Ajker Patrika

চীন-মার্কিন বিরোধ

এশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই

  • চীনবিরোধী বাণিজ্য নীতি নেওয়ার চাপ যুক্তরাষ্ট্রের।
  • ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে মোড়লিপনার অভিযোগ চীনের।
  • মার্কিন শুল্ক নিয়ে অন্যদের অস্বস্তি কাজে লাগাতে চায় বেইজিং।
আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সাইডলাইনে (বাঁ থেকে) জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক ইউনজু। গতকাল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। ছবি: এএফপি
আসিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের সাইডলাইনে (বাঁ থেকে) জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়ায়া, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী পার্ক ইউনজু। গতকাল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। ছবি: এএফপি

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন করে একধরনের ‘শীতল যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রতিশ্রুতি; প্রতিটি ক্ষেত্রেই দুই পরাশক্তির লড়াই এখন আর গোপন কিছু নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে কেন্দ্র করে এই লড়াই ক্রমেই আরও স্পষ্ট হচ্ছে।

বর্তমানে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০ দেশের জোট আসিয়ান। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে গত ৮ জুন শুরু হয় জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের চার দিনের সম্মেলন। আঞ্চলিক এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার উত্তেজনা দৃশ্যমান হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এশীয় দেশগুলোর প্রতি চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন সরবরাহ চেইনকে অগ্রাধিকার দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। অন্যদিকে একই সম্মেলনে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই মার্কিন ‘চাপ ও হুমকি’র বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

নিউইয়র্ক টাইমসের খবরে বলা হয়, মার্কো রুবিওর লক্ষ্য ছিল এশীয় মিত্র ও অংশীদারদের যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করানো। তিনি জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষ কূটনীতিকদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। কিন্তু তাঁর কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যেই গত সোমবার দেশ দুটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় ট্রাম্প প্রশাসন। ওই ঘোষণা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। সেদিনই খোদ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারেও মন্দাভাব পরিলক্ষিত হয়।

হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সোমবার এশিয়ার অন্তত ১৪টি দেশে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়। জানানো হয়, আগামী ১ আগস্ট থেকে এটি কার্যকর হবে। স্বভাবতই এই ঘোষণা সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে একধরনের অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

চীনের কৌশল ছিল এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগানো। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বেইজিংকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষের একজন ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবে তুলে ধরেন। একাধিক বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি ও ‘বাণিজ্যিক মোড়লিপনার’ সমালোচনা করেন। কুয়ালালামপুরে এক বৈঠকে তিনি বলেন, বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র একটি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা অনৈতিক ও অযৌক্তিক। চীন সব সময়ই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অংশীদার বলেও মন্তব্য করেন ওয়াং ই। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের এই দ্বন্দ্ব নতুন কিছু নয়, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের একক সিদ্ধান্ত ও হঠকারী শুল্কনীতির কারণে ওয়াশিংটনের কৌশলগত অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এশিয়ার অধিকাংশ দেশ বর্তমানে চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকে ইতিমধ্যেই বেইজিংয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিভিত্তিক কূটনীতি সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে চীনের দিকে আরও বেশি ঠেলে দিচ্ছে।

কম্বোডিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রাক সকহোন বলেন, ‘আমরা এমন এক সময়ে একত্র হয়েছি, যখন বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বাড়ছে, অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বাড়ছে এবং আন্তসংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো জটিল হয়ে উঠছে।’

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং গত এপ্রিলে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া সফর করেছেন। এসব দেশে বিপুল বিনিয়োগের পাশাপাশি বড় ধরনের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালনা করছে বেইজিং। ফলে তাদের পক্ষে সরাসরি চীনের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

যুক্তরাষ্ট্র এখন এশিয়ায় শুধু কূটনৈতিক নয়, নিরাপত্তাগত উপস্থিতিও ধরে রাখার চেষ্টা করছে। গত মার্চে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জাপান ও ফিলিপাইন সফর করেন। এ সময় তিনি দুই দেশকেই আশ্বস্ত করেন, ওয়াশিংটন তাদের পাশে আছে। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি দেশটির আগের সরকারগুলোর চেয়ে কিছুটা ভিন্ন। বাইডেন আমলে হওয়া সামরিক সহযোগিতা চুক্তিগুলো পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে হোয়াইট হাউস। যেমন অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক সাবমেরিন প্রযুক্তি সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন সংশয় প্রকাশ করেছে। এমন বাস্তবতায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কোনো এক পক্ষে ঝুঁকে যাওয়ার বদলে বরং কৌশলগত ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারা দেশে আরও ১০ দিন ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা

‘আজ বুঝলাম, সময়ের কাছে মানুষ কত অসহায়’—মৃত্যুর আগে স্ট্যাটাস স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার

পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় চারজন গ্রেপ্তার

রামদা হাতে ভাইরাল সেই সাবেক যুবদল নেতাকে গুলি ও পায়ের রগ কেটে হত্যা

জগন্নাথপুরে এসএসসিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া রাইদা হতে চায় চিকিৎসক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত