Ajker Patrika

দ. কোরিয়ায় ৪৬ বছর পর কেন আবারও বিচার হবে প্রেসিডেন্টের হত্যাকারী গোয়েন্দাপ্রধানের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২৫, ২০: ০৮
প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হির সঙ্গে করমর্দন করছেন তাঁর বন্ধু ও তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান কিম জায়ে-কিউ (বাঁয়ে)। ছবি: বিবিসি
প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হির সঙ্গে করমর্দন করছেন তাঁর বন্ধু ও তৎকালীন গোয়েন্দাপ্রধান কিম জায়ে-কিউ (বাঁয়ে)। ছবি: বিবিসি

১৯৭৯ সালের ২৬ অক্টোবর। দিনটি ছিল শুক্রবার। সেদিন রাতে দুটি গুলির শব্দে কেঁপে ওঠে সিউলের ‘সেফ হাউস’খ্যাত একটি ভবন। কোরিয়ার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা কেসিআইএর সাবেক নিরাপত্তাপ্রহরী ইউ সিওক-সুল স্মরণ করেন, ওই দিন সন্ধ্যার পর ৭টা ৪০ মিনিটে তিনি বিশ্রামে ছিলেন। হঠাৎ গুলির শব্দ। পরে জানতে পারেন, এই গুলি করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং-হির ওপর—যিনি টানা ১৮ বছর ধরে দক্ষিণ কোরিয়া শাসন করছিলেন!

হত্যাকারী ছিলেন পার্কের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও তৎকালীন কেসিআইএর প্রধান কিম জায়ে-কিউ। পার্ক ছিলেন একনায়ক শাসক। তিনি দেশকে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে নিয়ে গেলেও দমন-পীড়নের মাধ্যমে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের পর কিমসহ ছয়জনকে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিম বলেছিলেন, তিনি দেশকে রক্তপাত থেকে বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে ফাঁসি দেওয়া হয়।

এখন ৪৬ বছর পর কিম জায়ে-কিউয়ের সেই হত্যা মামলা আবারও আলোচনায় এসেছে। কারণ, তাঁর পরিবার পুনর্বিচারের দাবি জানিয়েছে—যেন তাঁকে একজন দেশদ্রোহী নয়, বরং একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে দেখা হয়। আদালতও পুনর্বিচারের আবেদন মেনে নিয়েছেন। কারণ, প্রথম যে বিচারটি হয়েছিল, তাতে ছিল সেনাশাসনের প্রভাব, জবানবন্দি নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্যাতনের ছাপ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়নি অভিযুক্ত ব্যক্তিদের।

কিমের পরিবারের মতে, তিনি পার্কের অনাচার বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। কারণ, পার্ক বিরোধীদের হত্যা বা দমন করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি বলেছিলেন—‘কম্বোডিয়ায় ৩০ লাখ মারা গেছে, কিছুই হয়নি। আমরা যদি ১০ লাখ বিক্ষোভকারীকে মেরে ফেলি, কিচ্ছু হবে না।’ এমন কথা পার্কের নিরাপত্তার প্রধান চা জি-চেওলও বলেছিলেন।

ওই রাতেই পার্ক ও তাঁর নিরাপত্তাপ্রধান চা জি-চেওল যখন স্কচ পান করছিলেন, তখন কিম নিজের বন্দুক বের করে প্রথমে চাকে গুলি করেন। পরে প্রেসিডেন্ট পার্ককে বুকে ও মাথায় গুলি করেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় পার্কের। এরপর তাঁর কেসিআইএ সদর দপ্তরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও পথে সেনাবাহিনী তাঁকে আটকে দেয়।

এই ঘটনার তদন্ত করেন জেনারেল চুন দু-হোয়ান, যিনি পরে নিজেই ক্ষমতা দখল করেছিলেন। কিমকে দ্রুত বিচারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর ১৯৮০ সালের ২৪ মে তাঁর ফাঁসি কার্যকর হয়।

এই অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের ৪৬ বছর পর নতুন করে বিচার শুধু কিমের জন্য নয়, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্রের পথ পর্যালোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আইনজীবী লি সাং-হি বলেন, ‘কিম জায়ে-কিউ রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের কোনো বাস্তব উদ্যোগ নেননি। এটাই প্রমাণ যে, এটি ছিল বিদ্রোহ নয়, বরং একটি চরম রাজনৈতিক প্রতিবাদ।’

কিমের বোন কিম জুং-সুক বলেন, ‘তিনি (জায়ে-কিউ) ক্ষমতার জন্য প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেননি, বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্য নিজের জীবন দিয়েছিলেন।’

এই পুনর্বিচার কিম জায়ে-কিউকে নায়ক বানাবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই বিচার দক্ষিণ কোরিয়ার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের ওপর নতুন আলো ফেলছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাষ্ট্রের গোপন নথি ফাঁস: এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মুকিতুলের বিরুদ্ধে এবার মামলা

রক্ত কেনা যায় না—ইয়েমেনে নিমিশাকে ক্ষমা করতে অস্বীকৃতি মাহদির পরিবারের

গোপালগঞ্জে হামলার ঘটনায় ফেসবুকে সরব ইসলামপুরের পলাতক আওয়ামী নেতারা

২৫ সেকেন্ডে ১২ গুলি, হাসপাতালে গ্যাংস্টারের শরীর ঝাঁঝরা

গোপালগঞ্জে চলছে কারফিউ, পরিবেশ থমথমে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত