেষেও থেকে যাওয়ার হার বেশি হওয়ায় তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের সুনামের ওপর প্রভাব ফেলছে।

হেনলি বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে বিভিন্ন দেশের অবস্থান:

এ ছাড়া পাসপোর্টের নিরাপত্তা ঝুঁকি এবং জটিল পদ্ধতিকেও এই পতনের জন্য দায়ী করেছেন মালহোত্রা। তিনি বলেন, পাসপোর্টের নিরাপত্তা এবং অভিবাসন পদ্ধতিও ভিসামুক্ত প্রবেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ২০২৪ সালে শুধু দিল্লি পুলিশই ভিসা এবং পাসপোর্ট জালিয়াতির অভিযোগে ২০৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতের ধীরগতির ভিসা প্রক্রিয়াকরণ এবং জটিল অভিবাসন পদ্ধতিও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্ব রাজনীতিতে ‘আইসোলেশন’ বা বিচ্ছিন্নতার প্রবণতার কারণে সূচকে ঐতিহাসিক সর্বনিম্ন ১২তম স্থানে নেমে এসেছে। যেখানে আগের বছরও শীর্ষ ১০-এ ছিল।

এদিকে পাসপোর্টের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ভারত সম্প্রতি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট বা ই-পাসপোর্ট চালু করেছে। এতে ছোট একটি চিপের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষিত থাকে, যা জালিয়াতি রোধে অত্যন্ত কার্যকর হবে।

তবে বিশেষজ্ঞদের মত হলো, শুধু প্রযুক্তিগত উন্নতিই যথেষ্ট নয়। ভারতীয়দের বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব বাড়াতে হলে ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং দ্রুত নতুন নতুন ভ্রমণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে। অর্থনৈতিক শক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাসপোর্টের র‍্যাঙ্ক উন্নত করতে সরকারের এই বিষয়ে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: বিবিসি, হেনলি পাসপোর্ট ইনডেক্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত